অ্যাপল ওয়াচ আমাদের নিত্যদিনের জীবনকে আরো সহজ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অ্যাপল ওয়াচের নতুন ফিচার GymKit বাজারে ছেড়েছে, এর মাধ্যমে অ্যাপল ওয়াচকে জীমের বিভিন্ন ডিভাইসের কানেক্ট করে আরো নিখুঁদ ডাটা ব্যবহারকারীকে প্রদশর্ন করতে পারবে অ্যাপল ওয়াচ। এই জিমকিট ফিচারটি অ্যাপল ওয়াচের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম watchOS 4 এর সাথে মানিয়ে নেবার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে অ্যাপল ওয়াচ বাজারে আসার পর বেশ বাজার মাতাতে পারলেও বর্তমানে এটি মার্কেট হারাচ্ছে বিধায় টেক জায়ান্ট অ্যাপল তাদের ওয়াচে এই নতুন ফিচারটি যুক্ত করেছে।
এ মাসের ১৪ তারিখে মুক্তিপ্রাপ্ত (নভেম্বর, ২০১৭) এই জিমকিট ফিচারের ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারীরা তাদের জীমের Treadmils, stair steppers, ellipticals, indoor bikes সহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে অ্যাপেল ওয়াচটিকে একটি ট্যাপের মাধ্যমেই কানেক্টেড করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে আরো নিখুঁদ ও একুরেট ডাটা ব্যবহার কারীকে সরবরাহ করতে পারবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে অ্যাপল ওয়াচের এই নতুন ফিচারটি শুধুমাত্র গুটিকয়েক গ্লোবাল ম্যানুফেকচারের জীম ডিভাইসের সাথেই কাজ করবে। তবে ভবিষ্যৎতে এর রেঞ্জ আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।
যারা অ্যাপল ওয়াচ সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য কিছু কথা বলে নেই। ২০১৫ সালে অ্যাপলের অনেক আগেই স্মার্ট হাতঘড়ি বাজারে নিয়ে এসেছে বেশকিছু প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা। তবে অ্যাপল ২০১৫ সালে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এর জন্য প্রতীক্ষায় ছিলেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। অন্যদের চাইতে ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার তাগিদ থেকেই সময় নিয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির অ্যাপল ওয়াচ নিয়ে এসেছিলো অ্যাপল। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে সাধারণ অ্যাপল ওয়াচ যেগুলো স্টেইনলেস স্টিল বা স্পেস ব্ল্যাক স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে থাকছে স্যাফায়ার ক্রিস্টাল আর বৈচিত্র্যময় স্টাইলিস্ট ব্যান্ড। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে অ্যাপল ওয়াচ স্পোর্ট। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে রুপালি ও ধূসর রঙের অ্যানোডাইজড অ্যালুমিনিয়াম কেসিং। সাথে থাকছে আয়ন-এক্স গ্লাস ও রঙ-বেরঙের ব্যান্ড। আর সর্বশেষ রয়েছে অ্যাপল ওয়াচ এডিশন নামে বিশেষ সংস্করণের স্মার্ট হাতঘড়ি, যেগুলো তৈরি করা হয়েছে হলুদ ও গোলাপি রঙে ১৮-ক্যারেট স্বর্ণে। এর বাকি উপকরণগুলোতেও রয়েছে ভিন্নতার ছোঁয়া। এখন পর্যন্ত বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি স্মার্ট হাতঘড়ির চেয়ে ভিন্নতর হিসেবে অ্যাপলের অভিজাত ডিজাইনের ছোঁয়া থাকছে অ্যাপল ওয়াচগুলোতে। দামের দিক থেকেও সবাইকে চমকে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছে অ্যাপল। সবচেয়ে কমদামের অ্যাপল ওয়াচ স্পোর্টসের দাম শুরু হয়েছে ৩৫০ ডলার (প্রায় ২৭ হাজার টাকা) থেকে। অন্যদিকে