শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার পুরো পৃথিবীতে তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু সবকিছু প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে দিয়ে মনুষ্য-বিবর্জিত কোন সিস্টেম পছন্দ করছেন না বেশিরভাগ মানুষ। তাই ’ফেস টু ফেস লার্নিং’ এবং ’অনলাইন টিচিং’ এর সমন্বয়ে ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেল অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়েছে বেশিরভাগের কাছে।
প্রথমেই দেখি এখন আমরা গতানুগতিকভাবে কোন কোন মডেলে ক্লাস করি বা পাঠ নিই-
১. লেকচার বেইজড ক্লাসরুম বা বক্তৃতার মাধ্যমে পাঠদান (যেটা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং সবচেয়ে কম ইন্টারঅ্যাকটিভ, ইনএফিশিয়েন্ট। )
২.স্মল গ্রুপ অফ ইন্সট্রাকশন বা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে নির্দেশনা দেওয়া-(৩/৪জনের গ্রুপ)
৩. পার্সোনাল লার্নিং প্ল্যান (এক্ষেত্রে একজন ছাত্রকে একজন শিক্ষক পড়ায়)
৪. গাইডেড প্র্যাকটিস
৫. ইনকোয়ারি বেজড টিচিং (এর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে অন্যগুলোর তুলনায় কম। )
ব্লেন্ডেড লার্নিং গতানুগতিক ক্লাসরুম এবং অনলাইন টিচিং এর মাঝামাঝি একটি মডেল। এই টিউনটিতে এর চারটি মডেল ও মূল বিষয়টির উপাদানগুলো নিয়ে আলোচনা করছি.
ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হলো-
ফেস টু ফেস ড্রাইভার- টিচার মুখে মুখে ইন্সট্রাকশন দিবেন, বিভিন্ন ডিজিটাল টুল দিয়ে লেকচারকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করবেন।
রোটেশন- স্টুডেন্ডরা ডিজিটাল ও অ্যানালগ লেখাপড়ার একটা সাইকেলের মধ্যে দিয়ে যাবে, তাদের হাতে স্বাধীনভাবে অনলাইন স্টাডি করার সময়ও থাকবে আবার ফেস টু ফেস ক্লাসরুমে অংশগ্রহণেরও সুযোগ থাকবে। সহজ করে বলতে গেলে ঘুরে ঘুরে ক্লাস করবে যা প্রত্যেকের অংশগ্রহণের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে।
ফ্লেক্স- বিভিন্ন ধরনের রিডিং ম্যাটেরিয়াল, লেকচার ডিজিটাল প্লাটফর্মে দেওয়া হবে, সেগুলো বোঝানোর জন্য, আলোচনা করার জন্য টিচাররা ক্লাস নিবেন।
ল্যাব- ক্লাস করার জন্য ট্র্যাডিশনাল ক্লাসের মত স্থায়ী ক্লাসরুম থাকবে।
সেল্ফ-ব্লেন্ড – স্টুডেন্টরা নিজেদের লেখাপড়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইন কোর্স ওয়ার্কের সাহায্য নিবেন।
অনলাইন ড্রাইভার- স্টুডেন্টরা কোন একজন টিচারের তত্ত্বাবধানে তাদের কোর্সটা অনলাইনে কমপ্লিট করবেন।
তাহলে এটাতে তিনটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ-
১. স্টুডেন্টরা আলাদা আলাদাভাবে নিজের যতটুকু প্রয়োজন ইন্সট্রাকশন পাবে
২. টিচাররা ছোট ছোট গ্রুপে ডিফারেনশিয়েটেড ইন্সট্রাকশন দিতে পারবে সাপ্তাহিক এবং দৈনিক ডাটার উপর ভিত্তি করে।
৩. সবচেয়ে কম খরচে স্কুল অপারেট করা যাবে।
-এই এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশটাই ব্লেন্ডেড লার্নিং।
ব্লেন্ডেড লার্নিং এর চারটা মডেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। ল্যাব রোটেশন, ক্লাস রোটেশন, ফ্লেক্স এন্ড পড।
