পবিত্র কুরআন এবং মহানবী সাঃ এর বানী সমুহে জীবন যাপন সংক্রান্ত এমন বহু নির্দেশ বিদ্যমান যে সমস্ত নির্দেশ পালনের মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিদ কল্যাণ বা উপকারীতা। আর এই সমস্ত নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল চৌদ্দশত বছর পূর্বে, সমকালীন বিশ্বে এই সমস্ত বিষয়ের উপর খুব কম সংখ্যক মানুষের ধারণা ছিল কিংবা ছিল না বললেই চলে। পাশ্চাত্য সভ্যতার এই সমস্ত বিষয়বস্তুর কল্যাণময় দিক অনুধাবন করতে সময় লেগেছে বহু বছর। শুধু তাই নয় আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান ইসলামের এই সমস্ত কর্মপ্রদ্ধতির উপকারিতার বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করছে। ইসলামের দৃষ্টি যদি অনাগত কালের দিকে প্রসারিত না হত তাহলে চৌদ্দশত বছর পরের দুনিয়াবাসীর জন্য সেই সমস্ত নির্দেশমালার অনেক কিছুই অকল্যাণ বা অপ্রয়োজনীয় প্রমানিত হত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কুরআন সুন্নাহ ছাড়াও ইসলামের সোনালী যুগে বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম বিজ্ঞানীদের চিন্তা গবেষণা মানবজাতীকে একধাপ এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল, ইসলামের সোনালী যুগে মুসলিম জাতীর একটি অংশ জ্ঞান বিজ্ঞানে যে অবদান রেখেছে তার প্রভাব সূদুর প্রচ্যে থেকে প্রাশ্চাত্যেকে পর্যন্ত প্রভাবিত করেছিল। প্রাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক পি.কে.হিট্রি, জগত বিখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ এবং বিখ্যাত দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল পর্যন্ত মুসলিম জাতীর গৌরবউজ্জল ইতিহাস অস্বীকার করতে পারেননি যদিও তার চেয়ে বড় ধর্মের সমালোচক জগতে খুব কম ছিল। তিনি ধর্ম এবং পরকাল সরাসরি অস্বীকার করলেও একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে “মুসলিম জাতীর একটি গৌরবউজ্জল ইতিহাস রয়েছে এ বিষয়টি অনেক মানুষ জানে না” সেই সমস্ত গৌরবউজ্জল ইতিহাস নিয়ে আজকের আলোচনা নয় কারণ সেগুলোর উপর লিখতে গেলে কয়েক লক্ষ পৃষ্ঠাও যথেষ্ঠ নয়। প্রাচ্যে ও প্রাশ্চত্যের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও দার্শনিকগণ এই বিষয়ে যুগে যুগে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। ইউরোপ আমেরিকা এশিয়া সহ সমগ্র দুনিয়ার অফলাইন লাইব্রেরী গুলোতে এই সমস্ত বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনলাইন জগতেও এ বিষয়ে প্রায় কয়েক হাজার বই ইবুক আকারে রয়েছে। ইন্টারনেট বিশ্বে এ বিষয়ে আর্টিক্যালের সংখ্যাও কম নয়। আজকে মহানবী সাঃ এর এমন কিছু সুন্নত নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলোতে ইহজাগতিক কল্যানই সবচেয়ে বেশি, যে সমস্ত কর্মপ্রদ্ধতি নিয়ে চলমান শতাব্দির বিজ্ঞান ইসলামের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে না। আশ্চর্যের বিষয় হল মহানবী সাঃ এই সমস্ত নির্দেশ দিয়েছেন আজ থেকে চৌদ্দ বছর পূর্বে। ইহা যদি আলৌকিক না হয় তাহলে আলৌকিক কোনটি।
