কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন চাহিদা শেষ নেই তেমনি কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাচ্ছেন। কম্পিউটারের বিশেষ চাহিদা বলতে আমরা এর গতিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।সম্প্রতি প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল বাজারে ছেড়েছে নতুন একটি প্রোসেসর সেটা হলো কোর আই-৯। মূলত ভিডিও গেমারস এবং গ্রাফিক্স অ্যানিমেশনে যারা কাজ করেন তাদের কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ কোর আই সিরিজের কোর আই-৯।
যেই ২০০৯ সাল থেকে মুক্তি পাবার পর ইন্টেল কোম্পানির কোর আই ৭ সিরিজের প্রসেসরগুলো দুনিয়ার ফাস্টেট প্রসেসর হিসেবে আমরা ব্যবহার করে আসছি। এবার এ বছর আমরা আরো নতুন চমক পেতে যাচ্ছি। আর তা হলো কোর আই ৯ প্রসেসর সিরিজ! ইন্টেল কোর আই ৯ এর কোরের সংখ্যা সর্বনিম্ন ১০টি থেকে সর্বোচ্চ ১৮টি কোর থাকছে।
এছাড়াও কোর আই ৯ সিরিজের সাথে ইন্টেল নতুন টাইপের প্রসেসর সিরিজ X Series এর এনাউন্সমেন্ট করেছে। আর এই এক্স সিরিজের প্রসেসরগুলোকে চালানোর আপনার নতুন সকেট LGA 2066 এর প্রয়োজন হবে, মানে হচ্ছে ইন্টের নতুন উচ্চগতি সম্পন্ন কোর আই ৯ এবং এক্স সিরিজের প্রসেসরগুলোকে ব্যবহার করার জন্য আপনার দরকার হবে নতুন টাইপের মাদারবোর্ড X299.
কোর আই ৯ সিরিজের প্রসেসরগুলো এ পর্যন্ত কালের সবথেকে দামী প্রসেসর সিরিজ হতে যাচ্ছে। ট্যাক্স ব্যাতিত ১০ কোরের কোর আই ৯ এর দাম হবে প্রায় হাজার ডলার। আর ১৮ কোরের প্রসেসরটির দাম রাখা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ডলার মানে বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ টাকার আশেপাশে। কিনবেন নাকি!
> কোর আই৯-৭৯৮৯এক্সই (এক্সট্রিম এডিশন) - ১৮টি কোর = ১৯৯৯ ডলার (১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা)
> কোর আই৯-৭৯৬০এক্স - ১৬টি কোর = ১৬৯৯ ডলার (১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা)
> কোর আই৯-৭৯৪০এক্স - ১৪টি কোর = ১৩৯৯ ডলার (১ লাখ ১৪ হাজার টাকা)
> কোর আই৯-৭৯২০এক্স - ১২টি কোর = ১১৯৯ ডলার (৯৬ হাজার টাকা)
> কোর আই৯-৭৯০০এক্স - ১০টি কোর = ৯৯৯ ডলার (৮০ হাজার টাকা)
এখন পর্যন্ত শুধু মাত্র ১০ কোর ইন্টেল কোর আই৯-৭৯০০এক্স প্রসেসরটি আমেরিকায় পাওয়া যাচ্ছে। ১৮টি কোর বিশিষ্ট প্রসেসরটি এ বছরের অক্টোবরে মুক্তি পাবার কথা রয়েছে। আর সিরিজের বাকি প্রসেসরগুলো এ বছরের শেষের দিকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাবে।
ইন্টেল তাদের এই উচ্চগতির প্রসেসরগুলো শুধুমাত্র হাই এন্ড ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য এনাউন্স করেছে। মানে আমরা শীঘ্রই এই প্রসেসরগুলোকে ল্যাপটপে দেখতে পাচ্ছি না, তার জন্য হয়তো আরো বছরখানেক বা বছরদুয়েক অপেক্ষা করতে হতে পারে। আর এই কোর এক্স সিরিজের প্রসেসরগুলোতে VR-Ready ফিচার থাকছে, মানে ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও সার্পোট সহ VR ফিচারটি আপনি এই প্রসেসরযুক্ত পিসিতে ব্যবহার করতে পারবেন!
ইন্টেলের কোর আই৯ সিরিজের প্রসেসরগুলোতে প্রসেসর এর সংখ্যা বিগত বছরগুলোর প্রসেসর লিস্টের তুলনায় বেশ বড়। প্রত্যেকটি কোর হচ্ছে এক একটি সিপিইউ। থিউরি মতে আপনি যতগুলো কোর ব্যবহার করবেন, আপনার পিসি তত দ্রুত সার্ভিস দিবে, সে হিসেবে কোর আই ৯ সিরিজ হতে যাচ্ছে দুনিয়ার ফাস্টটেস প্রসেসর!
