বাইক কিনেছেন, কিন্তু জ্বালানি বা তেল হিসেবে কি ব্যবহার করবেন পেট্রোল নাকি অকটেন। এই সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। অনেকেই আবার পেট্রোল ও অকটেন দুটোই একসাথে মিশিয়ে বাইকে ব্যবহার করেন। অনেকেই অনেক কথা বলেন, কেউ বলেন পেট্রোল ভালো, আবার অনেকেই বলেন পেট্রোলের চেয়ে অকটেন অনেক ভালো। আসলে কোন জ্বালানি ইঞ্জিনের জন্য ভালো এটা নিয়ে অনেককেই দ্বিধাদন্দ্বে ভোগেন। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সকল বাইক পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোই ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন, যার একমাত্র জ্বালানি পেট্রোল বা অকটেন। আজ আমরা জানবো আমাদের বাইকটির জন্য কোন জ্বালানি ব্যবহার করা উচিত।
বিশুদ্ধ জ্বালানি আপনার মটরসাইকেল ইঞ্জিনের জন্য যেমন জরুরী তেমনি দীর্ঘস্থায়ী পারফর্মেন্স ও বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এটি অনেক কার্যকর। কিন্তু আমরা যে জ্বালানি আমাদের বাইকে ব্যবহার করি তা আসলে কতটুকু বিশুদ্ধ এই প্রশ্নের জন্যই আসে আমাদের বাইকটির জন্য কোন জ্বালানি ব্যবহার ভালো হয়।
আমরা পেট্রোল বা অকটেন নামে যে জ্বালানি কে চিনি, উত্তর আমেরিকায় তা গ্যাসোলিন নামে পরিচিত। আমরা মনে করি যে পেট্রোল ও অকটেন দুটি দুই ধরনের জ্বালানি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পেট্রোল ও অকটেন দুটি একই জ্বালানি এবং এদের রাসায়নিক গঠনও একই(C8H18 )। আন্তজার্তিকভাবে গ্যাসোলিন বা অকটেনকে একটি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই নাম্বারকে RON নাম্বার বলে। RON নাম্বার দ্বারা গ্যাসোলিনের কোয়ালিটি পরিমাপ করা হয়। যেমন পেট্রোলের RON নাম্বার হলো 86 এবং অকটেন এর RON নাম্বার হলো 91। RON হলো “Research Octane Number” এর সংক্ষিপ্ত রুপ।
RON নম্বর 86 বা এর চেয়ে বেশী হলে তখন তাকে ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ধরা হয়। ইঞ্জিনের কন্ট্রোল ক্যাপাসিটি, বুস্টিং, বুস্টিং ক্যাপাসিটি এর উপর নির্ভর করে RON নাম্বার নির্ধারন করা হয়। বিদেশের পাম্পগুলোতে RON নাম্বার উল্ল্যেখ করা থাকে এবং তারা তাদের ইঞ্জিনের জন্য ইচ্ছে মত RON নাম্বার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই ব্যাবস্থা না থাকায় আমরা জ্বালানি কে পেট্রোল ও অকটেন হিসেবে চিনি।আমি আগেই বলেছি যে সকল গ্যাসোলিন বা অকটেনের RON নাম্বার 86 সেগুলো আমরা পেট্রোল হিসেবে চিনি। এবার আসি আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে কোনটি আমাদের বাইকের সাস্থ্যের জন্য ভালো।
প্রথমে আসি পেট্রোলে, সাধারণত আন্তজার্তিক ভাবে অকটেন নাম্বার RON 86 থেকে পেট্রোল শুরু হয় বা এই জ্বালানি কে পেট্রোল বলে। তবে বাংলাদেশে যে সকল পেট্রোল পাওয়া যায় সেগুলোর RON নাম্বার পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এগুলোর RON 80 যা আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত নয়। কিন্তু একটি দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে আমরা সাধারণত কোন ধরনের বাইক চালাচ্ছি বা আমাদের দেশে কোন ধরনের বাইক গুলোর চাহিদা বেশি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের দেশে 100 সি,সি মটরসাইকেল বেশি চলাচল করে বা 100 থেকে 125 সি,সি মটরসাইকেল বেশি জনপ্রিয়। এই মটরসাইকেলগুলোর ক্ষেত্রে পেট্রোলের চেয়ে অকটেন ব্যবহার কতটা কার্যকরী তাও আমাদের ভাবতে হয় অন্যদিকে দেখতে হয় পেট্রোলের পরিবর্তে এই মটরসাইকেলগুলোতে কতটা সুফল পাওয়া যায়। সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় যে 