নখ কর্তন ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ নখের আকার বড় হলে নখের ভিতরে ময়লা জমাট হতে থাকে এবং সেই সমস্ত ময়লায় ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াও জমতে পারে যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে মানুষের প্রতি মহানবী সাঃ এর সাধারন নির্দেশ হল প্রতি সাপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার নখ কর্তন করা। পশ্চিমা সভ্যতা নখ কর্তনের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে ইসলামের এই নির্দেশের বহু পর। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য হল নখের ভিতর জমে থাকা ময়লাতে যদি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে খাবার গ্রহনের মাধ্যমে সেগুলো পেটে প্রবেশ করলে বিভিন্ন রোগের সুত্রপাত হতে পারে! নর-নারী নির্বিশেষে সমগ্র দুনিয়ায় বাসা বাড়িতে, হোটেলে কোটি কোটি মানুষ খাবার তৈরি করে, যে সমস্ত খাবার অন্যেরাও ভক্ষন করে, এখন যারা খাবার তৈরি করে তাদের নখ যদি বড় থাকে তাহলে কিভাবে সম্ভব যে, এই সমস্ত খাবার অন্যে লোকদের জন্য পরিপূর্ণ নিরাপদ হবে! সুতরাং নখ ছোট রাখার পক্ষে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবস্থান নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাস থেকে বাচতেও নখ ছোট রাখার প্রয়োজনীয়তা দুনিয়ার কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না।
খাবারের পূর্বে হাত ধৌত করণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ ইসলাম খাবারের পূর্বে হাত ধৌত করার জোরালো নির্দেশ প্রদান করে। ইসলাম যখন এই নির্দেশ প্রদান করে অন্যান্য জাতী বা সভ্যতা হয়ত সেই বিষয়টি খুব কমই ভাবতে পেরেছিল। হতে পারে ইহুদী-খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে যেহেতু কিতাব অবর্তীণ হয়েছিল তাই কোন কোন মানুষের মধ্যে এই কর্মপ্রদ্ধতি কিছুটা অবশিষ্ট ছিল। তবে না থাকার সম্ভাবনাও কম নয়। পক্ষান্তরে এই বিষয়ে ইসলামের নির্দেশ বেশ জোরালো এবং স্পষ্ট। আজকের বিজ্ঞান ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রদ্ধতি শুধু মেনে নেয়নি বরং বলছে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য অন্যথায় হাতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া পেটে গিয়ে রোগ-ব্যাধী সহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। করোনা ভাইরাস থেকে বাচতেও ইসলামের এই কর্মপ্রদ্ধতির পথ অবলম্বন অপরিহার্য?
গোসল ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ নিয়মিত গোসল করা মহানবী সাঃ এর সুন্নতরূপে পরিগণিত। গোসলের মাধ্যমে অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, হৃদয় মনের প্রফুল্লতা অর্জন হয়। এক হাদীসে এসেছে “কমপক্ষে সাপ্তাহে একবার গোসল করা ওয়াজিব। এখন প্রশ্ন হতে পারে ইসলাম প্রতিদিন গোসল অপরিহার্য ঘোষনা করেনি কেন? আসলে ইসলাম এই ঘোষনা করলে মানুষ সমস্যায় পতিত হত। কারণ হতে পারে পানি সংকট, জ্বর, সর্দি-কাশি, কফ বা ঠান্ডা জনিত রোগ, সফর, যুদ্ধে অবস্থান, প্রচন্ডশীত ইত্যাদি। মনে রাখবেন ইসলামের চোখ অনেক শক্তিশালী। ইসলাম জানে কোন নির্দেশ কোন পর্যায়ে রাখতে হয় অর সেজন্যই মহানবী সাঃ ও পবিত্র কুরআনের বহু নির্দেশ স্থান কাল পাত্র ভেদে সমগ্র জনগোষ্ঠির জন্য বিশ্বজনীন এবং কল্যানকর। আর ইহাও সত্য যে, চলমান শতাব্দির বিজ্ঞানের নিকট গোসলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলাম যখন গোসলের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছিল তখন দুনিয়াতে এমন কোন জাতী ছিল বলে মনে হয় না যারা নিয়মিত গোসলকে মানব জীবনের জন্য কল্যানকর ও অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করত। ইউরোপ আমেরিকাও নিয়মিত গোসলের কল্যনকর দিক অনুধাবন করেছে ইসলামের বহু পর। নিয়মিত গোসল করলে শরীরে লেগে থাকা ময়লা যেমন দূর হয় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া লেগে থাকলেও সেগুলো চলে যায়। বর্তমান সময়ে করোনা থেকে বাচতেও নিয়মিত গোসলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
