উঃ ১৯০৯ সালে মিসেস এ. ক্যাম্পবেল ইন্ডিয়ান রানার, ওয়াইন্ড ম্যালয়েড ও ফ্রান্সের রোয়েনের মধ্যেও সংকরায়ন ঘটিয়ে নতুন প্রজাতির হাস সৃষ্টি করেন। এই জাতের রং খাকি। ভদ্রমহিলার নাম অনুসারে ও খাকি রঙের জন্য এই জাতের হাসের নাম খাকি ক্যাম্পবেল দেওয়া হয়েছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বনাম অন্য পাঁচটা মুরগি
আগেই বলেছি, মুরগির থেকে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। মুরগি দেয় এর কিছু কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী একনাগাড়ে ২/৩ বছর ডিম দিয়ে যাবে কিন্তু উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগি লাভের খাতিরে ডিম দেবে মোটে দেড় বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা মাদি ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহে ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত জাতের মুরগি ২১ সপ্তাহের আগে লাভজনক ভাবে ডিম দেয় না। আরো সুবিধা হলো- মুরগি সারাদিনে যে কোন সময় ডিম দিতে পারে। হাঁস সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল নয়টার মধ্যে যা ডিম দেবার দিয়ে দেবে। এই কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পোষায় পরিশ্রম কম।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
এই জাতের হাসের খুব একটা রোগ-ব্যাধি হয় না। তবে একেবারেই যে রোগ-ব্যাধিতে হাঁস আক্রান্ত হয় না। সেটা বলা ভুল। এই রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর।
যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করেন এবং উপযোগী খাবার খাওয়ান তাহলে এই রোগ-ব্যাধির পরিমান একেবারেই থাকবেনা।
তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকার জন্যই খামারকারী খোঁজ নিতে পারেন নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। তারা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেতে পারেন।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টেকটিউনসউট।
প্রথম দিকে ছোট আকারের খামার করা ভালো। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক আকারে খামার করা যেতে পারে। ডিম পাড়ার জন্য লেয়ার হাঁস পালন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে খাকি ক্যাম্বল, ইন্ডিয়ান রানার, দেশি পাতি হাঁস উল্লেখযোগ্য। মাংসের জন্য অন্যান্য প্রজাতির হাঁস পালন করতে হয়। বাচ্চা সংগ্রহের পর যতদ্রুত সম্ভব ঘরে ছাড়তে হবে। হাঁসের বাচ্চার ধকল প্রতিরোধে স্যালাইন পানি বা ইলেকট্রোলাইট (পশু-পাখির স্যালাইন) খাওয়ানো যেতে পারে। হাঁস সাধারণত পানিতে থাকতে ও সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। ছোট হাঁসের বাচ্চা দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে দুই বার পানিতে ছাড়তে হবে। হাঁসের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রতি লোভ বেশি থাকায় সব সময় পানিতে থাকতে চায়। বাচ্চা হাঁসকে বেশি সময় পানিতে রাখা যাবে না সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। পূর্ণবয়স্ক হাঁস দিনে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে কাটাতে পারে
খাবার ও পানির ব্যবস্থা
১. খাবার ও পানির পাত্র প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করতে হবে।
২. সুষম ও মানসমৃদ্ধ খাবার যেমন, পিলেট অথবা গুড়ো খাবার দিতে হবে। পচা, বাসি ও ছাতাধরা খাবার দেয়া যাবে না।
৩. খাবার পাত্রের মধ্যে অথবা মেঝেতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
৪. হাঁসের বাচ্চাকে পানির পাত্রে পরিষ্কার পানি দিতে হবে।
খাবার পাত্র ও পানির পাত্রঃ
বয়স অনুযায়ী হাঁসের জন্য খাবার পাত্র ও পানির পাত্রের পরিমাণ-
