এই টিয়নের নায়ক ওযায়ের ইবনে ওমর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্স, এন.টি.ভি
এই শতকের একমাত্র 'লাকি সেভেন' দিবস! অর্থাৎ ২০০৭ সালের জুলাই মাসের সাত তারিখ। সুইজারল্যান্ডের ইন্টারনেট ভিত্তিক সংগঠন 'সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন' ঘোষণা করেছিল তাদের জরিপে (?) নির্বাচিত পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যজনক স্থাপত্যের নাম যা তাদের ভাষায় পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য (নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড)। এগুলো ছিলো: মেক্সিকোর চিচেন ইতাজ, ব্রাজিলের খ্রিস্ট রিডিমার, ইতালির কলোসিয়াম, ভারতের তাজ মহল, চীনের গ্রেট ওয়াল, জর্ডানের পেট্রা এবং পেরুর মাচু-পিচু।
তাদের জরিপের ফলে সর্বস্বীকৃত পৃথিবীর শত সহশ্র বছরের প্রাচীনতম সাতটি আশ্চর্য নিদর্শন বা স্থাপনার সবগুলোই বাদ পড়ে যায়। মিশরের পিরামিড, পিসার হেলানো টাওয়ার কিম্বা ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মতো পৃথিবীর প্রাচীনতম স্থাপনাগুলোর কৌশল মানবজাতিকে হতবাক করে বলেই ইতিহাসে রয়েছে এদের বিশেষ স্থান। আর মধ্য এবং আধুনিক কালের পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যও রয়েছে সাধারণ জ্ঞানের পাতায়। যেগুলো বিভিন্ন সংস্থা যেমন: আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, ইউএসএ টু'ডে, সিএনএন এর মতো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের জুরিখ লেকের পাশে বসে বার্নার্ড ওয়েবার নামের এই ভদ্রলোক ফন্দি করলেন প্রাচীন, মধ্য কিম্বা আধুনিক স্বীকৃত সপ্তম আশ্চর্যের ভেতরে বা বাইরে যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলোকে সারা দুনিয়ায় একটি নির্বাচন নামক প্রহসনের ভোটাভুটির মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজের পকেটে শতশত কোটি ডলার ভরার!
সেই ভাবনা থেকেই তিনি শুরু করলেন ইন্টারনেট ও মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে নতুন সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের কাজ। ওয়েব সাইটের নাম দিলেন www. new7wonders.com। সুইস সরকারের অনুমোদনও নিয়ে নিলেন তিনি। পাশে পেলেন ইউনেস্কোকে (জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা)। পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু সম্পন্ন করে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিল; প্রাপ্ত ১০০ মিলিয়ন ভোটের ভিত্তিতে পৃথিবীর নতুন সাতটি আশ্চর্যজনক স্থাপনা নির্বাচন করেছেন তিনি। কিন্তু তার নির্বাচিত নতুন সপ্তাশ্চর্য যতটা না আলোড়ন তুললো বোদ্ধামহলে তারচেয়ে তাদের ভাবিত করে তুললো একটি নির্বাচনে ১০০ মিলিয়ন ভোট সংগ্রহের মতো অভূতপূর্ব বিষয়টি নিয়ে।
ভোটের এই পরিসংখ্যান শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো পৃথিবীর খ্যাতনামা নির্বাচন ও জরিপ সংস্থাগুলো। নিউ ইয়র্কের জরিপ সংস্থা জগবি ইন্টারন্যাশনাল একে ঘোষণা করলো 'নির্বাচনের সবচেয়ে বড় রেকর্ড' (দ্যা লার্জেস্ট পোল অন রেকর্ড) হিসেবে। শুরু হয়ে গেলো এই অদৃষ্টপূর্ব ভোটাভুটির গোপন রহস্য উদঘাটনের কাজ। সূত্র: উইকিপিডিয়া
খোজ খবর করে তারা জানতে পারলো, ইন্টারনেট এবং এসএমএস এর মাধ্যমে পপুলার ভোট নেয়ায় একজন ব্যক্তি বা সমর্থক একাধিক কিম্বা শতাধিক কিম্বা সহশ্রাধিক ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলো সেই নির্বাচনে। আর এ কারণেই এটি পৃথিবীতে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় রেকর্ড'টি করতে পেরেছিলো। ফলে পৃথিবীর আরেক বিখ্যাত জরিপ সংস্থা ইউটিকা সেভেন ওয়ান্ডার্সের সেই নির্বাচনকে আখ্যায়িত করেছিলো 'সন্দেহাতীতভাবে অবৈজ্ঞানিক' (ডিসাইডেডলি আনসায়েন্টিফিক) হিসেবে। নির্বাচনের পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক, বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো ২০০৭ সালেই নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন এর প্রতি তাদের আনুষ্ঠানিক সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদেরনতুন সপ্তাশ্চর্যের ফলাফলও প্রত্যাখ্যান করেছিলো। সূত্র: উইকিপিডিয়া
কিন্তু ইউনেস্কো মুখ ফিরিয়ে নিলেও দমে যায়নি বার্নার্ড ওয়েবার। শ্রেফ টাকা কামানোর এই উদ্যোগকে পাকাপোক্ত করতে তিনি তার বিতর্কিত ফাউন্ডেশনকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন জাতিসংঘের পার্টনার অরগানাইজেশের খাতায়। আর এখন সন্দেহাতীতভাবে আবৈজ্ঞানিক, বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য এবং প্রত্যাখ্যাত পদ্ধতিতেই পৃথিবীর সাতটি প্রাকৃতিক আশ্চর্য নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছেন ওয়েবার। ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেয়া যাবে এসএমএস-এ ভোট। সেল ফোনের মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিতে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন দেশের সরকারী টেলিফোন সংস্থা বিটিসিএল তথা টেলিটক এর সাথে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী সুন্দরবনকে এসএমএস এর মাধ্যমে দেয়া প্রতিটি ভোটের বিপরীতে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন তথা বার্নার্ড ওয়েবার পাবে ৬৮ পয়সা করে।
