Instagram কেন ব্যবহার করবো? ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের মধ্যে পার্থক্য কি কি?

টিউন বিভাগ অন্যান্য
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

ফেসবুকের মত ইন্সটাগ্রামও একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০১২ সালে ইন্সটাগ্রামকে কিনে নেয় ফেসবুক। আগে এটার ব্যবহার তেমন একটা চোখে না পরলেও ইদানীং এর ব্যবহার বেশ বাড়ছে। এর কারণ হল স্মার্ট ফোনের ব্যবহার দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সেই সাথে সহজলভ্য হয়েছে ইন্টারনেটের ডাটা। আমি নিজেও আগে ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার না করলেও ইদানীং ব্যবহার শুরু করেছি। ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ ভিত্তিক একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মানুষ এখন অনুপ্রাণিত হয়ে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার শুরু করেছে।  যেসব কন্টেন্ট তাঁদের ভাল লাগে  সেইগুলো তাঁরা ইন্সটাগ্রামে খুঁজে বেড়ায়। এটার মাধ্যমে তাঁদের  ব্র্যান্ড ভেলু বৃদ্ধি করে, ব্যবসাকে  সমৃদ্ধশালী করে। একটা জরীপে জানা গেছে ইন্সটাগ্রামার সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ব্রান্ড ভেলু বড় একটা ভূমিকা পালন করছে। প্রতি তিনজন মানুষের দুইজন (৬৬%) মনে করেন ইন্সটাগ্রাম এমন একটি প্লাটফর্ম যা ব্র্যান্ড এর সাথে এক ধরনের মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করে। এতে করে বিপণনকারী অনেকগুলো সেগমেন্ট পেরিয়ে তাঁদের মূল্যবান গ্রাহক বিভাগগুলোতে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।

আমরা কেন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করব নিচের তথ্য উপাত্ত দেখলেই বুঝা যায়।

১। বিশ্বব্যাপী ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের ইনস্টাগ্রামে বিজনেস প্রোফাইল আছে।

২। ২ মিলিয়নের বেশি বিজ্ঞাপনদাতা আছে যাঁরা তাঁদের গল্প শেয়ার করে।

৩। ৬০% মানুষ তাঁদের নতুন পণ্য ইন্সটগ্রামে খুঁজে পায়।

৪। ২০০ মিলিয়নের বেশি ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রতিদিন অন্তত একটা বিজনেস প্রোফাইল ভিজিট করে।

৫। ইন্সটাগ্রামে ভিডিও দেখার হার ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

৬। তিন ভাগের একভাগ ব্যবহারকারী বিজনেস স্টোরি দেখে।

৭। সার বিশ্ব থেকে প্রতি মাসে ১ বিলিয়নের বেশি অ্যাকাউন্ট একটিভ হয়।

৮। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়নের বেশি অ্যাকাউন্ট একটিভ থাকে।

৯। ৮০% এর বেশি অ্যাকাউন্ট একটা ব্যাবসাকে অনুসরণ করে।

১০। ৫০০ মিলিয়নের বেশি অ্যাকাউন্ট প্রতিদিন ইন্সটাগ্রামে স্টোরি ব্যবহার করে।

 

ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের মধ্যে পার্থক্যঃ

ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম দুটোর মালিক ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। সে গুলোই নিচে তুলে ধরা হল।

১। ফেসবুকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন এবং কমিউনিটির লোকদের মধ্যে যোগাযোগটা বেশি হয়। কিন্তু ইন্সটাগ্রামে ব্যবসায় সংক্রান্ত এবং বিষয় ভিত্তিক যোগাযোগ এবং কন্টেন্ট শেয়ারিং বেশি হয়।

২। ইন্সটাগ্রামে শুধুমাত্র ভিজুয়াল কন্টেন্ট টিউন করা যায়। টেক্সট বেসড কোন কন্টেন্ট টিউন করা যায় না। কিন্তু ফেসবুকে সব ধরনের কন্টেন্ট টিউন করা যায়।

৩। ইন্সটাগ্রামে কন্টেন্ট এর এঙ্গেজমেন্ট এবং শেয়ারিং বেশি হয়। ফেসবুকে সেই তুলনায় এঙ্গেজমেন্ট কম হয়। একটা স্টাডি থেকে জানা গেছে ইন্সটাগ্রামে ব্যবসায় সংক্রান্ত এঙ্গেজমেন্ট ফেসবুকের চাইতে ১০ গুণ বেশি হয়।

