প্রযুক্তির অন্যতম এক শাখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দ্রুতগতিতে নিজের বিকাশ ঘটাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের ছোট-বড় যেকোনো কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধির প্রযুক্তি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে মানবদেহের বাইরে লালিত এই বুদ্ধির প্রয়োগ দিন দিন বাড়বে, সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাড়াবাড়ি প্রয়োগের ফলে মানুষের কর্মসংস্থান কমছে, এই বিষয়টাও এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। এই লেখায় তুলে ধরা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই আলোচিত কয়েকটি প্রকল্প।
ওপিনিয়ন মাইনিং বা মতামত বিশ্লেষণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা কার্যপদ্ধতি, যা ব্যবহার করে কোনো ওয়েইবসাইটের মূল্যায়ন করা হচ্ছে এই প্রকল্পে। ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন মতামত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজ করে এটি। ওয়েইবসাইট মূল্যায়নের জন্য কিছু প্রধান বিষয় বিবেচনা করা হয়, যেমন দাম পরিশোধের পর পণ্য সময়মতো পাঠানো হচ্ছে কি না, ওয়েবসাইট কী কী সেবা প্রদান করছে, পণ্য কতটা মানসম্পন্ন ইত্যাদি।
ব্যবহারকারীদের মন্তব্য থেকে অনুভূতি প্রকাশক শব্দ বেছে নেয়া হয় হ্যাঁ-বোধক আর না-বোধক সূচকের সাথে, যাতে থাকে পণ্য পৌঁছানোর সময়, সেবাসমূহ এবং পণ্যের মান সংক্রান্ত কথাবার্তা,
ওপিনিয়ন মাইনিং ব্যবহার করে এই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমেই সিস্টেমটি একটা ওয়েবসাইটকে মূল্যায়ন করে থাকে।
ভাবুন দেখি, কম্পিউটারের এইপাশে বসে অনলাইন কেনাকাটা করছেন, আর ওইপাশে নির্দিষ্ট দামের দোকানের বদলে আছে পছন্দমত দাম করার সুবিধা দেয়া একটা ই-কমার্স সাইট, আর এই 'দাম করা' কাজটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করছে একটা চ্যাটবট! হ্যাঁ, এই সেবা নিয়েই বানানো হয়েছে প্রকল্পটি। একদামের দোকান নিয়ে আপত্তি যাদের, তাদের অনলাইন কেনাকাটাকে আনন্দময় করতে এই সিস্টেম কাজে লাগবে। মূলত বিক্রি বাড়ানোর পন্থা হিসেবেই এই উপায় বেছে নেয়া হয়েছে। তিনটি প্রধান পদ্ধতিতে কাজ করে এটি- দ্যা গেম থিওরি, ডিসিশন থিওরি এবং দ্যা নেগোসিয়েশন অ্যানালাইসিস।
পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে সক্ষম এই ব্যবস্থাটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত বিকল্প দেখাতে পারে দক্ষতার সাথে। কিছু তাত্ত্বিক সমস্যা আর যোগাযোগ নীতিমালা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে এই ব্যবস্থাটির।
বার্তা বা টেক্সট বিশ্লেষণ করার একটি ফ্রি সফটওয়্যার এটা। খবরের কাগজ, কবিতা বা গল্প, ইতিহাসের বই, এমন যেকোনো পাঠ্য বিষয় বিশ্লেষণ করবে এটি, যাতে বিষয়গুলো বিভিন্ন মাত্রা থেকে নিরীক্ষণ করা সম্ভব হয়। একটা বাক্যকে ভেঙেচুরে তার অর্থ খুঁজে পাওয়ার অনেকগুলো ভিন্ন ফলাফল দেখানোর এই সিস্টেম এটাই উপলব্ধি করায় যে, সামান্য বাক্যটাও একমাত্রিক নয়! টেক্সট পার্সিং, বাক্যের গঠন বিশ্লেষণ এবং বাক্যের ধাঁচ চেনা, আবেগজাত বিভিন্ন অবস্থা এবং পরস্পরবিরোধী মতবাদ বিশ্লেষণ করা, এগুলো এই সিস্টেমের প্রধান কয়েকটি কাজ।
