কম্পিউটারের র‍্যাম কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার

আমরা সবাই দ্রুত গতির কম্পিউটার ভালবাসি কারন ধীর গতির কম্পিউটার আসলেই বিরক্তিকর। এই কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি করার পিছনে যে সব যন্ত্রের অবদান সব থেকে বেশি রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে র‍্যাম। তাই কম্পিউটারের র‍্যাম বাছাই করার সময় আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। সব ধরনের কম্পিউটার মানে সেটা ডেস্কটপ হোক অথবা ল্যাপটপ হোক সেটির ভাল পারফর্মেন্স এর জন্য বিশেষ করে গতি বাড়ানোর জন্য র‍্যাম একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ।

তবে যারা কম্পিউটারে গেম খেলতে পছন্দ করেন অথবা যারা প্রথম থেকেই গেমিং কম্পিউটার বানাতে চান তাদের কম্পিউটারের ভাল পারফর্মেন্সের জন্য র‍্যাম সব থেকে বেশি জরুরী। কারন কম্পিউটার ধীর গতির হয়ে গেলে সেটা দিয়ে গেম খেলায় কোন মজা পাওয়া যাবে না। গেম খেলার ভাল অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই কম্পিউটারটি ফাস্ট হতে হবে। তাই গেমিং কম্পিউটারের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ড এবং প্রসেসর এর পরেই র‍্যাম এর দিকে নজর দেয়া দরকার। তবে শুধু গেম খেলা নয় যেকোনো ধরনের কাজের জন্যই কম্পিউটারের গতি ভাল হওয়া আবশ্যক। নাহলে আপনি কোন কাজ করেই মজা পাবেন না সেটা হোক সিনেমা দেখা অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা। এই টিউনে আমরা কম্পিউটারের জন্য র‍্যাম বাছাই করার আগে যে বিষয় গুলো বিবেচনা করা উচিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

১. কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় র‍্যাম নির্ধারণ করা

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির এই দ্রুত প্রসারের কারনে আমাদের সবারই কমবেশি প্রযুক্তি নিয়ে জানাশুনা আছে এবং কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সম্পর্কে একটা ধারনা আছে। তাই বর্তমান সময়ে দেখা যায় প্রায় সবাই তাদের কম্পিউটারের জন্য কমপক্ষে ৪ জিবি র‍্যাম ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া অনেকে ৮ জিবি অথবা ১৬ জিবি র‍্যামও ব্যবহার করে থাকে। তবে আপনার কম্পিউটারের জন্য কতটুকু র‍্যাম প্রয়োজন সেটা আসলে নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তার উপরে। আপনি যদি খুব বেশি গ্রাফিক্স নির্ভর কাজ যেমন ভারী গেম খেলা, বড় ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মত কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কমপক্ষে ১৬ জিবি র‍্যাম ব্যবহার করতে হবে।

তবে আপনার বাজেট যদি আরও বেশি থাকে তাহলে আপনি এর থেকে বেশিও ব্যবহার করতে পারেন। আর আপনি যদি অল্প খরচে গেমিং কম্পিউটার বানাতে চান তাহলে আপনাকে কমপক্ষে ৮ জিবি দিয়ে শুরু করতে হবে। কারন বর্তমানে অনেক গেম আছে যেগুলো খেলতে কমপক্ষে ৮ জিবি র‍্যাম এর প্রয়োজন হয় সুতরাং ৮ জিবি দিয়ে শুরু না করলে গেম খেলার সময়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তবে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশের মধ্যে র‍্যাম পরিবর্তন করা সব থেকে সহজ তাই বাজেট এর সমস্যা থাকলে আপনি যেকোনো পরিমান দিয়েই শুরু করতে পারেন।

