নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করা যাবে, তিন মাসের মধ্যে গাইডলাইন..
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ এ বিষয়ে গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই সেবার বিভিন্ন কারিগরি দিক সম্পর্কে বিটিআরসিতে প্রজেকশন চলছে। মঙ্গলবারও (আজ) এ ধরনের একটি প্রজেকশন হতে যাচ্ছে। আমরা এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। আশা করছি, চার মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স নবায়ন হওয়ার আগেই, অর্থাৎ আগামী নভেম্বরের মধ্যেই এমএনপির গাইডলাইন চূড়ান্ত করে ফেলব।’
জিয়া আহমেদ বলেন, ‘সেবাটি চালু করার জন্য বিশেষ প্লাটফর্ম স্থাপন এবং এর পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা এমএনপি সেবা পরিচালনায় ইন্টার-কানেকশন এঙ্চেঞ্জগুলো (আইসিএঙ্) ব্যবহার করা যায় কি না সে বিষয়টাও খতিয়ে দেখছি। আইসিএঙ্-এর মাধ্যমে সেবাটি দেওয়া গেলে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে নতুন করে সংযোগ নিতে হবে না। আইসিএঙ্-এ তাদের যে সংযোগ রয়েছে সেটাই কাজে লাগানো যাবে। তবে এ জন্য আইসিএঙ্গুলোকেও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংগ্রহ ও সংযুক্ত করতে হবে।’
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে এমএনপি সেবা চালু হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স নবায়নে যে নীতিমালা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে তাতে এমএনপি সেবার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আইসিএঙ্ অপারেটরের সংখ্যা তিন। এমনই একটি অপারেটর এম অ্যান্ড এইচ টেলিকম। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, এমএনপি সেবা চালুর বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে।
অবশ্য এমএনপি সেবা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর ‘এয়ারটেল বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু হয়। সেদিন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস টবিট কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের উচিত মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) ব্যবস্থা চালু করা।
দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহ্মুদ হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমএনপি চালুর বিষয়টি বেশ জটিল। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা যাতে প্রকৃত সেবা পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর কারিগরি ব্যবস্থাটি সঠিকভাবে করতে হবে। আমরা এ সেবা চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি, তবে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে সব অপারেটরের মতামত নিয়ে এটা করতে হবে।’
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘লার্ন এশিয়া’র মতে এমএনপি সেবা উন্নত বিশ্বে সাড়া ফেললেও দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সফল হবে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই সেবা চালু হলে মোবাইল শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তেমনটি না-ও হতে পারে। বাংলাদেশেও সাধারণ গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশ তাদের অপারেটর পরিবর্তন করতে চায় না।
লার্ন এশিয়ার এ কথা বছর খানেক আগের। গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি আরো জানিয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ মোবাইল ব্যবহারকারী বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে এমএনপি সেবা গ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, এই শ্রেণীর ব্যবহারকারীরা কোনো একটি নম্বরের প্রতি অনুগত থাকে না। তারা মূলত সামাজিক যোগাযোগের জন্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
বাংলাদেশের সাধারণ মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে ১০ শতাংশ একাধিক সিম ব্যবহার করে, যা এমএনপি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তাদের এমএনপি সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা খুবই কম। এই গ্রাহকদের বেশির ভাগ প্রিপেইড সংযোগ ব্যবহার করে। বিভিন্ন অপারেটরের একাধিক সংযোগ এবং ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি নম্বরের সুবিধা নিয়ে তারা খরচ কমিয়ে থাকে।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের জন্য লার্ন এশিয়ার পরামর্শ ছিল, এমএনপি সেবার জন্য একটি সামঞ্জস্যমূলক কলরেট নির্ধারণ করে দিতে হবে, যাতে এ সেবা যারা গ্রহণ করবে, তারাই এর খরচ বহন করে। এমএনপি সেবা চালুর ফলে মোবাইল ট্যারিফে যেন কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেটা দেখতে হবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ব্যয় বহনের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এমএনপি সেবা চালুর আগে এর সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কেননা, এমএনপি সেবা চালুর ফলে মোবাইল-বাজারে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রঃ সুখবর২৪.কম
আমি Ripendil। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 42 টি টিউন ও 140 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাল খবর।