এক্সপ্লোর দা এলিগেন্স বা ‘সৌন্দর্যকে পরিদর্শন করুন’ ট্যাগলাইন নিয়ে ওয়ালটন এবার বাজারে আনলো তাদের আরেকটি মিড রেঞ্জ বাজেট স্মার্টফোন প্রিমো আরএক্স৭। এর আগের ‘প্রিমো আরএক্স৬’ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ভেতর অনেকটা সারা ফেলেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন এবার নিয়ে এলো আরএক্স সিরিজের নতুন এক সদস্য আরএক্স৭।
বাজারে এই ফোনটি আপনি পাবেন ১৩৯৯৯ টাকায়। এটি এর আগের আরএক্স৬ এর থেকে ডিজাইন এর দিক থেকে আরো বেশি অনবদ্য। ১৩৯৯৯ টাকায় এই ফোনে পাওয়া যাবে টাইপ সি চার্জ এবং ডাটা ট্রান্সফারিং পোর্ট। এই বাজেট রেঞ্জে এরকম ফিচার এবং প্রিমিয়াম ডিজাইন প্রিমো আরএক্স৭ কে অন্যসব ফোনের থেকে করেছে আরো বেশি অনন্য। এছাড়াও এর দারুন ক্যামেরা এবং আকর্ষণীয় হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন তো থাকছেই। সব মিলিয়ে এই প্রিমো আরএক্স৭ নিয়ে এই লেখায় থাকবে বিস্তারিত।
ফোনটির বক্সের ভেতর আপনি যা যা পাবেনঃ প্রিমো আরএক্স৭ ডিভাইস, একটি সিম ইজেক্টর পিন, একটি ট্রান্সপারেন্ট ব্যাক কভার, চার্জিং অ্যাডাপ্টার, ইউএসবি কেবল, প্রোটেকশন ফিল্ম(পেপার) এবং কিছু পেপার ওয়ার্কস।
Primo RX7 ডিভাইসটি আসছে স্যান্ডউইচ গ্লাস ডিজাইন এর সাথে। অর্থাৎ স্ক্রিনের ফ্রন্ট প্যানেলে তো গ্লাস পাচ্ছেনই, পিছে তথা রিয়ার প্যানেলেও পাবেন গ্লাস ব্যাক। আর উভয়পাশে এই গ্লাস স্ক্র্যাচ প্রটেক্টিভও বটে। Primo RX7 এর ডিজাইন অনেকটা হুয়াওয়ে ধাঁচের। এর ফ্রন্ট সাইড দেখলে মনে হবে হুয়াওয়ে ওয়াই৬ ২০১৯ এর মত আর পিছনটা পুরোটা হুয়াওয়ে পি২০ প্রো এর মত। সুতরাং ডিজাইন এর দিক দিয়ে ওয়ালটন এই ডিভাইসে ‘নো কম্প্রোমাইজ’ রুল ফলো করেছে। বাজারে ফোনটি পাওয়া যাবে দারুন দুটি কালারে, এগুলো হলোঃ অরোরা গ্রিন এবং মিডনাইট পারপেল, এবং কোন কালারই কোনটির থেকে কম নয়। তবে মিডনাইট পারপেল এর আগের প্রায় সব গ্র্যাডিয়েন্ট কালার সম্বলিত ফোনে দেখা গিয়েছে, সেই হিসেবে অরোরা গ্রিন কালারটি নতুন।
ফোনটিতে ১৯ঃ৯ রেসিও সম্বলিত ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে, আর আমরা জানি যে এই রেসিও সম্বলিত ডিসপ্লে গুলোতে সাইড বেজেল অনেক কম পাওয়া যায়, Primo RX7 ফোনের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম ঘটেনি, আমরা এই ফোনে দেখতে পারব অনেক মিনিমাম একটি বেজেল। এর অপরে থাকছে একটি ওয়াটার ড্রপ নচ, যার ভেতর দেখতে পাব ১৩ মেগাপিক্সেল এর সেলফি শুটার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৩ ইঞ্চি ইন-সেল আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেল। আইফোন ৪এস এর মাধ্যমে এই ইনসেল আইপিএস ডিসপ্লে প্রযুক্তি প্রথম আসে। সাধারন আইপিএস ডিসপ্লেটে টাচ প্যানেল এবং ডিসপ্লে দুটি আলাদা-আলদা লেয়ার তথা সম্পূর্ণ ডিসপ্লে দুটি লেয়ারে বিভক্ত থাকে। তবে ইনসেল আইপিএস ডিসপ্লেতে দুটি আলাদা লেয়ার বদলে এখানে একটি সিঙ্গেল লেয়ার থাকে। একারনে ইনসেল আইপিএস ডিসপ্লে অনেক পাতলা এবং এটি অনেক বেশি টাচ রেস্পন্সিভও বটে।
