কপিরাইট আইন ও এর সমস্যা

Copyright:

কপিরাইট কী তা আমরা সবাই জানি। যেমন, আপনি একটা বই লিখেছেন। বইটা আমি বাজার থেকে কিনলাম। তারপর সেটাকে ফোটোকপি করে বিক্রি করলাম। এই কাজটাকে "অবৈধ” বলা হয়ে থাকে। কারণ, বইটা "কপি” করার "অধিকার" আমার নাই, সেই অধিকার আছে শুধু লেখকের, সে-ই কেবল যত খুশি প্রিন্ট করে বাজারে বিক্রি করতে পারবে, আমি পারবো না। অর্থাৎ, আপনার লেখা বই আমি বাজার থেকে কিনতে পারবো, কিন্তু সেটাকে কপি করতে পারবো না -- করলে জেলে যেতে হবে।

Copyright

১. কেনা-বেচা :

আদিযুগ থেকে মানুষের মাঝে ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া চলে আসছে। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো কিছু বিক্রি করেন, তখন সেই জিনিসটার উপর থেকে তার সত্ত্ব চলে যায়, বস্তুটার মালিকানা চলে যায় ক্রেতার কাছে। যেমন, আলু, চা, মাছ, মাংস, শার্ট, প্যান্ট, জুতা, ইত্যাদি যখন আমরা কিনি, তখন সেটার সমস্ত মালিকানা আমাদের হাতে চলে আসে। আমরা সেটাকে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারি -- কাউকে দান করতে পারি, ভোগ করতে পারি, কিংবা নিছক নষ্ট করতে পারি। আদিকালে যত সমস্ত বস্তু কেনা-বেচা করা যেত, তার সবের উপরেই ক্রেতার এ ধরণের অধিকার ছিলো। এখনও আমরা এ ধরণের বস্তুর উপর অনুরূপ অধিকার ভোগ করে থাকি।

২. প্রডাক্টের ধরণ :

প্রডাক্টকে একাধিক ভাবে একাধিক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, পচনশীল দ্রব্য (expense) আর পুনর্ব্যবহার্য দ্রব্য(asset)। Expense এর উদাহরণ খাদ্যদ্রব্য, কলম, পেন্সিল, ইত্যাদি। Asset এর উদাহরণ চেয়ার-টেবিল, ফার্নিচার, ইত্যাদি; এছাড়াও হাউজহোল্ড অ্যাসেটও আছে। এই দুই ধরণের প্রডাক্টই আমরা যখন কিনি, তখন আমরা একে যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করার অধিকার সংরক্ষণ করি।

এখন, আরেক ধরণের "জিনিস"কেও "প্রডাক্ট" হিসেবে কেনা বেচা করা হয়, যাতে ক্রেতা তার কেনা "জিনিস"টার উপর সম্পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে না। সরকার এ ধরণের প্রডাক্টের উপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে; এ জাতীয় প্রডাক্টকে বলা হয় -- Intellectual property. উদাহরণ -- বই। আমরা একটা বই কিনতে পারি, সেটাকে ছিঁড়ে নষ্ট করতে পারি, কাউকে উপহার দিতে পারি, নিজে পড়তে পারি কিংবা দশজনকে "ধার" দিতে পারি। বইটার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তার দু-দশ লাইন কোট করতে পারি ব্লগে, আর্টিকেলে, সমালোচনায় কিংবা ডায়রিতে। কিন্তু বইটাকে আমি "ফোটোকপি" করতে পারবো না, কিংবা স্ক্যান করতে পারবো না, কিংবা সম্পূর্ণ বই নিজ হাতে লিখে অনুলিপি তৈরী করতে পারবো না, কারণ বিশ্বের দেশগুলো জনগণকে সে অধিকার দেয় নাই। এই অধিকার দেওয়া হয়েছে শুধু বইটির লেখককে, সে-ই কেবল Copy করার Right সংরক্ষণ করে, তার-ই কেবল Copyright আছে।

৩. কপিরাইট হোল্ডারের সুবিধা :