গত ৯ জুলাই ২০১১ তে দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিলো 'দুই সপ্তাহে ১০ লাখ ভোট' । গত ২৪জুন থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে সুন্দরবনের জন্য ১০ লাখ ভোট পড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। আর এই এসএমএস চুক্তিকারী কর্তৃপক্ষ টেলিটক এর কর্মকর্তার উদ্বৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মোবাইল গ্রাহক যদি অন্তত ২০টি করে ভোট দেয় তবে সুন্দরবনের জন্য ভোটের সংখ্যা দাড়াবে কমপক্ষে ১০০ কোটি। আর এই একশ কোটি ভোট পড়লে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন তথা বর্নার্ড ওয়েবার আয় করবে ৬৮ কোটি টাকা। কেননা চুক্তি মোতাবেক প্রতি এসএমএস-এ বার্নার্ড পাবে ৬৮ পয়সা। আর যেহেতু ১০ লাখ ভোট ইতোমধ্যেই পড়েছে তাই এরই মাঝে বার্নার্ড বাংলাদেশ থেকে আয় করেছে (হাতিয়ে নিয়েছে!) ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
কিন্তু টেলিটক এর সাথে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন যে এসএমএস চুক্তি করেছে সেই চুক্তির ৯ নম্বর ধারায় বলা আছে যে এসএমএস-এর মাধ্যমে কত ভোট পড়ছে তা পুরোপুরি গোপন রাখতে হবে। গণমাধ্যমে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ পেলে প্রতিযোগী স্থানটি তথা সুন্দরবন বাদ পড়ে যাবে প্রতিযোগিতা থেকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন গোপন রাখতে হবে এসএমএস এর মাধ্যমে দেয়া ভোটের পরিসংখ্যান? উত্তরটা খুব সোজা। যেহেতু সংগঠনটির এই এসএমএস বাণিজ্যের কারণে তাদের নির্বাচন পদ্ধতি অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়ে ২০০৭ সালের নতুন সপ্তাশ্চর্য্য'র প্রতিযোগিতাটি বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল এবং ইউনেস্কো সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো তাই এবার এই বিশেষ সাবধানতা। তারা চায় না এসএমএস এর ভোটের পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবারের ব্যবসা ভন্ডুল হয়ে যাক।
কিন্তু থলের বেড়াল তো এরই মাঝে বেড়িয়ে পড়েছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে তো ইতোমধ্যেই ২ সপ্তাহের ভোটের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। এখন কী হবে? জানা গেছে ৯ তারিখে সংবাদটি প্রকাশিত হবার পরদিন ১০ জুলাই'তে টেলিটকের চুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে চিঠি দিয়েছে সেই সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে চুক্তির শর্ত মোতাবেক এসএমএস এ ভোটের পরিসংখ্যান গোপন রাখতে বলা হলেও কী করে তা বাংলাদেশের একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলো। এই গোপন-গোপন খেলায় এসএমএস-এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করে নেয়ার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই কী করে?
এবার আসুন সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন এর দ্বিতীয় আরেকটি ব্যবসার গোপন কথায়। এই সংগঠনটি লাখ লাখ ডলারের বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রচারণা তথা বিজ্ঞাপনের স্পন্সরশিপ বিক্রি করছে। অর্থাৎ যদি কোন বেসরকারী বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তার দেশের প্রতিযোগী কোন একটি স্থানকে নির্বাচিত করার জন্য দেশে কিম্বা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালাতে চায় তাহলে সেজন্য সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন এর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে তার অধিকার লাভ করতে হবে। এজন্য তারা দুই ধরণের স্পন্সরশিপ এর ব্যবস্থা রেখেছে। ২ লাখ ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে গোল্ড স্পন্সরশিপ এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্লাটিনাম স্পন্সরশিপ। যেমন কোরিয়ার জোজু দ্বীপের জন্য দেশটির দুটি স্বনামধন্য কোম্পানি হুন্দাই কর্পোরেশন এবং কিয়া মটরস মোটা টাকার বিনিময়ে স্পন্সরশিপ কিনেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সুখবরটি হলো আমাদের দেশের কোন কোম্পানি সংগঠনটির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত স্পন্সরশিপ কেনেনি। কিন্ত দেশের অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই সুন্দরবনকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু স্পন্সরশিপ না কিনে এই প্রচারণা চালালে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন এর নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তির শর্ত ভঙ্গের দায়ে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়বে সুন্দরবন। বিষয়টি সুন্দরবনের সরকারী সমর্থক সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন সংস্থার নজরে এসেছে এবং স্পন্সরশিপ বিহীন এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দরবনের জন্য প্রচারণা না চালাতে সতর্ক করে দিতে চিঠি ইস্যু করছে।
কিন্তু এরপর বাংলাদেশের এক বা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি এই প্রচারণার জন্য স্পন্সরশিপ কেনে তবে দুই লাখ ১০ হাজার কিম্বা সাড়ে তিন লাখ ডলার করে প্রতি স্পন্সরশিপ বেচে বাংলাদেশ থেকে হাতিয়ে নেবে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন তথা বার্নার্ড ওয়েবার। আর প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট ২৮টি দেশের মধ্যে যদি গড়ে একটি করে স্পন্সরশিপ বিক্রি করতে পারে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন তবে এই খাত থেকে তার আয় দাড়াবে গড়ে ১০০ কোটি টাকা। আর প্রতিযোগী ২৮টি দেশের প্রত্যেকটি থেকে যদি ৫০ কোটি করে এসএমএস ভোট পায় তবে এই খাত থেকে বার্নার্ড আয় করবে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রতি এসএমএস ৬৮ পয়সা হিসাবে)। কিন্তু ধনী দেশেগুলো থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে পাওয়া হিস্যা আরো বেশি হবে। সেক্ষেত্রে মুনাফার পরিমান আরো বেশি। আহ্ তথ্য প্রযুক্তি আর নতুন আইডিয়া; এই দুই যদি মিলে যায় খাপেখাপ তবে তাকে আর ঠেকায় কে?