Primo RX7 এর ডিসপ্লে রেজুলেসন ২৩৫০*১০৮০ পিক্সেল, যার মানে এটি একটি ২কে ডিসপ্লে। ফোনটির ব্রাইটেনেস লেভেলও অনেক ভালো, যা হলো ৪৫০ নিটস। এই ডিসপ্লেটি আপটু ১০ মাল্টি ফিঙ্গার টাচ সাপোর্ট করবে, সুতরাং গেমিং এর টাচ রেন্সপন্স হবে একদম স্মুথ।
Primo RX7 ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এমটি৬৭৬৩ চিপসেট। আর এই এআরএম করটেক্স এ৫৩ (এমটি৬৭৬৩) চিপসেটকে স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ এর সাথে তুলনা করা যায়। এই অক্টাকোর প্রসেসরটির ক্লক স্পিড ২ গিগাহার্জ। এর সাথে থাকছে মালি জি৭১ এমপি২ জিপিইউ, যা ৭৭০ মেগাহার্জ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট।
এতে পাওয়া যাবে ৪ জিবি র্যাম। সুতরাং হালের জনপ্রিয় যত গেমস গুলো আছে, যেমনঃ কল অফ ডিউটি, ফিফা১৯, এস্পল্ট৯, পাবজি ইত্যাদি গেমস এই ফোনে খেলা যাবে একদম অনায়াসে। তাছাড়া ৪ জিবি র্যাম মাল্টি টাস্কিং এর জন্য প্লাস পয়েন্ট তো থাকছেই। ৩২ জিবি ইন্টারনাল রমের পাশাপাশি এতে পাওয়া যাবে একটি ডেডিকেটেড এসডি কার্ড স্লট, যেখানে আপনি ২৫৬ জিবি পর্যন্ত এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ৩২ জিবি রমের ভেতর এতে ইউজারএর জন্য ২৪ জিবি স্টোরেজ ফাকা পাওয়া যাবে।
Primo RX7 ডিভাইসটিতে প্রি-ইন্সটলড ভাবে অ্যান্ড্রয়েড এর লেটেস্ট পাই ৯.ও অপারেটিং সিস্টেম পাবেন। তাছাড়াও ফোনটি কিছুটা কাস্টমাইজড, ইউজার ইন্টারফেস অনেকটা পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।
ক্যামেরার সেন্সর সাইজ বর্ণনা করার জন্য একটি নাম্বার থাকে, যেমন ১/৩.৩, ১/৩.৬ ইত্যাদি। সহজ ভাবে বুঝতে ১ ভগ্নাংশের সাথে যে নম্বর থাকবে তা যতো ছোট হবে আপনার সেন্সর সাইজ ততো বড় হবে। আর আপনার সেন্সর সাইজ যতো বড় হবে তো ভালো পিক্সেলস পাবেন। আর যত ভালো পিক্সেলস হবে ইমেজও তত বেশি আলো সম্বলিত এবং ঝকঝকে হবে। Primo RX7 এর মেইন ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সেন্সরটির সাইজ ১/৩.০৬ এটি স্মার্টফোনের হিসেবে তুলনামূলক বড় ক্যামেরা সেন্সর বলা চলে।
আবার f/1.8, f/2.0, f/2.2 ইত্যাদি নম্বর দিয়ে ক্যামেরার অ্যাপারচার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অ্যাপারচার এর মানে হচ্ছে লেন্সের ফোকাল লেন্থ। অ্যাপারচার নাম্বারে f ভগ্নাংশের পরে যে সংখ্যা থাকে সেটি যত ছোট হবে আপনার ক্যামেরার ওপেনিং ততই বড় হবে এবং ওপেনিং যত বড় হবে ক্যামেরা তত ভালো ভাবে লো লাইট ছবি উঠাতে পারবে। এবং যে শ্যালো ডেফত অফ ফিল্ড ইফেক্ট থাকে তাও ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যাবে। শ্যালো ডেফত অফ ফিল্ড ইফেক্ট মানে, আপনি দেখেছেন যে ছবি উঠানোর সময় আপনার সামনে থাকা সাবজেক্ট এর ছবি পরিষ্কার হয় এবং সাবজেক্ট এর পেছনে ঘোলা ইফেক্ট থাকে, তো আপনার ক্যামেরার অ্যাপারচার নাম্বার যতো কম হবে এই ইফেক্ট ততো ভালো দেখতে পাওয়া যাবে।