এধরণের প্রডাক্ট আমরা কিনি, কিন্তু তার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমাদের থাকে না। আমরা প্রডাক্টটিকে অনেক কিছুই করতে পারি, চাইলে হাজার কিংবা লাখো লোকের জনসভায় পড়ে শুনাতে পারি, শত শত মানুষকে পড়ার জন্য ধার দিতে পারি, কিন্তু অনুলিপি তৈরী করতে পারি না। যদিও আমার হাতে সে ক্ষমতা আছে (এবং তা অতি সহজেই করা সম্ভব), তবুও আমি তা করতে পারবো না, কারণ সংবিধানে এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আমার কেনা জিনিসের উপর বিক্রেতা (লেখক) কিছুটা অধিকার সংরক্ষণ করছে।

এই অধিকারটি লেখকে দেওয়ায় সে যেই সুবিধা ভোগ করে, তা এই যে মানুষ যেহেতু কোনো বইকে শতভাগ মুখস্থ করতে পারে না, আর বইটির বিষয়গুলো জানতে / পুনরায় পড়তে বারবার ধার নেয়াটা অসুবিধাজনক, তাই সে বাধ্য হয়ে বইটা কিনবে, লেখকের উপার্জন হবে। বইটি আরেকজনকে কিনতেই হবে, যদিও সে বইটির বিষয়বস্তুর অনুলিপি তৈরী করার উপকরণ বৈধভাবেই অধিকার করে। এদিকে আবার, একটা বই কেনার পরে তা অপরকে পড়ে শুনানো কিংবা সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধার দেওয়া, ইত্যাদিকে নিষিদ্ধ করা হয় নাই। কারণ এতে মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরী হবে, এবং তার অনুলিপি (ফোটোকপি / স্ক্যান) তৈরী করাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করে তার আগ্রহকে পুঁজি করে তাকে দিয়ে বইটি কেনানো হবে -- অর্থাৎ, কাস্টমার তৈরী করা হবে।

৩. Rethinking Buy & Sell:

উপরিউল্লিখিত দুই ধরণের প্রডাক্টের (expense & asset) বাইরে আরেক ধরণের প্রডাক্ট হলো এইসব Intellectual property, যাকে কিনা বলে Intangible asset.
কপিরাইট আইনের পক্ষে অনেক যুক্তি আছে, উইকিপিডিয়ায় পাবেন। আমি একটা বইয়ের অনুলিপি তৈরী করতে পারবো না(এবং অতঃপর শেয়ার করতে পারবো না) শুধুমাত্র এই কারণে যে তাতে আরেকজন সম্ভাব্য কাস্টমার হারাবে বইয়ের লেখক (কিংবা, ঐ কাস্টমারকে সহ যে estimated customer count ছিলো, তা কমে যাবে), এবং তার বিক্রয় কমবে, উপার্জন কমবে।
কিন্তু আমি একটা আপেল কিনে অর্ধেকটা অপর এক ব্যক্তিকে (possible customer for new apple) দিতে পারি, তাতে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না, যদিও এতে "হয়তো" নতুন একজন কাস্টমার হারালো আপেল বিক্রেতা। ("হয়তো" একারণে যে একটা আপেলের যে উপযোগ, তা অর্ধেকটা আপেলে থাকে না। তবুও, অর্ধেকটা আপেল খাবার পর সেই ব্যক্তিটি আপেল না-ও কিনতে চাইতে পারে)। কিন্তু একটা বইকে আমি reproduce (scan / photocopy) করলে এবং তা কোনো ব্যক্তিকে দিলে আর "হয়তো" কাস্টমার হারায় না লেখক; লেখক "নিশ্চিতভাবেই" একজন কাস্টমার হারায়।

কিন্তু আপেল আর বই কি তুলনাযোগ্য ? আপেল তো একবার খেলেই শেষ হয়ে যায়, এটা তো reusable নয়, এটা এমনকি asset ও নয়, কারণ asset এর physical decay আছে, কিন্তু একটা বইয়ের ফোটোকপি, কিংবা আরো ভালো উদাহরণ, scanned copy এর কোনো ক্ষয় নাই, এবং আপেলের মতো একবার পড়লে শেষ হয়ে যায় না, কখনোই হয় না। এই দুই ধরণের প্রডাক্টের nature দুই রকম। naturally একটা আপেল re-usable নয়, কিন্তু একটা বই re-usable.