তাহলে কী দাড়াচ্ছে? বার্নার্ড ওয়েবারের ওয়েবে তথা ধান্দাবাজীর জালে ধরা পড়েছি আমরা। এই মানুষটি পাঁচ বছর আগে ২০০৭ সালে কক্সবাজার ও সুন্দরবনকে পৃথিবীর অন্য ৪৪০টি স্থানের মধ্যে রেখে শুরু করেছিল পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রতিযোগিতা। আর আমরা দেশ দরদী হয়ে, পৃথিবীর বুকে নিজের সুন্দরবনকে জায়গা করে দেয়ার এক ভ্রান্ত বাসনা থেকে সেই জালে পা দিয়েছি আমরা।
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দুই বছর ধরে ইন্টারনেটে ভোট দেয়ার পর ২০০৯ সালে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন বললো যে কক্সবাজার বাদ পড়েছে প্রতিযোগিতা থেকে আর সুন্দরবন টিকে গিয়েছে। শেষ ধাপের এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের আরো ২৮টি প্রাকৃতিক স্থানও রয়েছে। এখন এসএমএস এবং ইন্টারনেটে ভোটাভুটির পর ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বার্নার্ড ঘোষণা করবে প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়া ২৮টির মধ্য থেকে ৭টি শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক স্থানের নাম। কিন্তু এই সপ্তাশ্চর্য হবে কীসের বিচারে? স্থানটির সৌন্দর্য্য বিচারের মাধ্যমে? স্থানটির বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ্যের কারণে? স্থানটির জীব বৈচিত্র্যের কারণে? না এগুলো কোনটাই না। শ্রেষ্ঠত্ব বিচার হবে শ্রেফ টাকার বিনিময়ে। এসএমএস আর স্পন্সরশিপ কেনার মাধ্যমে যে ৭টি দেশ বার্নার্ড ওয়েবারের সুইস ব্যাংকের একাউন্টে সবচেয়ে বেশি ডলার রাখতে পারবে, এমন সাতটি দেশের প্রাকৃতিক স্থানই এগিয়ে যাবে প্রতিযোগিতায়। হবে পৃথিবীর তথাকথিত সেরা ৭টি প্রাকৃতিক আশ্চর্যজনক স্থানের একটি। অন্যদের ভ্রান্ত ও অগ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিয়ে নিজের পকেট ভরার কী আয়োজন! সত্যি সেলুকাস; এ পৃথিবী অবাক চেয়ে রয়!!!
তাই যে কথাটি আবারো বলতে চাই তা হলো; আমাদের সুন্দরবনের জন্য কারো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। কারণ সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আর জাতিসংঘ তথা ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাই আমাদের সুন্দরবন সেভেন ওয়ান্ডর্স ফাউন্ডেশনের মতো একটি ভুঁইফোড় এবং অস্বীকৃত সংগঠনের ব্যবসার উপাদানে পরিণত তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা।
কয়েকটা কথা বলি মন দিয়ে শুনুন। পৃথিবীতে নানা রকম সেভেন ওয়ান্ডার্স আছে। প্রচীন, মধ্যযুগ, আধুনিকযুগের সপ্তম আশ্চর্য। আছে সাগরের সপ্তম আশ্চর্য। আছে বিভিন্ন দেশের যেমন: কানাডার সপ্তম আশ্চর্য। কিন্তু এই সব আশ্চর্য নির্বাচনে কখনও জাল ভোট (যত খুশি তত ভোট) দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। জাল ভোট মানেই জনমতের সঠিক প্রতিফলন নয়। আর এই নির্বাচনে জাল ভোটের সুযোগ যেমন দেয়া হয়েছে তেমনি চুক্তি করে ঠিক করা হয়েছে এই জাল ভোটের পরিমান কোনভাবেই ফাঁস করা যাবে না। করলে সুন্দরবন বাদ।
আর ভাবছেন এই প্রতিযোগিতায় জাল ভোট দিয়ে সুন্দরবনকে ৭টার একটা করতে পারলেই কেল্লা ফতে? কোন লাভ নেই। এমন সেভেন ওয়ান্ডার অব ন্যাচারও রয়েছে পৃথিবীতে (উইপিডিয়াতে সার্চ দিলেই পাবেন) যারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করেছে সেগুলোকে কোন জাল ভোটের ভিত্তিতে নয়। এইসব সপ্তম আশ্চর্যের নামই কয়জন জানে দুনিয়াতে? আর এই জোচ্চরদের নির্বাচিত সপ্তম আশ্চর্য মেনে নেবে সবাই? যারা যত খুশি তত এসএমএস-এর বিধান রাখে এসএমএস প্রতি ৬৮ পয়সা করে কামায়! যারা যত খুশি তত ফোন ভোটের বিধান রেখে পারসেনেটজ কামায়! যাদের এই পয়সা কামানোর আর ধান্দার নির্বাচনকে ২০০৭ সালেই ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে 'ডিসাইডেডলি আনসায়েন্টেফিক' (সন্দেহাতীতভাবে অবৈজ্ঞানিক) হিসেবে এবং প্রত্যাখান করেছে তাদের আগের সপ্তাশ্চর্য প্রতিযোগিতার ফলাফল।
বিষয়টা হচ্ছে আপনার আমার কাছে দেশপ্রেম...আর সেভেন ওয়ান্ডার্সের মালিক বার্নার্ড ওয়েবারের কাছে শুধুই টাকা। আমি আমার লেখায় হিসাব করে দেখিয়েছি এই ধান্দাবাজীর নির্বাচন করে ওয়েবার ২৮টি দেশ থেকে হাতিয়ে নেবে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা!!!আমরা যদি সচেতন না হই আমাদের মতো গরীব দেশ থেকে ও হাতিয়ে নেবে আমাদের কষ্টার্জিত ১০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। সবাইকে কেমন দেশপ্রেমের প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিয়ে ওয়েবার কতটা আয়েশ করে পয়সা কামাচ্ছে একবার ভেবেছেন!!!