Primo RX7 এর সেকেন্ডারি রিয়ার ক্যামেরার অ্যাপারচার f/2.0, সুতরাং এর মাধ্যমে আপনি দারুন সব ছবি তুলতে পারবেন, যেখানে ছবির কোয়ালিটি যেমন সুন্দর থাকবে, তেমনি সাবজেক্টকে ফোকাসে রেখে ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করতেও সুবিধা হবে। আর এই ক্যামেরায় থাকা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি, ছবির বিষয় এবং পরিবেশ এর ওপর বিবেচনা করে নিজে থেকে ছবিতে কিছু ইন্টেলিজেন্স ইফেক্ট ও এডজাসমেন্ট প্রয়োগ করবে। ডুয়াল ক্যামেরা মডিউল এর সাথে থাকবে একটি ভালো মানের ফ্ল্যাশ।
এর সামনের ফ্রন্ট ক্যামেরায় পাওয়া যাবে ফেস ডিটেকশন অটোফোকাস প্রযুক্তি, যদিও এটি রিয়ার ক্যামেরাতেও বিদ্যমান। এখানে এই ফেস মানে হচ্ছে পর্যায়, দূরত্ব। এখানে সফটওয়্যার নিজে থেকে সাবজেক্ট এবং ব্যকগ্রাউন্ড এর দূরত্ব পরিমাপ করে, সাবজেক্টকে খুব ভালোভাবে ফোকাসে রাখতে সাহায্য করে। Primo RX7 এর ফ্রন্ট প্যানেলে পাওয়া যাবে ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, যার দ্বারা দারুন দারুন সব সেলফি তোলা ফোনটি কেবল আপনার হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
সিকিউরিটি এর জন্য প্রাইমারি মেথড হিসেবে আপনি পাবেন একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। আর ব্যবহারে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরকে মোটামোটি ফাস্ট মনে হয়েছে। আপনি একসাথে ৫ টি আঙ্গুল এর ছাপ ফোনে সেইভ করে রাখতে পারবেন। এর স্পেসিফিকেশনে পাওয়া যায় এর রেসপন্স টাইম ১০০ মিলিসেকেন্ড এরও কম, আর বাস্তবেও এর ফাস্টনেস আমার কাছে ১ সেকেন্ডেরও কম লেগেছে।
সেকেন্ডারি মেথড হিসেবে এতে থাকছে ২ডি ফেস আইডি আনলক। এর ১৩ মেগাপিক্সেল দারুন একটি ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা থাকার কারনে ফেসআইডি ফিচার মোটামটি ভালই কাজ করবে।
ফোনটিতে পাওয়া যাবে টাইপ সি চার্জ এবং ডাটা ট্রান্সফারিং পোর্ট। এবং সম্পূর্ণ ডিভাইসকে ব্যকআপ দিবে একটি ৩৯০০ এমএএইচ এর লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারি ডিভাইসকে অন্তত ফুল চার্জএ সারাদিন ব্যকআপ দিতে পারবে।
মোট কথায়, ১৪০০০ হাজার টাকায় দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটন’এর এই স্মার্টফোনটিকে একটি ‘ফুল ফিচারড প্যাক’ বলা যায়। একটি আদর্শ স্মার্টফোনের এমন কোন কাজ নেই যা এতে করা যাবে না। তাই এই বাজেটে যদি কেউ কোন ভালো স্মার্টফোন কেনার ব্যাপারে ভেবে থাকেন, তবে দেশীয় ওয়ালটন’এর এই প্রিমো আরএক্স৭ এর কথা চিন্তা করতে পারেন।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।