৪। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইন্সটাগ্রমের চাইতে অনেক বেশি তাই এর ডাটাবেজও বেশ বড়। তবে দিন দিন ইন্সটাগ্রম ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। সব বয়সী মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করলেও তরুণদের মধ্যে ইন্সটাগ্রাম বেশি জনপ্রিয়।

৫। ইন্সটগ্রামের ফিডে শেয়ার করা ভিডিও কন্টেন্ট স্বল্প দৈর্ঘ্যের হয়। এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু ফেসবুকের ভিডিও কন্টেন্ট এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা পর্যন্ত হয়। যার ফলে ইন্সটাগ্রমে ভিডিও দেখার হার বেশি। কেননা মানুষ বড় কন্টেন্ট দেখতে পছন্দ করে না।

৬। ইন্সটাগ্রামের অভ্যন্তরীণ ইন্টারফেস বেশ পরিছন্ন যার ফলে খুব সহজেই নেভিগেট করা যায়। কিন্তু ফেসবুকে অনেক বেশি ফিচার যুক্ত থাকায় সহজেই সেগুলো ব্যবহার করা যায় না। নেভিগেট করাও একটু কঠিন। তাছাড়া ফেসবুকের অডিয়ান্স সাইজ অনেক বড় যার ফলে ব্যবসায়ের তথ্য সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তির নিকট পৌঁছানো একটু কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু ইন্সটাগ্রামে সহজেই সঠিক অডিয়ান্স এর কাছে বার্তা পৌঁছানো যায়।

৭। ফেসবুকে বন্ধু এড করা যায় কিন্তু ইন্সটাগ্রেমে এই ধরনের ব্যবস্থা নেই। শুধু ফলোয়ার বৃদ্ধি করে তাঁদের মধ্যে কন্টেন্ট শেয়ার করা যায়।

৮। ফেসবুকে বিভিন্ন সাইজ এবং ফরমাটের ছবি টিউন করা যায় কিন্তু ইন্সটাগ্রামে নির্ধারিত সাইজ এবং ফরম্যাটের ছবি টিউন করা যায়।

৯। মোবাইল ফোনের অ্যাপ, মোবাইল ফোনের ব্রাউজার এবং ডেস্কটপের ব্রাউজার ব্যবহার করে ফেসবুকে লগইন করে তা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ইন্সটাগ্রাম শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের অ্যাপ দিয়ে লগইন করে সম্পূর্ণ ফিচার ব্যবহার করা যায়। তবে তৃতীয় পক্ষের কিছু টুলস বা এক্সটেনশন ব্যবহার করে ডেস্কটপে ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করা যায় তবে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সব ধরনের ফিচার ব্যবহার করা যায় না। আবার মোবাইল ফোনের ব্রাউজার দিয়েও ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করা যায় তবে সব ফিচার নয়।

১০। ফেসবুকে ব্যক্তিগত প্রোফাইল, বিজনেস পেজ, গ্রুপ, ইভেন্টস এসব ফিচার আছে। কিন্তু ইন্সটাগ্রামে এ ধরনের ফিচার নেই।

১১। ফেসবুকের নিজস্ব এড অ্যাকাউন্ট আছে যেটা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপণ দেয়া যায়। ইন্সটাগ্রামের নিজস্ব এড অ্যাকাউন্ট নেই। ফেসবুকের বিজনেস পেজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেসবুকের এড অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ইন্সটাগ্রামের বিজ্ঞাপণ দেয়া যায়।

১২। ইন্সটাগ্রামে কোন কন্টেন্ট শেয়ার করার আগে তা অ্যাপ এর ভিতরেই এডিট করা যায়। যেমন ছবি ক্রপ করা, কালার কম বেশি করা, ব্রাইটনেস কমানো বা বাড়ানো ইত্যাদি। এ ছাড়াও বিভিন্ন লে-আউট তৈরি করা যায়। ফেসবুকে এই ধরনের ব্যবস্থা নেই।

