সাম্প্রতিক বিশ্বে একের পর এক কত কিছু যে নিত্য নতুন আবিষ্কার হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এর মাধ্যমে আমরাও জানতে পারছি, শিখতে পারছি। পৃথিবীর রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় আমাদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। তেমনই আজকে নতুন একটি আবিষ্কার নিয়ে কথা বলবো। বিশ্বের বৃহত্তম জীবাণু সম্পর্কে জানবো আজকে যা রীতিমতো বিজ্ঞানীদেরকেও অবাক করে দিয়েছে! আপনিও হয়তো অবাক হবেন।
ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু হল মাইক্রোস্কোপিক এককোষী জীব, যার কোন স্বতন্ত্র নিউক্লিয়াস নেই। ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায় এবং গ্রহের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক। কিছু প্রজাতির জীবাণু প্রচন্ড তাপমাত্রা এবং চাপের চরম পরিস্থিতিতে বাস করতে পারে। তাতে তাদের কোন ক্ষতি হয় না।
জীবাণু এতোটাই সূক্ষ্ম হয়ে থাকে যে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে দেখতে হয়। এগুলো খালি চোখে দেখা যায়না। এমনকি তাদের স্পষ্ট ছবি তোলাটাও কঠিন। ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করাটা প্রয়োজনীয় বিষয়, তবে এর জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় বিজ্ঞানীদের। প্রয়োজন হয় জীবাণু ধ্বংসের উপায় আবিষ্কারের।
এগুলোর অনেক জীবাণুই ভাইরাস বহন করে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে শরীরকে করে দিতে পারে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত। এমনকি কোন কোন জীবাণুর বহন করা রোগের মাধ্যমে প্রাণীর মৃত্যুও ঘটে থাকে।
মানুষের দেহেও রয়েছে অনেক জীবাণু। এমন কি ধারণা করা হয় মানুষের দেহের কোষের পরিমাণের চেয়েও বেশি। এসব জীবাণুর মধ্যে সবই যে জীবাণু রোগ বহন করে শরীরের ক্ষতি সাধন করে থাকে, তা কিন্তু না। বরং অনেক উপকারী জীবাণুও রয়েছে যা স্বাস্থ্য ও ত্বককে ভাল রাখতে কাজ করে।
সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে দৈত্যাকৃতির জীবাণু। জীবাণুটি অন্যান্য জীবাণু থেকে পাঁচ হাজার গুণ বড়। অন্যান্য জীবাণু যেখানে মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখলে দেখা যায়, সেখানে এই আবিষ্কৃত জীবাণুটি খালি চোখেই দেখা যায়! এখন আপনিও জীবাণু দেখতে পারবেন একদম খালি চোখেই!
বিষয়টি রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদেরকে। কেননা এমনটা ছিল সম্পূর্ণ ধারণার বাইরে। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম জীবাণুটি বিজ্ঞানীদের নজরে আসলেও তা নিয়ে তারা ততোটা গুরুত্ব দেননি এ কারণে যে, তারা ভেবেছিলেন এটি একটি ছত্রাক হতে পারে।
কিন্তু অবশেষে ২০২২ সালে এসে তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। প্রজাতিটি আসলে যে একটি ব্যাকটেরিয়, তা জানতে গবেষকদের পাঁচ বছর সময় লেগেছে।
ফরাসি ক্যারিবিয়ান গুয়াদেলুপের ম্যানগ্রোভে পাওয়া এই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুটি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবাণু। এটি ১ সেন্টিমিটার বা ০.৪ ইঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জীবাণুটি ভার্মিসেলি পাস্তা কিংবা সেমাইয়ের মতো পাতলা সাদা ফিলামেন্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এটিতে মাইক্রোস্কোপিক সালফার দানা রয়েছে যা আলো ছড়িয়ে এটিকে মুক্তার মতো আভা প্রদান করে।
মুক্তার মত সাদা আভার এই দৈত্য ব্যাকটেরিয়াটির নাম থিওমার্গারিটা ম্যাগনিফিকা (Thiomargarita Magnifica)।
জীবাণুটির পূর্বে পাওয়া পরিচিত সবচেয়ে বড় জীবাণু ছিল থিওমার্গারিটা নামিবিয়েনসিস (Thiomargarita Namibiensis)। এটি থিওমারগারিটা গণের আরেকটি প্রজাতি।
নামিবিয়ার মহাদেশীয় শেল্ফের সাগরের পলিতে পাওয়া থিওমারগারিটা নমিবিয়েনস ০.৭৫ মিমি বা ০.০৩ ইঞ্চি পর্যন্ত পৌঁছায়। যা এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় জীবাণু ছিল। কিন্তু এবার এ রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় সম্প্রতি আবিষ্কৃত এ জীবাণুটি।
আরও জটিল ব্যাকটেরিয়া সরল দৃষ্টিতে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। তবে কেন এই জীবাণুগুলো এত বড় হয় তা আরেকটি সমান কৌতূহলজনক ও বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
এভাবে সৃষ্টির কতোকিছুই মানুষের অজানা রয়ে গেছে, যা ক্ষণে ক্ষণে জানা যাবে, অভিজ্ঞতা হবে নতুন কিছুর।
আমি মুফতি রাকিবুল ইসলাম হোযায়ফী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তি যেন আপনাকে আল্লাহকে ভুলিয়ে না দেয়।