কুলি ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ মাঝে মধ্যে কুলির মাধ্যমে মুখ পরিস্কার রাখা ইসলামের বিধান। মহানবী সাঃ অজুর মাধ্যমে তার অনুসারীদের এই শিক্ষা প্রদান করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মাঝে মধ্যে কুলি করলে দাতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও লেগে থাকা অবশিষ্ট খাদ্যে পরিস্কার সহ আরও বহুবিদ উপকারিতা রয়েছে। মনে রাখতে হবে ইসলাম এই নির্দেশ দিয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে। কুলির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য কারণ মাস্ক কিন্তু চব্বিশ ঘন্টাই মুখে থাকে না। আর মুখে যেহেতু সাবান পৌছানো সম্ভব নয় তাই কুলি করাই হল ভারসাম্যপূর্ণ প্রন্থা। বর্তমান সময়ে করোনা থেকে বাচতে নিয়মিত কুলির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী দ্বিমত পোষন করবে না।
গোফ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ গোফ বড় থাকলে সেখানে নিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যাকটেরিয়া জমা হতে থাকে। এবং বাসা থেকে বের হলে ধুলো-বালিও জমতে থাকে ফলে পানি খেতে গেলে সেই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ও ধুলো-বালি পেটে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের বড় গোফ রয়েছে তাদের মধ্যে কতজন লোক আপনি পাবেন পানি পান করার পূর্বে গোফ ধৌত করছে? আর সব সময় এটা সম্ভবও নয়। তাই ইসলামের কাছে গোফ বড় করা পছন্দনীয় নয়। করোনা থেকে বাচতেও গোফ ছোট রাখার প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষন করতে পারবে না যদি করে তাহলে যুক্তি পদদলিত করা হবে।
চোখ ধৌত করণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ চোখের পাপড়িতে যেহেতু চুম্বক রয়েছে তাই ধুলোবালি ও ব্যাকটেয়িয়া চোখের পাপড়িতে গিয়ে জমা হয়ে থাকে। সতন্ত্রভাবে চোখ ধৌত করার নির্দেশ ইসলামে না থাকলেও অজুর বিধানে রয়েছে। যখন অজুর মাধ্যমে মুখ মন্ডল ধৌত করা হয় তখন চোখ এমননিতেই পরিস্কার হয়ে যায়। আজকের বিজ্ঞান এই বিষয়ের সঙ্গে কোন দ্বিমত পোষন করতে পারবে না। বর্তমান সময়ে করোনা থেকে বাচতে মাঝে মধ্যে মুখ ধৌত করার প্রয়োজনীয়তা কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী অস্বীকার করতে পারবে না।
চুল মাসেহ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ মানুষ যখন বাহিরে বের হয় তখন প্রচুর ধুলোবালি ও ব্যাকটেরিয়া এমনকি ভাইরাস চুলে এসে জমা হতে থাকে। সতন্ত্র ভাবে মাথা ধৌত করার নির্দেশ ইসলামে নেই। আর এই নির্দেশ প্রদান করলে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ত। চলতে ফিরতে হয়ত আবেগি মুসলিমগণ মাথা ধৌত করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ত তাই ইসলাম মাথা মাসেহ করার বিধান দিয়েছে। অজুতে পাচবার মাথা মাসেহ করা হয় ফলে উপরিভাগের ধুলোবালি অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়। হাত যখন মাঝে মধ্যে মাথায় লাগে তখন চুলের উপরিভাগেই লাগে ভিতরে নয়। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান মাথা মাসেহ করার প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না।