১৩। হ্যাসট্যাগের ব্যবহার ফেসবুকে তেমন একটা গুরুত্বপুর্ণ না হলেও ইন্সটাগ্রামের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করে ইন্সটাগ্রামের ফলোয়ার বাড়ানো যায়, ক্লিকযুক্ত লিঙ্ক তৈরি করা যায় এবং প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

১৪। ইন্সটাগ্রামের টিউন স্ট্যাটাসে ২, ২০০ ক্যারেক্টারের বেশি টেক্সট শেয়ার করা যায় না কিন্তু ফেসবুকে ৬৩, ২০৫ ক্যরেক্টার পর্যন্ত টেক্সট ব্যবহার করা যায়। যার ফলে ফেসবুকে বড় ধরনের টেক্সট ফিচার শেয়ার করা গেলেও ইন্সটাগ্রামে করা যায় না।

১৫। ইন্সটাগ্রমের বিজনেস অ্যাকাউন্ট এর “ইনসাইটস” মেট্রিক এর মাধ্যমে কন্টেন্ট এর স্ট্যাটাস, একটিভিটি  এবং অডিয়ান্স এর অবস্থান জানা যায়। এ ছাড়াও অনুসরণকারীদের অন্তর্দৃষ্টি জানা যায় তাঁরা কিভাবে আপনার টিউন এবং ঘটনাবলীর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট  করে। ফেসবুকের পেজ এর “ইনসাইটস” মেট্রিক্স থেকে এই ধরনের তথ্য জানা যায় কিন্তু ব্যক্তিগত প্রোফাইলে এই ধরনের তথা জানার উপায় নেই।

১৬। ইন্সটাগ্রামের IGTV এর মাধ্যমে ১৫ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও শেয়ার করা যায়। এই ফিচারটি ডেস্কটপের instagram.com থেকে লগইন করেও ব্যবহার করা যায়। ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করা গেলেও সেইগুলো এই ধরনের কোন ফিচারের আওতায় আরকাইভিং করা থাকে না।

১৭। ইন্সটাগ্রামে লাইভ ভিডিও প্রচার করা যায় কিন্তু প্রচার শেষে তা অ্যাকাউন্ট এর ভিতর সেভ করা যায় না। কিন্তু ফেসবুকের লাইভ ভিডিও অটো সেভ হয়ে যায়।

১৮। ফেসবুকে লগইন করে একই ব্যক্তি ইন্সটাগ্রামের মাল্টিপল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। কিন্তু ফেসবুকে মাল্টিপল অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে বিধি নিষেধ আছে। তবে ইন্সটাগ্রমে ৫ টির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না।

১৯। ইনস্টাগ্রামের ‘ইউজার নাম” যে কোন সময় অ্যাপ থেকেই সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করা যায় কিন্তু ফেসবুকে ইউজার নাম পরিবর্তন করতে হলে আবেদন করতে হয়। অনুমোদন সাপেক্ষে তা পরিবর্তন করা যায়। ফেসবুকে একবার ইউজার নাম পরিবর্তন করা হলে প্রথমবার ৬০ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করা যায় না। পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন করতে হলে ১২০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

২০। ইন্সটাগ্রমের টিউনে ক্লিকযুক্ত লিঙ্ক ব্যবহার করা যায় না। তবে এড অ্যাকাউন্ট থেকে এড বুস্ট করার সময় ক্লিকযুক্ত লিঙ্ক সংযুক্ত করা যায়। তবে ফেসবুকে ক্লিকযুক্ত লিঙ্কের টিউন শেয়ার করা যায়।

যাহোক উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফেসবুক এবং ইনসটাগ্রামের মধ্যে স্পষ্টত কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করলাম। ইন্সটাগ্রামে ভাল করতে হলে নিয়মিতভাবে ভিজুয়াল কন্টেন্ট শেয়ার করতে হবে। নতুন নতুন ফলোয়ার তৈরি করতে হবে এবং বর্তমান ফলোয়ারদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে।

Level 4

আমি আব্দুল্লাহ আল ফারুক। Digital Marketer, Self Employed, Bogura। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 23 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

দারুণ লিখেছেন। ধণ্যবাদ আপনাকে সুন্দর ইনফরমেশনগুলো দেওয়ার জন্য। অনেকগুলো নতুন ব্যাপার জানতে পারলাম।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার টিউনটি পড়ার জন্য।

if you want to use instagram fonts check it here.. instafonts