আমরা জানি ব্লুটুথ হল স্বল্প দুরত্বে যেকোন তথ্য-ডাটা আদান প্রদান এর বেতার প্রযুক্তি। এই বেতার প্রযুক্তিটি প্রায় ২০ বছর ধরে আমাদের ভিতর রয়েছে। আগে আমরা এক ফোন থেকে আরেক ফোনে গান-ভিডিও,গেমস ইত্যাদি ডেটা ট্রান্সফার এর জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করতাম। সময় পাল্টেছে পরবর্তীতে এসেছে Wifi প্রযুক্তি; মোবাইল বা সমমানের ডিভাইস গুলিতে ডেটা ট্রান্সফারের এ কাজটি লুফে নিয়েছে "শেয়ারইট" এবং সমমানের অ্যাপলিকেশান। তবুও ব্লুটুথ এর চাহিদা কমেনি; ব্লুটুথ এর ব্যবহারে এসেছে নতুন দিগন্ত কিছু ওয়্যারলেস গ্যাজেটস এর কারনে। ব্লুটুথ হেডফোন বা ব্লুটুথ স্পিকার এর একটি বড় উদাহরন। তাছাড়াও ব্লুটুথ মাউস/কীবোর্ড এসব গ্যাজেটস ও ডিভাইস; ব্লুটুথকে একটি অপরিহার্য প্রযুক্তিতে পরিনত করেছে। Ericsson সবার প্রথমে এই প্রযুক্তিটি আবিষ্কার করে ১৯৯৪ সালে;তাদের মোবাইল ডিভাইস গুলোর মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারিং এর জন্য। তবে ১৯৯৮ সাল থেকে ব্লুটুথ টেকনোলজি পরিচালনা ও ডেভেলপমেন্ট করছে; Bluetooth Special Interest Group [Bluetooth SIG, inc] / [ ব্লুটুথ এসআইসি,ইনকরপোরেশন ]।
সম্প্রতি ব্লুটুথ এসআইজি ঘোষনা দিয়েছে ব্লুটুথ এর একটি নতুন সংস্করনের।এটি হবে ব্লুটুথ ৫ ওয়্যারলেস স্ট্যান্ডার্ড। এই ব্লুটুথ ৫ এসেছে অনেক ইম্প্রোভমেন্ট বা উন্নতির সাথে, আরও ব্যবহারকারী উপযোগী হয়ে; সর্বপরি ব্যাপক প্রযুক্তি বান্ধব হয়ে। এই আর্টিকেলে আমরা অন্বেষণ করছি ব্লুটুথ ৫ এর এই সকল তথ্য।
ব্লুটুথ এর সর্বশেষ প্রধান সংস্করন ছিলো ব্লুটুথ v4.0; যা মুক্তি পায় ২০১১ সালে। তারপর এর আরেকটি আপডেট আসে ২০১৪ সালে যেটি ছিল ব্লুটুথ v4.2। ব্লুটুথ ৫ এর নতুন স্পেসিফিকেশন [ব্লুটুথ এসআইজি ] কতৃক দেয়া হয়েছে। তা [ব্লুটুথ এসআইজি] এর ৩০ হাজার সদস্য কোম্পানি থেকে সম্মতিও পেয়েছে।
ব্লুটুথ ৫ এর সবচেয়ে বড় উন্নতি এর রেঞ্জ বা পরিসর। আমরা যারা এতদিন এটি ব্যবহার করেছি তারা জানি যে; এটি সামান্য কিছু দুরত্ব পর্যন্ত কার্যকর। তবে এবার ব্লুটুথ এর পরিসীমা ৪ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন বেতার মানে তাত্ত্বিকভাবে এটি ৩০০ মিটার বা ১০০০ ফুট পর্যন্ত দুরত্ব সমর্থন করবে। তবে বাস্তব জগতে বিষয়টু এত হবে না। আমরা দেখেছি বাসাবাড়িতে -অফিসে ব্লুটুথ ৪.২ [১০-১৫ মিটার] দুরত্ব পর্যন্ত কাজ করেছে। সেই হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি ব্লুটুথ ৫ [৫০-৬০ মিটার ] দুরত্ব পর্যন্ত সহজেই কাজ করবে। এর থেকে ব্লুটুথ এর সাধারন ব্যবহারগুলি আগের থেকে অনেক ভালো হবে। যেমন : আপনার ফোনে গেম খেলতে খেলতে ব্লুটুথ স্পিকারে; গান শুনতে পারবেন আরও ভালোভাবে।
