বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। তবে এই আধুনিক যুগ থেকে আমরা ধীরে ধীরে অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আর এই অত্যাধুনিক যুগে তথ্য প্রযুক্তির আরো এক ধাপ রুপান্তরিত রূপ আপনি দেখতে পাবেন। আর অদূর ভবিষ্যৎতে যেসব প্রযুক্তির স্বাদ আমরা পেতে যাচ্ছি সেটারই কিছু খবরা খবর নিয়ে আমি চলে এলাম আজকের এই টিউনটি নিয়ে। তো চলুন এক নজরে দেখে নেই আগামীতে কি কি তথ্য প্রযুক্তির চমক আসতে চলেছে:
স্মার্টফোন এবং ঘরের অনান্য স্মার্ট যন্ত্রাংশে খুব শীঘ্রই একটি নতুন ফিচার আসতে চলেছে আর তা হলো স্মার্ট ভয়েস এনালাইসিস। এটি একধরণের সফটওয়্যার যেটি আপনার মেন্টাল এবং ফিজিক্যাল হেলথ কন্ডিশনকে মনিটর করবে আপনার ভয়েসের সাউন্ডের মাধ্যমে। আপনার ভয়েসের পিচ, টোন, রিদম, রেট এবং ভলিউমকে বিশ্লেষণ করে আপনার হেলথ কন্ডিশন মনিটর করবে এই স্মার্ট ভয়েস এনালাইসিস প্রযুক্তি। বর্তমানে এটি গবেষণাগারে কয়েক লক্ষ হেলথি এবং আন হেলথি মানুষের ভয়েস নিয়ে গবেষণারত রয়েছে। ২০১২ সালে ফাউন্ডকৃত এই প্রজেক্টটি গত ৪ বছর ধরে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে ফেলেছে। এরই এটি ৩০ টির বেশি ভাষায় প্রায় ৭০০০০ এর বেশি অবস্থা ধরতে সক্ষম হয়ে পেরেছে। আর এই প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয়েছে Beyond Verbal। আর এটিকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে এটি ব্যবহার করবে ভয়েস এক্টিভেটেড সিস্টেম যেমন Alexa, Amazon Smart Home কিংবা আইফোনের Siri। তাই বলা যায় যে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা পেতে যাচ্ছি স্মার্ট ভয়েস এনালাইসিস যা আপনার স্বাস্থ্যকে ডিজিটাল ডক্টর হিসেবে সবর্দা খেয়ালে রাখতে পারবে।
এবার আপনি কনট্যাক লেন্সেই পাবেন ছবি তোলার সুযোগ, পাবেন বিল্ট ইন নাইট ভিশন সহ বিভিন্ন Augmented Vision এর সুবিধা। যা আমরা বর্তমানে হলিউডের ছায়াছবিতে কিংবা ভিডিও গেমসেই দেখে থাকি। কিন্তু বর্তমানে গুগল, স্যামসং এবং সনির কিছু টপ লেভেল রিসার্চারা কিছু সেন্সর এবং ইন্ট্রিগ্রেডেড সার্কিট নিয়ে গোপনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যেগুলো একটি কনট্যাক লেন্সে লাগানো যাবে। বর্তমানে গুগল গ্লাসে আমরা যে ফিচারগুলো পাচ্ছি তা হয়তো কয়েক বছরের মাধ্যমে গুগল লেন্সে পেয়ে যেতে পারি। এবং এরই সাথে Augmented Vision এর মাধ্যমে ফ্যান্টাসি ফিচারগুলোও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এসে পড়বে। ভাবতে পারেন এখন আর রাতের বেলায় গাড়ি চালাতে আপনাকে হেডলাইট জ্বালাতে হবে না! সীমান্তে মিলিটারীদের রাত্রের বেলায় অপারেশন চালাতে বেশি কস্ট করতে হবে না।
তবে এই ধরনের লেন্সের পরিধানে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেগুলোর উপর এখন বর্তমানে সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও লেন্সে একটিভ ব্যাটারী সেল বসালে সেটা চোখের ক্ষতি করতে পারে তাই বিজ্ঞানীরা এটারও সমাধানের জন্য গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। চোখের পানি বা কান্নারত অবস্থায় যে পানি বের হয় তা থেকে রিচার্জের সিস্টেম, সোলার এনার্জিতে লেন্স চালানোর সিস্টেম এবং চোখের মুভমেন্ট থেকে এনার্জি রিচার্জের সিস্টেমেও গবেষনা চলছে।
তবে এর বেটা সংস্করণ ইতিমধ্যে আমেরিকার মিলিটারীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন ভিশন এনহান্সমেন্ট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ক্লিন, অবজেক্ট ফোকাস ইত্যাদি কাজের জন্য মিলিটারীতে এক ধরনের লেন্স ব্যবহৃত করা হচ্ছে। মিলিটারী বা সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি এটির ব্যবহারের মাধ্যমে এখন থ্রিডি গ্লাস ছাড়াই থ্রিডি গেমিং বা থ্রিডি মুভির স্বাদ নেওয়া যাবে।
