মোটরসাইকেল শিল্পের ব্যপক সম্ভাবনাময় এই দেশে বর্তমানে বাইক ব্যবহারের হার তুলনামূলক অনেক কম হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব শীগ্রই বাংলাদেশে মোটরসাইকেল সকল পরিবারের ঘরে ঘরেই থাকবে। বাংলাদেশের মানুষও ব্যক্তিগত ব্যবহারে কিংবা ব্যাবসায়ীক ব্যবহারের জন্য ধীরে ধীরে এটির উপর ব্যাপক হারে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে সল্প এবং মাঝারি আয়ের লোকজন। কিন্তু অধিকাংশ সময় অনেকেই বিভিন্ন প্রলোভনে যথাউপযুক্ত বাইকটি কিনতে ব্যার্থ হন। ফলে পোহাতে হয় আর্থিক ক্ষতি সহ নানা সমস্যা। আমরা এটি নিয়ে দির্ঘদিনের গবেশনা এবং পর্যালোচনার ফলাফল এখানে উপস্থাপন করছি। আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে।
মোটরসাইকেল চালানো শেখা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স: আমরা অনেকেই্ মোটরসাইকেল চালানো শেখা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নতুন বাইক কেনার পরেই করে থাকি, যা একজন সেইফ রাইডারের কাছথেকে মোটেই কাম্য নয়। এতে করে আমরা নিজেকে ঠেলে দিচ্ছি দুর্ঘটনার কবলে, অনেকসময় আইনি জটিলতায়ও ফেঁসে যাচ্ছি। তাই বাইক কেনার আগেই আমাদের উচিৎ ভালোভাবে চালানো শেখা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া।
ব্যয় বা বাজেট: মোটরসাইকেল কেনার আগে সর্বপ্রথম বাজেটকেই প্রধান্য দিতে হবে। মোটরসাইকেল কেনার ব্যপারে আপনি কত টাকা খরচ করতে প্রস্তুত এটির উপরই নির্ভর করছে আপনার বাকি ধাপগুলো। ধরুন বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার বাজেট যদি হয় ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে, তাহলে আপনাকে একাবারে প্রারম্বিক স্তরের বাইকগুলো নিয়েই ভাবতে হবে। আবার আপনার বাজেট যদি হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হজার টাকার মধ্যে তাহলে আপনি ভালোমানের স্ট্যান্ডার্ড বাইক পেতেপারেন। পর্যায়ক্রমে বাজেট বাড়লে বাইক কোম্পানি এবং মডেল স্বাচ্ছন্দে বেছে নেওয়ার স্বধিনতা থাকবে।
কোন ধরনের বা বিভাগের বাইক আপনার জন্য উপযুক্ত: আপনার বয়স, সামাজিক অবস্থা এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে লক্ষ করুন কোন ধরনের বাইক আপনার জন্য প্রজয্য। যেমন বয়স ৪০ বছরের উপরে চাকুরিজীবি বা ব্যাবসায়ীদের জন্য সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড টাইপ বাইক বেশি উপযোগী। আবার অন্যদিকে তরুনরা সাধারণত স্পোর্স টাইপ বাইক পছন্দ করে। এডভেঞ্চার প্রিয়রা ঢার্ট বাইক এবং সম্ভ্রান্ত কিংবা আরাম প্রিয়রা ক্রুজার বাইক। নারিদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের এবং দামের স্কুটার। সর্বপুরি এটি আপনার বয়স ব্যক্তিগত রুচি এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে।
কোন ব্রান্ডের বাইক কিনবেন : বর্তমানে বাংলাদেশে দেশি বিদেশী সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ টি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোটরসাইকেল বিক্রয় করে আসছে। প্রত্যেক কোম্পানিই তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা এবং লক্ষ অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। সব কোম্পানি সব বিভাগের বাইকের জন্য উপযুক্ত নয়।
