কর্মব্যস্ত এই মানুষগুলির জীবনে যেখানে এতোটুকু সময় নিজেদের জন্য নেই, সেখানে অধিকাংশ সময়ই নষ্ট হচ্ছে অতিপরিচিত এই যানজটের কারনে। বর্তমানে শহরে যে পরিমান গণপরিবহনের দরকার, তার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম রয়েছে। কয়েক বছর আগেও একটি বাস বা মিনিবাস দিনে ১৫০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার চালানো সম্ভব ছিল। সেখানে বর্তমানে যানজটের কারণে ৭০/ ৮০ কিলোমিটারের বেশি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে নতুন উদ্যোক্তারা পরিবহন ব্যবসায় আসতে চান না। এর ফলে দেখা দিয়েছে গণপরিবহনের সংকট।
তথ্য মতে, নগরীতে চলাচল করা বাসের সংখ্যা ৮ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজারে, হিউম্যান হলার ২০ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারে, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ১৩ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজারে। যদিও ঢাকার দুই কোটির বেশি মানুষের এ শহরে প্রয়োজন অন্তত ২০ হাজার সচল বাসসহ লাখের বেশি গণপরিবহন। গনপরিবহনের এই সঙ্কটই বর্তমানে নগরিতে যানজটের মূল কারন হয়ে দারিয়েছে।
এই যানজটের কারনে মানুষের মনে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাড়ছে বিভিন্ন অগঠনও। আর এই হতাশা দেখা দিচ্ছে গনপরিবহন চালকদের মধ্যেও। যানজট এড়াতে বেপরোয়া ভাবে এবং প্রতিযোগী মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে নীরিহ মানুষগুলিকে। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টেকটিউনসউট(এআরআই) এর প্রতিবেদন মতে, গত ১৫ বছরে ৪৯, ৮৪৭টি দুর্ঘটনায় ৪২, ৫২৬ জন নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং ৮০ হাজার ২শ ৩৯ জন আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। প্রতিবেদনে দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে সড়ক বা মহাসড়কের উপর তৈরি হওয়া বাস স্ট্যান্ড গুলোতেই। এছাড়া ২৮% দুর্ঘটনা হচ্ছে রাস্তার উপর গড়ে উঠা হাটবাজারে এবং ১৮% দুর্ঘটনা ঘটছে সড়কের মোড়গুলোতে। আর দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের তালিকায় বাস রয়েছে সবার উপরে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজেকে এই যানজট থেকে দূরে রাখার উপায় কি? এর বিকল্প কি কিছুই নেই? তাহলে বলবো বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তবে সেই বিকল্প ব্যবস্থার জন্য গুনতে হবে একটা মোটা অংকের বাজেট। নিজেকে এই যানজট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে আপনি নিতে পারেন একটি মোটরসাইকেল। এতে করে গনপরিবহনের উপর চাপ কমবে এবং কমবে দুর্ঘটনার পরিমানও। দুঃখের বিষয় হচ্ছে মোটরসাইকেল আমাদের দেশের সাধারন মানুষের পক্ষে কেনা খুব সহজ তা কিন্তু নয়। আমরা নিজেদের উন্নয়নশীল দেশের মানুষ হিসেবে দাবি করলেও, প্রক্রিতপক্ষে আমাদের জীবনযাত্রার মান কতোটুকু উন্নয়ন হয়েছে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ গুলির সাথে তুলনা করলে দেখতে পাই ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আমদের দেশে মোটরসাইকেলগুলি দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় মোটরসাইকেলের দাম বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। এবং যার কারনে দেশে মোটরসাইকেলের বাজার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানি থেকে ডিলার পর্যায়ে বিক্রি কমেছে ১৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল আমদানিকারকদের সংগঠন ও বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে ১০০ সিসি আমদানিকৃত মোটরসাইকলের দাম গড়ে ১ হাজার ৮১৫ ডলার। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একই মোটরসাইকেলে দাম ৯৪০ ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তানে তা মাত্র ৮০০ ডলার।
তাছাড়া ভারত থেকে আমদানিকৃত বাইকের দামের পার্থক্যে আপনাকে আরো হতাশগ্রস্ত করতে পারে। যেমন- ১১০ সিসির মোটরসাইকেলের দাম ভারতে গড়ে ৬৩ হাজার টাকা হলে বাংলাদেশে তা কমপক্ষে ১ লাখ ৪২ হাজার। ভারতের তুলনায় আমাদের দেশে এ ধরনের মোটরসাইকেল আড়াইগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল ভারতে ৮৯ হাজার টাকায় বিক্রি হলে বাংলাদেশে তা নূ্ন্যতম ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই তারতম্যের কারন কি? এর কি কনো সমাধান নেই? এর কারন পর্যালোচনা করলে যেটি বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে আমদানিকারকদের উপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শেষ তথ্যমতে, ২০০৯ সালে দেশে মোটরবাইক আমদানি হয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৪টি, ২০১০ সালে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮২৬টি। পরবর্তীতে উচ্চ শুল্কারোপের কারণে তা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের (মার্চ-এপ্রিল) দেশে কোম্পানি থেকে ডিলারদের কাছে মোটরসাইকেলে বিক্রি হয় ২ লাখ ২ হাজার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১ লাখ ৭০ হাজারে নেমে এসেছে। দেশে মোটরসাইকেল আমদানিকারকদের উপর থেকে শুল্কের পরিমান না কমালে, জনপ্রিয় এই বাহনটির সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হবে সাধারন মানুষ। বাংলাদেশে এ শিল্পের আমদানিকারদের বিভিন্ন ভাবে শুল্কের ভজা বহন করতে হচ্ছে। যেমন- কাঁচামাল আমদানি করে দেশেই প্রস্তুতকৃত মোটরসাইকেলকে ৩৮% কর প্রদান করতে হচ্ছে। যেমন- রানার অটোমোবাইল এই পদ্ধতিতে উৎপাদন করে আসছে।
বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে এনে সংযোজনক্রিত মোটরসাইকেলগুলোকে ৮৯% করে কর প্রদান করতে হচ্ছে। যে সকল কোম্পানি এই পদ্ধতির আওতায় সে গুলি হচ্ছে- বাজাজ, সুজুকি, টিভিএস, হিরো, হোন্ডা সহ আরো অন্যান্য কোম্পানি।
এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত মোটরসাইকেল আমদানিতে কর প্রদান করতে হচ্ছে ১৫১%। ফলে এই শিল্পটি যেভাবে সম্প্রসারণ হবার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না। যার কারনে এটি হয়ে পড়েছে ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে। অথচ এই শিল্পটি বর্তমানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী একটি শিল্প।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে এই শিল্পের এতো সম্ভবনা রয়েছে সেখানে কেন এতো প্রতিবন্ধকতা? মোটরসাইকেলের বিক্রি এত বৃদ্ধির পরও বাংলাদেশে এটির ব্যবহার ভারত এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক কম। জাপানের বহুজাতিক ব্র্যান্ড ইয়ামাহার গবেষণা অনুযায়ী, এ দেশে প্রতি ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব মোটরসাইকেলের বর্তমানা মূল্য
আমি ইমরান পাটওয়ারী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।