ওয়্যারেবল ডিভাইস যেমন: স্মার্টওয়াচ এর ক্ষেত্রে ব্লুটুথ এর গতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আপনার হাতে যদি কোন স্মার্টওয়াচ থাকে তা আপনার ফোনের সাথে কানেক্টেড আছে এই ব্লুটুথ এর মাধ্যমে।এখন সেই ঘড়িতে আপনি যদি কোন ছবি তোলেন বা ভিডিও রেকর্ড করেন; তা আপনার ফোনে Sync করতে চাইলে; এই ব্লুটুথই ব্যবহার করতে হবে। তাই এখানে সুবিধা তত; ডেটা পারাপার স্লীড যত। এতদিন ব্লুটুত ৪.০ বা ৪.২ এর সর্বোচ্চ ডেটা পারাপার স্পীড ছিলো ১ এমবিপিএস। যেহেতু পারাপার স্পীড দ্বিগুণ করা হয়েছে; তাই এবার সর্বোচ্চ গতি থাকছে ২ এমবিপিএস। মিউজিক প্লেয়িং এক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত দেখবে।
এইকারণে এটি আগের চাইতে আরও বেশী ডাটা পারাপার করতে পারবে। তাই ব্লুটুথ ৫ এ ডেটা/তথ্য পারাপার এর ব্যান্ডউইথ আরও বাড়ানো হয়েছে।
দীর্ঘকাল আমাদের যে ধারনা ছিলো; সেটা ব্লুটুথ অন করে রাখা আছে একারনে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে। তবে ব্লুটুথ ৫ এর আগমনে এই ধারনা [ Tech Myth] আর সত্য থাকছে না। এর কমশক্তি (BLE) মডিউল এর মাধ্যমে এটি আরও কম; শক্তি সাশ্রয়ী হচ্ছে জন্ম নিচ্ছে ব্লুটুথ স্মার্ট। ব্লুটুথ ৪.২ যা ব্যাটারি খরচ করেছে তার থেকে; ২.৫ গুণ কম ব্যাটারি খরচ করবে ব্লুটুথ ৫।
এইসব ব্যাপক পরিবর্তন; দূর্ভাগ্যবশত আপনার বর্তমান ডিভাইসে এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। ব্লুটুথ ৫ তার আগের সংস্করন গুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন। তাই ব্লুটুথ ৫ ডিভাইস এখনও ব্লুটুথ ৪ ডিভাইস এর সাথে কানেক্ট করা যাবে; তবে ডেটা ট্রান্সফারিং, কমিউনিকেশন দুরত্ব হবে আগের মত। ব্লুটুথ ৫ এর সব সুবিধা পাওয়া যাবে দুটো ব্লুটুথ ৫ ডিভাইস এর ভেতর কেবলই। আপনার স্পিকার বা ফোনে থাকা ব্লুটুথ ৪ চীপ - ব্লুটুথ ৫ এ আপডেট করা যাবে না। এইজন্য বিল্ট ইন ভাবে ব্লুটুথ ৫ থাকা নতুন ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। ইতিমধ্যে গ্যালাক্সি এস ৮ এ নতুন ব্লুটুথ ৫ ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে সব বাজেটের ডিভাইসে এই নতুন বেতার প্রযুক্তি চলে আসবে।
আর্টিকেলটি কেমন লাগল ও ব্লুটুথ ৫ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? টিউমেন্টে জানান। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ইনসাআল্লাহ এভাবেই নিত্যনতুন আর্টিকেল নিয়ে নিয়মিত হাজির হতে পারব। ধন্যবাদ।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।
Nice শিক্ষনিয় টিউনস