নিম্নের গল্পে এক পলিটেকনিক স্টুডেন্টের হাতে এসে যায় হাজার বছরের ইতিহাসের সেই আলাউদ্দিনের জাদুর দৈত্য। সেই স্টুডেন্ট তাকে তার এক্সামের মধ্যে তিনটা এক্সাম দিয়ে দিতে বললে, সে রাজি হয়ে যায় এবং বলে সকল পরীক্ষায় সে (A+) তুলে দিতে পারবে।
সে কীভাবে এক্সাম দিবে তা জানতে চাইলে সে বলে (প্রশ্নগুলো হাতে পাবার পর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তার সম্পর্কে যা তথ্য পাব তাই খাতায় লিখব)
অতঃপর সে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে এবং রেজাল্ট হাতে পাবার পর:
১. টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ {৮০ তে মানে ১০(F)
২. মাইক্রোপ্রসেসর অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস {১২০ এ ৫ মার্ক মানে(F)}
৩. কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ {(১২০ এ ১০০ মানে (A+)}
আমি : কি? সমস্যা কি? না পারলে বলবা! তাই বলে এই মার্ক পাবা? তোমার কি কোন দ্বায়িত্ব জ্ঞান নাই ? কেন এমনটা হলো বলো তোমাকে আমি খুন করবো।
(দৈত্য) : জনাব, উত্তেজিত হয়েন না। আগে আমার কথা শোনেন। এখানে আমার কোন দোষ নাই সব দোষ শিক্ষা ব্যবস্থার আপনাদের বইয়ের সাথে বর্তমান যুগের তথ্য প্রযুক্তির কোন মিল নাই। আপনাদের বইগুলা অত্যন্ত পুরানা! বর্তমানে ২০১৭ সাল চলছে, কিন্তু আপনাদের বইগুলো ১৯৯৭ সালের ! প্রতিবছর অন্যান্য ক্লাসের (১-১০) বইগুলো হাজার বার করে আপডেট করা হলেও আপনাদের বইগুলা ১ বার ও আপডেট করা হয়নি।
টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর আমি সর্বপ্রথম চলে যাই বিভিন্ন উন্নত দেশগুলাতে কিন্তু সেখানে কোন সাদা-কালো টিভির ধ্বংসাবশেষ ও পায়নি যার তথ্য আমি উত্তরপত্রে লিখব এরপর আমাদের দেশের ভাংড়ি পট্টি ও জাদুঘর এ যাই কিন্তু সেখানে আছে কিছু রঙিন টেলিভিশনের ধ্বংসাবশেষ
জনাব, এল.ই.ডি/এল.সি.ডি এর যুগে কেউ আর এসব সাদা-কালো টিভির কোন অংশ ই তাদের কাছে রাখে না, শুধুমাত্র আপনাদের পলিটেকনিকের পুরানা বাজে বই ছাড়া কোথাও এর কোন সার্কিট বা কোন চর্চা আমি দেখতে পাই নি, তাই উত্তরপত্রে আমি কিছু লিখতে পারি নি
জনাব, এর পর আমি যাই রাজশাহী পলিটেকনিক মানে আপনাদের প্রাকটিক্যাল ল্যাবে ! সেখানে যাওয়ার পর আমি যা দেখি তা শুনলে আপনি আর আপনার ক্লাসমেট বাদে সবাই চমকে উঠবে আপনি আমাকে আর দোষারোপ করতে পারবেন না। আমি রাজশাহী পলিটেকনিকে গিয়ে দেখি সেখানে সকল ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত, এমনকি সেখানে স্যার ও নির্দিষ্ট সময়ে এসে পৌছে গেছে কিন্তু তারা কারও জন্য অপেক্ষা করছে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করে তো অবাক! এরা সবাই ল্যাব সহকারীর জন্য অপেক্ষা করছে কি হাস্যকর তাই না মানে এখানে ল্যাব সহকারীর ও এমন দায়িত্ব জ্ঞান যে তার জন্য প্রায়ই ছাত্রদের প্রাকটিক্যাল ক্লাস মিস হয়।
জনাব, এরপর আমি সারা প্রাকটিক্যাল রুমগুলোতে খুঁজে দেখি বেশিরভাগ রুম ই সারা বছর বন্ধ থাকে প্রাকটিক্যাল করার মত তেমন কিছু তো এখানে নাই কিন্তু যেগুলো আছে, সেগুলোও ছাত্র-ছাত্রীদের শিখানো হয় না।
জনাব, এখানে ছাত্ররা যেমন স্যারের আশা বাদ দিয়ে নিজেরাই পরিক্ষা পাশের পলিটেকনিক(বহুটেকনিক) আবিষ্কার করেছে ! তার মধ্যে কপি/নকল অন্যতম। তেমনি স্যাররা ও ছাত্রদের কথা না ভেবে পলিটেকনিক(বহুটেকনিক) উপায়ে ফাঁকি দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে ! তার মধ্যে কেউ ১ সেমিস্টার (৬ মাস) এ মাত্র ২ টা ক্লাস নেয়, আবার কেউ বলে এই অধ্যায়টা দেখে আস পরদিন বলে সামনের অধ্যায়টা পড়ে আস এভাবে ২ সপ্তাহে বই শেষ !
