আমি ২০০৭ সাল থেকে অনলাইনে কাজ করছি। কাজ শুরুর সময় থেকেই আমি আমার ব্লগে আমার অনলাইন কাজের ব্যাপারে লিখতে থাকি। এই বিষয়ে আমি যে প্রথম ব্লগটা লেখি তার নাম ছিল ব্লগকরি ডট কম। আমার লক্ষ ছিল এই ব্লগের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অনলাইন কাজে আগ্রহী করে তোলা।
২০০৮ সাল থেকে আমি অনলাইনে ওয়েব ডিজাইন শিখাতে থাকি। আমার প্রথম স্টুডেন্ট ছিলেন সুইজারল্যান্ডের একজন পাবলিক রিলেশন প্রফেশনাল। আমি উনাকে স্কাইপির মাধ্যমে অনলাইনে কোচিং দিয়েছি। সম্মানি সূচক তিনি আমাকে ১৫ ইউরো প্রতি ঘন্টা হিসেবে দিয়েছেন।
এরপর থেকে আমি ইউটিউবে আর আমার ওয়েবসাইটে অনলাইন কাজ, যেমন ওয়েব ডিজাইন আর ইন্টারনেট মার্কেটিং শিখাতে থাকি।
বাংলাদেশ থেকে আমি প্রচুর মেসেজ আর ইমেইল পাই তাদেরকে কাজ শিখানোর জন্য, কিন্তু কখনোই একটা বাস্তব স্কুল খুলার আগ্রহ হয়নি আমার। ডেভসটিম ইন্সটিটিউট থেকেও একবার একটা অফার পাই একটা কোর্স পরিচালনা করার জন্য, কিন্তু সেটা আমি প্রত্যাখ্যান করি।
এর কারন হল, যে সময় আর শ্রমটা ব্যয় হবে বাস্তব একাডেমীতে, তার চেয়ে আরো কম সময় ব্যয় করে আমি অনলাইনে শিখিয়ে আরো অনেক টাকা আয় করতে পারবো। তাই কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য বাস্তব একাডেমীকে আমি কখনোই গুরুত্ব দেইনি।
ইউডেমি নামের একটা একাডেমীর আমি খোজ পাই যেখানে টিচার-রা অনলাইন কোর্স তৈরী করতে পারেন। আমি সেখানে কয়েকটি বেসিক কোর্স পাবলিশ করি আর অল্প সময়ে অনেক স্টুডেন্ট পেয়ে যাই। বর্তমানে এখানে আমার ১১৯ টা দেশের প্রায় ৪,০০০ স্টুডেন্ট রয়েছে। কারো কারো মতে আমি বাংলাদেশের প্রথম ইউডেমি ইন্সট্রাকটর।
এরপর আমি আরেকটা অনলাইন একডেমী কিউরিয়াসে (Curious) কোর্স করানোর অফার পাই। বর্তমানে আমি আমার অনলাইন একাডেমী, ইয়টিউব, ইউডেমি, কিউরিয়াস আর পার্সোনালি স্কাইপিতে ঘরে বসে অনলাইনের কাজ শিখাই।
তবে আয়রনিকালি, আমি যে আমার দেশের মানুষকে শিখানো আর তাদেরকে অনলাইন এ আত্বনির্ভরশীল করতে চেয়েছিলাম, সেটা আর হল না। এর কতগুলো কারন হচ্ছেঃ-
১) অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসরের অভাবঃ পেপাল বা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের অভাবে আগ্রহী স্টুডেন্টরা আমার কোর্সগুলো গ্রহন করতে পারছে না।
২) হাই স্পীড ইন্টারনেটের অভাবঃ দেশে সবার কাছে এখনো হাই স্পীড ইন্টারনেট নেই, যাদের মোবাইল ইন্টারনেট আছে তাদের ডাটা লিমিটেড, একারনে ভিডিও কোর্স স্বাচ্ছন্দে দেখতে পারছে না।
৩) অনলাইন ট্রেনিং এখনো জনপ্রিয় নাঃ এতগুলো বছরে আমি যা জানতে পারলাম, তা হল আমাদের দেশের মানুষ এখনো অনলাইন ট্রেনিং এর জন্য তৈরী হয়নি।