তবে এই লেন্সটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় খুবই রেয়ার এবং দামী বায়োসেন্সর যার কারণে এর দাম থাকবে আকাঁশছোয়া এবং এর সাপ্লাইয়ের পরিমাণও প্রথমদিকে অনেক কম হবে।
কখনো কি ভেবেছেন যে আপনি মনে মনে কম্পিউটারকে যা কমান্ড দিবেন সেটাই কম্পিউটার করে দেখাবে? কিংবা মনে মনে আপনি যা ভাবছেন কম্পিউটার সেটা করে দেখাচ্ছে, যা টাইপ করতে এখন আর আপনাকে কীবোর্ড চাপতে হচ্ছে না বা মুখে কোনো কিছু বলার দরকার হচ্ছে না মনে মনে যা বলছেন তাই কম্পিউটার নিজে নিজেই টাইপ করে ফেলছে?
হ্যাঁ অদূর ভবিষ্যতের আরেকটি চমকপ্রদ ফিচার যেটি আসছে তা হলো ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেইস। প্রায় এক শতাব্দির বেশি সময় ধরে এই ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেইসের উপর গবেষণা চলছে। বিষয়টি সর্বপ্রথম ডেমোস্ট্রেট করা হয় ১৯২৪ সালে আর এই শাস্ত্রের নাম রাখা হয় EEG (Electrogencephalography)। কিন্তু ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এর উপর বাস্তবিক কোনো গবেষনা চালানো হয় নি এবং ১৯৯০ এর দশকে মাত্র কয়েকটি ব্রেইন কম্পিউটার ইমপ্লেন্টস আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছিল কারণ এর জন্য যে পরিমাণের প্রযুক্তি এবং অর্থের প্রয়োজন ছিলো তা তখনকার সময়ে ছিলো না।
তবে বর্তমান যুগে এসে এই EEG টেকনোলজির সাথে সংযুক্ত কিছু পণ্যের দাম কমেছে আর আবারো এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষনা পুরোদমে চালু হয়েছে। বিশেষ করে যারা পঙ্গু এবং বিকালাঙ্গ তাদের জন্য এই প্রযুক্তি অনেক কাজে দেবে। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস এর টেকনোলজি চেয়ার এবং মনিটরের কথা মনে আছে? হ্যাঁ তার উপরই এতদিন নিরবে ব্রেইন কম্পিউটারের গবেষনা চালানো হয়ে আসছিলো। বর্তমানে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসগুলো মানুষের ব্রেইনের স্পিচ সেন্টার থেকে আগত সিগন্যালকে অনান্য ডিজিটাল ডিভাইসের সিগ্যালে রূপান্তর করতে সক্ষম। ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসের মধ্যে থাকছে একটি হেডফোন, একটি ক্যাপ এবং একটি আর্মব্যান্ড যেগুলো একসাথে কাজ করে ব্রেইনের সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করতে পারবে।
বর্তমানে ফেসবুক, গুগল এবং DARPA এই প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে হয়ে একটি non-invasive সেন্সর গবেষণা করছেন যেটি মানুষের ব্রেইনের স্পিচ সেন্টার থেকে আগত সিগন্যালকে টেক্স এ রূপান্তর করতে পারবে এবং কম্পিউটারে প্রতি মিনিটে ১০০টি শব্দ হিসেবে আউটপুট দিতে পারবে।
এর মাধ্যমে আপনি খুব শীঘ্রই গাড়ি কিংবা অনান্য যানবাহন ব্রেইনের কমান্ডের মাধ্যমেই চালাতে পারবেন, এছাড়াও মনে মনেই চিন্তা করে রান্না বান্না সেড়ে ফেলতে পারবেন এবং ভিডিও গেমসের বিভিন্ন কমান্ড এখন আপনি ব্রেইনের মাধ্যমেই চালাতে পারবেন। এছাড়াও তখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেমকে সরিয়ে দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ব্রেইনকে ব্যবহার করা হবে কারণ ফিঙ্গারপ্রিন্টের থেকে ব্রেইন স্ক্যান হচ্ছে আরো সুক্ষ একটি প্রক্রিয়া যেখানে ৯৯.৯% সিকুরিটি থাকে। এছাড়াও একজন বৃদ্ধ মানুষের ছোটবেলার স্মৃতিগুলোকে ভিডিও আকারেও ব্রেইন থেকে বের করে আনা সম্ভব হবে!
