বই : লা-তাহযান (হতাশ হবেন না)
লেখক : ড. আইদ আল-কারনী
ড. আইদ আল-কারনীর নাম তার লা-তাহযান বইয়ের নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে। বিশ্ব তাকে চেনে লা-তাহযানের লেখক হিসেবে। সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত যে বইয়ের প্রায় বিশলক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। এখনও হচ্ছে, আগামীতেও হবে ইনশাআল্লাহ।
লা-তাহযান, Do not be sad, হতাশ হবেন না আরবি, ইংরেজি কিংবা বাংলায়; যে ভাষাতেই বলি না কেন আজকের মানুষ এই কথা বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ কাউকে আপনি অ্যান্টারটিকার বরফরাজ্যে ছেড়ে দিয়ে যদি বলেন, বরফ ছোঁবে না, সে যতটা না অবাক হবে তার চেয়েও বেশি অবাক হবে আজ মানুষ হতাশ হবে না এই কথাটা শুনলে। কারণ আজ আমাদেরকে হতাশার সুনামি গ্রাস করেছে। ভেঙ্গেচুরে, দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, দুনিয়াসহ সবকিছু। অ্যান্টারটিকার চারদিকে বরফ আর আমাদের চারপাশে হতাশা। বরফের রাজ্যে আমাদের হাত দিয়ে বরফ ছোঁয়া লাগেনা, বরফ আমাদের যখন তখন ডুবিয়ে দিতে পারে নিজ গুণেই। হতাশার সুনামি আছড়ে পড়েছে বিশ্বে। আমরা না চাইলেও চারদিক থেকে হতাশাই আমাদের ডুবিয়ে দিচ্ছে যখন তখন।
মানব জীবনের পুরোটাই আজ হতাশার চাদরে ঢাকা। কিভাবে? বলছি। একজন মানব শিশু জন্মগ্রহণ করল। তার চাই মায়ের কোল, মায়ের দুধ। কিন্তু সে পাবে কাজের মেয়ের কোল, কৌটার দুধ। হতাশা। একটু বড় হলে তার চাই খেলার সবুজ মাঠ, সে পাবে কিন্ডারগার্টেন নামক জেলখানা। হতাশা। আনন্দের সাথে বই খুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হবে না, বইয়ের বিশাল বোঝার নিচে চাপা পড়বে সে। হতাশা। টিভি খুললেই সে দেখবে বড়দের মারামারি, অশ্লিলতা, রুচিহীন সব অনুষ্ঠান। এসব দেখে দেখে সে নিজেই যখন মারামারি করবে পাশের বাড়ির ছেলের সঙ্গে, ওড়না ধরে টানবে পাশের বাড়ির মেয়েটার তখনই তাকে শুনতে হবে গালাগাল, উপদেশ, আদেশ-নিষেধসহ আরো কতো কিছু। সেই সমাজের মানুষের কাছ থেকেই যাদের কারণে আজ তার এই অবস্থা। সিনেমার হিরো মারামারি করে হাততালি পায় সবার, বেচারা মারামারি করলে যায় জেলে। হতাশা।
বিয়ে করবে? সারাদিন টিভিতে দেখবে ঐশ্বরিয়া, প্রিয়াঙ্কাকে আর বিয়ে করবে খুব সাধারণ ছিমছাম স্বাস্থ্য ভালো মেয়েকে। চোখে লাগে? মনে লাগে? ফলাফল, সমাজে দিন দিন ডিভোর্স সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। হতাশা।
এরপর মুক্ত জীবন। যা খুশি তাই করে, কিন্তু তবুও কিছু ভালো লাগে না। নিজের বউ ভালো লাগে না, পরের বউকে দুইদিন ভালো লাগে, তারপর সেও পানসে। মেকআপ করা, পার্লারে হাজার হাজার টাকা খরচ করা, মেয়েদের সাথে ঘোরাঘুরি করতে পকেট গরম থাকতে হয়, নিজের পকেট গরম রাখতে গিয়ে অন্য সবার পকেট কেটে ফাঁক করতে হয়। হতাশা। হতাশা।
এই আজ আমাদের তরুণদের লাইফস্টাইল। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু হতাশা আর হতাশা। স্রষ্টার সাথে সম্পর্কহীন এক অদ্ভূত জীবন ব্যবস্থা। হতাশার চাদরে ঢাকা জীবন। চারিদিক অন্ধকার। কোথাও নেই যেনো একটুখানি আলো।
লা-তাহযানের লেখক আমাদের অন্য এক ভুবনের সন্ধান দিয়েছেন, যে ভুবন স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির ভালোবাসাতে মাখামাখি। সে জীবনে মানব শিশু মায়ের কোলেই থাকবে। মা জানবে এই শিশুকে লালন পালন করার মাঝেই তার সুখ, স্রষ্টার খুশি। শিশু বড় হবে কুরআন পড়তে পড়তে, জানতে জানতে, বুঝতে বুঝতে। তাই পাশের বাড়ির মেয়ের ওড়না টানা দূরে থাক নিজের চাচাত বোনের দিকেও ভুলে দুইবার তাকাবে না। সে শুধু একজনের দিকেই তাকাবে, হাসবে, ভালোবাসবে। সেই তার কাছে বিশ্ব সুন্দরী, কারণ আর কোনো সুন্দরী যে তার দেখা হয় নি। স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য চোখ নিচের দিকে রেখেছে সবসময়। স্রষ্টা খুশি হয়ে তাকে চোখের প্রশান্তিদায়ক এক সঙ্গী উপহার দিয়েছেন। আনন্দভরা এক সুখময় জীবন। তারও সন্তান হবে, পিতার কাছে সেও পাবে এমন আনন্দময় জীবনের শিক্ষা। পুরো পৃথিবীটাই ভরে যাবে সুখী সুখী মানুষদের কোলাহলে।