আপেল খাবার বস্তু, একবার খেলে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু বই কিংবা সফটওয়্যার --- এগুলো খাবার বস্তু না। এগুলো একবার বললে শেষ হয়ে যায় না। একবার বিতরণ করলে শেষ হয়ে যায় না। এগুলো হলো জ্ঞান। কিন্তু কিছু ব্যক্তি জ্ঞানকে আপেলের মত করে বিক্রি করতে চায়, যেখানে প্রতিটা আপেলের জন্য সীমাবদ্ধ ইনভেস্টমেন্ট সীমাবদ্ধ আয় হয়, আর জ্ঞানের ক্ষেত্রে কিনা একবার ইনভেস্ট করে তারা আজীবন আয় করতে চায়। এজন্য সরকারী আইন প্রয়োগ করে জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে বিক্রয়ের বস্তু, আপেলের ন্যায় করে ফেলতে চায়।

একটা আপেল যখন এক ব্যক্তি সম্পূর্ণটা খেয়ে ফেলে, তখন সেটা আর কেউ খেতে পারে না। কিন্তু একটা বই যখন একজন পড়ে, তখন সেটা "আর কেউ পড়তে পারে না", এমন নয়। সেটা আরেকজন পড়তে পারে, অনুলিপি তৈরী করতে পারে এবং সেই অনুলিপিও একই অবস্থা প্রাপ্ত হয়। তাহলে, যে জিনিস আমরা এত সহজে কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরেকজনের ব্যবহারের উপযোগী করতে পারি, সে প্রক্রিয়াটা কেনো নিষিদ্ধ হবে ? শুধু কি এই কারণে যে কিছু ব্যক্তি এই জিনিসগুলো বিক্রি করে টাকা উপার্জন করে ? এবং, তাদেরকে জোর করে টাকা পাওয়াতেই হবে, সুতরাং, কোনো ব্যক্তি যদি বিনা টাকায় জিনিসটা আর কারো জন্য available করে, তাহলে তাকে মামলা দিয়ে ধরা হবে, যেনো অন্যরা ভয় পেয়ে এজাতীয় শেয়ারিং না করে। যেনো মানুষ কিনতে বাধ্য হয় ?
অনেকে বলবেন -- বইটা তো লেখক লিখেছেন। আমি বলবো -- লিখেছেন তো কী হয়েছে ? বইটা আমি পড়ছি না ? আরেকজনকে পড়তে দিচ্ছি না ? তবে সে একটা কপি রাখলে সেটা কি "অপরাধ" হয়ে যায় যে কাজটিকে piracy নামক নোংরা শব্দ দিয়ে অভিহিত করতে হবে ?

ব্যবসার খাতিরে কাস্টমারকে পণ্য কিনতে বাধ্য করাটা কতটুকু ethical ?

৪. Audio business :

এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই। একটা গান আমি কিনতে পারবো (গানের সিডি), আমি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে প্রতিবেশী সহ আশেপাশের আট-দশ বাড়িকে শুনাতে পারবো (এবং এভাবে অপরের intellectual property শেয়ার করার কারণে আমার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করবে না), চাইলে বন্ধুকে অসংখ্যবার শুনাতে পারবো। এবং বন্ধুর / প্রতিবেশীদের এই গান শোনাগুলো হবে আমার ইচ্ছামতো। কিন্তু যখন তারা নিজেদের ইচ্ছামতো শুনবার জন্য গানটিকে তাদের পিসিতে পেতে চাইবে, তখন তাদের কিনতে বাধ্য করবে সরকার, নতুবা তারা বন্ধুর / প্রতিবেশীর পিসি থেকে কপি করার কারণে মামলা খেয়ে জেলে যাবে।

বিষয়টা এভাবে দেখুন -- আমি টাকা দিয়ে অপরের intellectual property কিনলাম। আমি তা শেয়ারও করলাম (ফুল ভলিউমে দিয়ে প্রতিবেশীদের / বন্ধুকে শুনালাম)। কিন্তু এতে যেহেতু possible customer এর estimated count কমার সম্ভাবনা থাকলো না, বরং বাড়লো (কারণ মানুষ আগ্রহী হয়ে কিনবে), তাই সরকার এ ধরণের sharing (of others' intellectual property) কে নিষিদ্ধ করছে না।