আর নায়ক-নায়িকারা এই প্রতিযোগিতার জন্য ভোট চাইছে, এই বিষয়টা উল্লেখ করেছেন আপনি। টাকা দিলেই পাওয়া যায় নায়ক-নায়িকা। সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকার ধান্দার জন্য নায়ক-নায়িকাদের পেছনে বা মিডিয়ার পেছনে কিছু খরচ করবে না ওয়েবার, লোকটাকে এত বোকা ভেবেছেন নাকি???
শুনুন, বিষয়টা ভাবুন। আপনি ভোট দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতি শুক্রবারের পুরো দিনটিই খরচ করেন সুন্দরবনকে ভোট দিতে। এইদিন তিনি অন্তত ৫০০টি এসএমএস ভোট দেন (৩ তারিখের ডেইলি স্টার পড়ুন)। দৃশ্যটা একবার ভাবুন; প্রধানমন্ত্রী ভোট দিচ্ছেন, আমরা ১৬ কোটি মানুষ ভোট দিচ্ছি। আমরা যত জাল ভোট দিচ্ছি বার্নার্ড ওয়েবারের মুখের হাসি ততই বিস্তৃত হচ্ছে। কারণ ততই বাড়ছে তার সুইস ব্যাংকের একাউন্টে ডলারের পরিমান। আর বোকা হচ্ছি আমরা!!!
সুন্দরবন নিয়ে ধান্দাবাজী সংক্রান্ত লেখালেখির জন্য বেশিরভাগ মানুষকে আমাকে সমর্থন দিয়েছে পাশে দাড়িয়েছে সেজন্য আমি আমি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তিন থেকে চারজন ব্যক্তি এত বাজে ভাষায় মন্তব্য করেছেন তাতে আমার সন্দেহ তীব্র হয়েছে এই মানুষগুলো নিশ্চয়ই ঐ ধান্দাবাজ সংগঠনটির বেনেফিশিয়ারি। তাদের প্রতিক্রিয়া পড়ে যে কোন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, আমার লেখালেখির কারণে জাল ভোটের জমজমাট ব্যবসায় ভাটা পড়তে পারে এবং আমার লেখালেখির কারণে তাদের টু পাইস কামিয়ে নেয়ার ধান্দাও ভন্ডুল হয়ে যেতে বসেছে।
যারা বলছে বা মনে করছে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন আমাদের সুন্দরবনকে বিশ্বে বিরাট পরিচিতি এনে দেবে তারা শ্রেফ দিবা স্বপ্ন দেখছেন। কারণ সংগঠনটির এই জাল ভোট বাণিজ্যের কারণে একটা কুখ্যাত সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রথম সেভেন ওয়ান্ডার্স নির্বাচনের পর পপুলার ভোটের এই পদ্ধতি দেখে বিশ্বের বিখ্যাত জরিপ সংস্থা জগবি ইন্টারন্যাশনাল একে উপহাস করেছিলো দি লার্জেস্ট পোল অন আর্থ এবং সমালোচনা করেছিলো ডিসাইডেডলি আনসায়েন্টেফিক হিসেবে। সেই ২০০৭ সালেই ইউনেস্কোও প্রত্যাহার করেছিল সেভেন ওয়ান্ডার্সকে দেয়া সমর্থন। সুতরাং কুখ্যাত এই সংগঠনটি আবারো জাল ভোট ব্যবসায় মেতেছে আর বাংলাদেশকে বানিয়েছে নাম্বার ওয়ান বলদ। আলেক্সাতে খোজ নিয়ে দেখেন সেভেন ওয়ান্ডার্স-এর ওয়েবসাইটে যত হিট হয় তার ৪০% ই হয় শুধু বাংলাদেশ থেকে। ভারত থেকে হয় মাত্র ৬%। প্রতিযোগী বাকি ২৭টি দেশ সব মিলিয়ে হিট করে বাকি ৫০-৫২%। এই এসএমএস-এ জাল ভোট দেয়ার মওকা একমাত্র বাংলাদেশ নিয়েছে। ভারত নেয়নি। নেয়নি মালদ্বীপও। জাল ভোট দেয়ার মওকা নিয়ে একটি স্থানকে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান করা কত বড় মানসিক দৈন্যতার পরিচয় এই প্রশ্নটিই আমি বিবেকবান সব মানুষের কাছে রেখেছি। এর বেশি কিছু নয়। আমি নৈতিকতার পক্ষে আর আমি নিশ্চিত নীতির জয় অবশ্যম্ভাবী।
এই আয়োজনটার পেছেন বার্নার্ড ওয়েবার নামে এক ভদ্রলোক কাজ করলেও আইডিয়াটা ছিলো এক মাস্টার মাইন্ডের। যার নাম ফিলিপ কোটলার। এই মানুষটা এত মেধাবী যে পৃথিবীর যে কোন জিনিসকে পণ্য বানিয়ে টাকা কামাতে পারে। তালিকাভুক্ত সেভেন ওয়ান্ডার্স দুনিয়াতে অনেক আছে। কিন্তু এইটা নিয়ে কেউ পয়সা কামানোর ধান্দা করেনি। করেছে এই সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। আর তাই তার এত জাকজমক আয়োজন। নামী দামী স্টার ভাড়া করে প্রচারণা চালানো থেকে শুরু করে বিশ্বের খ্যাতনামা মিডিয়াগুলোকে পাশে নেয়া সবই করেছে এই সংগঠনটি। এমনকি আমাদের দেশের একটা মিডিয়াও এই সংগঠনের এজেন্ট। আর এইসব স্টার ও খ্যাতনামা মিডিয়া ম্যানেজ করা বার্নার্ডের পক্ষে ততটা সহজ না হলেও ফিলিপ কোটলারের জন্য ভাত মাছ।
যারা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে নীতি বিসর্জন দিয়ে অনৈতিকতার পথ অবলম্বন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে মানসিকভাবে কুলাঙ্গার এবং অপরিপক্ক হিসেবে পরিচিত করাতে উঠে পড়ে লেগেছে তাদেরকে ধিক্কার জানাই এবং যারা জাল ভোট দিয়ে সুন্দরবনের মহিমাকে ধুলিস্মাৎ করার চক্রান্ত রুখে দিতে চান তাদের অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে জানাই ধন্যবাদ জানাই সাধুবাদ ।
লেখক :ওযায়ের ইবনে ওমর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্স, এন.টি.ভি
কয়েকদিন আগে এই লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই এর বিরোধিতা করে এবং এর বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে তা দেখতে এখানে ক্লিক করুন .........