জনাব, এখানে ৫০০ উপর ছাত্র-ছাত্রীর জন্য নাকি ১ টা বাস ই যথেষ্ট। প্রতি সেমিস্টারে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে ৯০০ টাকার মত করে বাস ভাড়া নেয়। কিন্তু ১টা বাসে ৫০০ উপর ছাত্র-ছাত্রী কিভাবে সম্ভব? বাস টার এমন বৈশিষ্ট যে এটা ৫ চাকার উপরে চলে ১ টা চাকা সাথে আছে কিন্তু ঐ টা মাটিতে স্পর্শ করে না
>বাস টার গতি এতটাই উন্নত যে আধুনিক মটর চালিত রিক্সার সাথে কম্পটিশন করে ১০ বারের মধ্যে নাকি তিন বার ফাস্ট হইসে>
বাসটা জাদুঘরে রাখা জন্য জাদুঘর কমিটি দরখাস্ত পাঠাইছে
জনাব, এগুলা দেখতে গিয়ে এক্সামের ২ ঘন্টা শেষ জনাব, এবার রচনামুলক ২৫ নম্বর এ আসছে ভি.সি.ডি প্লেয়ারের ব্লক ডায়াগ্রাম এটার নাম আমি অনেক শুনেছি। এটার বৈশিষ্ট এই যে চলতে চলতে হঠাৎ আটকে যায় তারপর ঝাড়-ফুক এ কাজ না হলে এটাতে জোরে জোরে বাড়ি দেওয়া খুব সাধারণ ব্যপার। পুরানা সিডি/ডিভিডি/ভিসিডি কাজ না করলে অনেক সময় এদের মাথায় পানি ঢাললে এদের স্মৃতি শক্তি ফিরে আসে এদের ধারণ ক্ষমতা সাধারণত ৫০০-৭০০ মেগাবাইটের হয়ে থাকে।
জনাব, আমার ভাবতে অবাক লাগে বর্তমানে আঙুলের সমান পেনড্রাইভে যেখানে ৬৪ জিবি পর্যন্ত ডাটা রাখা যায়, মোবাইলের সমান পোর্টএব্যল হার্ডডিস্কে ১ টেরা পর্যন্ত ডাটা রাখা যায় সেখানে সিডি/ডিভিডি/ভিসিডি শুধুমাত্র রিস্কার মাথায় সৌন্দর্য় বাড়ানোর জন্য রিকশা চালক ছাড়া কোন পাগল ব্যবহার করবে বলেন?