১. ল্যাব রোটেশন- স্টুডেন্ট ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাবে মুভ করতে পারবে। অনেকেই এটাকে ট্র্যাডিশনাল কম্পিউটার ল্যাবের সাথে এক করে দেখতে পারেন। কিন্তু এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। কন্টেন্টের ডাটা থেকে লার্নিং ল্যাব, ক্লাসরুমকে নির্দেশনা দিতে পারে। এই মডেলে কোন একটা কোর্স বা সাবজেক্ট যেটা পড়ার ক্ষেত্রে স্টুডেন্ডরা একটা ফিক্সড শিডিউল মেনে চলে এবং কোর্সটির যে কোন একটি অংশ অনলাইন লার্নিং-র অন্তর্ভূক্ত। অন্য অংশগুলোর মধ্যে আছে- ছোট ছোট গ্রুপে বা পুরো ক্লাসকে ইন্সট্রাকশন দেওয়া, গ্রুপ প্রজেক্ট, প্রত্যেক স্টুডেন্টকে আলাদাভাবে মনিটরিং করা, পেন্সিল-পেপার অ্যাসাইনমেন্ট। এই মডেলের আবার চারটি সাব-মডেল আছে- স্টেশন রোটেশন, ল্যাব রোটেশন, ফ্লিপড রোটেশন, ইনডিভিজুয়াল রোটেশন।
২. ক্লাস রোটেশন- এই মডেলে ৩০ জনের একটা ক্লাস চারটা ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। বিশ মিনিট পরপর তারা বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে ক্লাস করতে থাকে। প্রথম স্টেশনে থাকে টিচার, দ্বিতীয়তে ইনডিভিজুয়ালি কম্পিউটার, তৃতীয়তে গ্রুপ কম্পিউটার, এরপর গাইডেড প্র্যাকটিস। এর ফলে টিচার পুরো ক্লাসকে মনিটর করতে পারে, ক্লাস বিহেভিয়ার ও ক্লাস কালচার কন্ট্রোল করতে পারে।
৩. ফ্লেক্স রোটেশন- এই ক্লাসরুমকে দেখলে কোন ব্যাংকের বা কোম্পানির কলসেন্টারের মত লাগে। এই মডেলে স্টুডেন্টরা বেশিরভাগ সময় কম্পিউটার লার্নিং এই ব্যস্ত থাকে। কখনো কখনো টিচার সরাসরি নির্দেশনা দেয় বা কোন সেমিনারে নিয়ে যায়।
৪. পড রোটেশন- এটা সবচেয়ে নতুন মডেল। একে মূলত ক্লাসরুমের ভেতরে ক্লাসরুম বলা যায়। এখানে টিচারকে একই সাথে এডভাইজর, বিহেভিয়ারাল স্পেশালিস্ট, ইন্সট্রাকটর রূপে রোল প্লে করতে হয়।
ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেলে মূলত ট্র্যাডিশনাল ক্লাসরুম ও স্টুডেন্টদের শেখার উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে ’টার্গেটেড ইন্সট্রাকশন’ দেওয়াটাই লক্ষ্য। এটা ‘স্টুডেন্ট ফোকাসড’ লার্নিং মডেল- এর চাহিদা এই মুহূর্তে ব্যাপক। এই সময়ে স্কুল কতটুকু সিলেবাস শেষ করাতে চাইছে তার থেকে, শিক্ষার্থী কতটুকু শিখতে পারবে তার উপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বসে বসে শুধুই লেকচার শোনার থেকে হাতে কলমে কাজ করে শেখা বা কোন বিষয় বোঝা অনেক বেশি ইফেক্টিভ। যারা দ্রুত বুঝে তারা দ্রুত শিখতে পারবে, যারা দেরিতে বুঝে তারা সময় নিয়ে, পজ করে বা বিরতি দিয়ে, নোট নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। ব্লেন্ডেড লার্নিং এ টিচার, কনসেপ্টের উপর ফোকাস করে ’হায়ার অর্ডার থিংকিং স্কিল’ বা যে কোন কিছুকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে শেখাবেন। বলা হয় যে, স্টুডেন্ট কতটুকু শিখতে পারছে তা মাপার জন্য টেকনোলজি ভিন্ন অন্য উপায় নেই। ট্র্যাডিশনাল ক্লাসে প্রত্যেকটা স্টুডেন্টকে একই সময়ে একই জিনিস পড়ানো হয়, প্রত্যেকে একই সময়ে পরের চ্যাপ্টারে যায়, একই সময়ে পরীক্ষা দেয়। ব্লেন্ডেড মডেলে স্টুডেন্টের শিখতে যত সময় লাগে (সেই সময়টা প্রত্যেকের আলাদা আলাদাও হতে পারে) -তাকে সেই সময়টা দেওয়া হয়।
এডুকেশনাল টেকনোলজির নতুন প্রজন্মের নাম ব্লেন্ডেড লার্নিং। আমাদের দেশের ডিজিটাল ক্লাসরুমগুলোতে এর বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, তারপরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন। সেজন্য ব্লেন্ডেড লার্নিং মডেল সম্পর্কে আমাদের ভালভাবে জানতে হবে।
আমি ওয়াসিফা জান্নাত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।