নিচে এসব যুক্তির খণ্ডন করা হয়েছে এজন্য ধন্যবাদ সামহোয়ার ব্লগের তুষার ভাইকে ............
আপনাদের মনে আছে যে একবার সারা পৃথিবীতে প্রচারণা চলেছিল, সেরা মানব নির্মিত সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের। যেখানে নাম করা কিছু জায়গা বাদ দিয়ে নতুন সপ্তাশ্চর্য ঘোষণা করা হয়েছিল? সারা পৃথিবীতে চলেছিল এক ধরনের প্রচারণা, যার মূল বাহক ছিল ইন্টারনেট। আমাদের মতো কিছু দেশে এই নিয়ে বেশ হৈচৈ হলেও , বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলি এটিকে কোন পাত্তা দেয় নাই। এই প্রতিযোগিতা বা নির্বাচনের কোন আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্যতাও কোথাও পরিলক্ষিত হয় নাই। একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক সংস্থা অনলাইন ভোটিং এর মাধ্যমে এই তালিকাটি ২০০৭ সালে প্রকাশ করে। তারা আমেরিকান আইডল এর মতো ফোন আর ইন্টারনেট ভোটিং এর মাধ্যমে যে তালিকাটি দেয় , সেখানে পিরামিড ছিল না। ব্রাজিল এর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার, তাজমহল, জর্ডানের পেট্রা, চীনের গ্রেট ওয়াল, ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচু পিচু, মেক্স্রিকোর চিচেন ইটজা এবং রোম এর কলোসিয়াম। দক্ষিন আমেরিকার তিনটি, এশিয়ার তিনটি এবং ইউরোপের একটি প্রাচীন নির্মানকে ভোটাভুটি করে আশ্চর্য বানিয়ে দিয়ে তারা সপ্তমাশ্চর্যের পুরোনো তালিকাটিকে বদলে দিতে চেষ্টা করেছিল।
এবার তাহলে দেখা যাক পুরোনো তালিকাটি কি ছিল। পুরোনো তালিকাতে ছিল দ্য কলোসাস অব রোডস, গিজার পিরামিড, ব্যাবিলনের শূণ্যোদ্যান, আলেক্স্রান্দ্রিয়ার বাতিঘর, হ্যালিকার্ণেসাস এর সমাধি, অলিম্পয়ার জিউস এর মূর্তি এবং ইফেসাসে আর্টেমিসের মন্দির। কেন নতুন তালিকার দরকার পড়লো? যুক্তি আছে। এই আশ্চর্যগুলির সবকটি এখন আর দেখা যায় না। কলোসাস তৈরী হয়েছিল ৩০৫ খ্রীষ্ট পূর্ব সালে রোডস দ্বীপে। ২২৬ বিসি তে এটা ভূমিকম্পে হাটু থেকে ভেঙ্গে যায় এবং সেভাবেই থাকে। ৬৫৪ খ্রীষ্টাব্দে এটাকে আরবরা ভেঙ্গে সিরিয়ান এক ইহুদি ব্যবসায়ীর কাছে বেচে দেয়। এটা এখন আর নেই কারন এটা ছিল ব্রোঞ্জের তৈরী । হয়তো কোন তামার পয়সার মধ্যে কিংবা ব্রোঞ্জ মেডেলে চলে গেছে তার ধাতু। আলেক্্রান্দ্রিয়ার বাতিঘর টি তৈরী হয়েছিল ৩০৫ বিসি তে এবং এটার ধ্বংসাবশেষ টিকে ছিল ১১৫৬ সাল পর্যন্ত। আবু হাজাজ আল আন্দালুসির বর্ণনায় এটার কথা পাওয়া যায়। ৯৫৬ ও ১৩০৩ সালের ভূমিকম্পে এটা ধ্বংস হয়ে যায়। ১৩২৩ সালে ইবনে বতুতা বলেছেন যে তিনি এর ধ্বংসাবশেষে প্রবেশ করতে পারেন নাই। পরে ১৪৮০ সালে এটার কিছু পাথর ব্যবহার করে সেখানে মিশরের শাসক কাতিবি একটি দুর্গ তৈরী করেন। ব্যাবিলনের শুণ্যোদ্যান আসলে ছিল কিনা এটা নিয়ে তর্ক আছে। অনেকে মনে করেন এটা শুধু কবিদের বর্ণনা। তবে যারা বলেন এটি ছিল তাদের বর্ণনা অনুযায়ী এটা আসলে ছাদের উপর করা রুফটপ গার্ডেন। এটার কোন অস্তিত্ব নেই এখন। এশিয়া মাইনরের ছোট্ট রাজ্য হ্যালিকার্নেসাসের শাসক মউসল এর কবরের উপর তার স্ত্রী রানী আর্টেমিসের বানানো স্মৃতিসৌধটিও এখন আর নেই। এর ধ্বংসাবশেষ আছে। এটির নামেই ইংরেজী মউসোলিয়াম শব্দটি এসেছে। অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তিটিও নেই। ওটা ৪৩২ বিসি তে ফিডিয়াসের বানানো ছিল। রোমান স¤্রাট ক্যালিগুলা এটাকে ভেঙ্গে রোমে নিতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি। তবে এটা পরে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটি কোন আগুন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। ফিডিয়াসের কারখানা খুজে পাওয়া গেছে যদিও। পিরামিড এখনো টিকে আছে। ইফেসাস শহরে আর্টেমিসের মন্দির বা ডায়ানার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো আছে।
যেহেতু অধিকাংশ প্রাচীন স্থাপত্য আর নেই, তাই এই তালিকাটি গ্রহনযোগ্য ছিলনা । এটি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা সেটিও খুব দীর্ঘ ছিল না। তবে এটি বেশ প্রচার পেয়েছিল, প্রধানত বিভিন্ন দেশের মানুষের আগ্রহ ও পত্র পত্রিকার কারনে। পিরামিড বাদ পড়ার পর অনেকেই এটিকে নিয়ে অসস্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। কারন এটা অস্বাভাবিক যে টিকে থাকা একটি সুপ্রাচীন স্থাপত্য হঠাৎ ব্রাজিলের রিডিমারের মতো একটি কুদর্শন ঢ্যাংগা মূর্তির কাছে বাদ হয়ে যাবে। অ্যাংকরভাট নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। অনেকে বলেছেন চীনের প্রাচীরের চেয়ে অ্যাংকরভাট অনেক বেশী দাবীদার ছিল আশ্চর্য হিসাবে ঘোষিত হবার।
