বর্তমান প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা সবাই হচ্ছি প্রযুক্তি নির্ভর। আর এই প্রযুক্তির একটি বড় অংশ হচ্ছে কম্পিউটার। আর কম্পিউটার কে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজন একটা অপারেটিং সিস্টেম। আমাদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে অনেক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম। ক্র্যাক উইন্ডোজ এবং অরিজিনাল উইন্ডোজ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করার আগে চলুন অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জেনে নেই।
এক সময় কম্পিউটার এ নির্দিষ্ট কোন কাজ করার জন্য কম্পিউটার এ আলাদা আলাদা করে প্রোগ্রাম তৈরি করার প্রয়োজন হতো। আর এই রকম প্রতিটি কাজ করার জন্য প্রোগ্রাম তৈরির সময় প্রোগ্রাম এর সাথে বেশ কিছু জিনিস অ্যাড করে দিতে হতো, যেমনঃ আপনি কীবোর্ডে কোন “কী” প্রেস করছেন তা রীড করা, মেমোরিতে ডাটা স্টোর করা, ডাটা গুলোকে উদ্ধার করা, এবং প্রোগ্রামটি কীভাবে কাজ করছে তা ডিসপ্লেতে দেখা। আর এই জিনিসগুলোই প্রতিটি আলাদা কাজ এর জন্য প্রোগ্রাম এর সাথে অ্যাড করে দিতে হতো। আর এটি ছিল স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু বেশি ঝামেলার। আর এর থেকে মুক্তি দিতেই অপারেটিং সিস্টেম এর উদ্ভব।
অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে কম্পিউটার এর একটি কোর সফটওয়্যার যা, আপনার কম্পিউটার এর ইনপুট, আউটপুট, স্টোরেজ প্রসেসিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে, এটিকে সংক্ষেপে OS বলা হয়। অপারেটিং সিস্টেম কে আপনি আপনার কম্পিউটার এ চলমান অন্যান্য সফটওয়্যার / অ্যাপ্লিকেশন গুলোর নিয়ন্ত্রক ভাবতে পারেন। যেখানে সবগুলো সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন অপারেটিং সিস্টেম এর আন্ডারে কাজ করে থাকে, আর অপারেটিং সিস্টেমই এই সফটওয়্যারগুলো কি করছে কি করতে হবে এইগুলো দেখাশোনা করে। আবার অপারেটিং সিস্টেম যে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে তা কিন্তু না। অপারেটিং সিস্টেম আবার বায়োস এর উপর নির্ভরশীল (BIOS- Basic Input Output System). বায়োস অপারেটিং সিস্টেম কে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে, যেমনটা কার্নেল করে থাকে। বায়োস কোন সফটওয়্যার নয়, এটি প্রতিটি কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার চিপ এর সাথে বিল্টইন থাকে, যাকে ফার্মওয়্যার বলা হয়। সব ধরনের কম্পিউটার এ একই রকম অপারেটিং সিস্টেম এবং কার্নেল কাজ করলে ও বায়োস কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার মডেল ও প্রস্তুতকারক কোম্পানী অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে।
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এবং আমাদের কাজগুলো আরো সহজ ও সুন্দরভাবে করার জন্য রয়েছে অনেক অপারেটিং সিস্টেম। তার মধ্যে খুব জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ হচ্ছে মাইক্রোসফটের একটি ফ্ল্যাগশিপ অপারেটিং সিস্টেম যা আমরা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কাজে অনেক আগ থেকেই ব্যবহার করে আসছি। এটি একটি গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেম। গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেমের প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট তাদের ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম (DOS) এর বাড়তি সুবিধা হিসেবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে এবং তারপর থেকে উইন্ডোজ এর অনেকগুলি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত এটি ব্যক্তিগত বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উইন্ডোজ সংস্করণসমূহ হলোঃ
