বর্তমান বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও মূল্যহ্রাসের কারনে ডিএসএলআর ক্যামেরা সহজলভ্য। একজন ক্রেতা হিসেবে কিভাবে ডিয়েসেলার ক্যামেরা নির্বাচন করবেন তা বিস্তারিত জেনে নিন। বর্তমানে সর্বনিম্ন ২৩, ৫০০ টাকার মধ্যে ডিএসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যায়। তাছাড়া ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ভালো মানের এবং উন্নত কনফিগারেসনের ডিয়েসেলার ক্যামেরা কিনতে নিচে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলঃ
ডিএসএলআর ক্যামেরায় আপগ্রেড হওয়ার কারন
ডিয়েসেলার ক্যামেরার বর্তমান মূল্য তালিকা।
১. ছবির মানঃ ডিএসএলআর ক্যামেরাতে ইমেজ সেন্সর বৃহত্তর হওয়ায় পিক্সেল সাইজও বৃহত্তর হয় এবং ক্যামেরাটিকে অপেক্ষাকৃত দ্রুত আইএসওতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ফলে শাটার স্পীড ও দ্রুত হয় এবং গ্রেইনের পরিমাণ কমে যায়। ডিএসএলআর ক্যামেরাতে আরও আছে বিল্ট-ইন নয়েস-রিডাকশন ক্যাপাবিলিটি।
২. অভিযোজন-প্রবণতাঃ ডিএসএলআর ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তনের ক্ষমতা ফটোগ্রাফারদের অফুরন্ত সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। অনেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেন্স যেমন ওয়াইড এঙ্গেল বা সুপার লং ফোকাল লেংথ লেন্স ডিএসএলআর ক্যামেরায় লাগানো যায়। এছাড়াও আরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ডিএসএলআর ক্যামেরায় ব্যবহার করা যায়। এটি লক্ষণীয় যে মানের বৈচিত্রে লেন্স বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লেন্সের কোয়ালিটি ইমেজ কোয়ালিটির উপর ব্যপক প্রভাব ফেলে।
৩. গতিঃ স্টার্ট আপ, ফোকাসিং ও শাটার ল্যাগের দিক থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরার গতি অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি।
৪. অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডারঃ রিফ্লেক্স মিররের কারনে ডিএসএলআর ক্যামেরা আদর্শ ছবি ধারন করতে পারে।
৫. বৃহত্তর আইএসও রেঞ্জঃ যদিও ক্যামেরার মান ভেদে আইএসও রেঞ্জ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তবুও সাধারণত ডিএসআলআর ক্যামেরা বিস্তৃত আকারে আইএসও রেঞ্জ প্রদান করে যার সাহায্যে বিভিন্ন পরিবেশে সহজেই ছবি তোলা যায়।
৬. ম্যানুয়াল কনট্রোলঃ ডিএসএলআর ক্যামেরা এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছামতো ক্যামেরার বিভিন্ন সেটিংস্ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদিও এতে অটো মোড রয়েছে কিন্তু একজন ভালো ফটোগ্রাফার সবসময়ই আশা করেন ক্যামেরার সেটিংস্ যাতে তার নিয়ন্ত্রণেই থাকে।
৭. রিটেইনিং ভ্যালুঃ বলা হয়ে থাকে যে ডিএসএলআর ক্যামেরার মান পয়েন্ট ও শুট ক্যামেরার চেয়ে বেশি কারন ডিএসএলআর ক্যামেরার মডেল পয়েন্ট ও শুট ক্যামেরার মতো এত দ্রুত আপগ্রেড হয়না। তাছাড়াও এই ক্যামেরার লেন্স বিভিন্ন মডেলের ডিএসএলআর ক্যামেরায় ব্যবহার করা যায়। ক্যামেরার মডেল পরিবর্তন করে ভবিষ্যতে যদি আপগ্রেড করতে হয় তখন লেন্স নিয়ে কোনও সমস্যা হয়না।
ডিএসএলআর ক্যামেরার বর্তমান মূল্য তালিকা
ডিএসএলআর ক্যামেরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন
