United States Air Force এর গর্বের প্রতীক Lockheed Martin F-22 Raptor হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কার্যকারী স্টিলথ এয়ার সুপেরিওর মাল্টিরোল ফাইটার জেট যা অফিসিয়ালি সার্ভিসে আসে ২০০৫ সালে। পেন্টাগন বা মার্কিন কংগ্রেসের এই প্রজেক্টের পিছনে $৬৬.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে, তারপরেও একে একটি নিখুঁত ফাইটার এ রূপ দিতে তারা অক্ষম হয়েছে, তাইবলে এই USAF ATF প্রজেক্ট কিন্তু কোন ফালতু বা অসফল প্রজেক্ট বলা যাবেনা, কারন এর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এটি এর প্রযুক্তি এবং কার্যক্ষমতা দিক দিয়ে সার্ভিসে থাকা যে কোন ফাইটার কে পরাজিত করতে সক্ষম। আর তাই সার্ভিসে আসার পরে থেকে আজো এটি শ্রেষ্ঠ ফাইটার এর অবস্থান ধরে রেখেছে।
পঞ্চম প্রজন্মের এই F-22 Raptor শুধুমাত্র একটি এয়ার সুপেরিওর ফাইটার ই নয় বরং একই সাথে এটির গ্রাউন্ড এট্যাক, ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার, সিগনাল ইন্টেলিজেন্স এও সক্ষমতা রয়েছে। মার্কিন বিমান বাহিনীর ইতিহাসে খুবসম্ভবত F-22 ই একমাত্র ডেল্টা উইং বিশিষ্ট ফাইটার জেট, যা একে সুপার ম্যানুভারিটি এনে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে প্রথমবার এরমত ব্যবহার করা হয়েছে Pitch-Axis Thrust Vectoring Nozzles ক্ষমতাসম্পন্ন ২ টি Pratt & Whitney F119-PW-100 Afterburning Turbofan Engine যা এই ফাইটার টিকে এনে দিয়েছে Mach-2.25 গতি, এই এফ-২২ রেপ্টর এর একটি ইনিক দিক হলো এটি আফটার্বার্নার ব্যবহার না করেই সুপারসনিক (Mach-1.82) গতিতে উড়তে সক্ষম যা ফুয়েল কনজিউম রেট কমায় এবং রেঞ্জ বৃদ্ধি করে। একই সাথে থ্রাস্ট-ভেক্টরিংনজেল +-২০ ডিগ্রী এঙ্গেলে উত্তাপ ছড়িয়ে দেবার কারনে এর হিট সিগ্নেচার কমে আসে সাথেই ম্যানুভারিটিতেও ব্যাপক সহায়তা করে।
মার্কিন ইতিহাসে F-22 Raptor এমন একটি ফাইটার যা রাশান হাই-ম্যানুভার ফাইটার কে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম, এর হাই-ম্যানুভারেবল স্ট্রাকচারাল ডিজাই ও এর ডেল্টা উইং একে অনেক বেশি ম্যানুভারিটি দিয়েছে, অফিসিয়ালি এটি Herbst maneuver (J-turn) ম্যানুভার, Pugachev's Cobra ম্যানুভার, 60°+ Alpha ম্যানুভার করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। এমনকি এটি SU-35, 37 এর মত KULBIT ম্যানুভার করতে সক্ষম। এই ম্যানুভার টিতে হঠাৎ করে চলতে চলতে খাড়া ভাবে অনেক কম যায়গা নিয়ে 360° ঘুরে শত্রু পক্ষের ফাইটার এর পিছনে অবস্থান নেয়া হয়। এর কাঠামো তৈরিতে উন্নত উপকরণ ও সঠিলথ কোটিং ব্যবহার করার ফলে রেপ্টর মাত্র ০.০০০১ রাডার সিগ্নেচার উৎপন্ন করে, ফলে একে রাডারে ধরা অত্যান্ত কঠিন।
এফ-২২ এর প্রতি ঘন্টা উড্ডয়ন খরচ $৫৮, ০৯৯ ডলার, আর এটি একবার কোন মিশন শেষ করে আসার পর প্রায় ৪৮-৭২ ঘন্টার মেইন্টেনেন্স এর প্রয়োজন পড়ে, যার ফলে একে দিয়ে ইচ্ছামত ফ্লাই করানো সম্ভব না, যদিয়ো এটা শুধুই ট্যাক্টিকাল মিশন কে লক্ষ রেখে তৈরি।
আধুনিক কালে আকাশ যুদ্ধের সবচেয়ে আলোচিত বিমান হল আমেরিকান স্টেলথ ফাইটার এফ ২২ র্যাপটর (Lockheed Martin F-22 Raptor)। এখনও পর্যন্ত এফ ২২ র্যাপটর ই সার্ভিসে আসা একমাত্র স্টেলথ ফাইটার।
স্টেলথ টেকনোলজির কাজ হল রাডারকে ফাকি দেয়া। এফ ২২ প্রধানত এয়ার সুপিরিউরিটি ফাইটার যাতে স্টীল্থ, সুপারক্রুজ, ভেক্টরিং থ্রাস্ট সহ অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এটা সার্ভিসে আসে ২০০৫ সালে। এই ফাইটার তৈরীর প্রধান লক্ষ্য ছিলো F-15 Eagle কে রিপ্লেস করা। এই এফ ২২ এর জন্মের ইতিহাস যথেষ্ট লম্বা। ১৯৮১ সালে আমেরিকান এয়ার ফোর্স Advanced Tactical Fighter (ATF) নামে একটি প্রযেক্ট হাতে নেয় যার উদ্দেশ্য ছিল নতুন ধরনের এয়ার সুপিরিউরিটি ফাইটার তৈরি এবং F-15 Eagle কে রিপ্লেস করা।
