আত্মবিশ্বাস – জীবনে সফল হওয়ার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। আশাকরি, নিজের শক্তি সামর্থ্য বিবেচনার উপর কতটুকু ভরসা রাখি সেটাই আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস হল আমাদের ভেতরের সেই শক্তি যা আমাদের সাহস যোগায়, ভরসা জাগায়। আসুন তাহলে জেনে নিই কিভাবে নিজের আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে আমরা কঠিনতম সমস্যার সমাধান করতে পারি সহজেই :
হয়ত কোনো কাজ করছেন, মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে আপনার হঠাৎ মনে হল কাজটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। কোনো ব্যাপার না, কাজকর্ম থামিয়ে পুনরায় ভাবুন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা আরেকবার ভাবুন। যদি মনে হয় সব ঠিক আছে, তাহলে তো হয়েই গেল; কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু যদি মনে হয় কাজটা ঠিক হচ্ছে না, ভুল হচ্ছে বা অন্য কোনো ধরনের কোনো সমস্যা আছে তাহলে কাজ থামিয়ে দিন। ভুল কোথায় হচ্ছে সেটা ঠিকমত বুঝে নিন, দরকার হলে আবার গোড়া থেকে শুরু করুন। কে কি বলল, কে কি ভাববে এ নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি কি ভাবছেন সেটাই জরুরি। আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অর্থ এই নয় যে কোনো ধরনের ভুল করা যাবে না, বরং ভুলগুলো বুঝে নিয়ে সমস্যার সমাধানই আত্মবিশ্বাসের পরিচয়।
কোনো বিষয়ে আপনার নিজের যেমন ধারণা, সেটাই অন্যকে বলুন। নিজে যতটুকু বোঝেন, নিজের জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে যা যতটুকু জানেন কিংবা বোঝেন সেটাই অন্যের সামনে উপস্থাপন করুন। হতে পারে সে বিষয়ে আপনার ধারণা অসম্পূর্ণ, হতে পারে আপনার ধারণা ঠিক নয় তবুও নিজের মতামতটাকেই প্রাধান্য দিতে শিখুন।
অন্যের সুখ সুবিধার কথা ভাবা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেটা যেন হয় নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে। অন্যকে খুশি করার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করলে প্রশংসা হয়ত পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজের বিবেক, নিজের মূল্যবোধ, নিজের বিচার আচার হারিয়ে বসবেন না যেন! বাইরের কথায় কান না দিয়ে বরং নিজের পরিতৃপ্তির জন্য কাজ করুন। বাঁচতে হলে নিজের জন্য বাঁচুন, হাসতে হলে নিজের মনের আনন্দে হাসুন, সাজগোজ করার ইচ্ছে হলে সাজতে বসুন নিজের জন্য।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটা খুবই জরুরি। আর আমি নিশ্চিত এ কথাটা আপনি এর আগেও বহুবার বহু জায়গায় শুনেছেন। নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা একেবারেই সম্ভব না। নিজের সহজ বুদ্ধি দিয়ে যা আপনার কাছে ভাল মনে হয় সেটাই করুন। তাতে যদি সফল হতে নাও পারেন তবুও ক্ষতি নেই। পৃথিবীর সফলতম মানুষটিও জীবনে ১০০% কাজে সফল হননি। নিজের উপর আস্থা রাখুন। ‘আমি পারবই’ – কথাটি দিনে ১০ বার বলুন, দেখবেন হালকা লাগছে।
নিজেকে ছোট করে অন্যকে বড় করে তুলে ধরার মানসিকতা আমাদের অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক সময় আমাদের বাধ্য করে, আবার অনেকে এটাকেই বিনয় নতুবা ভদ্রতা প্রকাশের মাধ্যম বলে ধরে নেয়। আপনি নিজেকে কিভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করবেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। নিজের দোষত্রুটি খুঁজে নিয়ে নিজেই সেগুলো শুধরে নিন। অন্যের সামনে নিজের নেতিবাচক দিক তুলে না ধরে বরং ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরুন।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের নানা রকম স্বপ্ন থাকে। বয়সের সাথে সাথে অনেক স্বপ্ন মিলিয়েও যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন আমাদের সত্ত্বার ভিতর মিশে থাকে। এই স্বপ্নগুলিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমি একজন মেয়েকে চিনি যে ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসতো। তারপরিবার চেয়েছিল প্রচলিত নিয়ম মেনে সে হোক ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। পরিবারের অমতে মেয়েটি চারুকলায় ভর্তি হয়েছিল। আজকাল টিউশনি করে সে নিজের খরচ চালায়। এতে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য হয়ত নেই কিন্তু নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার তৃপ্তি আছে। তাই নিজের স্বপ্নগুলোকে ধরে রাখুন, সেগুলোকে হারিয়ে যেতে দেবেন না।
