গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রকৃতির এক অনন্য বিস্ময়, অনিন্দ্যসুন্দর রুক্ষ পাথরে গড়া এক অতুলনীয় পাথুরে স্থাপত্য। চারিদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়, তারই মাঝে প্রকৃতি তার সকল ভালো লাগা আর অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই গিরিখাতকে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে অ্যারিজোনা রাজ্য, নেভাদা, ইউতাহ, নিউ মেক্সিকো, কলোরাডো- এসব অঞ্চল যেন পাহাড়ের সাম্রাজ্য। এখানে প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে তার সব ঐশ্বর্য। অ্যারিজোনার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত ২৭০ মাইল দীর্ঘ, ১৮ মাইল চওড়া, এবং ১ মাইলের মতো গভীর গিরিখাত সমৃদ্ধ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর ২০০ কোটি বছরের ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের অধিকাংশ এলাকা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত।
এই গিরিখাতটির নামকরণের পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। এখানে হাজার বছর ধরে বাস করছে আমেরিকার আদিবাসীরা। আদিবাসীদের যে বিশেষ গোষ্ঠীটি এই গিরিখাত অঞ্চলে বাস করতো, তাদের বলা হতো পুয়েব্লো। তাদের কাছে বড়ই পবিত্র এই গিরিখাত। তারা এই গিরিখাতকে ডাকে ‘Ongtupqa’ নামে, যার অর্থ হলো ‘বৃহৎ গিরিখাত’। মূলত তাদের দেওয়া এই নাম থেকেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামটির উৎপত্তি। প্রকৃতিকে সযতনে লালন করার ক্ষেত্রে এসব অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।
এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ঐতিহ্যবাহী কলোরাডো নদী। প্রাকৃতিক যেসব বিস্ময় মানুষকে যুগে যুগে মুগ্ধ করেছে, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তার মাঝেই একটি। আর সে কারণে প্রতি বছর পাঁচ মিলিয়নেরও অধিক পর্যটকের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে পুরো গিরিখাত।
পুরো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সীমান্ত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে রয়েছে নর্থ রিম ও অন্যটিতে আছে সাউথ রিম। সাউথ রিম সারা বছরই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের ৯০ শতাংশই সাউথ রিমের অংশ। সাউথ রিম থেকে বিমান এবং রেল পরিষেবা ছাড়াও অন্যান্য পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বর্তমান কলোরাডো নদী অনেক খাড়াভাবে নিচে নেমে এসেছে। গবেষকদের একটি দল পুরনো কলোরাডো নদীর পাথরের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, পুরনো কলোরাডো নদী উত্তর-পশ্চিম দিকে গ্রেট সল্ট লেক দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু বর্তমান কলোরাডো নদী সম্পূর্ণ গতিপথ পরিবর্তন করে রিও গ্রান্ডের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গিরিখাতের পাথরগুলো মূলত বিভিন্ন স্তরে সাজানো রয়েছে। স্তরগুলোকে বলা হয় ‘প্লেট’। গবেষণায় প্রাপ্ত এক তথ্য হতে ভূতত্ত্ববিদরা জানান, এই স্তরগুলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও পুরনো। ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক প্লেটের নানান ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী হয়ে রয়েছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের এই প্লেটগুলো। প্লেটগুলোর গড় দূরত্ব প্রায় ৫০ মাইল।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। নর্থ রিম ও সাউথ রিম ক্যানিয়নের দু’পাশে অবস্থিত হওয়ায় পর্যটকেরা দুই অংশ দিয়েই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে প্রবেশ করতে পারেন। তবে দুই অংশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভিন্নতা রয়েছে। অধিকাংশ ভ্রমণ পিপাসু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের দক্ষিণ রিম পরিদর্শন করেন।
অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে এই খ্যাতি এনে দিয়েছে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রে আগত পর্যটকদের এক প্রধান আকর্ষণের নাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো সূর্যোদয় দেখা। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, এন্টিলপ ক্যানিয়ন, জিওন ন্যাশনাল পার্ক, ডেড ভ্যালি বেড ওয়াটার- এসব কালের সাক্ষী স্থানগুলো প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে ভ্রমণপিপাসুদের স্বাগত জানায়। এছাড়া কলোরাডো নদীতে নৌকাভ্রমণের মধ্য দিয়ে চারপাশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে পর্যটকদের।
সন্ধ্যা হলে এখানকার রাস্তাঘাট বেশ নির্জন হয়ে ওঠে। বিকেল বেলায় এর সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর রাতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এলাকাটি এক অপরূপ মায়াময় আবেশ ছড়িয়ে দেয় তার চারপাশে।
আমি মার্স টেক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।