বিশ্বব্যাপী গত শুক্রবার একযোগে ১৫০টি দেশের দুই লাখের বেশি কম্পিউটার সিস্টেম সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। নজিরবিহীন ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার আবারো একই ধরনের হামলা হয়। কিন্তু প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয় হামলার ভয়াবহতা কম ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর পর বড় দুটি সাইবার হামলা সংঘটিত হলেও ঝুঁকি এখনো কাটেনি। অর্থাত্ আবার একযোগে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালানো হতে পারে। এবার ব্যক্তিগত বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নয়; ঝুঁকিতে রয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের ওয়ানাক্রাই হামলা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর ইটি ব্যুরো।
ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের (সিইআরটি-ইন) মহাপরিচালক সঞ্জয় ভল বলেন, বিশ্ববাসী ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার দিয়ে চালানো সাইবার হামলার চূড়ান্ত ভয়াবহতা এখনো দেখেনি। এ ধরনের ম্যালওয়্যার দিয়ে চালানো হামলার ক্ষয়ক্ষতি কল্পনাকেও হার মানাতে পারে। বিশ্বব্যাপী একযোগে পরিচালিত বড় দুই হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে শিথিল করে দেখার সুযোগ নেই। ওয়ানাক্রাই হামলার পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী।
তিনি বলেন, ভারত বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বিশ্বব্যাপী একযোগে র্যানসমওয়্যার হামলা হলেও দেশটিতে এর গুরুতর প্রভাব পড়েনি। ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার দিয়ে চালানো হামলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কিন্তু এ ধরনের আরো হামলার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ র্যানসমওয়্যারটির একাধিক সংস্করণ এখনো আবির্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এগুলো যেকোনো সময় বড় সাইবার হামলার কারণ হতে পারে।
সঞ্জয় ভল বলেন, সাম্প্রতিক দুই সাইবার হামলায় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ ব্যবহারকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে গুগল নির্মিত অ্যান্ড্রয়েড। জানি না, বিপুল সংখ্যক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার হামলা চালানো হলে কী ঘটবে বা এর ক্ষয়ক্ষতি কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে। বিপুল সংখ্যক ভারতীয় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা জোরদারে প্রস্তুতি নিচ্ছে সিইআরটি-ইন।
ভারতের সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির এ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, সাইবার অপরাধীরা সর্বদাই দুই ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। কেউ জানি না, পরবর্তীতে কী ধরনের হামলা আসতে যাচ্ছে এবং এটা কবে সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত, হ্যাকাররা সাইবার হামলা চালানোর জন্য নিয়মিত কৌশল পরিবর্তন করছে।
সিইআরটির পক্ষ থেকে প্রথম হামলার পর পরই ভারতীয় ব্যাংক, বিদ্যুত্ সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ, এভিয়েশন নেটওয়ার্ক ও রেলওয়েসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরবর্তী হামলা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করায় বিশ্বব্যাপী অসংখ্য দেশ ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হলেও ভারত বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে সমর্থ হয়েছে।
সঞ্জয় ভল বলেন, সিইআরটি-ইনের ওয়েবসাইটে এরই মধ্যে র্যানসমওয়্যার হামলা ঠেকাতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সিটির ফেসবুক পেজ ও টুইটার অ্যাকাউন্টেও সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সিইআরটি-ইনের তথ্যমতে, বুধবার পর্যন্ত ভারতজুড়ে ৮৫টি কম্পিউটার ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার হামলায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি খাত-সংশ্লিষ্টদের দাবি, ব্যাংকিং, খুচরা বিক্রয় এবং উত্পাদন খাতের ৪০ হাজার কম্পিউটার বড় দুই সাইবার হামলায় আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, র্যানসমওয়্যার এমন এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার, যার আক্রমণে প্রথমে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ফাইল লক হয়ে যায় এবং মনিটরে একটি বার্তা ভেসে ওঠে। এতে প্রয়োজনীয় ডাটা বা ফাইল ফিরে পাওয়ার জন্য অর্থ দাবি করা হয়। হ্যাকারদের চাহিদা মাফিক অর্থ পরিশোধ করা হলে ডাটা ফেরত দেয়া হয়।
বড় পরিসরের দুই সাইবার হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, তাইওয়ান ও রাশিয়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাইবার অপরাধীরা ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে একযোগে হামলা চালায়।
সূত্র: বণিক বার্তা
আমি মোঃ ফাহাদ হোসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।