২০১৮ তে এসে অনলাইন ইনকাম শব্দটা অনেক পুরনো লাগে, এটাও এক ধরনের বাস্তবতা। আমাদের দেশের আউটসোর্সার রা সেই ২০০৮/৯ সাল থেকে ইনকাম করে আসছে। তখন আজকের মত এতটা জনপ্রিয় ছিলনা, প্রযুক্তি এবং সময়ের ব্যবধানে অনলাইন থেকে ইনকাম করা সেই আগের তুলনায় সহজ এতটুকু বিশ্বাস করা যায়।
এই কথাটা সামনে আসলে, দুইটা গ্রুপের মানুষ বেশি পাওয়া যায়। আপনি এই দুই গ্রুপের যে কোন একটা তে নাও থাকতে পারেন, যদি না থাকেন তাহলে ব্যপারটা খারাপ না। তবে আমার ২০১৬ থেকে ২০১৮ এই তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দুই প্রুপের সংখ্যা অনেক বেশিই হবে। দুইটা গ্রুপ হল –
অনলাইন থেকে আয় করা সহজ – এই গ্রুপে আপনি পড়ে গেলেন নাকি? পড়লেও সমস্যা নেই। আশাকরি যে, একটা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই অনলাইন থেকে আয় করা কোন ব্যপার না।
এই অবাস্তব ধারণা টি ভুল। কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ আপনার অনলানে আয়ের জন্য অনেক বড় একটি পজিটিব মাধ্যম ছাড়া আর তেমন কিছুই না। এই ভুল কনসেপ্টটি যারা দিয়ে থাকেন, তাদের বেশির ভাগই ক্যাপচা পূরণ, ভিডিও দেখে আর্ন, ক্লিক করে আর্ন এই টাইপের স্কিল বিহীন কাজ করে কিছু টাকা ইনকাম করাকেই অনলাই ক্যারিয়ার মনে করে থাকে। এগুলাকে আপনি “ছুটা কাজ” হিসেবে ধরতে পারেন, যেই কাজ কোন স্কিল এর মধ্যে পড়েনা। এটা বুঝার জন্য আপনাকে মহা জ্ঞানী হতে হবেনা। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বুঝে যাবেন। এই কাজ গুলো করার জন্য আপনাকে এমন কিছু কি শিখতে হয়েছে? যেটা শিখার জন্য আপনাকে অনেক সময় পরিশ্রম করতে হয়েছে, যেটাকে আমরা স্কিল শিখার সাথে তুলনা করে থাকি। এই ছুটা কাজ গুলো ৫/৭ বছরের বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিলেও করতে পারবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ক্যাপচা পূরণ, ক্লিক করে সামান্য কিছু ইনকাম করে লং টাইম অনলাইন ক্যারিয়ার দাঁড় করানো সম্ভব না।
আমরা যারা এই ছুটা কাজ গুলোর পিছনে সময় নষ্ট করছি, তারা কি সিউর দিয়ে বলতে পারবেন, এই সাইট গুলো আগামী ১০ বছর অনলাইনে টিকে থাকবে? আর আপনি এই কাজ গুলো করে কোন কম্পানীতে জব পাবেন? যদি কোনটাই পজিটিব উত্তর না আশাকরি বুঝতে পারছেন।
অনলাইন থেকে আয় করতে কোন স্কিল লাগেনা – এই ধরনের চিন্তা করে অনলাইনে ইনকাম করতে চান, এমন মানুষের সংখ্যাও কম না। আচ্ছা বারবার আমি স্কিল শব্দটা বলতেছি, স্কিল মানে কি?
আমি একটা উদাহারণ দিয়ে বলি, একজন ঘাড়ির ড্রাইবার বা একজন ব্যাঙ্কার। এই দুই ক্ষেত্রেই একজন মানুষকে একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে আগে স্কিল্ড হয়ে আসতে হয়। যদি ড্রাইবারের কথা বলেন, তাহলে তাকে আগে ড্রাইবিং স্কিল শিখে নিতে হয়েছে অন্য আরেকজন অভিজ্ঞ ড্রাইবারের কাছ থেকে। আবার ব্যাঙ্কার তার স্কিল গুলো শিখে নিয়েছে শিক্ষা জীবন স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটি থেকে। এভাবেই একটা নির্দিষ্ট সময় পরিশ্রম করেই মানুষ ড্রাইবার বা ব্যাঙ্কার এর স্কিল গুলো অর্জন করে এবং এই স্কিল গুলোর মাধ্যমে ইনকাম করে থাকে।
এবার অনলাইন থেকে একটা উদাহারণ দেই, একজন ওয়েব ডেভেলপার। সে কি করে? হয় কোন ক্লায়েন্টের জন্য নতুন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়, আর না হয় কোন পুরনো সাইট কে নতুন করে সাজিয়ে দেয়। এতে ঐ ক্লায়েন্টেরও লাভ হয় আবার ওয়েব ডেভেলপারের ও লাভ হয়। কাজটি করে দেওয়ার জন্য ক্লায়েন্ট তাকে টাকা পেমেন্ট করে, আর ক্লায়েন্টের লাভ হল, এই তৈরিকৃত সাইট দিয়ে হয় কোন বিজনেস বা পারসোনাল কাজে ইউজ করা।
এখন এই ওয়েব ডেভেলপার কি এমনি এমনি হয়ে গেল? নাকি তাকে এই স্কিলটি শিখার জন্য অনেক সময় এবং পরিশ্রম করতে হয়েছে? অবশ্যই সময় এবং পরিশ্রম দিতে হয়েছে। এই টাইপের একটা স্কিল শিখতে হলে আপনাকে অনেক সময় ধরে লেগে থাকতে হবে, শিখার সময় মাঝে মাঝে আটকে যাবেন, ভুল করবেন, এই প্রসেস গুলো অভারকাম করেই একদিন আপনি ওয়েব ডেভেলপার হবেন।
