তিব্বত নামটি বলার বা শোনার সাথে সাথে যে আরেকটি শব্দ মনে চলে আসে তা হচ্ছে “নিষিদ্ধ”। বিশ্ববাসীর কাছে তিব্বত ও এর রাজধানী লাসার পরিচিতি যথাক্রমে নিষিদ্ধ দেশ এবং নিষিদ্ধ নগরী হিসেবে। কিন্তু কেন তিব্বত বা লাসাকে নিষিদ্ধ বলা হয় তা অনেকের কাছেই অজানা। আর তাই সবার মনেই রয়েছে তিব্বত সম্পর্কে জানার কৌতূহল। আজকে জানাবো নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত সমন্ধে নানান সব তথ্য।
তিব্বত মূলত আলাদা কোন দেশ হিসেবে স্বীকৃত নয়। এটি চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যদিও অনেক তিব্বতি একে চীনের অংশ মানতে রাজি নয়। আর এ কারণেই ১৯৬৯ সালে তিব্বতিরা দালাইলামার নেতৃত্বে চীনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে যা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
বহির্বিশ্বের কাছে রহস্য আর বিস্ময়ের দেশ তিব্বত। নিষিদ্ধ দেশ হিসেবে তিব্বত এর পরিচিতির মূলে রয়েছে এর বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশ, বহির্বিশ্ব থেকে এর বিচ্ছিন্ন অবস্থান, লামাদের নিয়ম কানুনের কঠোরতা এবং পর্যটক নিষিদ্ধ হওয়া। এই সকল কারণে তিব্বত বরাবরই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকায় মানুষ বছরের পর বছর ধরে তাদের এই কৌতূহল নিবারণ করতে সক্ষম হয়নি। আর এ সবকিছু মিলিয়েই তিব্বতের পরিচিতি গড়ে উঠে নিষিদ্ধ দেশ হিসেবে।
তিব্বতের রহস্যময়তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ এর অত্যন্ত দুর্গম প্রকৃতি। হিমালয়ের উত্তরে বরফের চাদরে মোড়া তিব্বত শত শত বছর ধরে নিজেকে বহির্বিশ্ব থেকে আড়াল করে রেখেছে। বছরে আট (৮) মাস বরফে ঢেকে থাকা তিব্বত পৃথিবীর উচ্চতম স্থান যার গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০০ ফুট।
উচ্চতার কারণে তিব্বতকে পৃথিবীর ছাদ নামেও অভিহিত করা হয়। উচ্চতার কারণে এ সকল স্থানে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া কষ্টকর। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে এখানে বসবাস করাও কষ্টকর। তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে গোবি মরুভূমির দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। একদিকে মরুভূমির রুক্ষতা আর অন্যদিকে হিমালয়ের দুর্ভেদ্য দেয়াল তিব্বতকে বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলো। ফলে বহুকাল ধরে তিব্বতের রহস্য দুর্ভেদ্যই থেকে যায়। তারপর ১৯৮০ সাল থেকে তিব্বত ভ্রমণের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় এবং তিব্বতকে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যদিও ভ্রমণের নিয়ম কানুনের কঠোরতা কিছুটা রয়েই গিয়েছে।
তিব্বতের সবচেয়ে বড় রহস্য হচ্ছে এর রাজধানী লাসা যাকে বলা হয়ে থাকে নিষিদ্ধ নগরী। একে নিষিদ্ধ নগরী বলার পেছনেও রয়েছে অনেক কারণ। লাসা শব্দটির অর্থ হচ্ছে “ঈশ্বরের স্থান”। তিব্বতিদের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে আর ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক স্থান গুলোর কেন্দ্রে রয়েছে লাসা। তিব্বতিদের প্রধান ধর্মগুরু দালাইলামার বাসস্থানও লাসার পোতালা প্রাসাদে। শোনা যায় এই প্রাসাদের চূড়া সোনার তৈরি। এই বিশালাকার প্রাসাদটি প্রথম জনসমক্ষে আসে ১৯০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায় এর ছবি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এই ছবি প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বাইরের কেউ প্রাসাদটির ছবি দেখতে পায়নি। এছাড়াও শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির যেগুলোর ভেতর প্রজ্বলিত রয়েছে সোনার তৈরি প্রদীপ। এমনকি সেখানে চার হাজার ভরি ওজনের একটি প্রদীপও রয়েছে।
লাসার ভূপ্রকৃতিও এই শহরটিকে রহস্যময় করে রেখেছে। আইন কানুনের কঠোরতা ছাড়াও লাসা অবস্থানগতভাবে একেবারে বিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল আর একই সাথে পৃথিবীর উচ্চতম শহর যার উচ্চতা ১১, ৯৭৫ ফুট। লাসা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে গোবি মরুভূমি। প্রাণঘাতী বালির সমুদ্র পেরিয়ে এদিক থেকে লাসায় প্রবেশ করার সাহস কেউ করেনি আর অন্যদিকের দুর্গম পার্বত্য পথ পাড়ি দেওয়াও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। ফলে কেউ কখনো লাসার দিকে পা বাড়ায়নি। আর এই কারণে নিষিদ্ধ নগরীর রহস্য বহুকাল ধরে রহস্যই থেকে যায়।
সময়ের সাথে সাথে তিব্বতিদের জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং তিব্বতের রহস্যও অনেক উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্ববাসীর কাছে তিব্বত একটি রহস্যময় অঞ্চল।
এরকম ভয়ানক সব ভিডিও দেখতে আমাদের Rohossomoy Prithibi চ্যানেলটি ঘুরে আসার অনুরোধ রইল
আমি রহস্যময় পৃথিবী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।