ওলফর্যাম আলফা একটা অনলাইন পরিসেবা, যা কাঠামোগত তথ্যভাণ্ডার থেকে প্রশ্নের উত্তর বের করে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনের মতন
এটি আপনার প্রশ্নের উত্তরে কিছু ওয়েবপেজ বা তথ্যমূলক নথির তালিকা দেখাবে না, বরং বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রশ্নের উত্তরটিই দেবে আপনাকে। এই সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে ওলফর্যাম প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে, আর এতে আছে ১৫ মিলিয়নের অধিক লাইনের কোড। সিস্টেমটি চালানো হচ্ছে ১০০০০ সিপিইউ জুড়ে এবং এর ডেটাবেজে রয়েছে টনখানেক ডেটা, যা বহু বছরের সংগ্রহ। যেমন, আবহাওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক বার্তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ টেক্সট প্রসেসিং, বা প্রাকৃতিক ভাষার বার্তা প্রক্রিয়াকরণের একটা মেশিন লার্নিং পদ্ধতি অ্যাপাচি ওপেনএনএলপি।
এটি এনএলপির কিছু সাধারণ কাজকে সমর্থন করে যেমন- বাক্যের বিভাজন, টোকেনাইজেশন, পার্সিং, বাক্য শনাক্তকরণ ইত্যাদি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন ভাষার জন্য প্রচুরসংখ্যক পূর্ব পরিকল্পিত মডেল তৈরি করা। বর্তমানে এই সিস্টেমের কিছু সাধারণ ক্লাসিফায়ার আছে, যেমন নেইভ বায়েস, পারসেপশন এবং ম্যাক্সিমাম এন্ট্রপি।
মাইক্রোফট হচ্ছে একটা ওপেন সোর্স নলেজ নেভিগেটর এবং বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগত সহকারী। মাইক্রোফটকে ব্যবহার করা যাবে যেকোনো জায়গায়, কম্পিউটার থেকে নিয়ে গৃহকর্মের কোনো যন্ত্রেও। অর্থাৎ ঘরের কাজে সহায়তা দিতেও মাইক্রোফট সঙ্গী হতে পারে আপনার। ছোট-বড় যেকোনো প্রকল্পেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই সিস্টেমটি। পাঠ্য ভাষাকে যন্ত্রের উপযোগী করে তুলতে এই সিস্টেমে ব্যবহার করা হয় এডাপ্ট নামক পার্সার।
বাক্যের সংশ্লেষণের জন্য এটি কাজে লাগায় ফ্লাইট-বেজড মিমিক, যেটা বার্তাকে কথায় রূপান্তর করার একটা দ্রুতগামী সফটওয়্যার।
গুগল ব্রেইন প্রযুক্তি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে গুগল ট্রান্সলেটর, ইমেজ সার্চ, স্পিচ রিকগনিশন, ইউটিউবের ভিডিও সুপারিশ ইত্যাদি কাজে।
আলোচিত প্রকল্পগুলোর প্রতিটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চমকপ্রদ উদাহরণ। গত দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই শাখাটি কেমন উন্নতি করেছে, তা বোঝা যায় প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা জানলে। নকল বুদ্ধির রোমাঞ্চকর দুনিয়ায় আগ্রহ থেকে থাকলে তাই এই কাজগুলো নিয়ে আরো খানিক পড়াশোনা হতেই পারে!
আমি বিপ্লব হুসাইন। CEO, YouthEye Foundation, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 69 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 15 টিউনারকে ফলো করি।
A computer science & engineering student along with a youth social activist in Bangladesh, Love to teach, learning new things and writing articles for the betterment of peoples.