কিন্তু একটিমাত্র ক্লিকের মাধ্যমে (কোনো শ্রম / অর্থ ব্যয় না করে) আমি যখন অডিও ফাইলটির এক কপি আমার বন্ধুর পিসিতে দেবো, তখনই সেটাকে সরকার আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করবে; এই কারণে যে এতে possible customer এর estimated count কমলো। সরকার এ জাতীয় "দুষ্ট আইন" (vicious law) এর মাধ্যমে আমার বন্ধু / প্রতিবেশীটির পকেট থেকে জোর করে টাকা বের করিয়ে ঐ গায়ককে দিলো (যখন কিনা বন্ধু / প্রতিবেশীটি গানটি কিনলো)।

recent Apple-Samsung verdict :

রাউন্ডেড কর্ণারের উপর পেটেন্ট, pinch to zoom এর উপর পেটেন্ট -- এগুলো কি পেটেন্ট করার জিনিস ?

সেদিন শুনলাম বাসমতি চালের পেটেন্ট নিয়ে নাকি আমেরিকা আর ইন্ডিয়ার মাঝে শীতল সম্পর্ক বিদ্যমান। কিছুদিন পর কি এমন হবে যে বাজারে গিয়ে ফজলি আম কিনবো, আর জেলে যাবো এই কারণে যে সেটা হাইব্রিড আম, কিন্তু ফজলির নামে বিক্রি করা হচ্ছে, আর সেটা ইন্ডিয়ার পেটেন্ট করা। অর্থাৎ কিনা পাইরেসি (!) করলাম আমি !
সরকারগুলো যখন আরো "দুষ্ট" হবে, তখন কি তারা এজাতীয় আইন করবে যে আপনি কোনো গায়কের গান অপর কাউকে গেয়ে শুনাতে পারবেন না ? কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট গায়কের নির্দিষ্ট গান শুনতে চাইলে ঐ গায়কের কাছ থেকেই তাকে টাকা দিয়ে শুনতে হবে, কিংবা অডিও ফাইল কিনতে হবে ? কিংবা মোবাইলে বাজতে থাকা (টাকা দিয়ে কেনা) গানটা শুনতে শুনতে ইয়ারফোনের একটা স্পিকার আপনি বন্ধুর কানে গুঁজে দেবার কারণে জেলে যাবেন ?

কিংবা আম কিনে খাবার পর তার আঁটি মাটিতে ফেলে চারা গজানোর জন্য জেলে যেতে হবে ?

৫. Rethinking products :

Expenses এবং Asset, এগুলো এক ধরণের পণ্য, আর সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের পণ্য হলো বই, অডিও ফাইল, সফটওয়্যার, ইত্যাদি। সুতরাং, যে জিনিসগুলো naturally reusable, re-distributable, সে জিনিসগুলোর ব্যবহার, nature কে কিছু আইনের মাধ্যমে শুধু ব্যবসার খাতিরে রেস্ট্রিক্টেড করে দেয়াটা কি ethical ?
একটা আপেলের উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত limited investment হয়, এবং বিক্রয়ে limited profit হয়। limited investment এ unlimited profit কি মানুষকে আরো আলসে করে দেয় না ? এটা কি নতুন উচ্চতর গুণগতমান সম্পন্ন intellectual property এর উৎপাদনকে অনিশ্চিত করে না ?

৬. Rethinking intellectual property :

"Intellectual property" কথাটার ব্যবহার প্রচুর। "Intellect" এর যখন আউটপুট দেখা / পাওয়া যায় (অর্থাৎ, জ্ঞান), তখন কি সেটা কারো property থেকে যায় ? "জ্ঞান" কে কি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে দাবী করা উচিত ? না সেই জ্ঞানের প্রচারের অধিকার "দুষ্ট আইনের" মাধ্যমে কুক্ষিগত করে তা থেকে সারাজীবন লাভ উঠানো উচিত ? বড় বড় বিজ্ঞানীগণ (নিউটন, ফ্যারাডে, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং) যদি তাদের থিয়োরীগুলো জানার এবং ব্যবহার করার জন্য অপর বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন, তবে বিষয়টা কেমন হতো ? নাকি শুধু গল্প-উপন্যাসের লেখকদের লেখার অংশই আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না, কিন্তু বিজ্ঞানীদের proposed তত্ত্বগুলো যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে ? নাকি গল্প-উপন্যাসই শুধু Intellectual property, বিজ্ঞানীদের থিয়োরীগুলো নয় ?