Nanobots! সাইন্স ফিকশনে এতদিন এই শব্দটি শুনে আসলেও অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবিক অর্থে এই ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট চলে আসবে। অলরেডি বর্তমানে মানুষের algae, bacteria, DNA এবং অনান্য অর্গাজম থেকে ন্যানোবটস তৈরি করা যাচ্ছে আর এর মাধ্যমে অনেক প্রযুক্তি পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে সামনের বছরগুলোতে। বর্তমানে এই ন্যানোবটসগুলোকে ডাক্তারি কাজে ব্যবহার করা হলেও আগামীতে বিভিন্ন প্রযুক্তির কাজে এগুলোকে লাগানো হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্যান্সার এবং টিউমারের দ্রুত এবং সুস্থ ভাবে ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব হবে এই ন্যানোবটস এর মাধ্যমে! ক্যান্সারের চিকিৎসা হবে কোনোদিন কি ভেবেছিলেন? হ্যাঁ ভবিষ্যতে তাও হবে। আর DNA ভিক্তিক ন্যানোবটসগুলো মানুষের শরীলে অটোমেটিক কাজ করবে একজন নার্স হিসেবে। দিনের নির্দিষ্ট সময় ন্যানোবটে থাকা ড্রাগ বা ওষুধ নিজে নিজেই আপনার শরীলের প্রয়োজনীয় স্থানে চলে যাবে। এর মাধ্যমে আপনি দ্রুত কোনো অসুখ থেকে সেরে উঠতে পারবেন এবং আপনার শরীলের Self-Healing ক্ষমতা কয়েকশ গুণে বেড়ে যাবে।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা উপভোগ করতে চলেছি 5G প্রযুক্তির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সেবা। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবীকে ডিজিটাল স্মার্ট সিটিতে রুপান্তর করা যাবে। আর বর্তমানে Google, Facebook, Qualcomm, Verizon, AT&T, Nokia এবং Samsung এই কোম্পানিগুলো ৫জির প্রতি অনেকটাই আগ্রহ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে চীন, জাপান এবং সাউথ কোরিয়া বর্তমানে এই 5G নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে রয়েছে তাই বলা যায় যে বিশ্বে প্রথম ৫জি এই দেশগুলোতেই চলে আসবে।
বলা হচ্ছে এই দেশগুলোতে ২০২০ সালের মধ্যেই ৫জি চলে আসবে। ৫জির মাধ্যমে এই শহরগুলো ডিজিটাল স্মার্ট শহরে রূপান্তর হয়ে পড়বে। যেখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বদলে অটো ড্রোন থাকবে, অটো ট্রেন, বাস এবং অনান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম থাকবে, বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন আরো সহজ এবং একটিভ থাকবে। আর এর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই উন্নত হবে যে রাস্তাঘাটে কোনো জ্যাম থাকবে না। আর মানুষের মুভমেন্ট এবং কথাবার্তা অটো মনিটর করে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো কোনো অপরাধ ঘটার আগেই সেটা রুখতে সক্ষম হবে।
5th Generation Wireless System বা 5G এ বছরের শেষের দিকেই বিশ্বের কিছু নির্দিস্ট শহরে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে। ৫জিতে থাকবে মিলিমিটার ওয়েভ ব্রান্ডস যার মাধ্যমে বর্তমান ৪জি নেট থেকে আমরা ১০ গুণ বেশি গতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সার্ভিস উপভোগ করতে পারবো।
তো এই ছিলো আজকের যত আয়োজন। অদূর ভবিষ্যতের এই টেক পণ্যগুলো আশাকরি। যেমন লেন্সে নাইট ভিশনের মাধ্যমে এখন রাত্রের বেলায় চুরি ডাকাতির সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। আপনি কি মনে করেন? টিউমেন্টে তা আমাকে জানান।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!