হলিউড মুভি দেখার সময় আমার মনে প্রায় সময়ই প্রশ্ন আসত যে, কীভাবে এগুলা তৈরি করা হয়। এত নিখুতভাবে কোন বিশাল ঘটনাকে কম্পিউটারে বানানো যায় তা একসময় চিন্তারও বাইরে ছিল। কিন্তু যখন প্রথম ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বা ভিএফএক্স সম্পর্কে জানতে পারলাম তখন আমার পুরো ধারনাই পাল্টে গেল। আর তখন থেকেই ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস সমৃদ্ধ কোন মুভি দেখলে তার মেকিং বা ভিএফএক্স ব্রেকডাউন খুজতাম। আর অবাক হয়ে সেগুলো দেখতাম। কত সহজে কোন একটা ঘটনাকে তৈরি করে ফেলা হচ্ছে।
আসলে দেখতে সহজ হলেও ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল ব্যপার। মুভিতে সাধারণত দুইধরনের ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়। একটা হল বাস্তব ইফেক্ট যেটাকে স্পেশাল ইফেক্ট বলা হয়। সাধারণত বাস্তবে যেটা ঘটে বা ক্যামেরার সামনে যেটা ঘটানো হয় সেটাই স্পেশাল ইফেক্ট। অন্যদিকে ভার্চুয়ালি তৈরি করা ইফেক্টগুলোই ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট। যেটাকে আবার সিজি বা কম্পিউটার গ্রাফিক্সও বলা হয়।
আচ্ছা এখন প্রশ্ন হল - বাংলাদেশে কেন ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস সমৃদ্ধ মুভি তৈরি হয় না? তার আগে আরেকটা কথা বলে নেই এনিমেশন আর ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এনিমেশন পুরোটাই কম্পিউটারে তৈরি করা হয়। আর ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট বাস্তবের সাথে কম্পিউটার গ্রাফিক্সকে মেলানো হয়। সেজন্য ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এনিমেশন থেকেও জটিল। আর ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এখন আর একটা বা দুইটা সফটওয়্যারের গন্ডিতে আটকে নেই। এটা বিশাল একটা জগত হয়ে গেছে। ব্লুপ এনিমেশন তাদের এনিমেশন বানানোর পদ্ধতি একটা ভিডিওতে প্রকাশ করেছিল। সেখানে যে স্টেপগুলো দেখানো হয়েছিল সেগুলো হল:
১। গল্প নির্বাচন
২। স্ক্রিপ্ট তৈরি
৩। ক্যরেক্টার ড্রয়িং/ স্টরিবোর্ড বানানো (এই ধাপে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ক্যরেক্টার ড্রয়িং করা হয়। )
৪। ক্যরেক্টার এনিমেশন (এটা ফাইনাল এনিমেশন না। এই ধাপে শুধুমাত্র স্ক্রিপ্টটাকে ভিজ্যুয়ালাইজ করা হয় কোন ক্যরেক্টার বাদ পড়েছে কিনা বা নতুন কিছু এড করতে হবে কিনা তা দেখার জন্য। )
৫। 3D মডেলিং বা থ্রিডি ক্যরেক্টার (সবকিছু ঠিক থাকলে এখান থেকেই এনিমেশন বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই ধাপে ক্যরেক্টারগুলো ফাইনালি তৈরি করা হয়। )
৬। রিগিং (থ্রিডি মডেলগুলোর প্রয়োজনীয় জয়েন্ট তৈরি করা হয় এই ধাপে। মুখ কীভাবে নড়বে, চোখ কীভাবে নড়বে বা কতটুকু বড় হবে বা হাড়ের জয়েন্ট কোথায় থাকবে ইত্যাদি তৈরি করা হয় এই ধাপে। )
৭। প্রি ভিজ্যুয়ালাইজেশন (এই ধাপে এসে থ্রিডি মডেলগুলো দিয়ে আবার দেখা হয় কোন ল্যকিংস আছে কী না। গল্পের কোন পরিবর্তন থাকলে বা ক্যরেক্টার চেঞ্জ করতে হলে এই ধাপেই তা করা হয়। )