মাথা আবৃতকরণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ ইসলামে মাথা ঢেকে রাখার সাধারন নির্দেশ রয়েছে। মাথা ঢেকে রাখলে সূর্যের তাপে মাথা গরম হয় না, ধুলোবালি চুলে এসে জমতে পারে না। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এসে চুলে জমা হতে পারে না। আজকের বিজ্ঞান মাথা ঢেকে রাখার কল্যানকর দিক অস্বীকার করে না। আর যদি অস্বীকার করতেও চায় কোন লাভ হবে না। অনাগত দিনে ইসলামের এই সমস্ত কর্মপ্রদ্ধতির কল্যানকর দিক বিভিন্নভাবে উম্মুক্ত হতেই থাকবে। ইউরোপ আমেরিকায় মাথা ঢেকে রাখার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপ আমেরিকায় একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নর-নারী নির্বিশেষে ক্যাপ পরিধান করে থাকে। ডাক্টার চিকিৎসা বিজ্ঞানী সহ বর্তমান সময়ে অসংখ্য মানুষ করোনা সমস্যার কারণে মাথা ঢেকে রাখছে।
কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ বহু মানুষ আছে এমন যারা হাফ শার্ট বা গেঞ্জি পরিধান করে। এতে যেহেতু কনুই পর্যন্ত উম্মুক্ত থাকে তাই ইসলাম কনুই পর্যন্ত ধৌত করার নির্দেশ প্রদান করে। হাতের পশমে ধুলোবালি ও ব্যাকটেরিয়া লেগে থাকা অস্বাভাবিক নয়। কাজ কর্ম করতে গিয়েও হাতে ময়লা লেগে থাকে। সুতরাং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করাই যুক্তি সংগত একটি কর্মপ্রদ্ধতি। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষন করবে না।
পা ধৌত করণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ অজুতে ইসলাম পা ধৌত করার নির্দেশ প্রদান করে। কারণ রাস্তা ঘাটে চলতে গেলে পায়ে প্রচুর ময়লা লেগে থাকে। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াও লেগে থাকে। মুসলিমগণ অজুতে প্রতিদিন পাচবার পা ধৌত করে। ইশরাক, আওয়াবিন, চাশত, তাহাজ্জুদ হিসাব করলে নয়বার পা ধৌত করার বিধান রয়েছে। কোনভাবেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের পক্ষে ইসলামের এই শ্বাশত বিধানের কল্যানকর দিক অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে অজু ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ মহানবী সাঃ নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে অজু করতেন। যেহেতু বাসায় মানুষের পা সর্বদাই উম্মুক্ত থাকে তাই পায়ে ধুলো ময়লা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া লেগে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এই ময়লা পা নিয়ে বিছানায় গেলে চাদরে সেগুলো গিয়ে লেগে যাবে। সেখানে আবার যদি হাত লাগে আর সেই হাতে যদি সন্তান কিংবা স্ত্রীকে স্পর্শ করা হয় তাহলে সেটা কেমন করে কল্যান হতে পারে। কেমনভাবে সম্ভব যে, আজকের বিজ্ঞান মহানবী সাঃ এর এই কর্মপ্রদ্ধতির কল্যানকর দিক অস্বীকার করবে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা এমনকি ধর্মে অবিশ্বাসী লোকেরাও কি নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে হাত পা ধৌত করার মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রদ্ধতির পথ অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে?
