আজকে আমি শুধু মাত্র দুইটা দেশ এর জনপ্রিয় স্কলারশিপ সমন্ধে বলছি এর পরের টিউন এ ধাপে ধাপে অন্যান্য স্কলারশিপ সমন্ধে ও পর্যায়ক্রমে আলোচনা বা টিউন করা হবে।
১. Turkiye Burslari (তুর্কী বুলসারী) ->
শিহ্মার্থীদের পছন্দের তালিকাতে সর্বপ্রথম এ আছে এই স্কলারশিপটি।
তুরস্কের শিক্ষার মান যথেষ্ট ভালো। ইউরোপের দেশগুলোর দশম স্থানের মধ্যে। তুরস্কে ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম সারির মধ্যে। তুরস্ক সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে স্কলারশিপ দিয়ে তুরস্কে পড়ালেখা করার ব্যবস্থা করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। সম্প্রতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপ দুই অবস্থিত এ দেশটি। এজন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলোই বেশ উন্নত।
জানুয়ারি এর শেষ আর মার্চ এর শুরুর দিকে আবেদন প্রক্রিয়া চলে। আবেদন অনলাইন এর ওয়েবপেইজ (www.turkiyeburslari.gov.tr)
বৃত্তির কয়েকটি ক্যাটাগরিতে অবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেমন :
১. অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডি।
২. উচ্চতর গবেষণা প্রোগ্রাম। (গত বছর থেকে শুরু হয়ছে)
৩. খেলাধুলা এবং সংস্কৃতিতে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে।
৪. মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য নবম শ্রেণি থেকে বৃত্তি।
সুযোগ-সুবিধা :
তুরস্ক সরকারের বৃত্তিতে নিম্নোক্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে :
১. টিউশন ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ।
২. থাকা-খাওয়া সরকারি ডরমিটরিতে, যা সম্পূর্ণ ফ্রি।
৩. ফ্রি স্বাস্থ্য বিমা তথা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা।
৪. এক বছরের তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পূর্ণ ফ্রি।
৫. মাসিক ভাতা (অনার্স ২৫০ ডলার, মার্স্টাস ৩৬০ ডলার এবং পিএইচডি ৫০০ ডলার, উচ্চতর গবেষণার জন্য ১০০০ ডলার)
৬. যাওয়া-আসার ফ্রি বিমান টিকেট।
৭. পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগ। গত বছর থেকে শুরু হয়েছে।
আবেদনের যোগ্যতা :
অনার্স আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর, মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর, পিএইচডির জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকা যাবে না।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চাইলে (IELTS, TOFEL, GRE, GMAT) লাগবে। সাধারণত তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তুর্কি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়।
এই বৃত্তির জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়।
প্রথমত, একাডেমিক রেজাল্ট। অর্থাৎ অনার্সের জন্য এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় ৭০% নম্বর (তবে মেডিকেলের জন্য ৯০% নম্বর) এবং মাস্টার্স-পিএইচডির জন্য অনার্স ও মাস্টার্সে ৭৫% নম্বর থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস। অর্থাৎ কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, একাডেমিকসহ বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম-সেমিনারে ওয়ার্কশপ বা অংশগ্রহণ করে থাকলে তা আবেদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আবেদন করতে যা লাগবে :
পাসপোর্ট/জাতীয় আইডি কার্ড/জন্মনিবন্ধন সনদের (ইংরেজিতে অনুবাদ করা) স্ক্যান কপি।
সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
সব একাডেমিক সার্টিফিকেট।
সব একাডেমিক মার্কশিট।
দুটি রেফারেন্স লেটার। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক হলে ভালো হয়। (টিউন)
এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের সব সার্টিফিকেট।
পাবলিকেশন থাকলে উল্লেখ করা।
ওপরের সব ডকুমেন্ট স্ক্যান কপি করে রেডি রাখতে হবে।
বৃত্তির আবেদন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট বাছাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যাঁদের রেজাল্ট ভালো এবং ওপরে উল্লেখিত সব যোগ্যতা রয়েছে, তাঁরা তুরস্কের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চয়েজ করতে পারেন। আর যারা যোগ্যতার দিক থেকে একটু দুর্বল, তাঁরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে দিলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. মনবুকাগাকুশো (MEXT) স্কলারশিপ :->
উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন অনেক শিক্ষার্থীরই পছন্দের তালিকায় থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য বেছে নিচ্ছে এ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য জাপান সরকার ২০২০ সালের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সে মনবুকাগাকুশো বৃত্তি ঘোষণা করেছে। এটি মনবুশো, মেক্সট নামেও পরিচিত। এ বৃত্তি সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। জাপানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যম জাপানি। তবে ইংরেজিতেও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
মোট তিনটি ক্যাটেগরিতে এই বৃত্তি পাওয়া যাবে।
১) স্নাতক (আন্ডারগ্র্যাজুয়েট) স্তরে সাধারণ শাখার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ার সময় এই বৃত্তি পাওয়া যাবে। বিষয়গুলি হল
ক) সোশাল সায়েন্সেস এবং হিউম্যানিটিজ। এর দুটি ভাগ রয়েছে: এ আর বি। এ-র মধ্যে রয়েছে ল’, পলিটিক্স, পেডাগগি, সোশিয়োলজি, লিটারেচার, হিস্ট্রি আর জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ। বি-তে রয়েছে ইকনমিক্স আর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
খ) ন্যাচরাল সায়েন্সেস এর তিনটি ভাগ রয়েছে। এ, বি এবং সি। এ-তে সায়েন্স (ম্যাথমেটিক্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি), ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক স্টাডিজ, মেকানিক্যাল স্টাডিজ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, কেমিক্যাল স্টাডিজ ও বায়োটেকনলজি। বি-তে রয়েছে এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ, হাইজিনিক স্টাডিজ নার্সিং এবং বায়োলজি। মেডিসিন আর ডেন্টিস্ট্রি পড়ছে সি-এর মধ্যে। এমনিতে এই কোর্সগুলি চার বছরের হলেও মেডিক্যাল ডিগ্রি কোর্সটি কিন্তু ছয়বছরের। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ ৩ টি সাবজেক্টের নাম প্রেফারেন্স হিসেবে দেয়া যাবে। সব গুলো সাবজেক্ট একটি ভাগের হতে হবে। শুধুমাত্র যারা ফার্স্ট প্রেফারেন্স ভাগ সি থেকে দিবেন তারা অন্য ভাগ থেকে পরের প্রেফারেন্স দিতে পারবেন, যেহেতু ভাগ সি তে সাবজেক্ট শুধু ২ টি আছে।
২) কলেজ অব টেকনলজিগুলিতে পড়ার ক্ষেত্রে দেওয়া হবে এই বৃত্তি। পাঠ্য বিষয়গুলি হল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটিরিয়ালস্ ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের। তবে মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সময় লাগে সাড়ে চার বছর।
৩) যারা সেনশু গাকো অর্থাৎ স্পেশালাইজড ট্রেনিং কলেজে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক তারা পড়তে পারে টেকনলজি, পার্সোনাল কেয়ার এবং নিউট্রিশন, এডুকেশন এবং ওয়েলফেয়ার, বিজনেস, ফ্যাশন এবং হোম ইকনমিক্স, কালচার এবং জেনারেল এডুকেশন -এর মতো নানা বিষয়ে। সাধারণত এই সব কোর্সগুলির মেয়াদ দু’বছর। এ ক্ষেত্রেও মেক্সট স্কলারশিপ পাওয়া যাবে।
আবেদনের যোগ্যতা-
১। বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
২। মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সের ক্ষেত্রে ২রা এপ্রিল ১৯৮৫ এবং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রে ২রা এপ্রিল ১৯৯৫ এর পরে জন্মগ্রহণকারীরা আবেদন করতে পারবে।
৩। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
৪। মিলিটারি পারসোনেল আবেদন করতে পারবেন না।
যা যা পাবেন-
১। রিসার্চ স্টুডেন্ট ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ইয়েন, মাস্টার্স স্টুডেন্ট ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ইয়েন, ডক্টরাল স্টুডেন্ট ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ইয়েন এবং আন্ডারগ্রাজুয়েটে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ১ লক্ষ ১৭ হাজার ইয়েন মাসিক ভাতা হিসেবে পাবেন।
২। পরীক্ষা ফি, টিউশন ফি স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
৩। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়ায় বিমান ভাড়া স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
জাপানি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট : এশিয়া ইউনিভার্সিটি (www.asia-u.ac.jp), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান (www.iuj.ac.jp), ফুকুই ইউনিভার্সিটি (www.u-fukui.ac.jp), হিরোশিমা শুডো ইউনিভার্সিটি (www.shudo-u.ac.jp), চিবা ইউনিভার্সিটি (www chiba-u.ac.jp), আইচি ইনস্টেকটিউনসউট অব টেকনোলজি (www.aitech.ac.jp)
আমি মোঃ রুহুল আমিন। Software Engineer, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি সাধারণত টিউনগুলা করি, যেগুলো নিয়ে বর্তমানে সবাই সমস্যায় পড়ে ( প্রোগ্রামিং, ওএব ডিজাইন বা ডেভোলপমেম্ট, অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডেভোলপমেম্ট, সাইবার সহ ইত্যাদি সেই সাথে গুগল, মাইক্রোসফট সহ বিশ্বের বড় বড় জব প্লাটফরম গুলো নিয়েও টিউন করে থাকি। আমি আশাকরি এটা একটা গাইডলাইন হিসেবে আপনাদের কাজ করবে আর সেই সাথে...