100 থেকে 125 সি,সি-এর মধ্যে বাইক গুলোতে পেট্রোলের পরিবর্তে অকটেন তেমন সুবিধা দেয় না। এই বাইকগুলোতে আপনি নির্দ্বিধায় পেট্রোল ব্যবহার করতে পারেন। এই বাইকগুলো সিংগেল পিস্টন, সিংগেল সিলিন্ডার ও দুই ভাল্ব যুক্ত এবং মাঝে মাঝে আমাদের দেশে কিছু টু স্ট্রোক ইঞ্জিন দেখা যায়, যেই মটরসাইকেল গুলোর পারফর্মেন্স বাড়ানো যায় না। তাই এই মোটরসাইকেলগুলোতে পেট্রোল ব্যবহার ঠিক আছে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে পেট্রোলের সাথে অন্যকিছু মেশানো হয়েছে কিনা অর্থাৎ কোন ভেজাল মেশানো হয়েছে কিনা। বর্তমানে দেখা যায় বাজারে অনেক পেট্রোল পাওয়া যায় যেগুলোর সাথে কেরোসিন মেশানো থাকে। এই দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া এই বাইকগুলোর জন্য পেট্রোলই যথেষ্ট।
এবার আসি অকটেন এ, আমাদের দেশে সাধারণত যেসব 150 সি,সি বাইক আছে সেগুলোর কম্প্রেশন এর অনুপাত বেশি এবং দুটোর বেশি ভাল্ব থাকে। এই বাইকগুলোতে সাধারণত অকটেন ব্যবহার করা উচিত। এই বাইকগুলোর পারফর্মেন্স বাড়াতে এবং ভালো পারফর্মেন্স পেতে এই বাইকগুলোতে অকটেন বেশ উপযোগী। আরেকটা ব্যাপার হলো আমাদের দেশের ঋতুর পরিবর্তন। শীতকালে আমাদের দেশে অনেক বেশি ঠান্ডা পরে ফলে এসব বাইক স্টার্ট করতে অনেক সমস্যা হয় তাই এসব বাইকে অকটেন ব্যবহার করা হয়।
আমরা অনেককেই দেখি যে তারা পেট্রোলের সাথে অকটেন মিশিয়ে ব্যবহার করেন। অনেকেই মনে করেন যে এমনটি করলে হয়ত ইঞ্জিন ভালো থাকে। তারা অনেকেই জানেন না যে তারা কেন এমনটি করেন। সাধারণত দুটি ভিন্ন RON এর গ্যাসোলিন একসাথে মেশানো হয় যাতে একটি গড় RON নাম্বার পাওয়া যায়। ধরুন RON 80 গ্যাসলিন এর সাথে RON 95 এর গ্যাসোলিন মেশানো হলো তাহলে যে অনুপাত পাওয়া যায় তা হলো RON 87.5। এমনটি করা যেতে পারে যদি দুটি গ্যসোলিনেই একই বুস্টার, ডিটারজেন্ট ও এন্টিঅক্সিডেন্ট অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্যাসোলিনে কি পরিমান অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয় আমরা জানি না এবং আদৌ অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয় কিনা তাও আমরা জানি না। তাই পেট্রোলের সাথে অকটেন মেশানো শুধু ক্ষতিকরই না অনেক অনিরাপদও বটে।
অনেক সময় অনেকেই বলেন, অকটেন ব্যবহারের ফলে তার বাইকের ইঞ্জিন গরম হয়ে যাচ্ছে। আসলে এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার বাইকটি যদি 150 সি,সি’র কম হয় তাহলে আপনার শুধু পেট্রোল ব্যবহার করলেই চলবে, তবে অবশ্যই তা বিশুদ্ধ পেট্রোল হতে হবে। অন্যথায় ৫০% পেট্রোল ও ৫০% অকটেন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটি শুধুমাত্র শীতকালের জন্য। তবে আপনার বাইকটি যদি 150 সি,সি হয়, তাহলে গরম ও ঠান্ডায় আপনি অকটেন ব্যবহার করতে পারেন। তবে 150 সি,সি’র নিচের বাইকগুলোতে যদি অকটেন ব্যবহারে বেশি গরম হয় তাহলে সেগুলোতে অকটেন ব্যবহার না করাই উত্তম। এ সকল বাইকে তাই ভেজাল মুক্ত পেট্রোল ব্যবহার করা উচিত।
আমাদের বাইকের জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ গ্যাসোলিন ব্যবহার করতে হবে। ভেজালযুক্ত গ্যাসোলিন আমাদের বাইকের ইঞ্জিনে সমস্যা করে, ভালো মাইলেজ পাওয়া যায় না এবং বাইকের ইঞ্জিন এ মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই আপনার পরিচিত পাম্প থেকে ভেজাল মুক্ত ও বিশুদ্ধ জ্বালানিকিনে ব্যবহার করুন, বাইকের ইঞ্জিনকে সুরক্ষা দিন।
প্রথম প্রকাশিত: bangla.deshibiker.com
আমি দেশি বাইকার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
valo laglo