৮। এনিমেশন (এই ধাপে এনিমেশনের কাজ করা হয়। এটা অনেক বড় একটা প্রসেস)
৯। লাইটিং (নাড়াচাড়ার কাজ শেষ হলে লাইটিং নিয়ে কাজ করা হয়। এটাও অনেক বড় ও জটিল কাজ। )
১০। রেন্ডারিং (রেন্ডারিং সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তাদেরকে বুঝানো খুব কঠিন যে রেন্ডারিং কতটা ভয়ঙ্কর কাজ। ছোটখাট একটা ভিডিও রেন্ডার করতেই অনেক সময় লেগে যায় এবং খুব শক্তিশালি কম্পিউটার লাগে। অন্যান্য দেশে শুধুমা্ত্র এনিমেশন বা ভিএফএক্স রেন্ডারিং এর জন্য রেন্ডারিং ফার্ম তৈরি করা হয়। )
১১। এডিটিং এবং কালার কারেকশন (রেন্ডারিং শেষ হলে সেটাতে প্রয়োজনীয় এডিটিং এবং কালার কারেকশন করা হয়। কালার কারেকশন যেকোন ভিডিওর জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কালার কারেকশন সঠিকভাবে করতে না পারলে একটা ভিডিও তার মান হারাতে পারে। এটা ও অনেক বড় একটা প্রসেস। )
১২। সাউন্ড এডিটিং (কালার কারেকশন শেষে এনিমেশনে প্রয়োজনীয় সাউন্ড এড করা হয়। সাউন্ড প্রাণবন্ত আর নিখুত না হলে সেই ভিডিও কেউ দেখে না। )
এই হল একটা এনিমেশন মুভি বানানোর প্রসেস। ভিএফএক্স মুভিতে আরো কিছু স্টেপ যুক্ত হয়। যেমন ভিডিও শ্যুটের জন্য সেট বানানো, ভিডিও শ্যুট, সেই ভিডিও এডিটিং আবার তা ভিএফএক্স এর সাথে মিলানো, কালার কারেকশন আরো অনেক কিছু।
বাংলাদেশে সাধারণত যে ফিল্মগুলো হয় সেখানে ভিডিও এডিটরই সাধারণত এডিটিং, লাইটিং, কালার কারেকশন, সাউন্ড এডিটিং সবকিছুর কাজ করে থাকে। তাইলে বুঝতেই পারছেন কেন আমাদের দেশে ভিএফএক্স মুভি তৈরি হয় না।
যাইহোক Adobe After Effects এ তৈরি করা ছোট্ট একটা ভিএফএক্স দেখে আসুন মাথাটা ঠান্ডা করার জন্য। City Destruction নামে এই vfx টা আমি Video Copilot কে অনুসরন করে তৈরি করেছি। ভিএফএক্স এর টিউটোরিয়াল চাইলে টিউনে বা ইউটিউব ভিডিওতে টিউমেন্ট করুন। আমি টিউটোরিয়াল তৈরি করে সেটা আপলোড করার চেষ্টা করব।
ভিএফএক্স অনেক ধরনের হতে পারে। বিস্তারিত জানার জন্য গুগল করতে পারেন। উইকিপিডিয়া থেকে পাওয়া কিছু ভিএফএক্স টাইপ:
The Jungle Book মুভিটা আশা করি সবাই দেখেছেন। এর vfx breakdown দেখে নিতে পারেন এই লিঙ্কগুলো থেকে:
আমার জানামতে বাংলাদেশে ঐভাবে কেউ ভিএফএক্স শেখায় না। তবে আমি শিউর না। আপাতত আমার ভরসা একটাই ইউটিউব অথবা বিভিন্ন ব্লগ। আমার সাজেশান হল অন্য সবকিছু স্কিপ করে শুধু মাত্র Adobe After Effects দিয়ে শুরু করুন। আশা করি একদিন বাংলাদেশেও খুব ভাল মানের ভিএফএক্স মুভি তৈরি হবে। টিউনটি ভাল লাগলে টিউমেন্টে একটু মোটিভেট করে আসুন।
ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন এই প্রোফাইলে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।
আমি তোফায়েল আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 30 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
sundor