বয়স (মাস) জায়গার পরিমাণ (লিনিয়ার ইঞ্চি)
খাবার পাত্র পানির পাত্র
১ দিন - ৩ সপ্তাহ ২.০ ২.৫
৪ সপ্তাহ - ৮ সপ্তাহ ৩.০ ৩.০ - ৪.০
৮ সপ্তাহ - ১৬ সপ্তাহ ৪.০ ৪.০- ৫.০
খামার ব্যবস্হাপনা ও দৈনিক কার্যক্রম সূচিঃ
যে কোনো ধরনের খামারই হোক না কেনো তার ব্যবস্হাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রকৃতপক্ষে খামার ব্যবস্হাপনার উপরই খামারের লাভ লোকসান এমনকি খামারের ভবিষ্যত সসপ্রসারণ নির্ভর করে।
ক) সকাল ৭ - ৯ টাঃ
১. জীবাণুমুক্ত অবস্হায় শেডে প্রবেশ করতে হবে এবং হাঁস-মুরগির সার্বিক অবস্হা ও আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
২. মৃত বাচ্চা/বাড়ন- বাচ্চা/মুরগি থাকলে তৎক্ষণাৎ অপসারণ করতে হবে।
৩. ডিম পাড়া বাসার দরজা খুলে দিতে হবে।
৪. পানির পাত্র/ খাবার পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
৫. পাত্রে খাবার ও পানি না থাকলে তা পরিস্কার করে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
৬. লিটারের অবস্হা পরীক্ষা করতে হবে ও প্রয়োজন হলে পরিচর্যা করতে হবে।
৭. খাবার দেবার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
সকাল ১১- ১২ টাঃ
১. খাদ্য নাড়াচাড়া করে দিতে হবে।
২. পানি গরম ও ময়লা হলে পরিবর্তন করে পরিস্কার ও ঠান্ডা পানি দিতে হবে।
৩. ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
বিকাল ৪ - ৫ টাঃ
১. পাত্রে খাদ্য পানি না থাকলে তা সরবরাহ করতে হবে।
২. ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
৩. ডিম পাড়ার বাসা/বাক্সের দরজা বন্ধ করতে হবে।
৪. আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
সাপ্তাহিক কাজঃ
১. খাদ্য তৈরি করতে হবে।
২. বাচ্চা/ডেকী মুরগী/মুরগীর নমুনা ওজন গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঘর পরিস্কার করতে হবে।
৪. ঘরের বাতি সপ্তাহে ২ দিন পরিস্কার করতে হবে। খাদ্য ও পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে এবং লিটার পরিচর্যা করতে হবে।
৫০০ টি মুরগীর খামারের বিভিন্ন খরচ, আয় ও নীট মুনাফার হিসাবঃ
ঢাকার বাইরে হাঁস পালন বেশ লাভজনক। তবে প্রশিক্ষণ না থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে হাঁস প্রজননকেন্দ্র। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা হিসেবে দিতে পারেন খামার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সিদ্ধার্থ সাই
হাঁসের থাকার জন্য এমনভাবে ঘর বানাতে হবে যেন আলো-বাতাস যাওয়া-আসা করতে পারে। ঘরের আশপাশে জলাধার থাকলে ভালো হয়। ১০০টি হাঁস নিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার হাঁসের খামার। ১০০টি হাঁসের খামার গড়তে ১৫টির বেশি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করতে হবে। প্রজননের জন্য হাঁসের খামারে ১০ : ১ পরিমাণে হাঁস এবং হাঁসা রাখতে হবে। বড় হলে প্রয়োজনীয় হাঁস ও হাঁসা রেখে অন্যগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে বাচ্চা এনে অন্তত সাত দিন সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এ জন্য শীতের সময় বেশি তাপ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইট দিয়ে ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখা জরুরি। গরমের দিনে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে হাঁসগুলো থাকার জায়গায় ধানের তুষ অথবা কাঠের গুঁড়া দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে। ঘরের আশপাশ পরিষ্কার করাটাও জরুরি। কারণ অপরিষ্কার জায়গা থেকে রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
আমি রায়হান আহমেদ জয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।