কাপড় ধৌতকরণ ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ ইসলাম মানুষকে কাপড় ধৌত করার নির্দেশ প্রদান করেছে। আজকের বিজ্ঞান বলছে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস কাপড়েও লেগে থাকে সেই সঙ্গে ময়লা সেতো থাকেই। পশ্চিমা সভ্যতা সহ দুনিয়ার অন্যান্য জাতী নিয়মিত কাপড় ধৌত করার মত এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রদ্ধতি ইসলামের বহু বছর পর অনুধাবন করেছে। বর্তমান সময়ে করোনা থেকে বাচতেও নিয়মিত কাপড় ধৌত করার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। চিকিৎসা বিজ্ঞান ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিমত করবে না।
দাত পরিস্কার ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে দাত পরিস্কার করার জোরালো নির্দেশ ইসলামে রয়েছে আর তাই তখন বিভিন্ন প্রকার গাছের ডাল চিবিয়ে সেগুলো দিয়ে দাত পরিস্কার করা হত। আজকের বিজ্ঞান বলছে নিয়মিত দাত পরিস্কার না করলে এর বহু অপকারিতা রয়েছে। এই বিষয় বিস্তারিত লিখতে গেলে পঞ্চাশ পৃষ্ঠাও যথেষ্ট নয়। পশ্চিমা সভ্যতা সহ দুনিয়ার অন্যান্য জাতী নিয়মিত দাত পরিস্কার করার মত এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রদ্ধতি ইসলামের বহু বছর পর অনুধাবন করেছে।
নিদ্রা থেকে জাগত হয়ে হাত ধৌত করন ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ ইহা ইসলামের একটি সাধারন নির্দেশ যে, একজন মুসলিম নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে হাত ধৌত করবে। এক্ষেত্রে মহানবী সাঃ যুক্তি হিসাবে ইহা পেশ করেছেন যে, মানুষ যখন নিদ্রা যায় তখন তার হাত কোথায় কোথায় লেগেছে সেই বিষয়টি তার জানা নেই। এমন যুক্তিকে কেমন করে খন্ডন করা সম্ভব।
স্ত্রী সহবাস করে লজ্জাস্থান ধৌত করন ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ স্ত্রী সহবাস করে গোসল করা সেটা রাত্রে না সক্ষম হলে অন্ততপক্ষে লজ্জাস্থান ধৌত করা একটি সাধারন নির্দেশ। কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলামের এই নির্দেশ পালনের মধ্যে রয়েছে উপকারীতা এবং অমান্য করার মধ্যে রয়েছে অনেক অপকারিতা যা আজকের বিজ্ঞান কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না। মনে রাখবেন ইসলাম এই নির্দেশ দিয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে যা পশ্চিমা সভ্যতা সহ অন্যান্য জাতী অনুধাবন করেছে ইসলামের বহু পর।
পাত্রে কুকুরের মুখ দেওয়া ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ এক্ষেত্রে মহানবী সাঃ সাতবার মাটি দিয়ে ধৌত করতে বলেছেন। তখন যেহেতু সাবানের প্রচলন ছিল না তাই মাটি ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন। আর সাতবার মাটি ও পানি দিয়ে পাত্র ধৌত করলে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থাকার কথা নয়। আজ থেকে প্রায় বিশ বছর পূর্বে খুব সম্ভব মাসিক মদিনা পত্রিকা থেকে জানতে পেরেছিলাম রাশিয়ার কয়েকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী কুকুরের মুখ দেওয়া একটি পাত্রকে সাতবার মাটি দিয়ে ধৌত করার মাধ্যমে বিষয়টি পরিক্ষা করে লক্ষ্য করেছেন যে, সেই পাত্রে কোন ভাইরাস ও ব্যাকরেটিয়া নেই। ইসলামের এই চ্যালেঞ্জ আজও উম্মুক্ত আছে। চাইলে মহানবী সাঃ এর এই নির্দেশ যে কেউ কোন গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে পারে।
বাশি খাবার গ্রহন ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ একাধিক হাদীসে এসেছে বাশি খাবার বা মেয়াদ উত্তির্ণ খাবার তিনি পছন্দ করতেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ একমত যে, বাশি খাবার বা মেয়াদ উত্তির্ণ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাশি খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকার বিষয়টি কোন ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে হোটেলে বাশি খাবার এবং অন্যান্য মেয়াদ উর্ত্তিণ খাবার বিক্রয় নিষিদ্ধ। এই আইন অমান্য করলে জেল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশেও এই আইন রয়েছে তবে প্রয়োগ কম।