ঢাকা শহরে দীর্ঘ ২২ বছর থাকার পর, একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকার বাইরে চলে যাবার। ঢাকা ছাড়ার মূল কারন হল এখানের মানুষের ভীড়। যারা ঢাকা থাকেন অথবা সম্প্রতি গিয়েছেন, তারা জানেন যে ঢাকা শহরটা এখন কত ব্যাস্ত।এতে ঢাকা শহর বা তার মানুষের কোন দোষ নেই, দোষ হল সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক করে ফেলা।
আমি যেহেতু অনলাইনে কাজ করি তাই আমার দরকার শুধুমাত্র বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট। তাই আমি খুব সহজেই ব্যস্ত নগরী থেকে একটা নিরিবিলি যায়গায় আসতে পারলাম।
ঢাকার বাইরে অনেক যায়গার মধ্যে থেকে আমি সিলেটের হবিগঞ্জকে বেছে নিলাম কয়েকটা কারনে-
১) ঢাকা থেকে খুব কাছে, মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার বাস জার্নি
২) পাহাড় পর্বত, চা-বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে
৩) হবিগঞ্জ টাউন অনেক উন্নত আবার সিলেটের মত এত ব্যস্ত না
৪) হবিগঞ্জের কাছেই আমার আত্বীয়ের বাড়ি
এখানে আসার পর আমার অফিস সেটাপ করার পরপরই আমার মামা আমাকে এখানে একটা একাডেমী খুলার জন্য আমার কাছে আবদার করলেন। বলে রাখা ভাল, আমার এই মামা এ-এইচ-এম শিবলী খান ২০০৯ সালে আমার কাছ থেকে অনলাইন কাজ শিখে গেছেন এবং সেই সময়েই আমাকে তিনি এই প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন যেটা আমি প্রত্যাখ্যান করি।
এইবার মামার কথাটা আমি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম।
আমার অনেকদিনের স্বপ্ন আমি আমার দেশের মানুষকে হাতে কলমে কিছু কাজ শিখিয়ে দেব। এখানে যদি একাডেমী করি তাহলে বাসা থেকে খুব কাছে হবে আর ঢাকা শহরের মত ঘন্টার পর ঘন্টা কালো ধোয়া খেতে হবে না।
কিন্তু আগে তো আমার জনমত যাচাই করতে হবে!
আমি আমার পার্সোনাল ফেসবুক প্রোফাইলে কথাটা জানালাম। একই সাথে আমি স্থানীয়ভাবে অনেকের সাথে কথা বললাম। আমার এই এসিড টেস্টটা পজিটিভ হল আর জানতে পারলাম যে হবিগঞ্জে অনেক স্টুডেন্ট আছে যারা অনলাইনে কাজ করতে চান কিন্তু এখানে এরকম কোন একাডেমী না থাকায় তাদেরকে ঢাকা যেতে হয়। এ কারনে হবিগঞ্জ শহরটি অনলাইন কাজ, ই-কমার্স আর ইন্টারনেটে অনেক পিছিয়ে আছে।
তাই শুরু করে দিলাম হবিগঞ্জে একটি ভাল মানের একাডেমী খুলার অভিযান, Tamal Anwar’s Academy তমাল আনোয়ার’স একাডেমী। এ ব্যপারে যখন আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্রফেশনালদের গ্রূপে শেয়ার করি তখন দেশের অনেক বড় বড় অনলাইন মার্কেটারেরা আমার উদ্যোগের জন্য আমাকে শুভেচ্ছা জানান।
একাডেমীর সব আপডেট আমি আমার ওয়েবসাইট আর ফেসবুক পেজে শেয়ার করছি। আপনাদের মধ্যে যারা আমার একাডেমীর ব্যপারে আপডেট নিতে চান তারা ফেসবুকে খুজলে পাবেনঃ- Tamal Anwar’s Academy.
~সবার কাছ থেকে সহযোগীতা কামনা করছি
আমি তমাল আনোয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Habiganj kun jaygai achen apni ??? / ami Habiganj ‘er chele,