এর কারন ছিলো সোভিয়েত ফাইটার সু ২৭। অনেক রকমের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কোবরা ম্যানুভ্যারেবল সু ২৭ এর সাথে আমেরিকার F-15 Eagle এর ডগ ফাইটে টেকার সম্ভবনা ছিলো মারাত্বক কম।
Advanced Tactical Fighter (ATF) প্রজেক্টে আমেরিকানরা সোভিয়েতদের সু ২৭ এর মতো আ্যাডভান্সড অ্যালয়, কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল, আ্যাডভান্সড ফ্লাই বাই ওয়্যার, হাই পাওয়ার প্রোপুলশন এবং লো অবজারভেবল বা স্টেলথ টেকনোলজি অ্যাড করা হয়।
এবং এর প্রোডাকশন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। আর প্রথম F-22 হস্তান্তর হয় ২০০৩ সালে। আর F-22 আমেরিকান এয়ার ফোর্সে সার্ভিস শুরু করে ১৫ ডিসেম্বর ২০০৫।
এই ফাইটারের বিশেষত্ব অনেক দিক দিয়ে। যার অন্যতম আলোচিত এবং সমালোচিত বিষয় হল এর প্রোডাকশন কস্ট।
এফ ২২ র্যাপটর এখনও পর্যন্ত দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ফাইটার। এই ফাইটার তৈরীর টোটাল প্রোগ্রাম কস্ট ছিলো ৬৫ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি টাকা (২০০১০-২০১১ অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাজেট ছিলো ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫০কোটি টাকা)।
আর এর পার ইউনিট প্রডাকশন কস্ট ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১০৫০ কোটি টাকা। তবে টোটাল প্রোগ্রাম কস্ট কে টোটাল উৎপাদিত বিমান দিয়ে ভাগ করলে পার ইউনিট কস্ট দাড়ায় ৩৬৫ মিলিয়ন ডলার
যা বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ২৫৫৫ কোটি টাকা প্রতি পিস।
পারফরমেন্সের দিক দিয়ে এই বিমান বিভিন্ন ইউনিক পাওয়ার ডিজার্ভ করে।
এফ ২২ র্যা পটর একটি ৫ম প্রজন্মে ফাইটার এয়ারক্রাফট। এই বিমানকে ৪র্থ জেনারেশন স্টেলথ এয়ারক্রাফট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এফ ২২ র্যাপটর এর এক্সটারনাল বডিতে ব্যবহার করা হয়েছে রাডার সিগন্যাল অবজরভার, যা রাডার সিগন্যালকে রাডারের কাছে ফেরত যেতে দেয় না। যা এই বিমানকে শত্রু পক্ষের কাছে অদৃশ্য করে তোলে।
এফ ২২ র্যাপটর এর ২টা Pratt & Whitney F119-PW-100 turbofans একে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 23, 500 lb ড্রাই থ্রাষ্ট সাপোর্ট করে। যার সাহায্যে এই বিমান ২ ধরনের সুবিধা পায়।
প্রথমমত, সুপার ক্রুজিংয়ে আফ্টার বার্নার ছাড়াই ম্যাক ১.৮ (১৯০০ কি.মি./ঘন্টা) গতিতে চলতে পারে। যেখানে সাধারন বিমানের ক্ষেত্রে এই গতি মাত্র ম্যাক ১.৫ (১৫০০ কি.মি./ঘন্টা)। এছাড়া আফটার বার্নিং এর এর সময় এফ ২২ এর গতি থাকে ম্যাক ২.২০ (২৪৫০ কি.মি./ঘন্টা) যার সাপ্লাইং থ্রাস্ট থাকে 35, 000+ lb
দ্বিতীয়ত, এর ভেক্টরিং থ্রাষ্ট ফ্যাসিলিটি। এই ফ্যাসিলিটির এর সুবিধা হল এই ব্যাপক থ্রাষ্ট ব্যবহার করে এই বিমান যে কোন সময় দীর্ঘক্ষন খাড়াভাবে উপরে উঠতে পারে। এমনকি টেকঅফ করার পর মুহুর্তে ও এই ফ্যাসিলিট ব্যবহার করা সম্ভব।
এফ ২২ র্যাপটর এ ব্যাবহৃত রাডার X BAND AN/APG-77 AESA radar এর রেন্জ ২০০-২৪০ কি.মি.। এই দুরুত্বের মাঝে নূন্যতম ১১ স্কায়ার ফিট আকার পর্যন্ত যে কোন ফ্লাইং এলিমেন্টস কে এই রাডার ডিটেক্ট করতে পার।
এছাড়া এতে ব্যবহৃত RWR (Radar warning receiver) সিষ্টেম এর রেন্জ ২৫৮ নটিক্যাল মাইল বা ৪৬৫ কি.মি.। যার মানে এই বিমান তার ২৫৮ নটিক্যাল মাইল কিংবা ৪৬৫ কি.মি. এর মধ্যে থাকা যে কোন রাডার কে ডিটেক্ট করতে পারবে।
এফ ২২ র্যাপটর এর অস্ত্র সম্ভার ততটা জোরালো নয়। স্টেলথ হবার কারণে এই বিমান তার আর্মামেন্ট বিমানের ই্ন্টারনাল উইপন বে (Internal Weapons Bay) ভিতরে থাকে। কোন মিসাইল বা বোম্ব লাউন্চ করার সময় এই বিমান তার উইপন বে ওপেন করে তা লাউন্চ করে। এফ ২২ এর হার্ড পয়েন্ট মাত্র ৪ টা।
আমি মার্স টেক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।