বাজারে প্রচুর পরিমাণ ও বিভিন্ন মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যায়। সুতরাং আপনি কিভাবে বুঝবেন কোন ক্যামেরাটি আপনার জন্য প্রযোজ্য। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি দিক তুলে ধরা হল।
১. মূল্যঃ ডিএসএলআর ক্যামেরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক দিকটি হচ্ছে এর মূল্য। বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যের ক্যামেরা থেকে শুরু করে উচ্চ মূল্যের প্রফেশনাল ক্যামেরা পাওয়া যায়। আপনার বাজেট ঠিক করে নিন। এছাড়াও কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যেমনঃ লেন্স, ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড, ক্যামেরা ব্যাগ ইত্যাদি ক্রয় সংক্রান্ত খরচ আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
ডিএসএলআর ক্যামেরার বর্তমান মূল্য তালিকা।
২. আপনি ক্যামেরাটি কি জন্য ব্যবহার করবেন তা নির্ণয়ঃ আপনি যখন কোনও ক্যামেরার দোকানে যাবেন তখন বেশিরভাগ বিক্রেতা আপনাকে জিজ্ঞেস করবে যে আপনি কোন ধরনের ফটোগ্রাফি করবেন। সুতরাং প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটি করা শ্রেয়।
৩. আকারঃ ডিএসএলআর ক্যামেরা পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা থেকে বড় হয়ে থাকে। তাছাড়া মান ও বৈচিত্রের ভিন্নতার ভিত্তিতেও এই ক্যামেরাগুলোর আকার বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু কিছু ফটোগ্রাফার ভারী গিয়ার বহন করতে আপত্তি প্রকাশ করেনা কিন্তু আপনি যদি ভ্রমণ বা বুশ্ওয়াকিং এর জন্য ব্যবহার করেন তাহলে ছোট ক্যামেরাই ভালো।
৪. পূর্ববর্তী গিয়ারঃ ডিএসএলআর ক্যামেরার সুবিধা হচ্ছে এতে বিভিন্ন গিয়ার ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে লেন্সের ক্ষেত্রে তা উল্লেখযোগ্য। আপনার কাছে যদি ইতিমধ্যে একই প্রস্তুতকারকের কোনও ফিল্ম এসএলআর লেন্স থেকে থাকে তাহলে সম্ভাবনা আছে যে আপনি সেটি ডিএসএলআর ক্যামেরাতেও ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য সব লেন্সের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না। অনেক পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার মেমোরি কার্ডও ডিএসএলআর ক্যামেরার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
৫. রেজুলেশনঃ ক্যামেরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মাথায় যে প্রশ্নটি আসে তা হচ্ছে এর মেগাপিক্সেল কতো। বিষয়টিকে অনেক গুরুত্বসহকারে দেখা হলেও আসলে তা নির্ভর করে আপনি তোলা ছবি কিভাবে ব্যবহার করবেন তার উপর। বড় আকারে প্রিন্ট করতে চাইলে বেশি মেগাপিক্সেল থাকা ভালো কিন্তু আপনি যদি ছবি ছোট আকারে প্রিন্ট করতে চান বা মেইলে বন্ধুদের প্রেরণ করতে চান সেক্ষেত্রে মেগাপিক্সেল খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।
৬. আপগ্রেডঃ সাধারণভাবেই প্রশ্ন জাগে যে ভবিষ্যতে ক্যামেরা আপগ্রেড করতে পারবেন কিনা। যদিও এন্ট্রি লেভেলের ক্যামেরাগুলোর দাম কম কিন্তু উৎকৃষ্ট মানের ক্যামেরার মডেলের তুলনায় এগুলো খুব তাড়াতাড়ি সেকেলে হয়ে যায়। প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করেন যে ফটোগ্রাফিতে আপানার দক্ষতা কতটুকু। আপনি কি সেই ধরনের মানুষ যারা প্রথমে কোন কিছুতে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করে পরবর্তীতে কার্যবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে দক্ষতা অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করে? সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে একটু দাম দিয়ে ক্যামেরা কেনা শ্রেয়।
