গোটা বিশ্বেই সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই রোগ ঠেকাতে ইতিমধ্যে দেশে দেশে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে৷ সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য৷ আশা করি আপনার জানার আকাঙ্খা মিটবে।
সোয়াইন ফ্লু হচ্ছে মানব দেহের ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতোই এক ধরণের ভাইরাস যা প্রধানত শূকরের দেহে দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে৷ শূকরের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মানবদেহের সাথে বেশ মিল থাকায় এ ভাইরাসটি পাখির চেয়ে বেশি দ্রুত মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে৷ গত দশকে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল এই যে, এভিয়েন ফ্লু অর্থাৎ এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাস পাখির দেহ থেকে শূকরের দেহে আশ্রয় নিয়ে সহজেই তা মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারতো৷ তবে সৌভাগ্যবশত এমন কিছু ঘটেনি৷
সোয়াইন ফ্লু কতটা উদ্বেগের বিষয় তা এই মুহূর্তে কারো জানা নেই৷ বর্তমানে যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হচ্ছে তা এইচওয়ানএনওয়ান নামে পরিচিত৷ এটি পাখি, মানুষ এবং শূকরের ভাইরাসের সংমিশ্রণ, যা আগে কখনো দেখা যায়নি৷ সেই কারণে এটির প্রতিষেধক ব্যবহার এখনি সম্ভব হচ্ছে না৷ বিজ্ঞানীরা এখন এই ভাইরাসটির সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যসমূহ, এর সংক্রমণের লক্ষণ এবং রোগ ও মৃত্যু ঘটানোর সক্ষমতা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেন৷
১৯৫০ সাল থেকে কখনো কখনো শূকর লালন পালনকারী মানুষদের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে৷ ১৯৫৮ সাল থেকে ইউরোপে ১৭ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি সেনা ছাউনিতে ১৯৭৬ সালে ২০০ সৈন্যের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল৷ এদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং একজন মারা গিয়েছিল৷
মানবদেহের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই কাশি, হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যাথা, পেশির খিঁচুনি ইত্যাদি৷ তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে৷ সাধারণ ফ্লু-র মতোই এরাও দুই থেকে পাঁচদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে৷
হ্যাঁ, একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত এর চিকিৎসা সম্ভব৷ মেক্সিকো এবং আমেরিকায় সঠিক সময়ে চিহ্নিত রোগীদের ভাইরাস নাশক ঔষধ টামিফ্লু এবং রিলেঞ্জা দ্বারা আরোগ্য লাভ সম্ভব হয়েছে৷ তবে এসব ঔষধ এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে না পারলেও এর মারাত্মক রূপ ধারণ ঠেকাতে এবং জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে৷ আগের প্রচলিত ভাইরাস নাশক ঔষধ এ্যামানটাডিন সোয়াইন ফ্লু-এর ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না৷
মেক্সিকোতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ এটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়৷ কেননা গত শতাব্দীর ভয়াবহতম মহামারীতে ১৯১৮ সালেও ঠিক এরকমই ঘটেছিল৷ ঐ সময় ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল৷ এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হচ্ছে, সুঠাম সুস্বাস্থ্যবান যুবকদের দেহ এই ধরণের ভাইরাসের আক্রমণে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটায়৷ ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তীব্র প্রদাহ ফুসফুসে অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটায় এবং রোগী বেশ কাহিল হয়ে পড়ে৷ অবশ্য আমেরিকায় এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে সামান্য অসুস্থ শিশুদের মাঝে৷ এই দুই দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের মাধ্যমে পার্থক্যের কারণ এখনও অগোচরে রয়ে গেছে৷
এই ভাইরাস প্রতিরোধে মানবদেহে ব্যবহারের মতো কোন প্রতিষেধক নেই তবে শূকরের জন্য প্রতিষেধক রয়েছে৷ তবে এই ভাইরাসের সাথে মানবদেহের এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের বেশ মিল থাকায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক ব্যবহার করলে তা কিছুটা সুরক্ষা দেবে৷ তবে এই ভাইরাসের জন্য সাধারণ প্রতিষেধক কতটা কার্যকর হবে – এ বিষয়ে গবেষণা চলছে যার ফলাফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে৷
২০০৯ এর সোয়াইন ফ্লু মহামারী ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন এনডেমিক (Endemic) নিয়ে শুরু হয়েছে। যদিও সাধারণত একে সোয়াইন ফ্লু নামে ডাকা হয় কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এ এনডেমিক শূকরে এখন ঘটতে দেখা যায় নি। একে H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং 2009 H1N1 flu নামেও ডাকা হয়। এনিমেল হেলথ্ অর্গানিজেসন এর নাম প্রস্তাব করেছিল নর্থ আমেরিকান ইনফ্লুয়েঞ্জা। এপ্রিল ৩০, ২০০৯ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানিজেসন/WHO) এটিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা A (H1N1) নামে ডাকা শুরু করে। মনে করা হয় এ মহামারীটি ২০০৯ এর মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছে। এ যাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। দেশগুলো হল যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, ইসরাইল, নেদারল্যান্ড, চীন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া।
২০০৯ সালের মার্চে মেক্সিকোতে পাঁচ বছরের শিশু এডগার হারনানডেজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার লক্ষণগুলো ছিল জ্বর, মাথা ব্যাথা এবং গলা ব্যাথা। ডাক্তাররা তার অসুখকে সাধারন ঠান্ডা জনিত বলে চিহ্নিত করেন। পরবর্তিতে তার স্যাম্পল কানাডাতে পাঠানো হয়। সেখানে বিজ্ঞানীরা এডগারে স্যাম্পলে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খুজে পান, যেটা মূলত শূকর হতে এসেছিল (সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা)। পরিবর্তিতে দেখা যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এডগাড়ের গ্রাম লা গ্লোরিয়াতে কয়েকশত মানুষ একই লক্ষণ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
২০০৯ সালের মার্চে মেক্সিকোর দক্ষিনের রাজ্য ওক্সাকাতে ৩৯ বছর বয়স্কা তিন সন্তানের জননী এডেলা মারিয়া গুটিয়ারেজ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। এর ঠিক পাঁচদিন পর গুটিয়ারেজ মৃত্যুবরণ করে। ডাক্তার প্রথমে তার মৃত্যুর কারন নিউমোনিয়া ধারণা করলেও তার স্যাম্পল কানাডাতে পাঠান এবং সেখানে দেখা যায় গুটিয়ারেজও একই শূকর হতে আসা ইনফ্লুয়েঞ্জা দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল যা কিনা এডগারের মাঝে পাওয়া যায়।
মেক্সিকো সরকারের মতে এডেলা মারিয়া গুটিয়ারেজই সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারনে মৃত্যর প্রথম ঘটনা।
উৎস: http://www.deutsche-welle.de/dw/article/0,,4209982,00.html
(প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক)
এবং বাংলা উইকিপিডিয়া (*চিহ্নিত অংশ)
এছাড়াও কিছুটা জানতে পারবেন আমার ব্লগেআমি অলোক মিস্ত্রী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 95 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অলোক ভাই লেখাটি পড়ে ভাল লাগল, এরকম তথ্য দেওয়ার জন্য টেকটিউনসকে অনেক ধন্যবাদ। 01818086231
india te ase gese. bangladeshe aste khub deri hobe na. scientist bhaiyera ready hoia jan .
সোয়াইন ফ্লু ……!!!
5 yaktu namaz suru koira den . bola tu jai na kokhon ki hoi…..!
সময়োপযোগী একটি টিউন …… আপনাকে ধন্যবাদ!!