৭. Computer programs :

একইভাবে, একবার একটা প্রোগ্রাম লিখে তা আজীবন বেচে খাওয়ার খাতিরে সরকারি বাধ্যবাধকাত আরোপ করার বিষয়টা কতটুকু ethical ? আর এজাতীয় সুযোগ (সরকার প্রদত্ত copyright) কি customer-oriented production কেই উৎসাহিত করে না ? এতে ব্যক্তির স্বাধীনভাবে (freely) কাজ করার স্পৃহা থাকে না / নষ্ট হয়ে যায়, উপার্জনের চিন্তায় সে তখন শুধুই customer এর চাহিদামতন জিনিস তৈরী করে। ঠিক যে ব্যাপারটি হয় নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠীর জন্য একইধরণের সস্তা উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে -- উচ্চতর মানসম্পন্ন লেখা তৈরী হয় না। একই ব্যাপার ঘটে যখন সাংবাদিকেরা তাদের মস্তিষ্ককে বিভিন্ন দল / মতাদর্শের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন -- সত্যিকারের শক্তিশালী সাংবাদিকতা তখন নষ্ট হয়ে যায়।

৮. সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে সমস্যা :

আমি টাকা দিয়ে একটা সফটওয়্যার কিনলাম। কিন্তু আমার ফ্রেন্ডকে তা দিতে পারবো না (যদিও আমি কপি করে দিতে পারি), দিলে মামলা হবে আমার বিরুদ্ধে। আমার বাসায় চারটা কম্পিউটার, কিন্তু তাতে কী ! একই মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহারের জন্য আমার বাবাকে টাকা দিয়ে কিনতে হবে, আমাকে কিনতে হবে, কিনতে হবে আমার বোনকেও। এটা কি আপেল, যে প্রত্যেকের জন্য একটা করে কিনতে হবে ? একজন একটা খেলে আরেকজন তা খেতে পারবে না ?

কিন্তু আমি কি তাই হতে দেবো ? আমি তো সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়ার, আমার বাবা এক কপি কেনার পর আমি সেটাকে হ্যাক করবো, এবং আমার বন্ধুকে দেবো, আমার বোনকে দেবো। আর আমার এই মহৎ কাজটিকে piracy নামক নোংরা শব্দ দিয়ে অভিহিত করা হবে।

৯. সমাধান :

সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে এই সমস্যার সমাধান এসেছে Free and Open Source Software এর মাধ্যমে, যার মাঝে Linux অন্যতম। কম্পিউটারের দুনিয়াকে এই কপিরাইট সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়েছে লিনাক্স। লিনাক্সের কোনো কপিরাইট নাই। আপনি চাইলেই যেকোনো লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সোর্স কোড দেখতে পারবেন, বন্ধুকে বিনা পয়সায় বিলি করতে পারবেন, এবং যা-খুশি-তাই করতে পারবেন।

আমি একটা কম্পিউটার কিনতে পারি, প্রয়োজন বোধ হলে RAM লাগিয়ে তার পারফর্ম্যান্স বাড়াতে পারি, হার্ডডিস্ক লাগাতে পারি, তাহলে আমার নিজের কেনা সফটওয়্যারকে কেনো আমি পরিবর্তন করতে পারবো না, যেখানে আমি একজন প্রোগ্রামার, আমি পারি সফটওয়্যারটার উন্নতি সাধন করতে ? উপরন্তু, কেনো আমি কপিরাইট আইনে বন্দী থাকবো, যেনো আমার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে না পারি ?