তবে অবশ্যই, আপনি যদি কোর সমূহের পার্থক্যের মাঝে প্যাচটা বুঝে থাকেন তাহলে আপনি বুঝবেন যে ব্যাপারটা অত সহজ নয়! অনেকগুলো কোর সমূহ তখনই ইউসফুল হয় যখন পিসির সফটওয়্যার গুলো এই কোরগুলোর এডভানটেজ নিতে পারে। আর এখনকার সফটওয়্যারগুলো এই এতগুলো কোরের চাপ নিতে এখনো প্রস্তুত নয়। তবে কোর আই ৯ সিরিজ সম্পূর্ণ রুপে মুক্তি পেয়ে গেলে হয়তো তখন সফটওয়্যার নির্মাতারা কোর আই৯ এর উপযোগী করে সফটওয়্যার বানানো শুরু করবেন।
মানে বলা যায় যে, ইন্টেল কোর আই ৯ বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য হিসেবে মর্যাদা পাবে। তবে এখন শুধুমাত্র ভিডিও এডিটিং বা হেভি মাল্টি টাস্কিং এর জন্য কোর আই ৯ সিরিজের প্রসেসরগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।
কোর আই ৯ সিরিজের স্পিড বুষ্টগুলো নিচে দিয়ে দেওয়া হলো:
এক্স সিরিজের সবগুলো প্রসেসরে টার্বো বুস্ট ম্যাক্স ৩.০ টেকনোলজি থাকছে। এটি ইন্টেলের পুরাতন টার্বো বুস্ট এর উন্নত সংস্করণ হিসেবে আসছে। এই ফিচারটির সাহায্যে প্রসেসরগুলো যে কোন মুর্হূতের ফাস্টটেস দুটি প্রসেসরগুলোকে চিহ্নিত করে দুটি দরকারী ফাংশন তাদের মধ্যে চালান করে দেয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার কাজের মাঝে আসল দ্রুতগতির মজা পাবেন। উল্লেখ্য যে, আগের টার্বো বুষ্ট ফিচারে মাত্র একটি কোরকে সার্পোট করা হতো, আর এখন একসাথে দুটি কোরকে সার্পোট করা হচ্ছে।
প্রসেসর কেইচ হচ্ছে আপনার পিসিকে ফাস্ট করে দেবার জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেসিক লেভেলে এটি হচ্ছে কোর এর মেমোরী, এই ভাবে কেইচে একটি কোর অস্থায়ী ভাবে ডাটা সংরক্ষণ করে থাকে বার বার ব্যবহারের জন্য যাতে প্রসেসরটিকে বার বার কাজটি না করতে হয়। প্রসেসরে যতবেশি Cache থাকবে, প্রসেসরটি তত দ্রুত পারফরমেন্স দিতে পারবে।
ইন্টেল কোর ৯ সিরিজের প্রসেসরগুলোতে আলাদা আলাদা প্রত্যেকটি প্রসেসর এর জন্য কেইচের সাইজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আর সবগুলো প্রসেসর জন্য Shared কেইচ কমিয়ে আনা হয়েছে। ইন্টেলের ধারণা, এই পদ্ধতিতে ব্যবহারী আরো উন্নত পারফরমেন্স পাবেন।
ইন্টেল কোর আই ৯ সিরিজে দুটি নতুন হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন সার্পোট করবে যাদের মাধ্যমে স্পিড বুস্ট হবে সেই লেভেলের মারাত্বক। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনাকে এক্সট্রা টাকা খরচ করতে হবে এদের পিছনে।
ইন্টেল কোর আই ৯ সিরিজ কোয়াড চ্যানেলের ডিডিআর৪ র্যাম সার্পোট করবে যার মাধ্যমে আপনি মিনিমাম ৬৪ গিগাবাইট র্যাম আপনার পিসিতে লাগাতে পারবেন! আর সর্বোচ্চ ১২৮ গিগাবাইট র্যাম সাপোর্ট করবে এই কোয়াড চ্যালেনের র্যাম স্লটটি, আরেকটি হচ্ছে ইন্টেলের অপটেইন মেমোরী, যেটার মাধ্যমে হার্ডডিক্স ড্রাইভ (HDD) কে সলিড স্টেট ড্রাইভ (SDD) তে রুপান্তর করা যাবে।
ইন্টেল কোর আই ৯ সম্পর্কে এই বিষয়গুলোই এখন টেক মার্কেটে ট্রেন্ডিং করছে। আপনি যদি হেভি গেমার কিংবা ভিডিও প্রসেসিং লাইনে না থাকেন তাহলে আপনার জন্য এখনই কোর আই ৯ সিরিজে যাওয়ার তেমন কোনো দরকার নেই। আমাদের মতো সাধারণ আম জনতার জন্য কোর আই ৩, আই ৫ কিংবা আই ৭ ই বেটার।
কারণ নতুন চ্যানেলের ডিডিআর ৪ র্যাম, সাথে নতুন মডেলের মাদারবোর্ড এবং বেশি কোর থাকায় নতুন সিস্টেম লিকুইড কুলিং সিস্টেম সহ বেশ কিছু নতুন হার্ডওয়্যার এর দরকার হবে কোর আই ৯ সিরিজ কেনার সময় এবং ব্যবহারের সময়, সে হিসেবে ব্যাপক পরিমাণের টাকা লাগবে এই সিরিজের প্রসেসরগুলোর আসল মজা নিতে চাইলে।
কোর আই নাইন মূলত ২০৬৬ সকেটের মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে। এরকম ২০৬৬ সকেটের মাদারবোর্ডর মধ্যে আসুসের এক্স ২৯৯ই, এমএসআই য়ের এক্স ২৯৯ রেইডার বেশ জনপ্রিয়। তবে ২০৬৬ সকেট এর প্রসেসর সাপোর্ট করে এরকম যে কোন মাদারবোর্ডেই ব্যবহার করতে পারবেন কোর আই ৯ সিরিজের প্রসেসর, তবে কিছু কিছু মাদারবোর্ডের ক্ষেত্রে হয়তো বায়োসটি আপগ্রেড করা লাগতে পারে।
দেখা যাক সামনে কি হয়! আজ এ পর্যন্তই! সবাই ভালো থাকবেন!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!