ডার্ক প্যাটার্ন। আধুনিক ইন্টারনেট এর একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম যা সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত। কেননা আমরা প্রতিদিন কমবেশি নানাভাবে এই ডার্ক প্যাটার্ন এর মাধ্যমে প্রতারণার স্বীকার হই। ডার্ক প্যাটার্ন এর প্রতারনার ধরন যতই সহজ হক না কেন, এটি আমাদের জন্য ততটাই বেশি ভয়ানক এবং ক্ষতিকর হতে পারে! ডার্ক প্যাটার্ন একটি বিশাল জাল, যা ইন্টারনেট এর সব জায়গা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে; আর আমরা প্রতিনিয়ত এই জালের প্রতারণার স্বীকার হচ্ছি!
ডার্ক প্যাটার্ন আমদের ইন্টারনেটে চিরাচলিত অভ্যাস এবং আমাদের মাইন্ড এর সাথে খেলা করে, বলে বহু স্বার্থন্যাসী পক্ষ এটি ব্যবহার নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করে, তারা লাভবান হয়ে আসছে।
ব্যাপারটি আমাদের কাছে অবাক লাগতে পারে ফেসবুক আবার কিভাবে আমাদের অপর এমন কিছু প্রয়োগ করতে পারে? হ্যা, আমরা যখন আমাদের ফেসবুক আইডি'কে ডি-আক্টিভেট করতে যাবো, তখন কিন্তু ফেসবুক থেকে আমাদের সোজা-সাপটা কোন পদ্ধতিতে আমাদের আইডি ডি-একটিভ করতে দেয়া হয় না। ডি-আক্টিভেট করার সময় এখানে নানান প্রশ্ন তারা ছুড়ে দেয়, কেন, কি জন্য, কেউ আমাদের অ্যাবিউজ করছে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে তারা আমাদের সরাসরি আইডি ডি-আক্টিভেট করতে বাধা দেয়। কেননা ফেসবুক এর কাছে আমরা নিছক একটি প্রোডাক্ট; আমরা সারামাস ফেসবুক ব্যবহার করে যে বিজ্ঞাপণ গুলো দেখি তার জন্য ফেসবুক আমাদের থেকে ন্যূনতম হলেও কিছু টাকা আয় করে থাকে। আর এভাবে আমরা ফেসবুক এর নিকট একটি প্রোডাক্ট; আর তারা চায়না আমরা সরাসরি আমাদের আইডি ফেসবুক থেকে ডি-আক্টিভেট করি! আর এটিই ডার্ক প্যাটার্ন এর একটি ব্যবহার।
অনলাইনে গান ডাউনলোড এর সময় আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাই। আর সেখানেও আমরা একটি অন্যরকম ডার্ক প্যাটার্ন এর স্বীকার হই। সেখানে আমরা একটি ডাউনলোড বাটন এর জায়গায় হরেক রকম ডাউনলোড বাটন দেখতে পাই! ৪-৫ টি পর্যন্ত! আসল ডাউনলোড লিঙ্ক হয় ছোট, পারলে তো সেটি আমাদের চোখ থেকে আড়াল করে রাখা হয়, যেন আমরা ভুল বুঝে অন্য ডাউনলোড বাটন বা লিঙ্কে চাপ দেই। তবে এর ভেতর একটি বাদে বাকি সবগুলিই হয় ফেক, ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক এবং বিজ্ঞাপণ এর লিঙ্কে পরিপূর্ণ! আর এভাবে আমাদের কম্পিউটারে বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস থেকে শুরু করে, র্যানসমওয়্যার পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে।
আমরা অনলাইনে বিভিন্ন সার্ভিস, সফটওয়ার বা প্যাকেজ এর ট্রায়াল দেখি, ১৫ দিনের ট্র্যায়াল- ৩০ দিনের ট্রায়াল ইত্যাদি। তো ডার্ক প্যাটার্নে যা হয়, আমরা যখন এই ১৫- ৩০ দিনের ট্রায়ালে রেজিস্ট্রেশন করি, তখন আমদের ব্যাংক এর তথ্য বা আমাদের কার্ড এর তথ্য চাওয়া হয়। তো আমরা দিয়েও দেই, এই ভেবে যে ট্রায়াল এর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা এটি বন্ধ করে দেব, এতে করে আমাদের থেকে আর টাকা কাটবে না। তো এক সময় ১০ দিন ১১ দিন পর আমরা ভুলে যাই ; আমরা যে একটি ট্রায়াল ব্যবহার করছিলাম! আর এই মেয়াদের ভেতর যে কোম্পানির থেকে আম্র সার্ভিস নিয়েছি তারা কোন মেইলই দেয় না। যখন আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন তারা আমদের দেয়া তথ্য থেকে টাকা কেটে নিয়ে ঠিক তখন মেইল পাঠায়। আর আমাদের তখন মনে পরে, অহহহ আমি তো একটি ট্রায়াল ব্যবহার করছিলাম! আর এভাবে আমাদের মাইন্ড এর মন ভুলানো স্বভাবকে কাজে লাগিয়ে ডার্ক প্যাটার্ন এর ব্যবহারে কোম্পানি আমাদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
আধুনিক আইসিটি বা প্রযুক্তির বিপ্লবের জুগে আমরা অনলাইনে সবচাইতে বেশি ডার্ক প্যাটার্ন এর মাধ্যমে নানাভাবে প্রতারিত হয়ে থাকি। প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন এর প্রতিটা ক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ হয়ে গিয়েছে, তেমনি অনলাইন এবং এরকম জায়গায় ডার্ক প্যাটার্ন এর ব্যাপকতা বেড়েছে! আর একটি ক্ষুদ্র অসতর্কতা আমাদের এর মাধ্যমে অনেক বেশি প্রতারিত করতে পারে, যে ক্ষতি কখনও পূরণ হবার নয়।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।