এত ধরণের সীমাবদ্ধতা যেখানে, সেখানে ভালো সফটওয়্যারের উদ্ভাবন নিশ্চিত হয় না। এঞ্জিনিয়াররা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।

এজন্যেই এ ধরণের ইন্ডাস্ট্রি বেশিদিন টিকতে পারবে না। এজন্যেই, Linux is the future of computing, not some closed source OS like Windows or OS X. ( প্রথম পোস্ট করলাম, অনেক জটিল লাগছে, আর থাম্বনেইল ছাড়া পোস্ট করতে দিচ্ছে না কেনো বুঝলাম না, তাই না বুঝেই আমার তোলা একটা ছবি লাগিয়ে দিলাম 🙁 নিয়ম-নীতি বেশি একটা জানি না। বহুদিন টেকটিউনস পড়ি, কিন্তু আলসেমীর কারণে টিউন করা হয় না। ভুল-টুল করলে আশা করি জানাবেন। @সবাই )

মূল লেখা এখানে

Level 0

আমি নূরে আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 19 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

কপিরাইট সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার অনেক ইচ্ছা ছিল।
সেই ইচ্ছা পুরন হল 😛
ধন্যবাদ।

    @আ জ ব: মূল লেখা (লিঙ্ক দেয়া উপরে) থেকে এটা একটু ডিফরেন্ট, আমি ইউনিভার্সিটিতে লিনাক্সের উপর ওয়ার্কশপ করেছিলাম, সেখানে এটা আলোচনা করেছি।

টেকটিউনসের সিস্টেম এত জটিল কেনো ? বহুত ঝামেলার পর “টিউন থাম্বনেইল” যুক্ত করলাম। তারপর আবার দেখছি যে প্রথম পাতায় প্রকাশ হয় নি। এটা কি “ওপেন সোর্স” বিভাগে প্রকাশ করার কারণে প্রথম পাতায় যায় নি ? রাইটিং প্যানেলে গিয়ে পোস্ট এডিট করে ফন্ট সাইজ বাড়াতে গেলাম। কোনো টুলই পেলাম না। HTML দিয়ে এডিট করাটা তো কোন অপশন হতে পারে না। সব উল্টাপাল্টা লাগছে।

Nice Info.
Thanks.

Level 0

সুন্দর এবং তথ্যবহুল টিউন। প্রথম টিউনে অনেক ভালো করেছেন। সামনে আরো ভালো কিছু আশা করছি।
ধন্যবাদ…

Level 0

অনেক জ্ঞানিত হইলাম অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তি লেখার আপেক্ষায় থাকলাম।

বিপাশা, marahim, জন — ধন্যবাদ আপনাদের। আশা করি আরো ভালো লেখা লিখবো।

গায়ক কেবল গান করবে , সুন্দর গান উপহার দিবে ; তাই তাকে টাকার চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়া হয় ।

Level 0

ভাই, পুরাটা পরলাম না। বুজলাম আপনি পাইরেসি এর পক্ষে, ভাই একটা কথা বলি, আপনি একটা সফটওয়্যার বানালেন, পরে ওইটা বিক্রি করলেন। কিন্তু ওইটা আমি কপি করে সবাইরে দিলাম। আপনার কিন্তু ভারি লস হইল। মনে রাকবেন আপনি যদি সেল ই না করতে পারেন তাইলে কিন্তু আপনি আর কোন সফটওয়্যার বানাবেন না।

    @Tanvir: ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য। পুরোটা না পড়ে কমেন্ট করাটা মনে হয় ঠিক হলো না ! আর আমি অদূর ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ডেভেলপারই হতে যাচ্ছি, আর আমি জেনে-শুনেই এমন সফটওয়্যার বানাবো, যেটা ওপেন-সোর্সড হবে। আপনি যেমন সহজ করে আপেল বিক্রির মত করে সফটওয়্যার বিক্রি করতে না পারার তুলনাটা দিলেন, তা গ্রহনযোগ্য নয়। অনলাইনে ওপেন সোর্স বিজনেস মডেল নিয়ে একটু পড়াশুনা করলে আশা করি আপনার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর সারা দুনিয়ার ওপেন সোর্স ডেভেলপাররা কি এতই হাতেম তাই বলে আপনি মনে করেন ? কখনোই না !