তাহলে বুঝতে পারছেন ছুটা কাজ আর স্কিল এর মধ্যে পার্থক্য কি? আপনি আজকে ওয়েব ডেভেলপ শিখে কালকে থেকে কাজ করতে পারবেন না। এই স্কিল অনেক সময় নিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে শিখে নিতে হবে।
আর্টিকেলের টাইটেলে বাস্তবতা এবং সম্ভবনা এই দুটি শব্দ ছিল। এতক্ষণ আমি বাস্তবতা নিয়েই অনেক কিছু বললাম। এখন সম্ভবনা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশের মানুষ অনলাইন ইনকাম বলতে ফ্রিল্যান্সিং মেথডটি কে বেশি চিনে। আমি আজ ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তেমন কিছু বলবোনা। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে একটা টিউটোরিয়াল নিচে দিলাম। ইচ্ছে হলে দেখে নিতে পারেন।
২০১৬ সালে অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা VOA NEWS এ একটা খবর প্রকাশ করে, যেখানে পারভিন নামে এক মহিলাকে উদাহারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। যিনি তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার প্রথম আয় করেছিলেন মাত্র ৫ ডলার। পরবর্তিতে খুব তাড়াতাড়ি তিনি মাসিক ৬০০০ ডলার আয় করতে শুরু করে দিলেন। আর সেই মহিলা ছিল আমাদের বাংলাদেশের জন্য একটি গর্ব।
২০১৩ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশের সব ফ্রিল্যান্সার রা মিলে আয় করেছিলেন ২১ মিলিয়ন ডলার। যদিও আমার কাছে ২০১৮ সালের ডাটা জানা নেই, তবে ধারণা করে বলে দেওয়া যায়, এটি এক বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এই আয় গুলো আমি আপনি আমরা সবাই মিলেই করেছি। কেউ ১০০ ডলার, ২০০ ডলার এভাবে সবাই মিলে এই বিশাল এমাউন্ট টি এসেছে।
ফ্রিল্যান্সিং ই অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার একমাত্র মাধ্যম?
উত্তর টি এক কথায় বলে দিচ্ছি, না। অনলাইনের হাজার টি মাধ্যমের একটি মাধ্যম হল ফ্রিল্যান্সিং করে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করা। উদাহারণ স্বরূপ ফ্রিল্যান্সিং কে এনেছি কারন এটি বাংলাদেশে অনেক বেশি জনপ্রিয়। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য হাজারের উপরে স্কিল আছে, যে স্কিল গুলো শিখে নিলে আপনিও ঘরে বসে ইনকাম জেনারেত করতে পারবেন। যেকোন স্কিল এক দুই দিনে শিখা সম্ভব না, এখানে আপনাকে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম দিয়ে আগাতে হবে।
এমন একটা সময় আসবে, যখন অফলাইন ব্যপারটা অনেক কমে যাবে। মানুষ সব কিছুই অনলানের মাধ্যেম করবে। অনলাইন জগত টা দিনে দিনে অনেক বড় হচ্ছে। আমার জানা মতে বেশ কিছু বাংলাদেশের পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে অফলাইন সেল তেমন হচ্ছেনা তাই। পুরো পৃথিবীতে ট্রাডিশনাল ভাবে বই বিক্রি কমে যাচ্ছে, ইবুক এবং অডিও বুক চলে আসায়।
আমাজন সম্পর্কে হয়তো জানেন, এই আমাজনের কারনে বিভিন্ন দেশের হাজারের উপরে কম্পানি তাদের অফলাইন ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে কারন সেল হয়না।
সবশেষে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, আপনার যদি স্কিল জানা থাকে। আর আপনি সেই স্কিল ব্যবহার করে কোন ক্লায়েন্ট কে ভ্যালু দিতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য অনলাইনে কাজের কোন অভাব হবেনা। স্কিল জানা থাকলে শুধু অনলাইনে কেন, অফলাইনেও অনেক ভাল ভাল জব আপনার জন্য অপেক্ষা করবে।
পডকাস্ট কি? এখান থেকে বিস্তারিত জেনে আসুন!
এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল কিভাবে লিখা যায়? এখান থেকে পড়ে আসুন!
একটি ওয়েবসাইট থেকে কত উপায়ে ইনকাম সম্ভব? এখান থেকে পড়ে আসুন!
আমি কাওকাব নাদিম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।