চাই এমন জীবন? পড়ুন লা-তাহযান। লা-তাহযান কোন ওহীর বাণী নয়, তবে ওহীর আলোকে সাজানো এক বই। আল্লাহ তাআলা এই বইটায় অনেক কল্যাণ দিয়েছেন। আপনার যেকোনো কারণে মন খারাপ, লা-তাহযান বইটা হাতে নিন, যেকোনো পৃষ্ঠা খুলুন। যেকোনো লাইনে চোখ বুলান। অদৃশ্য এক শক্তিতে মন ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক এই বইয়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে যে হতাশা দেখা যায়, তার মূল চিহ্নিত করে ওহীর আলো, রিসালাতের নির্দেশনা এবং সরলপন্থি স্বভাব-প্রকৃতি, যথার্থ অভিজ্ঞতা, জীবন্ত দৃষ্টান্ত, চমকপ্রদ ঘটনা ও শিক্ষার আলোকে তার সমাধানের পথ দেখাবার চেষ্টা করেছেন।
লেখকের ভাষায় বলতে গেলে, এটি একটি আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয়স্পর্শী ও দায়িত্বনিষ্ঠ গবেষণা; যাতে মানব জীবনের বিয়োগান্তক দিক আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে আলোচনা করা হয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, অনাস্থা-অবিশ্বাস, ক্লান্তি-অবসাদ, চিন্তা-দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বিষাদ, হতাশা-নিরাশা এবং ব্যর্থতার সবদিক ও মাত্রা। এটি হলো ওহীর আলো, রিসালাতের নির্দেশনা এবং সরলপন্থি স্বভাব-প্রকৃতি, যথার্থ অভিজ্ঞতা, জীবন্ত দৃষ্টান্ত, চমকপ্রদ ঘটনা ও শিক্ষার আলোকে যুগ সমস্যার সমাধান।
এতে রয়েছে পরম আদর্শ ব্যক্তিত্ব সাহাবী ও উৎকৃষ্টতম ব্যক্তিত্ব তাবেয়ীগণের বাণী এবং এতে আরো কবি-সাহিত্যিকদের কাব্য-উপহার, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকদের উপদেশ এবং আলেমগণের দিকনির্দেশনা। ব্যর্থতা-বিফলতার নানাদিক রয়েছে প্রচার মাধ্যম তথা পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী, ক্রোড়পত্র ও প্রচারপত্রে প্রকাশিত প্রাচ্যবিদ ও পাশ্চাত্যবিদ, প্রবীণ ও নবীণ মনীষীগণের সত্য ও শুদ্ধ অভিসন্দর্ভ-ভা-ার। এ গ্রন্থটি বহু বিষয়ের সমন্বয়ে রচিত এক পরিমার্জিত ও পরিশীলিত সাধনা, এক কথায় এ গ্রন্থটি আপনার উদ্দেশ্যে বলে- সুখী হোন, প্রশান্ত হোন, সুখের বার্তা শুনুন, আশাবাদী হোন চিন্তা পরিহার করুন। যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত, সেভাবে জীবন যাপন করুন।
আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুণ। ২০ লক্ষ কপি থেকে লা-তাহযান যেনো ২০ কোটি কপি বিক্রি হয় এই দোয়া করছি। আজকের বিশ্বে লা-তাহযান প্রতি ঘরে ঘরে, প্রতি জনের হাতে হাতে থাক। প্রিয় বোন, পড়ুন লা-তাহযান। প্রিয় ভাই, পড়ুন লা-তাহযান। অন্যের যা আছে তা দেখে আফসোস করবেন না, নিজের নেই বলে হতাশ হবেন না। একজোড়া পা দিয়েছেন যে প্রভু, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। একজোড়া হাত দিয়েছেন যে প্রভু, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। একজোড়া চোখ দিয়েছেন যে প্রভু তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। আপনাকে দেয়া আল্লাহর নেয়ামতগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। দেখবেন চোখে জল আসবে কারণ, অনেকের যে এগুলোও নেই যা আপনার আছে।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা দিয়েছেন সেই নেয়ামতের শুকরিয়া জানাতে জানাতেই তো এই জীবন ফুরিয়ে যাবে দ্রুত। হতাশার সময় কোথায়?। তাই বলি লা-তাহযান। পড়ুন লা-তাহযান।
আমি Amir Hamja। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 8 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।