৭. অন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ মডেল ভেদে ডিএসএলআর ক্যামেরার ফিচার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যা হয়তো শুরুতে আপনাকে বিভ্রান্ত করবে। কিছু সাধারণ ফিচারগুলোর মধ্যে আছে এপের্চার ব্যবহার, শাটার প্রায়োরিটি, অটো বা মানুয়াল ফোকাস ইত্যাদি। তাছাড়াও যেগুলো আপানাকে বিবেচনা করতে হবে সেগুলো হোল বার্সট মোড, এলসিডি সাইজ, এন্টি-শেক, ডাস্ট প্রটেকশোন, কানেক্টিভিটি, সেমি অটো মোডস্ এবং ফ্ল্যাশ।
ডিয়েসেলার ক্যামেরার বর্তমান মূল্য তালিকা
ক্যাননের কয়েকটি ডিএসএলআর ক্যামেরাঃ
ক্যানন ইওএস ৪০০ডি(ডিজিটাল রেবেল এক্সটিআই)- একটি একটি এন্ট্রি লেভেল ডিএসএলআর ক্যামেরা। ব্যবহারের দিক থেকে এটি যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এতে আছে ১০.১ মেগাপিক্সেল সেন্সর, ২.৫ ইঞ্চি এলসিডি এবং ম্যানুয়াল ও সেমি-ম্যানুয়াল মোডে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ফিচার। এটি ৩০০ডি থেকে হালকা যে কারনে খুব সহজেই বহন করা যায়। আপনি যদি পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা থেকে বেড়িয়ে সহজে ব্যবহার্য ডিএসএলআর ক্যামেরা চান তাহলে এই মডেলটি আপনার জন্য প্রযোজ্য।
ক্যানন ইওএস ৩০ডি- এতে আছে ৮.২ মেগাপিক্সেল সেন্সর ও ২.৫ ইঞ্চি এলসিডি। তাছাড়া এতে আরও অনেক ফিচার আছে যা ব্যবহার করে আপনি আপনার ফটোগ্রাফিক দক্ষতা পরীক্ষা করতে পারবেন। তাছাড়া নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য এতে অটো মোড আছে। ৪০০ডি এর তুলনায় এটি শক্তিশালী। তাছাড়া এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য। এটি এন্ট্রি লেভেল ও প্রফেশোনাল মডেলগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে। এই ক্যামেরা দ্বারা চমৎকার ছবি ধারন করা যায়।
ক্যানন ইওএস ৫ডি- এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল ক্যামেরা। তাই এর কর্মক্ষমতাও অনেক বেশি। ক্যামেরাটি ঐ সকল পেশাদারদের জন্য বানান হয়েছে যারা ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যবহার সম্পর্কে ভালভাবে জানেন। এতে কোনও বিল্ট-ইন ফ্ল্যাশ ও সেমি-অটো মোড নেই। ক্যামেরাটিতে আছে ১২.৮ মেগাপিক্সেল ফুল ফ্রেম সেন্সর, ২.৫ ইঞ্চি এলসিডি, ভারী ম্যাগ্নেজিঅ্যাম্ বডি এবং অন্যান্য বহু ফিচার। বিশ্বজুড়ে এই ক্যামেরার প্রচুর রিভিউ আছে।
এসব ছাড়াও আরও বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বাজারে পাওয়া যায়। কেনার পূর্বে আপানার বাজেট, ক্যামেরার ফিচার, দক্ষতা ইত্যাদি বিচার করে তারপর ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
ডিএসএলআর ক্যামেরার বর্তমান মূল্য তালিকা।
বর্তমান বাজারে ডিএসএলআর ছাড়াও অন্যান্য ক্যামেরা গুলাও বেশ জনপ্রিয়। যেমন- অ্যাকশন ক্যামেরা, মিররলেস ক্যামেরা, পয়েন্ট টু শুট ক্যামেরা, সেমি ডিএসএলআর ক্যামেরা। এই ক্যামেরা গুলার ২০১৯ সালের বর্তমান দাম এবং কনফিগারেশন নিচে দেওয়া হলঃ
তাছাড়া অনেকে আবার পছন্দের ব্র্যান্ড এর ক্যামেরা কিনতে চান। বিভিন্ন ব্রান্ডের কম দামে উন্নত কনফিগারেশনের ২০১৯ সালের কিছু ক্যামেরা নিচে দেওয়া হলঃ
আমি হাসিবুল হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।