জনাব, শুধুমাত্র ২৬ নম্বর প্রশ্নে বেসিক রিমোট কন্ট্রেল সিস্টেম বর্তমানে ব্যবহৃত হয় এটি লিখতে গিয়ে ৩ ঘন্টা শেষ। তাই টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ {৮০ তে মানে ১০(F)} পাইছি
জনাব, এবার বলব মাইক্রোপ্রসেসর অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস্ সম্পর্কে।
জনাব, এখানে ৮০৮৫ ও ৮০৮৬ নিয়ে পুরো বইটা শেষ করা হলেও কাজের মত কোন অধ্যায় ই এখানে তেমন নাই।ইন্টেল কোম্পানি ১৯৭৬ সালে ৮০৮৫ ও ১৯৭৮ সালে ৮০৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার করে। তার পর থেকে (২০০০ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি ৩২ বার) তাদের সিস্টেম আপডেট করেছে >মানে ৩২ রকমের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করেছে ঘটনা এখানে শেষ নয় (২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি আরও ৫৩ বার) সিস্টেম আপডেট করে Core i3 তে এসে পড়েছে২০১২ সালের পর আরও কতবার যে তারা সিস্টেম আপডেট করে তারা Core i7 এ এসে পড়েছে তা আমার ও জানা নেই
জনাব, ৩২+৫৩ বার ইন্টেল কোম্পানি তাদের সিস্টেম আপডেট করে মার্কেটপ্লেস এ তাদের ব্যবস্যা চালিয়ে যাচ্ছে আর এদিকে (হক আর টেকনিক্যাল প্রকাশনীর বইগুলো ১৯৯৭ সালের বই) শুধুমাত্র শেষের পেজ(বোর্ড প্রশ্নের পেজটা) আপডেট করে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে
জনাব, এই মাইক্রোপ্রসেসর ও বাজার, ল্যাব, ভাংড়ি পট্টি বা জাদুঘর কোথাও পাবেন না শুধুমাত্র ১৯৯৭ সালের এই বই ছাড়া সেজন্য এই মাইক্রোপ্রসেসর অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস্ বিষয়ে {১২০ এ ৫ মার্ক মানে(F)} পাইছি
অতপর
(আমি) : দোস্ত, আমার কপালে মনেহয় চাকরি, বৌ কোনটায় জুটবে না। এগুলা পড়ে কেউ বর্তমান মার্কেটপ্লেস এ চাকরি পায় ?? দৈত্য মশায় আপনি বলতে পারবেন কোন দেশে বেকার ভাতা দেয়? ঐ দেশে চলে যাব।
(আমি) : বাদ দে ভাই। কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ বিষয়ে তো ভালই ধারনা আছে দেখছি…। পরিক্ষার আগের রাতে সারারাত পড়েছ তাই না?? এটার অবশ্য অনেক কিছুই দেখা যায় বর্তমানে।> স্যাটালাইট, জিএমএস, সিডিএমএ নিশ্চয় এগুলা দেখে এসে চুটিয়ে এক্সাম দিয়েছ ?
(দৈত্য) : না জনাব, পরিক্ষার আগের রাতে একটুও পড়িনি, অন্যদিনের মত এই দিন ও পুরানা পদ্ধতি দেখা যাবে বলে এবার আর কোথাও গিয়ে সময় নষ্ট করি নি।
(আমি) : তো ! ঘটনা কি???
(দৈত্য) : জনাব, কিভাবে বলি ? আশে পাশে ম্যাজিস্ট্রেট নাই তো!?
(আমি) : মানে কি? না, ম্যাজিট্রেট নাই। এখানে সবাই আমার ক্লোস আর ফেসবুক ফ্রেন্ড, বল কি বলবি ?
(দৈত্য) : জনাব, গতকাল ফেসবুকে আপনার নকল করার অভিজ্ঞতা পোস্ট টা পড়ে
(আমি) : আই থাম থাম।তুই তো আমারে কেস খাওয়াই দিবি… এটা পাব্লিক প্লেস একটু আস্তে বল “ম্যাসেন্জারের ও কান আছে” আমার কানে কানে বল
(দৈত্য) : জনাব, গতকাল ফেসবুকে আপনার নকল করার অভিজ্ঞতা পোস্ট টা পড়ার পর ঠিক করলাম, সবাই যা করে আমি ও তাই করব
তাই আমি বই কেটে কপি তৈরি করে অর্ধেকটা শার্টের হাতার মধ্যে আর বাঁকি অর্ধেকটা টয়লেটে রেখে আসি। তারপর
(আমি) : থাম!, আর বলতে হবে না বাঁকি গুলা সবাই জানে
দোস্ত তোর ভয় লাগেনি ??
(দৈত্য) : হঁ্যা হাত, পা একটু কাঁপছিল।কিন্তু
(আমি) : ম্যাজিস্ট্রেট দেখেনি তো??
(দৈত্য) : নাহ
আমি জামিউল কারিম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জটিল——-