আমি টেকটিউনসের কোন নিয়মিত টিউনার নই, তবুও প্রফোশনগত ব্যস্ততার আড়াল করে আজ লিখতে বসলাম; বলতে গেলে লিখতে বাধ্য হলাম।
বেশ কিছুদিন আগে হতেই টেকটিউনসে একটি স্পষ্ট প্রতারণার বিষয়ে টেকটিউনসসি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিলো, তা হলো "এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট A+ পাইয়ে দেবার নামে জালিয়াতি করা"। আজকের এই ডিজিটাল যুগেও যার নূন্যতম প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান আছে তিনিই জানেন এটা স্পষ্ট স্ক্যাম তথা প্রলোভিত প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।
তবুও কোমলমতী শিক্ষার্থীদের সরলতার সুযোগে এমন জালিয়াত চক্র কতো যে স্টুডেন্ট'কে ভিক্টিম বানিয়েছে তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এমনি একটি অভিযোগ থানাতে দায়ের করা হয়, যারপরনাই সাসপেক্ট হিসেবে অজ্ঞাত জৈনক ইশতিয়াক রুদ্র নামে জিডি করা হয় (ডিএমপি এর অধীন জিডি নং ৫৭৭)। আমাদের নিকট তার কোন প্রকার ফটো কিংবা এড্রেস (হার্ড এভিডিয়েন্স) ছিলো না শুধুমাত্র একটি জিডি এবং একটি ইমেইল আইডি [email protected] ছাড়া আর কোন তথ্যই ছিলো না। জিডিতে উল্লেখ করা সীমকার্ড বন্ধ ছিলো এবং সীমকার্ড নিবন্ধিত তথ্যে হতে তাকে ট্রাক করা সম্ভব হয়নি।
এরপর আমাদের এই বিষয়টির এনালাইসিসে টেকটিউনসের একটি টিউন রিপোর্ট চোখে পড়ে (লিংক → https://www.techtunes.io/desk/584312) তবে সেটা অসম্পূর্ণ তথ্য ছিলো যা হতে সাসপেক্ট পুরোপুরি সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
অতঃপর এই প্রতারণার মুখোশ খোলার পূর্ব মুহূর্তে আমাদের সহায়ক হিসেবে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্রাইম এনালাইসিস টিভি শো বিষয়টির ওপর একটি ইপিসড করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এরপর আমারাও এমন প্রতারকের ফাঁদ কাটতে তার প্রতারণার ফাঁদে বাড়াই এবং মিথ্যা রেজাল্ট সংশোধন করানোর জন্য ইমেইল করা হয়। তাদের রিপ্লাই'তে একটি ফোন কল এবং একটি বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয় যাতে তারা ২০০০ টাকা এডভান্স দাবী করে এবং ইমেইলে যোগাযোগ করতে বলে।
তাদের ফোন কল পাওয়া নাম্বার'টি সার্ভেল্যান্স মনিটরিং করার জন্য নেটওয়ার্কে টুজি পিং চালু করা হয় যাতে লোকেশন ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়। তবুও লাস্ট টাওয়ার লোকেশন হতে সাসপেক্ট ইশতিয়াক রুদ্রকে পাওয়া যায়নি কেননা সীমকার্ডটি অফ করে রাখা হয়। এরপর একধাপ এগিয়ে আমরা তাদের ঐ বিকাশ নাম্বারটির একাউন্ট ইনফরমেশন সংগ্রহ করি এবং তা ফেইক আইডি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিলো।
সুতরাং এটাকে পারফেক্ট ক্রাইম মনে হতেই পারে, কিন্তু কন্টিনিউয়াস টাচে থাকার জন্য তার ঐ একাউন্টে দাবী করা ২০০০ টাকা পাঠানো হয় এবং একইসাথে তাতে একটিভ থাকা টুজি পিং হতে টাওয়ার লোকেশন সনাক্ত করা হয়। বিকাশ সার্ভেলেন্স হতে ঐ বিকাশ একাউন্ট'টির ট্রানজেকশন রিপোর্ট হতে তাকে হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয়।
