ঘর যদি ২০০ থেকে ৪০০ স্কয়ারফিট হয়, তবে সেখানে অবশ্যই ২৪০০০ বিটিইউ তথা ২ টন এসির প্রয়োজন। বাসা বাড়ি কিংবা অফিস এসি অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি ইলেকট্রনিকস অ্যাপ্লায়েন্স, আর অনেক ব্যায়সাপেক্ষও বটে! আর সেকারনেই এসি কেনার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটা সময় নানারকম দ্বিধাদ্বন্দের ভেতর পড়তে হয়।
এসির মত একটি উচ্চ বৈদ্যুতিক যন্ত্র কেনার আগে আমাদেরকে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়। এসিটি ইনভার্টার প্রযুক্তির কিনা, এসিটি কতটা পরিবেশ বান্ধব এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী এবং সেই এসিটি কেনার দিক দিয়ে আমাদের কাছে ঠিক কতটা সাশ্রয় হচ্ছে, এসব বিষয়।
ওয়ার্লপুল | SPOW224W | ৮১-৮৫ হাজার | |
শার্প | AH XP24SHV | ৯৪ হাজার | |
জেনারেল | ASG-24ABC-W | ৮৯ হাজার | |
ওয়ালটন | WSI-KRYSTALINE-24C | ৭৫ হাজার ৫০০ |
ওয়ার্লপুল
SPOW224W মডেলটি ওয়ার্লপুলের ২৪০০০ বিটিইউ তথা ২ টন ক্যাপাসিটির অন্যতম একটি এসি। ওয়ার্লপুলের ফ্যান্টাসিয়া সিরিজের এই এসিটির বাজার মূল্য ৮১ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। এটি একটি ইনভার্টার প্রযুক্তির স্প্লিট এসি। এই এসিটিতে পাবেন একটি হিডেন ডিসপ্লে। এই এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-৪১০এ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বাংলাদেশে ২ টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি কিনলে এর কমপ্রেসরে ৩ বছর এবং স্পেয়ার পার্টস ও সার্ভিসে ১ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। যা ওয়ালটনের তুলনায় অনেক কম।
শার্প
AH XP24SHV মডেলটি শার্পের ২৪০০০ বিটিইউ তথা ২ টন ক্যাপাসিটির একটি এসি। ৯৪ হাজার টাকায় বাজারে পাওয়া যাবে ২ টনের ইনভার্টার প্রযুক্তির এই এসিটি। এতে হিডেন ডিসপ্লের বদলে একটি ছোট এলসিডি ভিজিবল ডিসপ্লে। এই এসিটিতেও রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস হিসেবে থাকবে আর-৪১০এ। শার্প এসিটির ভেতর থাকা প্লাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তি বাতাসের ভেতরে থাকা অদৃশ্য অগ্রানিজম; যেমন ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া এসব দূর করতে সক্ষম। ওয়ালটনের মত ২ টন ক্যাপাসিটির এই এসিটিতেও ১০ বছরের কমপ্রেসর ওয়ারেন্টি থাকবে। পাশাপাশি ২ বছরের সার্ভিস এবং ১ বছরের স্পেয়ার পার্টস ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে।
জেনারেল
তুলনায় অবশ্যই থাকছে জেনারেলের ২ টন ক্যাপাসিটির একটি এসি, যার মডেল নাম ASG-24ABC-W। ২৪০০০ বিটিইউ তথা ২ টন ক্যাপাসিটির এই এসির বাজার মূল্য ৮৯ হাজার টাকা। তবে জেনারেলের ২ টনের এই এসিটি নন-ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি। আর এতে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে "আর-৪১০এ" এর চাইতে পুরাতন রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস "আর ২২"। জেনারেলের এই এসিটির ওয়ারেন্টি সুবিধাগুলো একটু আলাদা। জেনারেলের ২ টন ক্যাপাসিটির এই এসিতে সার্ভিস ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে ৩ বছর। আর স্পেয়ার পার্টস ও কমপ্রেসরে ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে ২ বছর।
ওয়ালটন
এখন আসি ওয়ালটন এসিতে। ২৪০০০ বিটিইউ তথা ২ টন ক্যাপিসিটির আজকের আমরা ওয়ালটনের এসিটি উল্লেখ্য করছি, সেটি হলো WSI-KRYSTALINE-24C। এটি ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন সিরিজের ২ টন ক্যাপাসিটির এসি৷ ২ টনের এই ক্রিস্টালাইন এসিটি একটি ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি। আর শার্পের জে-টেক ইনভার্টার প্রযুক্তির মত এটি টুইনফোল্ড ইনভার্টার প্রযুক্তির। আর টুইনফোল্ড ইনভার্টার প্রযুক্তি অন্যান্য ইনভার্টার প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। শার্প এসিতে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান এবং মাইক্রো-অর্গানিজম ধ্বংসের জন্য যেমন প্লাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তি রয়েছে ; তেমনিভাবে ওয়ালটনের এই এসিতে থাকছে আইওনাইজার প্রযুক্তি।
বিশুদ্ধ বাতাস
আইওনাইজার সুবিধা সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি, এটি এসির মাধ্যমে বাতাসে নেগেটিভ আয়ন উন্মুক্ত করে দিয়ে বাতাসের খারাপ কিছু উপাদান এবং মাইক্রো অগ্রানিজম বিনষ্ট করে দেয়। এভাবে ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন এসিটি বাতাসকে বিশুদ্ধ করার কাজ করছে। একইভাবে শার্প এসিতেও আমরা আমরা দেখতে পাচ্ছি প্লাজমা ক্লাস্টার প্রযুক্তি।
ইনভার্টার প্রযুক্তি
বর্তমান সময়ে একটি মানসম্মত এসি কেনার ক্ষেত্রে ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যাতিত এসি কেনার কোনো বিকল্প একদম নেই বললেই চলে। নন-ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। এখানে এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হওয়ার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় এলে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলে, তখন চালু হয়। এভাবে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ার কারণে, এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে রুমের পরিবেশের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। আজকের তালিকায় ওয়ালটন এবং শার্প এসিতে ইনভার্টার প্রযুক্তিতো ব্যবহার করার হয়েছেই, তাও এখানে অত্যাধুনিক ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন ওয়ালটনের টুইনফোল্ড ইনভার্টার প্রযুক্তি। অন্যদিকে যদি আমরা জেনারেলের দিকে তাকাই, তবে সেটি একটি নন-ইনভার্টার এসি।
পরিবেশ বান্ধব
যেহেতু গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত বৈশ্বিক সমস্যার জন্য অন্যতম দায়ী এসির মত ইলেকট্রনিক্স এপ্লায়েন্স, তাই এসিতে সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও বিবেচনার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাতাসে তাপ তৈরির দিক দিয়ে 'আর-৪১০এ' এর চাইতে 'আর-২২' এগিয়ে। তাছাড়াও 'আর-৪১০এ' রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস 'আর-২২' এর চাইতে বেশি বিদ্যুত সাশ্রয়ীও বটে! 'আর-২২' রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস সমৃদ্ধ এসিতে সিস্টেম ওভারহিটিং এর সমস্যাও বেশি হয়। শার্প, ওয়ার্লপুল এবং আমাদের দেশীয় ওয়ালটনে যুগোপযোগী 'আর-৪১০এ' রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হলেও, জেনারেল এসিতে ব্যবহার করা হয়েছে 'আর-২২' রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস।
দাম
আমরা যদি দামের দিকে এখন তাকাই, তবে ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন এসিটির মূল্য ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। ২ টনের ওয়ার্লপুল ফ্যান্টাসিয়া এসিটির দাম ৮১ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা। জেনারেলের ২ টন এসিটির দাম ৮৯ হাজার টাকা। আর সবচাইতে বেশি শার্প এসিটির দাম প্রায় ৯৪ হাজার টাকা। সকল সুবিধার বিবেচনায় ওয়ালটন এর ক্রিস্টালাইন সিরিজের ২ টনের এই ইনভার্টার এসিটি দারুন ভাবে বাকিসব এসির সাথে টেক্কা দিতে সক্ষম, আর সেই হিসেবে অন্যসব এসির চাইতে এটি অনেক বেশি সাশ্রয়ও হচ্ছে। অফিসে বা কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে যখন বেশি সংখ্যক এসির প্রয়োজন হয়, তখন ওয়ালটনের দিকে ঝোকাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
পরিশেষে
অন্যান্য এসির কমপ্রেসর বাইরের দেশে বিদ্যুত এবং তাদের আবহাওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও, ওয়ালটন এসির কমপ্রেসর বিশেষায়িতভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং আমাদের দেশের বিদ্যুৎ এর হিসেবে তৈরি করা। এসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কম্পোনেন্ট কমপ্রেসর, অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় অন্তত আমাদের দেশে ওয়ালটনের কমপ্রেসরই বেশি টেকসই এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী হবে, এটা বাস্তবিক। সুতরাং পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, দেশের টাকা বাইরে না পাঠিয়ে অত্যান্ত উপকারী এই ইলেকট্রনিকস অ্যাপ্লায়েন্স কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের সঙ্গী হয়ে আমরা ওয়ালটন এসিকেই পছন্দ করতে পারি।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।