কারা এই প্রতিযোগিতার আয়োজক। নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে স্ইুস চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগ্রাহক বার্ণার্ড ওয়েবার এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটার সাথে সুইস সরকারের কিছু সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়। পর্তুগালের লিসবনে তারা তাদের প্রথম প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষনা করেন ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। তারা দাবী করেন যে প্রায় ১০ কোটি ভোটার এস এম এস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় ভোট দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন ছোট ছোট দেশ এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে বিরাট আগ্রহ দেখায়। তবে এক পর্যায়ে তাজমহল কম ভোট পেয়ে বাদ হবার আশংকা দেখা দিলে ভারতে এটি নিয়ে বিরাট হৈচৈ পড়ে যায় এবং ভারতীয় মিডিয়ার আগ্রহের কারনে এই প্রতিযোগিতা হালে পানি পেয়ে যায় এবং ভারত থেকে কোটি কোটি ভোট পড়তে থাকে। জর্ডানের রানী রানিয়া নিজে প্রচারনায় নেমে পড়েন এবং সত্তর লাখ লোকের দেশ জর্ডান থেকে এক কোটি চল্লিশ লাখ ভোট পড়ে পেট্রার পক্ষে বলে ধারনা করা হয়। ব্রাজিলের ফোন কোম্পানীগুলি ফ্রী এস এম এস ও কল করতে দিয়ে তাদের রিডিমার স্ট্যাচুকে জিতিয়ে দেয়। ভারতেও একই রকম কান্ড হয়েছিল।এক জন লোকের একাধিক ভোট দেবার এবং যতখুশী ভোট দেবার ক্ষমতা থাকায় এই প্রতিযোগিতার সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শুরুতে মনোনয়ন দেবার সময় ইউনেস্কো তাদের সহযোগিতা করলেও পরে তারা ঘোষণা দিয়ে এই কাজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ইউনেস্কো থেকে বলা হয়, “এই প্রতিযোগিতা একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সাথে ইউনেস্কোর কোন সম্পর্ক নেই, এবং এটি পৃথিবীর সব ধরনের মানুষ নয়, বরং ইন্টারনেট ও ফোন ব্যবহারকারীদের মতামত মাত্র।”
প্রথম প্রতিযোগিতার পর তারা বলেছিল যে এই কাজে আয়োজকদের কোন আর্থিক লাভ হয় নাই বরং তারা এটা বিভিন্ন দাতাদের সহযোগিতায় সম্পন্ন করেছে । তবে তারা সেবার নানা রকম প্রচারণা সত্ত্ব বিক্রি করে টাকা কামিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো তারা ভোটের সংখ্যা প্রকাশ করেনি এবং টাকা পয়সার হিসাব দেবার ব্যাপারেও নিরব থেকেছ। এর পরপরই তারা শুরু করে দেয় প্রাকৃতিক আশ্চর্য নির্বাচনের প্রতিযোগিতা। শুরুতে আমাদের দেশের কক্সবাজার ও সুন্দরবন, দুটোই তালিকায় থাকলেও পরে তারা সুন্দরবনকে রেখে কক্সবাজারকে বাদ দিয়ে দেয়। অথচ প্রথমে তারা সুন্দরবনকেই বাদ দিতে চাইছিল, কারন এটি দুটি দেশে অবস্থিত এবং দুটি দেশ থেকে সরকারীভাবে যৌথ মনোনয়ন না পেলে তারা এটাকে তালিকায় রাখবে না বলে জানিয়েছিল। এটি আসলে কৌশল মাত্র। এস এম এস ও টিভি সত্ত্ব বেচতে হলে ভারত অনেক বেশী লোভনীয়, তাই ভারতকে এই খেলায় ঢোকানোটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য যদিও এই বনের মূল অংশ বাংলাদেশেরই মালিকানায় আছে।
বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশে তারা এই এস এম এস ভোটিং এর আয়োজন করছে যার ব্যবসাটা এই রকম। আমাদের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাহেব এই প্রতিযোগিতার জন্য এস এম এস পাঠানোর বিষয়ে একটি প্রেস সম্মেলন করে বলেছেন যে প্রতিটি সিম থেকে বিশ টি এসএম এস পাঠালে বাংলাদেশ একশ কোটি ভোট পাবে। মজার বিষয় হলো এই প্রতিযোগিতার আয়োজকরা ভোটের কম বেশী দিয়ে বিজয়ী নির্বাচন করেন বলে স্বীকার করেন না, ভোটের সংখ্যাও প্রকাশ করেন না। প্রতিটি এস এম এস এর জন্য খরচ হবে দুই টাকা। তাহলে সম্ভাব্য আয় ২০০ কোটি টাকা। এর থেকে ৬৮ পয়সা পাবে সেই আয়োজক সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। তার মানে মোট ৬৮ কোটি টাকা পাবে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। সরকার আবার এই এস এম এস এর জন্য ভ্যাট মাফ করে দিতে চেয়েছেন। তার মানে সরকারের ক্ষতি হবে ত্রিশ কোটি টাকা কারন প্রতিটি এস এম এস এর জন্য ভ্যাট ত্রিশ পয়সা। যে নম্বরটিতে এস এম এস পাঠাতে হবে সেই ১৬৩৩৩ নম্বরটির মালিক কে বা কারা সে বিষয়ে সরকার নিরব থেকেছেন। এই নম্বরটির মালিক যদি কোম্পানী গুলি হয় তবে তারা পাবে বাকি ১৩২ কোটি টাকা। আর যদি এই নম্বরটির মালিক হয় কোন ব্যক্তি তবে সেই ব্যক্তি এই ১৩২ কোটি টাকার