২. র‍্যাম এর সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা

এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও এই ভুল টা আমরা প্রায় মাঝেমধ্যেই করে থাকি। র‍্যাম কেনার আগে অবশ্যই কমপক্ষে দুইটি জিনিস আমাদের সবসময় খেয়াল রাখা দরকার এক, DDR (Double data rate) কোন জেনারেশনের এবং মাদারবোর্ডে র‍্যাম বসানোর জন্য কয়টি DIMM স্লট আছে। এর মধ্যে DDR জেনারেশন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন যে সকল মাদারবোর্ড গুলো নতুন জেনারেশনের DDR সাপোর্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সেগুলোতে পুরাতন DDR জেনারেশন এর র‍্যাম কাজ করবে না। যে সকল মাদারবোর্ডে DDR4 র‍্যাম বসানোর স্লট আছে সেগুলোতে  DDR3 র‍্যাম কাজ করবে না। একই ভাবে যে সকল মাদারবোর্ডে DDR3 র‍্যাম বসানোর স্লট আছে সেগুলোতে DDR4 কাজ করবে না। এটাও মনে রাখা দরকার যে অনেক ছোট আকারের মাদারবোর্ড যেমন micro-ATX and mini-ITX এ শুধু মাত্র ২ টি DIMM স্লট থাকে। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই আপনি এই সকল মাদারবোর্ডে ২ টির বেশি র‍্যাম বসাতে পারবেন না। তাই কেনার আগে অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত আপনার মাদারবোর্ডে কয়টি স্লট আছে।

৩. র‍্যাম এর গতি

র‍্যাম এর গতি সাধারণত দুইটি জিনিসের উপরে নির্ভর করে এর একটি হচ্ছে ফ্রিকোয়েন্সি, আরেকটি হচ্ছে ল্যাটেন্সি। র‍্যাম এর ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে সিপিইউ এর ফ্রিকোয়েন্সি এর মত। র‍্যাম এর ফ্রিকোয়েন্সি যত বেশি হবে র‍্যাম তত তাড়াতাড়ি তথ্য গুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারবে। অপরদিকে যখন সিস্টেম কে কোন আদেশ প্রদান করা হয় সেই কাজটি সম্পন্ন হতে যে সময় লাগে সেটা কে ল্যাটেন্সি বলে। তাই ল্যাটেন্সি যত কম হবে, পরের কাজটি সম্পন্ন করার জন্য র‍্যাম তত দ্রুত প্রস্তুত হতে পারবে। একটি র‍্যাম এর ভাল কাজ করার জন্য ফ্রিকোয়েন্সি ও ল্যাটেন্সি এই দুইটারই ভাল মত কাজ করতে হবে। তবে দুইটি কিন্তু এক জিনিস নয়। সাধারনভাবে একটি র‍্যাম এর যদি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি সম্পন্ন হয় এবং কম ল্যাটেন্সি সম্পন্ন হয় তাহলে সব থেকে ভাল কাজ করবে।

৪. র‍্যাম সহজেই পরিবর্তন করা যায়

তবে একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার যে কোন একটি যন্ত্রাংশ কখনোই কম্পিউটারের ভাল পারফর্মেন্স দিতে পারে না। ভাল পারফর্মেন্সের জন্য চাই সব গুলো যন্ত্রাংশের সম্মিলিত প্রয়াস। তাই একটি অল্প দামের কম্পিউটারের নিশ্চয় ১৬ জিবি র‍্যাম লাগিয়ে কোন লাভ হবে না। কারন র‍্যাম এর থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাদারবোর্ড ও প্রসেসর যেগুলো কম্পিউটারের ভাল পারফর্মেন্সের পিছনে সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখে। যেহেতু কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশের মধ্যে র‍্যাম খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায় তাই কম্পিউটার কেনার সময়ে যদি বাজেটের স্বল্পতা থেকে থাকে তাহলে র‍্যাম এর আগে অন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের পিছনে টাকা বেশি খরচ করা উচিত।

তবে তুলনামূলক ভাবে কম্পিউটারের অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ গুলোর মধ্যে র‍্যাম বাছাই করা সব থেকে সহজ। আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে আপনি অনায়াসেই র‍্যাম পছন্দ করে নিতে পারবেন। তবে বর্তমানে যে সকল ভারী ভারী সফটওয়্যার আমাদের ব্যবহার করতে হয় এবং যেভাবে খুব দ্রুত সফটওয়্যার গুলো আপডেট নেয় তাতে কম্পিউটার সহজেই ধীর গতির হয়ে যায়। তখন র‍্যাম পরিবর্তন করা জরুরী হয়ে পরে। তাই বাজেটের একটু সমস্যা থাকলেও কমপক্ষে ৮ জিবি দিয়ে শুরু করা উচিত। আর বাজেটের সমস্যা না হলে ১৬ জিবি লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে আশাকরি উপরের বিষয়গুলো আপনাদের কম্পিউটারের জন্য র‍্যাম বাছাই করতে সহযোগিতা করবে।

বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন দামের র‍্যাম দেখতে ভিজিট করতে পারেনঃ https://www.startech.com.bd/component/ram

Level 0

আমি রবিউল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস