গন গার্লঃ আধুনিক মানুষের কুৎসিত, কুটিল, কদাকার অভিপ্রায়ের দারুন চিত্ররূপ.
জিলিয়ান ফ্লিন-এর বেস্ট সেলার নভেল অবলম্বনে তুখোড় নির্মাতা ডেভিড ফিঞ্চার ২০১৪ সালে মুক্তি দেন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার গন গার্ল। মূল নভেল লেখিকায়ই মুভির চিত্রনাট্য রচনা করেন আর অভিনয়ে ছিলেন বেন অ্যাফ্লেক আর রোসামান্ড পাইক। মুভিতে এক আধুনিক আমেরিকান দম্পতির জীবনে ঘটে যাওয়া এক লোমহর্ষক গল্পের চিত্রায়ন দেখান হয়। দেখান হয় বিয়ে নামক প্রাচীন সামাজিক বন্ধনটি এখনকার যুগে কতটা ভঙ্গুর, দেখান হয় পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি আজ বিশ্বাসের অভাবে কতটা দুর্বল। দেখানো হয় মানুষ কতটা কুটিল হতে পারে তার স্বার্থ হাসিলের জন্য। সবচেয়ে বড় যে বিষয় তা হচ্ছে আধুনিক মানুষ আসলে আর মানুষ নেই সে অমানুষে পরিনত হয়েছে আর এ পরিবর্তনে সে মোটেও লজ্জিত বা কুন্ঠিত নয়।
কাহিনীঃ
নিক ডান(অ্যাফ্লেক) পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকীর সকালে জানতে পারে তার স্ত্রী এমি(পাইক) নিখোঁজ। সবার চোখেই সুখী দম্পতি নিক আর এমি আর এমি’র এভাবে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া সেই শহরের এক বড় কাহিনীর উদ্রেক করে। ঘটনা তাল পাকিয়ে যায় যখন পুলিশ নিক-কেই সন্দেহ করতে থাকে এমির নিখোঁজ হওয়ার পিছনের মূল ব্যক্তি হিসেবে। শুধু তাই নয় পুলিশ মনে করে যে এমি খুন হয়েছে আর নিককেই খুনী মনে করে তদন্ত চলতে থাকে। ফলে পুরো শহর জুড়েই এক সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে নিক। এই ঢামাঢোলে নিকের জীবনকে ভয়াবহ করে তুলতে বিশাল ভূমিকা পালন করে মিডিয়া, ফলে বেরিয়ে আস্তে থাকে তাদের বিবাহিত জীবনের নানা রকম কেচ্ছা কাহিনী যা মূলত তাদের আপাত-সুখী দাম্পত্য জীবন যে সুখের ছিলনা সেটা বুঝতে আর কারও অসুবিধা হয় না।
এমি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নিক যে নির্দোষ সে সেটা প্রথম থেকেই বলে আসছে কিন্তু একমাত্র তার জমজ বোন মারগো ছাড়া সেটা আর কেউই বিশ্বাস করে না। ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় যখন নিকের প্রাক্তন প্রেমিক সরাসরি মিডিয়াতে তাদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা প্রকাশ করে। নিক এ বেগতিক অবস্থা থেকে বাচানোর জন্য টেনার বল্ট নামের এক উকিলের শরণাপন্ন হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিক কি বাচতে পারবে? কি ঘটে ছিল নিক আর এমির মধ্যে? নিক কি আসলেই এমিকে মেরে ফেলেছে? কে দায়ী এ পুরো ঘটনার জন্য? এমি কি আসলেই নিখোঁজ? না এর পিছনে অন্য কোন ঘটনা আছে?
বিশ্লেষণঃ
পুরো মুভির সবচেয়ে বড় বিষয় আমার কাছে যেটা লেগেছে সেটা হচ্ছে এর কাহিনীর বিভিন্ন রকম বাঁক আর সেটার অস্বাভাবিক জটিল রকমের চিত্রায়ন। আপনি এ মুভি দেখতে বসলে স্ক্রিন ছেড়ে যেতে চাইবেন না বা এটা আপনাকে সেটা করতে দিবে না। ভয়ংকর রকমের আকর্ষণীয় এর চিত্রনাট্য। ফিঞ্চার থ্রিলার বানাতে ওস্তাদ সেটা আমরা সবাই কম বেশি জানি আর তিনি তার সেই ওস্তাদির একটা চরম উদাহরণ সেট করেছেন গন গার্ল দিয়ে। প্রায় সব আনুষঙ্গই তিনি পেয়েছেন এক দারুন থ্রিলার বানানোর আর সেটাই তিনি করেছেন এক গুনী নির্মাতার মত।
আবহ সঙ্গীত পিচ-পারফেক্ট, ক্যামেরার কাজ অসাধারণ। সম্পাদনা যুতসই, সংলাপ দারুন। অভিনয়ে বেন এফ্লেক তার চরিত্রে দারুন রকমের স্বাভাবিক, তার হাটা-চলা, কথা বলার স্টাইল সত্যি অসাধারণ, রোসামাণ্ড পাইক এ মুভির বিশাল সারপ্রাইজ প্যাকেজ, তিনি এমন কাজ করেছেন এমি রোলে যা দর্শককে অন্য কাউকে ওই চরিত্রে কল্পনা করার সুযোগ দেয় না। তিনি যে কত ভাল কাজ করেছেন তার প্রমাণ ওই বছরের সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে তার মনোনয়ন। মারগো আর বল্ট চরিত্রে কেরি গুন আর টাইলার পেরি ছিলেন চরিত্রানুগ।
দুর্বলতাঃ
আমার কাছে এ মুভির একটা চরিত্র বাছাইয়ে দুর্বলতা ছিল বলে মনে হয়। নিল প্যাট্রিক হ্যারিসের করা রোল্টা অন্য কোন অভিনেতাকে দিয়ে করালে মনে হয় ভাল হত, যদিও তিনি খারাপ কাজ করেন নি।
এ মুভির বেশ কয়েকটা রিভিউ গ্রুপে এরই মধ্যে টিউন হয়েছে। আমিও করলাম। কেন করলাম? আসলে ভাল কিছু দেখলে (সিনেমা) তা শেয়ার করার জন্যই এ গ্রুপ আর তাই আমি সেটাই করলাম।
ডেভিড ফিঞ্চারের সেরা কাজ গুলোর মধ্যে একটা। আমি ৮.৫ দিচ্ছি ১০-এ.ভাল থাকুন।
অনলাইনে দেখতে এখানে যান Watch movie online
আমি সিয়াম সিয়াম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 10 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।