অন্তত ৪০% ভাগ পাবে, যার পরিমান ৫২ কোটি আশি লাখ টাকা। আমাদের সকল মিডিয়া এটি নিয়ে নীরব থেকেছে। কেন, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এবার আমাদের প্রশ্ন কেন এই ভোটের জন্য বাংলাদেশের মানুষের এত পয়সা গুনতে হবে? সুন্দরবন দেখতে টুরিস্ট আসবে? যদি আসে তবে তারা আসবে ভারতের দিক থেকে। কারন এটি একলা আমাদের নয়, এবং ভারতের প্রচারযন্ত্র আমাদের চেয়ে অনেক বেশী পারদর্শী। লোকে যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে ভারতীয় বলে মনে করে তেমনি সুন্দরবনকেও ভারতীয় বানিয়ে দেবে ইন্ডিয়ান প্রচারযন্ত্র। এটা কোন খারাপ কিছু নয়। মিডিয়ার শক্তিতে যে এগিয়ে সে সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক। আবার ভারতের মোবাইল অপারেটররা যদি একই ভাবে ব্যবসা করেন, তবে কত টাকা যাবে এই সংগঠনের পকেটে? এই টাকা দিয়ে কি করবে এই সংগঠনটি? তারা বলেছে এই টাকা তারা বিজয়ী স্থানগুলির রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়নে দেবে। ভুলে যাবেন না প্রথম বার প্রতিযোগিতা করে তারা বলেছিল যে তারা কোন টাকা বাঁচাতে পারেনি। প্রথম প্রতিযোগিতাটি কম সময়ে শেষ করলেও এবার তারা সময় নিয়েছে প্রায় চার বছর। এর কারন তারা এবার পয়সা বানানোর নানা রকম ধান্দা বের করেছে।
মালদ্বীপ সরকার এরি মধ্যে এই প্রতিযোগিতা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করেছে। ২৪ এপ্রিল ২০১১ তাদের মন্ত্রীসভার বৈঠকে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। কারন আয়োজকরা তাদের কাছে বিরাট অংকের, প্রায় পাঁচ লক্ষ ডলার ফী দাবী করেছিল। তাদের পর্যটন মন্ত্রনালয় এটি প্রত্যাখ্যান করে কারন তারা এই প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে আস্বস্ত হতে পারে নাই। অথচ আমরা ডংকা বাজাতে শুরু করেছি। দয়া করে এই লিংকটি দেখুন।
ইন্দোনেশিয়াও এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের পর্যটন মন্ত্রনালয়কে এই আয়োজকরা পুরষ্কার বিতরনীর সকল খরচ বহন করে হোস্ট নেশন হতে চাপ দেয়। সরকার রাজী না হওয়াতে তারা কমোডো ন্যাশনাল পার্কের প্রস্তাবকারী হিসেবে মন্ত্রনালয়ের নাম কেটে দেয় এবং এটিকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের মন্ত্রী জিরো ওয়াচিক এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার ভাবমূর্তী নষ্ট করার চেষ্টার দায়ে মামলা করার কথাও বলেছেন। এই লিংকটি দেখুন । এমনকি ইন্দোনেশীয় সরকারের কাছে চেয়েছিল দশ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার। এই লিংকটি দেখুন ।
শুরুতে আমরাও না বুঝে এই কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম অনেকে। আমি নিজেও ভেবেছিলাম এতে বাংলাদেশের লাভ হবে। আসলে এতে বাংলাদেশের লাভের পরিমান অতি অল্প। কেন সেটা বুঝিয়ে বলি। প্রথমত এই সংগঠনের কোন আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা গ্রহনযোগ্যতা নেই। এর মূল অফিস সুইজারল্যান্ডে হলেও এর কোন অফিস ঠিকানা আপনি নেট এ খুঁজে পাবেন না। পাবেন স্পেনের একটি ঠিকানা। এদের ওয়েবসাইটে নিজেদের বিষয়ে এদের বক্তব্য খূবই অস্পষ্ট।
এদের অর্জিত অর্থের পরিমান কত হবে বলে আপনাদের ধারনা? যদি কেবল বাংলাদেশ ও ভারত থেকে এস এম এস আসে ২০০ কোটির বেশী তবে সারা পৃথিবী থেকে কত কোটি ভোট আসবে বলে ধারনা করছেন? এই টাকা থেকে কত অংশ তারা ব্যয় করবেন বিজয়ী দেশগুলিতে তার কোন বর্ননা নেই। উল্টা তারা টাকা চাইছেন। যেমন মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া এরি মধ্যে সরকারী ভাবে অন্তত ১৫ লক্ষ ডলারের কথা বলেছে। বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমান একশ কোটি টাকারো বেশী। বাংলাদেশ সরকার কত দিয়েছে তাদের? এটা আমরা জানি না।
এই সংগঠন না বললেও আমাদের সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ম্যানগ্রোভ বন। ইউনেস্কো একে এরি মধ্যে পৃথিবীর সম্পদ বা ওয়ার্লড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই কোথাকার কোন সংগঠন একে কি প্রথম না দ্বিতীয় বানালো তাতে কিছু আসে যায় না। পর্যটকরা এসব দেখে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন না। বরং তারা জানেন তারা কোথায় যেতে চান। তাই পিরামিড লিস্টে না থাকলেও সেটি দেখতে সকলেই যান, কিন্তু ব্রাজিলের রিডিমার দেখার জন্য নতুন করে পর্যটকের সংখ্যা বাড়েনি। যদিও রিডিমার লিস্টে প্রথম দিকে আছে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মজবুত না। সুন্দরবনে