তার নিকট হতে মোট ১১ টি সীমকার্ড এবং ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ একাউন্ট যুক্ত সীমকার্ড পাওয়া যায়। এছাড়া বেশ কতোক ইমেইল আইডি এবং একাউন্ট (টেকটিউনস আইডি, ব্লগার আইডি এবং ফেসবুক আইডি) মিলে যা হতে তারা এমন প্রতারণার জাল বুনতো। তার আসল নাম সারোয়ার এবং সে ঢাকার সাভার এলাকার শ্রীপুর নামের একটি বাড়ি ভাড়া করে নিবাস করতো বলে তথ্য পাওয়া যায়।
সকল অভিযোগের এবং এভিডিয়েন্স স্বাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে মামলা করা এবং হাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান।
এছাড়াও এমন আরো সক্রিয় প্রতারক চক্রকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে।
মনে রাখুন:
(১) কেউই আপনার রেজাল্ট পাল্টে দিতে পারে না কেননা এবং শিক্ষাবোর্ড এর কনফিডেনসিয়াল ইনফরমেশন।
(২) যারা এমন প্রতারনা করে তাদের মোটেও বিশ্বাস করে প্রতারিত হবেন না এবং দ্রুত নিকটস্থ থানাতে যোগাযোগ করুন কিংবা দ্রুত 999 (ফ্রি টোল) এ অভিযোগ জানান।
(৩) অনেক গার্ডিয়ান আছে যারা সমাজের নিন্দার ভয়ে এমন প্রতরণার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ থাকেন তাদের এ বিষয়ে আরও সচেতন এবং কনসারভেটিভিটি পরিহার করা উচিত যেন এমন সাইবার ক্রাইম প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
টেকটিউনসের প্রতি আবেদন:
এমন স্ক্যাম মূলক টিউনগুলা যেন দ্রুত অপসারণ করা হয় যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এবং প্রয়োজনে তাদের সাইবার ক্রাইম ইস্যুতে (আইসিটি অ্যাক্টে) আইনের সহায়তা নেওয়া উচিত।
সকলের প্রতি নিবেদন:
সাইবার ক্রাইম বিষয়ে নিজে সচেতন হউন এবং অন্যকে সচেতন করুন। আপনার একটু সচেতনতা আর মোটিভেশন হয়তো এমন ক্রাইম হয়ে আপনার প্রিয়জনে সেইফ করতে পারে।
অনেকে আছেন যারা হয়তো ভাবেন পুলিশ মানেই ঝামেলা তাদের জন্য বলি "আইন সবার জন্যই সমান" আপনি ভয় এড়িয়ে একবার আইনের সহায়তা নিতে চাইলে রাষ্ট্র আপনাকে সহায়তা করতে বাধ্য এবং এটা আপনার অধিকার সুতরং মনের অহেতুক ভয় দূর করুন। পুলিশের ভেতরও দেশপ্রেম এবং মানবতা আছে সুতরাং গুটিকয়েক ব্যাড রিপোর্টের জন্য গোটা পুলিশ ফোর্সকে দায়ী করা অনুচিত।
আর একটি কথা, থানাতে জিডি করতে কোন প্রকার টাকার প্রয়োজন হয়না এবং আপনি যদি স্পেসিফিক এলাকাতে নাও থাকেন তবে আপনি জিরো এফআইআর ভিত্তিতে যেকোনো থানাতে জিডি করতে পারবেন(প্রয়োজনে পরে তা উক্ত থানা হতে ট্রান্সফার করা হবে)।
সুতরাং আইনের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং সচেতন হউন, সাইবার ক্রাইম প্রতিকারে পুলিশ আপনার পাশেই থাকবে।
[টেকটিউনসসিতে প্রায় হ্যাকিং এবং আউটসোর্সিং বিষয়ে স্ক্যাম করা হয় তাই এ বিষয়টি নিয়ে আপনারা সচেতন হবেন এবং আমিও চেষ্টা করবো ব্যস্ততার ফুসরতে টেকটিউনসসিতে এ বিষয়ে টিউন করার যাতে আপনি উপকৃত হতে পারেন, ধন্যবাদ]।
ফেসবুকে যেকোন সহায়তায় আমাকে নক করতে পারেন→ আসিফ মাহমুদ নিলয়
আমি আসিফ মাহমুদ নিলয়। Sub Inspector, Bangladesh Police, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ স্যার ,এই বিষয়ে অবহিত করার জন্যে।
এই বিষয় সমপর্কে কিছুই জানতাম না।
আপনার এই পোস্ট অনেককেই প্রতারণা থেকে বাঁচাবে।