হাঁস পালন করা লাভ জনক। হাঁস পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। নিচে পাঁতিহাস পালনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো: আবাস্থল: সাধারণত চার পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা যায়। যেমন:
১. উন্মুক্ত পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে সকালে বাসা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং রাতে ঘরে আবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের অধিকাংশই এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে। এ পদ্ধতিতে শ্রমিক কম লাগে, খাদ্য খরচ কম ও বাসস্থান খরচ কম। ২. আবদ্ধ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে হাঁসকে সব সময় আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। মেঝেতে হাঁসের বাচ্চা পালন করা এ পদ্ধতিতে সুবিধাজনক। খাঁচায়ও হাঁসের বাচ্চা পালন করা যায়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.০৭ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়।
৩. অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে হাঁস রাতে ঘরে রাখা হয় এবং দিনের বেলায় ঘর সংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট জলাধার বা জায়গার মধ্যে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। এখানে প্রতিটি হাঁসের জন্য ০.৯৩ বর্গমিটার (প্রায় ১০ বর্গফুট) জায়গা প্রয়োজন। হাঁস সাঁতার কাটার সুযোগ পায়।
৪. ভাসমান পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে হাঁসের জন্য ভাসমান ঘর তৈরি করা হয়। বড় পুকুর, দিঘি বা নদীর কিনারায় পানির উপর হাঁসের সংখ্যা বিবেচনায় রেখে ঘর নির্মাণ করা হয়। সমন্বিত মাছ ও হাঁস পালনের ক্ষেত্রে এটি উপযোগী। হাঁসের বাসস্থানের কাছাকাছি জলাভূমি থাকা প্রয়োজন। জলাভূমি ছাড়াও হাঁস পালন সম্ভব তবে খাদ্য খরচ বেশি। স্বল্প খরচে বাঁশ, ছন অথবা টিনের উন্মুক্ত ঘর তৈরি করা যায়। মেঝে ঘরের উচ্চতা ৭ ফুট হতে হবে। ঘরের চারদিকে এক ইঞ্চি ফাঁক বিশিষ্ট তারের নেট দিতে হবে। ঘরের দুই তৃতীয়াংশে হাঁস থাকবার জন্য লিটারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এক তৃতীয়াংশ খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা থাকবে। একই ঘরে বাচ্চা পালন করলে প্রথম ৩-৪ সপ্তাহ নেটের নিচের তিন ফুট মোটা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর পলিথিন খুলে মুক্ত ঘর বড় হাঁসের উপযোগী করতে হবে। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক হাঁসের জন্য ২৭০০ বর্গসেমি জায়গা দরকার। বাচ্চা পালন : হাঁসের বাচ্চা পালন মুরগির বাচ্চা পালনের মত।
হাঁসের বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হচ্ছে- ১ম সপ্তাহে ৩২ সে.,
২য় সপ্তাহে ২৯ সে.,
৩য় সপ্তাহে ২৬ সে.,
৪র্থ সপ্তাহে ২৩ সে., ও ৫ম সপ্তাহে ২১ সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন।
বাচ্চা ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে ব্রুডারের তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। গরমকালে ৪ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাকে তাপ দিতে হয়। বাচ্চাদের ২-৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত- প্রারম্ভিক খাদ্য, ৪-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত- বাড়ন্ত- এবং ২০ সপ্তাহের পর লেয়ার খাদ্য দিতে হয়। প্রতিটি বাচ্চা হাঁসকে ১ম সপ্তাহে ১০-২০ গ্রাম, ২য় সপ্তাহে ২১-৩১ গ্রাম, ৩য় সপ্তাহে ৩১-৪১ গ্রাম, ৪র্থ সপ্তাহে ৪১-৫৫ গ্রাম ও ৫ম সপ্তাহে ৫৫-৬৫ গ্রাম খাদ্য দিতে হয়। খাদ্য উপাদান ও পরিমাণ খাদ্য তালিকায় দেয়া হয়েছে। খাদ্য হাঁস প্রধানত দুই রকমের খাদ্য খায়। যেমনÑ প্রাকৃতিক খাদ্য ও সম্পূরক খাদ্য। প্রাকৃতিক খাদ্য : হাঁস প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্যের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। জলাশয়ের আগাছা, ক্ষুদেপানা, পোকামাকড়, কচি ঘাস পাতা, ঝিনুক, শামুক ও ছোট মাছ ইত্যাদি খেয়ে অর্ধেক খাদ্যের প্রয়োজন মেটায়।