স্টেইনলেস স্টিল বা স্পেস ব্ল্যাক স্টিলে তৈরি অ্যাপল ওয়াচগুলোর দাম শুরু হবে ৫৫০ ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা) থেকে। আর বিশেষ সংস্করণের অ্যাপল ওয়াচ এডিশনগুলোর দাম শুরু হবে ১০ হাজার ডলার (প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা) থেকে। সর্বোচ্চ দামের অ্যাপল ওয়াচ এডিশনের দাম জানানো হয়েছে ১৭ হাজার ডলার (প্রায় সোয়া ১৩ লাখ টাকা)। মূলত আইফোনের সাথে সহযোগী ডিভাইস হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে অ্যাপল ওয়াচ। আইফোন ৫ বা এর পরের যেকোনো সংস্করণের আইফোনের সাথেই এটি ব্যবহার করা যাবে। দুইটি ভিন্ন আকারের অ্যাপল ওয়াচ তৈরি করছে অ্যাপল। এর একটির আকার ৩৮ মিলিমিটার এবং অন্যটির ৪২ মিলিমিটার। প্রথমটিতে থাকছে ২৯০ পিপিআই ডিসপ্লে এবং পরেরটিতে রয়েছে ৩০২ পিপিআই ডিসপ্লে। একবার চার্জ দিলে বিভিন্ন ধরনের ফিচার ব্যবহার করেও সারাদিন চালানো যাবে এগুলো। আর চার্জ শেষ হয়ে গেলেও সব ফিচার বন্ধ করে সাধারণ ঘড়ির ডিসপ্লেটি চালু রাখা যাবে আরও তিন দিন। এর হার্ডওয়্যারে বিশেষ ফিচার হিসেবে রাখা হয়েছে একটি ডিজিটাল ক্রাউন যা ডিসপ্লে কনটেন্টের স্ক্রলিং বা জুমিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
নেভিগেশনের কাজেও এটি ব্যবহার করা যাবে। তবে অ্যাপল ওয়াচের বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করবে এর জন্য তৈরি নানা ধরনের অ্যাপস। ইতোমধ্যেই এসব স্মার্ট হাতঘড়ির জন্য সহস্রাধিক অ্যাপস প্রস্তুত এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আরও হাজার হাজার অ্যাপস তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে অ্যাপল সিইও টিম কুক। আইফোনের কল ও মেসেজ রিসিভ করা থেকে শুরু করে রিস্ট-রেডিও হিসেবেও কাজ করবে এসব হাতঘড়ি। ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে যেকোনো অ্যাপল ডিভাইসের সাথেও এটি সংযুক্ত হতে পারবে। ছবি দেখা, মনিটর হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা ছাড়াও এতে থাকছে অ্যাপল পে মোবাইল সমর্থন। ফলে কেনাকাটায় অ্যাপল ওয়াচ দিয়েই সম্পন্ন করা যাবে পেমেন্ট। স্বাস্থ্যগত দিক মাথায় রেখে একে ফিটনেস গ্যাজেট হিসেবে ব্যবহারের সুবিধাও রেখেছে অ্যাপল। অ্যাকসেলারোমিটার, হার্ট রেট সেন্সর প্রভৃতি থাকায় স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন যে কারো জন্য অ্যাপল ওয়াচ হতে পারে নিত্যদিনের স্বাস্থ্যতথ্য সংগ্রহের সুযোগ। অ্যাপেলের তথ্যানুযায়ী, স্মার্টওয়াচের সাথে ফিটনেস মেশিনের সিঙ্কিং সিস্টেমটি টেক দুনিয়ায় এই প্রথম অ্যাপেলই নিয়ে এসেছে। তাই এক্ষেত্রে একুরেসি হচ্ছে মেইন বিষয় আর যেটি নিয়ে অ্যাপল বেশ আশাবাদি তাদের এই নতুন জীমকিট ফিচারটি নিয়ে। জীমে আর স্পিড, ডিসটেন্স, ক্যালোরি বার্নের রেজাল্ট ইত্যাদি ডাটাকে অটোমেটিক্যালে এই ফিচারের সাহায্যে আপনি অ্যাপল ওয়াচে দেখতে পারবেন।
এই বছরের শুরুতে Fitbit কে অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার কারীর দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আর অ্যাপল এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করেছে তাদের এই নতুন ফিচারটির আগমনের মাধ্যমে।
তো অ্যাপল ওয়াচের নতুন এই ফিচারটি নিয়ে আপনাদের কোনো মতামত থাকলে টিউমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!