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ কে তাদের শেষ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মার্কেটে রিলিজ করে। এর পর ক্রমান্বয়ে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এর পরবর্তী সংস্করন গুলো বাজারে আনে। উইন্ডোজ ১০ এর শেষ আপডেট ছিল ভার্সন ১৮০৯ যা ০২ অক্টোবর ২০১৮ তে মার্কেটে রিলিজ হয়। কিন্তু শুরু থেকেই মাইক্রোসফট এর প্রতিটি প্রোডাক্ট এর দাম বেশ চওড়া হওয়ায় এটি সাধারণ এর নাগালের বাহিরে ছিল, আর সেখান থেকেই ক্র্যাক এর উৎপত্তি। ক্র্যাক বলতে নরমালি অবৈধ ভাবে কোন কিছু ব্যবহার করাকেই বুঝায়।
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ইউজারই উইন্ডোজ এর ক্র্যাক ভার্সন ব্যবহার করেন শুধু মাত্র এর চওড়া দাম এর কারনে। আর অল্প কিছু ইউজার উইন্ডোজ এর বৈধ লাইসেন্স কিনে ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন ক্র্যাক উইন্ডোজ আর অরিজিনাল উইন্ডোজ এর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। এখন আপনি ভাবতে পারেন যদি পার্থক্য না থাকে তাহলে উইন্ডোজ কিনে ব্যবহার করার কি প্রয়োজন, আর যারা কিনে ব্যবহার করছে তারাই বা কেন করছে?
এখন অনেকেই বলতে পারেন বা ভাবতে পারেন আমি তো অনেক বছর ধরে ক্র্যাক উইন্ডোজ ব্যবহার করে আসছি, কিন্তু আমার তো কোন সমস্যা হচ্চে না, এবং আমার আপডেট ও ঠিক ঠাক হচ্ছে কম্পিউটার ও স্লো করছে না। তাদেরকে শুধু একটা কথাই বলবো এমনটা ও হতে পারে আপনি যখন ক্র্যাক উইন্ডোজ হ্যাকারের তৈরি টুলসগুলো দিয়ে অ্যাক্টিভেট করেছেন, তখনই আপনার কম্পিউটার মাইক্রোসফট এর সার্ভারে অ্যাড না হয়ে হ্যাকারদের ব্যক্তিগত সার্ভারে অ্যাড হয়ে গিয়েছে। এবং আপনি যে প্রতিনিয়ত যে আপডেটগুলো পাচ্ছে সেটি ও হয়তো হ্যাকারদের সার্ভার থেকেই আসছে।
সবশেষ একটা কথাই বলতে চাই শুধু উইন্ডোজ কেন, আমরা আমাদের প্রয়োজনে কম্পিউটার এ অনেক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি। আর ম্যাক্সিমাম সফটওয়্যারগুলোই পেইড অর্থাৎ আপনি যদি সেগুলোর সব ফিচার পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেটার লাইসেন্স কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর নয়তো ৭ দিন বা ৩০ দিনের জন্য ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করার অনুমতি পাবেন, আর ট্রায়াল ভার্সন এ আপনাকে সব ধরনের ফিচার ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আর এর বিকল্প হচ্চে ক্র্যাক ভার্সন। চাইলে খুব সহজেই অনলাইন থেকে আপনার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারটির ক্র্যাক ভার্সনটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন, যেমনঃ মাইক্রোসফট অফিস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এছাড়া ও আরো অনেক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ছাড়া আপনি রীতিমত অচল। কিন্তু সমস্যা একটাই আপনি যখনই ক্র্যাক ভার্সন ইউজ করবেন তখন নিঃসন্দেহে ভেবে নিতে হবে যে আপনার কম্পিউটার এর নিয়ন্ত্রন অন্য কারো হাতে এবং সেটি খুব বড় কোন জুঁকিতে রয়েছে। সুতারাং এখন থেকেই ভাবুন যে আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন!
আমি রবিউল ইসলাম শাকিল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ।
আপনার পিসিতে সব সফটওয়্যার কি অরিজিনাল? আপনি অফিস কোনটা ব্যবহার করেন? আমার অফিস ২০১৩/২০১৬/২০১৯ এর প্রোডাক্ট কী সহকারে প্রয়োজন ছিল?