‘না’ বলতে পারাটা অনেক বড় একটা গুণ। অন্যের অনুরোধ, অনুযোগের উপর নজর রাখুন তবে নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার বাইরে গিয়ে কাউকে ‘হ্যাঁ’ বলতে যাবেন না। সে যেই হোক; হতে পারে সে আপনার পরিবারের কেউ, হতে পারে বন্ধু, সহকর্মী কিংবা অন্য কেউ। অন্যের অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত ভদ্রতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। অনুরোধকারীকে ভদ্রভাবে আপনার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিন।
শুধু আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে নয়, নিজেকে নিজে সম্মান করার জন্যও এটি খুব বড় ভূমিকা পালন করে। অন্যকে ঠকিয়ে সাময়িকভাবে কিছুটা সুযোগ সুবিধা হয়ত পাওয়া যায়, কিন্তু দিনশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রাখার ক্ষমতাটা আর থাকে না। আপনি যখন অন্যকে ঠকিয়ে বা বঞ্চিত করে কোনো কিছু আদায় করে নিচ্ছেন, সেটা কিন্তু আপনার মানসিক দৈন্যদশাকেই প্রকাশ করে। যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু নিজের সামর্থ্য দিয়ে অর্জন করুন। কারো ঘাড় ভেঙে নয়।
নিজেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। নিজের ইচ্ছা, নিজের অনিচ্ছা, নিজের পছন্দ অপছন্দ এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার খেয়াল রাখার অর্থ স্বার্থপরতা নয়। যতক্ষণ আপনি নিজে নিজের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত না হবেন, ততক্ষণ আপনি অন্য কারো কোনো কাজেই লাগবেন না। নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা গুলোকে লুকিয়ে রাখবেন না। সেগুলোকে প্রকাশ করুন, সেগুলোকে মর্যাদা দিন।
নেগেটিভ বা নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা আমাদের সামনে এগোনোর রাস্তায় একটা বিরাট বাধা। গ্লাস অর্ধেক ভরা নাকি অর্ধেক খালি এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনেকেই খালি গ্লাসকে বেছে নেই। আর এইসব নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা থেকেই উঠে আসে ডিপ্রেশন, ফ্রাস্টেশনের মত ভারী ভারী কিছু শব্দ। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা যে শুধুমাত্র আমাদেরকে এর থেকে মুক্তি দেয় তাই নয়; মানসিক, শারীরিক, সামাজিক, পারিবারিক সব দিকেই মঙ্গল। তাই নেতিবাচক চিন্তা ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখুন, সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক হোন।
ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি কোনো ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হন, তাহলে সেটা অন্যকে জানাবেন না। আর যদি নিতান্তই জানাতে হয়, তাহলে আপনি যে এ বিষয়ে নিশ্চিত নন, সেটি উল্লেখ করুন। শুধুমাত্র নিজেকে জাহির করার জন্য সবজান্তা সেজে ঘুরে বেড়াবেন না। আপনার দেয়া একটা ভুল খবর অন্যের বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটা মাথায় রাখুন।
Last but not the least – নিজেকে ভালবাসুন সবচেয়ে বেশি। আপনি যেমনই হোন না কেন; লম্বা, খাটো, ফর্সা, কালো, মোটা, চিকন – সেটাই আপনি। আর সেটাই আপনার পরিচয়। বাহ্যিক সৌন্দর্য, আভিজাত্য, সামাজিক প্রতিপত্তি এগুলোর চেয়ে নিজের ভেতরের সৌন্দর্য, নিজের মূল্যবোধ যে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মনে রাখে খুব কম মানুষই। নিজেকে ভালবাসলে আপনি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাবেন ব্যাপারটা এমন নয়। বরং অন্যকে ভালবাসার পূর্বশর্ত হল নিজেকে ভালবাসা, নিজেকে চেনা, নিজের গুণগুলোকে জানা আর সেগুলোর কদর করা।
সবশেষে বলা যায়, আপনি কিভাবে নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরবেন এটা আপনার কাজের উপর নির্ভর করে। আর আপনার আত্মবিশ্বাস আপনার কাজগুলোকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরে যা আপনার ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করে। তাই এখন থেকেই নিজের আত্ববিশ্বাসকে নিজের কাজের মধ্যে যোগ করুন।
এরকম মোটিভেশন আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি সাহা আহমেদ। Admin, Blogger, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একজন ছোট ব্লগার । নতুন কিছু লেখার চেষ্টা করছি । আশা করি ভালো লাগবে । সবাই পাশে থাকবেন ধন্যবাদ ।