উম্মুক্ত খাবার ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ খাবার উম্মুক্ত রাখা নিষেধ। ইহা মহানবী সাঃ এর নির্দেশ। খাবার উম্মুক্ত রাখলে সেখানে মশা, মাছি, তেলাপোকা, ইদুর ইত্যাদি প্রাণী এসে বসে আর এই সমস্ত প্রানী অনেক নোংরা জায়গায়ও বিচরন করে থাকে। খাবার উম্মুক্ত থাকলে সেখানে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব উড়িয়ে দেওয়া যায় না তাই ইসলামে খাবার উম্মুক্ত রাখা নিষিদ্ধ। জগতে এমন কোন যুক্তি বা বিজ্ঞান আছে যে, ইহা ভুল প্রমান করবে। মনে রাখবেন ইসলাম এই নির্দেশ দিয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে যা পশ্চিমা সভ্যতা সহ অন্যান্য জাতী অনুধাবন করেছে ইসলামের বহু পর।
টয়লেট করে হাত ধৌত করা ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ টয়লেট করে ভালভাবে হাত ও পায়খানার জায়গা পানি দিয়ে ধৌত করার জোরালো নির্দেশ ইসলামে পাওয়া যায়। তখন মাটি ও পানির সমন্বয়ে হাত ধৌত করা হত কারণ তখন সাবানের প্রচলন ছিল না। আজকের বিজ্ঞান একমত যে, টয়লেট করে পায়খানার জায়গা ও হাত ধৌত করতে হবে। বিজ্ঞান কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে হাত ধৌত না করলে হাতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর পায়খানা পরিস্কার করার বিষয়টিত বলার অপেক্ষা রাখে না। ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য জাতি পায়খানা করে পায়খানার জায়গা ও হাত ধৌত করার বিষয়টি ইসলামের বহু পর অনুধাবন করেছে। পূর্বে তারা হয় মুছে ফেলত ফলে পায়খানা কমবেশী লেগে থাকত অথবা যে কর্মপ্রদ্ধতিই তারা অবলম্বন করে থাক না কেন সেই সমস্ত প্রদ্ধতিতে পরিচ্ছন্নতার পূর্ণতা ছিল না বলা যায়।
প্র¯্রাব করে হাত ধৌত করা ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ প্র¯্রাব করে প্র¯্রাবের জায়গা পানি দিয়ে পরিস্কার করা এবং ভালভাবে হাত ধৌত করার জোরালো নির্দেশ ইসলামে পাওয়া যায়। আজকের বিজ্ঞান একমত যে, প্র¯্রাব করে প্র¯্রাবের জায়গা ও হাত ধৌত করতে হবে। কারণ প্র¯্রাবে ব্যাকটেরিয়া সহ আরও ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। যেগুলো হাতে ও প¯্রাবের জায়গায় লেগে থাকাটা নিরাপদ নয়।
উচ্চস্বরে জোর গলায় হাচি ইসলাম ও বিজ্ঞানঃ ইহা ইসলামে নিষিদ্ধ। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে থাকলে তা অন্যের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামের এই প্রদ্ধতির সঙ্গে বিজ্ঞানের দ্বিমত পোষন করার কোন সুযোগ নেই। আর ইসলাম এই নির্দেশ দিয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে। বিজ্ঞান এখন সেটা শুধু মেনেই নিচ্ছে না বরং ইহা বিজ্ঞানের জোরালো নির্দেশ যে, মহামারি বা ভাইরাস আক্রমনের সময় ইহা কেহ করতে পারবে না। বর্তমান সময়ে করোনা আক্রমনের ক্ষেত্রেও ডাক্টার চিকিৎসকগণ মানুষের সম্মুখে উচ্চস্বরে বা জোরে হাচি দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে।
অবশেষে বলতে চাই যাই লিখেছি অনেক চিন্তা গবেষনা করে লিখেছি তবুও মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। কারো দৃষ্টিতে কোন তথ্যগত ভুল পরিদৃষ্ট হলে অবশ্যই টিউমেন্ট করবেন। আপনার তথ্য সঠিক হলে সংশোধন করতে আমার কোন প্রকার আপত্তি নেই। এই ব্লগের সকল ব্লগারের কল্যান কামনায় আজকের আর্টিক্যাল এখানেই শেষ করছি। আর্টিক্যালটি উৎস্বর্গ করছি আমার পিতা মাতা সহ দুনিয়ার সকল মৃত মুসলিম নর-নারীর আত্মার মাগফেরাতের জন্য।
আমি এমডি মাহমুদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I am Md amdad ali al mahmud, Live in Dhaka, I am blogger & thinker, my five book waiting for publish in BD