সম্পূরক খাদ্য : হাঁস ভিজা খাবার পছন্দ করে। এজন্য হাঁসের খাদ্যে সবসময় পানি মিশিয়ে দিতে হয়। সাধারণত ১-৮ সপ্তাহ বয়সের হাঁসকে দিনে ৪-৫ বার, ৮ সপ্তাহ বয়স থেকে দিনে ২-৩ বার এবং বাড়ন্ত- হাঁসকে দিনে ২ বার খাওয়াতে হয়। সকালে ও বিকালে হাঁসকে খাবার দিতে হয়। রাতের জন্য ঘরে খাবার দিয়ে রাখতে হবে। হাঁসের দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ও হাঁসের জাত, বয়স, খাদ্যের মান, বাসস্থান খাদ্যের আকার ও পরিবেশনের উপর নির্ভর করে। দৈনিক জন্মের প্রথম সপ্তাহে ১৫ গ্রাম, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৫ গ্রাম, তৃতীয় সপ্তাহে ৩০ গ্রাম, চতুর্থ সপ্তাহে ৩৫ গ্রাম, পঞ্চম সপ্তাহে ৪০ গ্রাম, ষষ্ঠ সপ্তাহে ৪৫ গ্রাম, সপ্তম সপ্তাহে ৫০ গ্রাম, অষ্টম সপ্তাহে ৫৫ গ্রাম, বাড়ন্ত- বয়সে ৮৫ গ্রাম ও বয়স্ক হাঁসে ১২৫ গ্রাম খাদ্য দিতে হয়। নিচে হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরির খাদ্য উপাদান উল্লেখ করা হলো : খাদ্য উপাদান বাচ্চার খাদ্য (গ্রাম) পূর্ণবয়স্কের খাদ্য (গ্রাম) ভাঙা গম ৪৫০ ৪৫০ চালের কুঁড়া ২৭০ ৩০০ তিলের খৈল ১৪০ ১২০ মাছের গুঁড়া ১২০ ১০০ ঝিনুক চূণ ১৫ ২৫ লবণ ৫ ৫ মোট ১০০০ ১০০০ ভিটামিন মিনারেল ১.৫ গ্রাম/ কেজি ২.০ গ্রাম/কেজি খাবারের পাত্র কাঠের, টিনের এ্যলুমিনিয়ামের হতে পারে।
রোগ ব্যবস্থাপনা : হাঁসের বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার বর্ণনা করা হলো:
প্লেগ রোগ ভাইরাস সংক্রমণে হয়।
লক্ষণ- ১. হাঁস আলো দেখলে ভয় পায়।
২. হাঁস সাঁতার কাটতে চায় না।
৩. পানি পিপাসা বৃদ্ধি পায়। খাদ্য গ্রহণে অনীহা হয়।
৪. নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
৫. সবুজ ও হলুদ রঙের পাতলা মলত্যাগ করে।
৬. পালক এলোমেলো হয়ে পড়ে।
৭. পা ও পাখা অবশ হয়। পাখা ঝুলে পড়ে।
৮. ঠোঁট নীল বর্ণ হয়।
৯. ঘাড় মাথা বাঁকা করে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কাঁপুনি হয়।
১০. চোখ ফুলে চোখের পাতা আটকে যায়।
১১. খুঁড়িয়ে হাঁটে।
১২. ডিম পাড়া হাঁস ডিম পাড়া কমিয়ে দেয়।
১৩. হাঁস হঠাৎ মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা।
২. আক্রান্ত- হাঁস অন্যত্র সরিয়ে ফেলা।
৩. মৃত হাঁস মাটিতে পুঁতে ফেলা।
৪. সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখা।
৫. টিকা দেয়া। ১৫-২০ দিন বয়সের বাচ্চাকে প্রথমবার এবং পরে এক মাস বয়সে এবং ৬ মাস পরপর প্রতিটি হাঁসের রানের বা বুকের মাংসে ১ মি.লি. করে ইনজেকশন দিতে হয়।
হাঁসের কলেরা কারণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়।
লক্ষণ -১. আক্রান্ত- হাঁস সবুজ বা হলুদ বর্ণের পাতলা মলত্যাগ করে।
২. মুখমণ্ডল, ঝুঁটি, গলকম্বল ও কানের লতি নীলাভ হয়।
৩. মাথা ও হাঁটু ফুলে যায়।
৪. ক্ষুদা মন্দা হয়। দেহ দুর্বল হয়।
৫. চোখের পাতা ফুলে যায়।
৬. নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
৭. ডিম উৎপাদন কমে যায়।
৮. পালক উসকো খুসকো হয়। পালক ঝুলে পড়ে।
৯. মুরগি হঠাৎ মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা।
২. আক্রান্ত- হাঁস অন্যত্র সরিয়ে ফেলা।
৩. মৃত হাঁস মাটিতে পুঁতে ফেলা।
৪. সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখা।
৫. এ রোগের টিকা প্রতিটি হাঁসের ২ সপ্তাহ বয়সে রানের মাংসে ১ সিসি করে ইনজেকশন দিতে হয়।
৫. টেট্রাসাইকিন গ্রুপের ওষুধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। এছাড়াও হাঁস বার্ড ফু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থা মুরগির বার্ড ফু এর মত।
হাঁস চাষে বা পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে এসেছে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস, কেউ আগে কল্পনা ও করেনি হাঁস মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয় বা দিতে পারে.! হাঁস থেকে রীতিমত ব্যবসা করা যায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। .
বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক দারিদ্র্য সীমার নিচের মানুষদের ওপরে তোলার জন্য খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস চাষের জন্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করছে। মুরগির থেকে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। মুরগি দেয় এর কিছু কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী এক নাগাড়ে ২/৩ বছর ডিম দিয়ে যাবে কিন্তু উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগি লাভের খাতিরে ডিম দেবে মোটে দেড় বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা মাদি ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহে ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত জাতের মুরগি ২১ সপ্তাহের আগে লাভজনক ভাবে ডিম দেয় না। আরো সুবিধা হলো- মুরগি সারাদিনে যে কোন সময় ডিম দিতে পারে। হাঁস সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল নয়টার মধ্যে যা ডিম দেবার দিয়ে দেবে। এই কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পোষায় পরিশ্রম কম। .
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের সুবিধাঃ-
১. বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দেয়। ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়, সেখানে লেয়ার মুরগি ডিম দেয় দেড় বছর পর্যন্ত।
২. সবাই হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করেন।
৩. হাঁসের বাচ্চার দাম খুব কম ১২ টাকা সেখানে মুরগির বাচ্ছার দাম ৬০-৬৫ টাকা।
৪. হাঁসের ডিমের সাইজ বড়।
৫. ১ হাজার মুরগির চেয়ে ১ হাজার হাঁস পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
৬. ডিম উৎপাদন কমে গেলে ৩ বছর পর হাঁসগুলো মাংস হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যাবে। হাঁসের মাংস
মুরগির চেয়ে সুস্বাদু।
৭. মুরগি সব দিন ধরে ডিম দেয় কিন্তু হাঁস সকাল ৯টার মধ্যে ডিম পাড়া শেষ করে। ফলে নজরদারির খরচ কম লাগে।
৮. খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ১৭-১৮ সপ্তাহ বয়সেই ডিম দেয়।
৯. নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও ফেনী সরকারি হাঁস প্রজনন খামার থেকে ১ দিনের বাচ্চা সংগ্রহ করা যাবে। .
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্যঃ-
উৎপত্তি : ইংল্যান্ডে, পালকের রঙ খাকি, মাথা এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের, দেহের আকার মাঝারি- ১.৫-২ কেজি, পা এবং পায়ের পাতায় রঙ হাঁসার হলুদ, হাঁসীর কালো। ঠোটের রঙ হাঁসা নীলাভ, হাঁসী কালো, ডিম দেয় ২৫০-২৭০টি বছরে।
হাঁসের বাসস্থান
মুরগির মতো ততো ভালো বাসস্থান না হলেও চলে। আলো বায়ু চলাচল ভালো থাকতে হবে। বয়স্ক হাঁসপ্রতি
জায়গা লাগবে ২-৩ বর্গফুট। উঠতি হাঁসা-হাঁসীর জন্য ১ বর্গফুট জায়গাই যথেষ্ট। বন্য জন্তু বিশেষ করে শেয়ালের হাত থেকে রৰার ব্যবস্থা করতে হবে। থাকার জায়গায় মুরগির লিটারের মতো বিচুলি, তুষ, কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে দিতে হবে, এতে আরামে থাকবে পাখিগুলো, ডিম গড়িয়ে যাবে না, ভাঙবে না। বাচ্চা তোলার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে বাচ্চা যেখানে থাকবে সেটা ঠিক-ঠাক করা। বাচ্চা হাঁস রাখতে হবে তারের জালের ওপর। এতে বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে। তারের জাল মেঝে থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে থাকবে। ফলে মল মুত্র সহজে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১ ৪ ভাগের ১ বর্গফুট
১-২ ৩ ভাগের ১ বর্গফুট
২-৩ ২ ভাগের ১ বর্গফুট
৩-৭ দেড় বর্গফুট।
আমি রায়হান আহমেদ জয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।