আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ ইয়েমেন। ইয়েমেনের ছোট্ট একটি শহরের নাম শিবাম। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে এই শহরের রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব। এই শহরের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল সব অট্টালিকা। তবে মজার ব্যাপার হলো বাড়িগুলো মোটেও এখনকার মতো ইট, সিমেন্ট, লোহা বা কংক্রিটের তৈরি নয়। রোদে শুকনো মাটির ইট দিয়ে তৈরি করা হয় এসব বিশাল বিশাল অট্টালিকা।
ষোড়শ শতাব্দীর দিকে ইয়েমেনের এই অঞ্চলটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে বেশ প্রসিদ্ধ লাভ করে। ফলে এই অঞ্চলকে ঘিরে ইয়েমেনের আশেপাশের অঞ্চলের অধিবাসীদের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি এখানকার অধিবাসীরাও ব্যবসা-বাণিজ্য করে বেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠতে থাকে।
তবে সেই সময় শিবাম অঞ্চলের ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল একদল বেদুইন সন্ত্রাসী। আঞ্চলিক লোকজন এই বেদুইন দস্যুদের খুব ভয় করতো। কেননা তারা যেমন ছিল নৃশংস, তেমনি চুরি-ডাকাতিতেও ছিল বেশ দক্ষ। তখন শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শহরবাসীদের রক্ষা করার জন্যে অভিনব এক উপায় বের করলেন। বিশাল বিশাল দেয়ালের প্রাচীর তৈরি করে পুরো শহরটিকে একটি দুর্গের মতো করে ঢেকে ফেলার চিন্তা করা হল। পাশাপাশি শহরের প্রত্যেকটি বাড়ি উঁচু করে তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় শিবাম অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধশালী ছিল বলে এমন পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়েছিল।
এই শহরটিতে প্রায় ৫০০ এর বেশি বাড়ি রয়েছে। একেকটি বাড়ি উচ্চতায় ৫ তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তুলনা করতে গেলে অনেকটা বর্তমানের ফ্ল্যাট বাড়ির আদলেই তৈরি করা হতো বাড়িগুলো। তবে পার্থক্য একটাই, বিশাল বিশাল বাড়িগুলো কেবলমাত্র একটি পরিবারের জন্যেই নির্মাণ করা হয়েছিল।
বাড়িগুলোর কয়েকটি তলা আবার পৃথক পৃথক কাজে ব্যবহারের জন্যে সংরক্ষিত থাকতো। যেমন নিচের তলা বাসস্থানের জন্যে ব্যবহার করা হতো না। যেহেতু পশুপাখি পালন করা তাদের জীবিকার একটি অন্যতম মাধ্যম ছিল তাই নিচের তলা ব্যবহার করা হতো গৃহপালিত পশুপাখি রাখার জন্যে। ২য় তলাটি অনেক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বা দোকান বা অফিসের কাজে ব্যবহার করা হতো। আর এই কারণেই ১ম ও ২য় তলায় কোনো জানালা রাখা হতো না। মূলত ৩য় তলা থেকেই বাড়ির বাসিন্দাদের বসবাসের শুরু।
প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যবহার করা হয় কাদামাটি এবং ভূষি। পাতাহীন নাবাক গাছ ব্যবহার করা হয়েছে বাড়িগুলোর কাঠামো তৈরি করার জন্যে।
মাটির সাথে প্রথমে খড়কুটো ও পরিমাণমত পানি দিয়ে একধরনের সংমিশ্রণ তৈরি করা হতো। তারপর প্রয়োজনমত ইটের আকার দিয়ে কেটে নেয়া হতো এবং সেগুলো মরুভূমির প্রখর রোদে তিনদিন ধরে শুকাতে দেয়া হতো। মরুভূমির উত্তপ্ত রোদের তেজের কারণেই ইটগুলো খুব সহজেই শুকিয়ে যেত। বাড়িগুলো প্রায় ৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে।
ভূমিকম্পের শঙ্কা থেকে অনেকটাই মুক্ত বলে হাজার বছর বেশ স্বচ্ছন্দের সাথেই টিকে রয়েছে বিশাল এই বাড়িগুলো।
অনেক প্রাচীন যুগে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ার কারণে অনেকেই শহরটিকে ‘পৃথিবীর প্রাচীনতম গগনচুম্বী অট্টালিকার শহর’ বা মরুভূমির ম্যানহাটন বা শিকাগো নামেও অবিহিত করে থাকে। এসব শহরে বিশাল বিশাল সব অট্টালিকা রয়েছে বলেই হয়তো শিবামের এই অঞ্চলের এমন নামকরণ।
১৯৮২ সালে শহরটিকে বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়। এর ফলে বিশ্বের অনেক পর্যটকের নজর কাড়ে স্থানটি। কিন্তু পরবর্তীতে নিরাপত্তার অভাবে জায়গাটি পর্যটন গুরুত্ব হারাতে থাকে।
আমি মার্স টেক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
মাত্র ৫০ টাকায় পাচ্ছেন ১ জিবি হোস্টিং ! https://secure.hostcart.net/aff.php?aff=1