কেউ বেড়াতে আসলে তারা থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তা এবং অন্যন্য ভৌত সুবিধা দিতে এখনি হিমসিম খেতে হয়। বেসরকারী কিছু অপারেটর মূলত এই কাজটি করেন। যদি হঠাৎ অনেক পর্যটক চলে আসেন, তাদের যতœ নেবার সামর্থ্য নেই আমাদের। আমরা কি আশা করছি তারা এদেশে বেড়াতে এসে বাসে লাইন দেবার মতো লাইন দিয়ে অপেক্ষা করে সুন্দরবন দেখবেন? সুন্দর বনে অতিরিক্ত পর্যটকের আনাগোনা বনটিকে এমনিতেও ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং করবে। সিডর এর পর বনে যাতায়াত বন্ধ রাখার ফলে বনটি আবার মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে। এটি বেশী পর্যটক আসলে বিপন্ন হবে। সুন্দরবনে বিপন্ন প্রজাতি বাঘের বসবাস। অতিরিক্ত শব্দ, লোক সমাগম বাঘের প্রজননকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পর্যটকএনে বেশী পয়সা বানানোর সুযোগ এখানে নেই। পরে বন থাকবে, বাঘ থাকবে না। বনের মধ্যে অতিরিক্ত মানুষের আনাগোনা, অন্যান্য প্রানীদেরও বিরক্ত করবে।
সংগঠনটির কর্মকর্তারা দুবাই গিয়ে সেখানের একটি দ্বীপকে এই প্রতিযোগিতায় এনেছেন। তারা দেশে দেশে ঘুরছেন। মাঝে কোলকাতা থেকে কিছু ডক্টরেট দেয়া হতো। বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদক, একজন নামকরা গায়িকা, হালে একটি চ্যানেলের মালিক এরকম ডক্টরেট কিনে এনেছেন। সেভেন ওয়ান্ডার্স সংগঠনটি সেই রকম একটি সংগঠন যারা ব্যক্তিগত লাভের জণ্য প্রচারনা চালিয়ে এরি মধ্যে স্বীকৃত কিছু প্রাকৃতিক আশ্চর্যকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে পয়সা কামাচ্ছেন। এভারেস্ট, সুন্দরবন, কক্সবাজার, নায়াগ্রা কিংবা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের জন্য কি ভোটাভুটি কার প্রমান করার দরকার আছে তাদের অভিনবত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব? ভোটে বাদ পড়ে গেছে বলে কি কক্সবাজার পর্যটন তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে?
বাংলাদেশে পর্যটক আনতে হলে চাই পর্যটন মহাপরিকল্পনা। চাই পরিকল্পিত বিনিয়োগ। মালয়েশিয়ার গেনটিং বা পেনাং, সিংগাপুরের সেন্টোসায় যেভাবে পরিকল্পিত বিনিয়োগ এনে একে পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিনত করা হয়েছে , সেভাবে চেষ্টা না করে, এস এম এস পাঠিয়ে ২৩০ কোটি টাকার খেলা করে, এই হাস্যকর পুরস্কার বা প্রতিযোগিতা আমাদের কিছুই দেবে না। আমরা কেবল কক্সবাজারে যদি পর্যটনের জন্য নানা ধরনের আয়োজন, যেমন প্যারা সেইলিং, হট এয়ার বেলুন, কেবল কার, থীম পার্ক, গলফ ক্লাব, ক্যাসিনো বা অন্যান্য পর্যটন আকর্ষন গড়ে তুলতাম, তবে অতি সহজে অনেক বেশী পর্যটক পেতাম। রাজশাহী কিংবা কক্স বাজারে চাইলে বাঞ্জি জাম্পিং এবং স্কাইডাইভিং এর ব্যবস্থাও করা সম্ভব। সম্ভব ট্রেকিং, হাইকিং, সাইক্লিং, মোটর র্যালী, রেসিং ট্র্যাক, স্কুবা ডাইভিং এর ব্যবস্থা করা। চাইলে সেন্ট মার্টিন বা কুতুবদিয়াকে প্রাকৃতিক সামুদ্রিক জাদুঘরে পরিনত করা সম্ভব। আন্ডার ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম বানানো সম্ভব।
সেসব না করে, আমরা যোগ দিয়েছি পয়সা দিয়ে যত খুশী, যেমন খুশী ভোট দেবার খেলায়। এই খেলায় জেতার চাইতে হেরে যাওয়া ভালো। কারন যে ভোটে যার যত টাকা, তার তত ভোটের সম্ভাবনা, সেই ভোটে যারা অংশ নেয় তারা হয় নির্বোধ নয়তো দূর্নীতিবাজ। আসুন আমরা সবাই মিলে মালদ্বীপের মতো এই প্রতিযোগিতাকে প্রত্যাখ্যান করি। না বুঝে, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একসময় এর জন্য ক্যাম্পেইন করেছিলাম, তখন এই টাকা লেনদেন এর বিষয়টি যদিও ছিল না। আমাদের সাথে তখন জাফর ইকবাল স্যার সহ অনেক গুণীজন ছিলেন। আমার মতো নাদানি যারা করেছিলেন তাদের সবার হয়ে ক্ষমা চাইছি এবং এই লেখাটি লিখে সেই অবুঝ কাজের সামান্য দায় মোচন করার চেষ্টা করলাম।
সুত্রঃ- এখানে দেখুন
আসা রাখি আপনারা সঠিক পথ বেঁচে নিবেন ।
আমি যখন টেকটিউনসে টিউন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঠিক তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছি যে
কখনোই কপি পেষ্ট করবো না । কিন্তু আজকে আর পারলাম না !!!!!!
যদি কোন ভুল করে থাকি তবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন .........
টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ............
আমি faruq100। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 350 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
🙁