যেমন ভারতীয় কোম্পানি হিরো, টি.ভি.এস কিংবা বাজাজ বাংলাদেশে তাদের স্ট্যান্ডার্ড বাইকগুলোর জন্যই পরিচিত। এবং এই স্ট্যান্ডার্ড বাইক দিয়েই তারা সমগ্র বিশ্বে পরিচিত। এদের এই বিভাগের বাইকগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং তুলনামূলক কম দাম। একটি স্ট্যন্ডার্ড ক্যাটাগরির বাইক জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়া সবারই চাওয়া।
অন্যদিকে জাপানি ব্র্যান্ড হুন্ডা কিংবা ইয়ামাহা বাংলাদেশে সহ সারা বিশ্বেই তাদের স্পোর্স টাইপ বাইকগুলোর জন্য বিখ্যাত। তুলোনামূলক এদের বাইকের দাম একটু বেশি। ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে প্ল্যান্ট না থাকায় এ ব্র্যান্ডের বাইকের দাম অনেক বেশি। তবে এসব কোম্পানির বাইকগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো সাধারণত বেশ টেকশয়ী হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ফ্যশান প্রিয় তুরুনদের প্রধান আকর্ষনই হচ্ছে এদের স্পোর্স টাইপ বাইকগুলো।
অন্যদিকে সৌখিন বাইকারদের লক্ষ বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এপ্রিলা কিংবা কে টি এম এর স্পোর্স বাইকগুলোর দিকে, বাংলাদেশে যেগুলোর দাম আকসচুম্বি।
বাংলাদেশে ক্রজার বাইকের খুব একটা চাহিদা না থাকলেও Bajaj, Keeway, AtlasZongshen এবং H Power ব্র্যান্ডের ক্রুজার বাইক বাংলাদেশের মার্কেটে রয়েছে, বিশেষ করে চাইনিজ ব্র্যান্ড Haojue এর আকর্ষনীয় দুটি ক্রুজার বাইক যা সবাইকে আকৃষ্ট করবে।
এবার আসাযাক অপরোড বাইক বা ডার্ট বাইক। এ শ্রেনির বাইক বাংলাদেশে একেবারেই সীমিত, তবে বিখ্যাত ব্র্যান্ড Kawasaki তাদের দুটি অপরোড বা ডার্ট বাইক বাংলাদেশে বিক্রি আরম্ব করেছে। যদিও এগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য অনেক উচ্চ।
এখনো বাংলাদেশের নারিদের প্রধান আস্থার প্রতিক Scooter, যথারিতি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্র্যান্ডের স্কুটার পাওয়া যাচ্ছে। যেমন Honda, Suzuki, Bajaj, TVS প্রত্যেকেরই বাংলাদেশে তাদের উৎপাদিত Scooter বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু ভালোমানের ইলেক্ট্রিক বাইকও পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Akij এবং GreenTiger।
বাইকের লাইসেন্স : ডিলার কতৃক অথবা আপনি নিজেও আপনার বাইকের লাইসেন্স করাতে পারেন এজন্য আপনাকে বাইকের ইঞ্জিন সি সি এবং ওজন হিসেবে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ক্রয়: আমরা অনেকেই এটিকে অতিরিক্ত খরছ মনেকরে তা ক্রয় করিনা, কিন্তু মনেরাখবেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সবকিছুর আগে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হেলমেট নয়, সাথে সেইফটি বুট, চোখে গ্লাস এবং ডিলেডালা পোসাকও থাকা চাই।
বাইকের নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি: বাইক কেনার পরে চুরি হয়ে যাওয়ার একটা ভয় থেকেই থাকে। এই ভয়কে কিছুটা হলেও লাঘব করবে ভাল মানের লক। এ ক্ষেত্রে জি.পি.এস অথবা অ্যলার্ম সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিভিন্ন বিভাগের মোটরসাইকেলের বর্তমান বাজারমূল্য সহ বিস্তারিত বিবরণ এই লিঙ্কে
আমি ইমরান পাটওয়ারী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।