ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস, ভাইরাস তাড়ায় না, পোষে!

টিউন বিভাগ অ্যান্টিভাইরাস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

‘ফ্রি’ শব্দটা যে ঠিক কোন শব্দের সাথে বোনাস হিসেবে এলো- অনেক খুঁজেও তা পাইনি, বরং একজনের টিউমেন্ট পেলাম যে মাগনা’র গরুর দাঁত নেই! বলার অপেক্ষা রাখে না, টিউমেন্টকারী কিছু একটা ফ্রি’তে পেলেও ‘জাতের’ পাননি বলেই তার এতো ক্ষোভ। বলছিলাম- এন্টিভাইরাসের কথা। তিন ডব্লিউ’র জগতে ঢুকলেই আপনি পাবেন হাজারো নামী-বেনামী ফ্রি এন্টিভাইরাস. কিন্তু, কথা হচ্ছে এগুলো কতোটুকু নিরাপদ?

অন্যরা নগদ টাকায় এন্টিভাইরাস কিনে যা যা সুবিধা পান, মোবাইল ফোন কোম্পানির দেয়া ‘ফ্রি এমবি’ ব্যবহার করে এন্টিভাইরাসও ফ্রি’তে নামিয়ে সেই একই সুবিধা আমিও পাবো- আধুনিক যুগে এসে এটা ভাবছি মানেই তো আমি বোকার স্বর্গে বাস করছি!

ভাই, এ সময়, যখন ১০ টাকার চিপসের প্যাকেটে ১০টা আলুর ছিলকাও পাওয়া যায় না কিংবা রিকশায় উঠে নেমে গেলেও অন্তত ২০ টাকা ভাড়া দেয়া লাগে তখন একটি পয়সাও খরচ না করে ৫০০-৭০০ টাকায় যারা এন্টিভাইরাস কিনে তাদের সমান সুবিধা পাওয়ার আশা ‘ক্যামনে’ করেন?

বাদ দিন সমান সুবিধা’র কথা – আগে বলুন কখনো পরীক্ষা করে দেখেছেন কি আদৌ এসব ফ্রি এন্টিভাইরাস ম্যালওয়্যার ধরতে পারে কি না বা নিয়মিত আপডেট হয় কি না; ধরুন- ঘরের ইঁদুরের মতো এই এন্টিভাইরাস উল্টো আপনার কম্পিউটারের কোনো ক্ষতি করলো, সেক্ষেত্রে কার কাছে তার সমাধান চাইবেন? অভিযোগ জানাতে কাস্টমার কেয়ার বা তাদের কোনো রিপ্রেজেন্টেটিভ খুঁজে পাবেন কি! এছাড়াও, নেটে সংযুক্ত হলেই যে কিছুক্ষণ পর পর এই এন্টিভাইরাস তার পেইড ভার্সন কেনার জন্য বিজ্ঞাপণ দেখায় এবং তা না করা হলে আস্তে করে সার্ভিস দেয়া বন্ধ করে দেয় – তার কী করবেন?

worm_chomping_on_computer_hg_wht

 

‘ফ্রি’ না ‘ফি (মাশুল)’ গুনছেন?

নেহায়েত মানবসেবার জন্য ট্রাস্ট খুলে না বসলে কেউ কাউকে যেখানে ফ্রি’তে অ্যাডভাইসও দেয় না সেখানে এন্টিভাইরাস কোম্পানিগুলো আপনাকে-আমাকে বিনে পয়সায় তাদের প্রোডাক্ট দিচ্ছে – কখনো ভেবে দেখেছেন কি এটা তারা কেন করে? আসলে, আখেরে লাভটা তাদেরই!

লাভটা কী- সে কথা বলছি পরে, তার আগে বলি ফ্রি আর ফি দিয়ে নেয়া এন্টিভাইরাসের পার্থক্যঃ

ইউজার ইন্টারফেস

একটি প্রোগ্রামের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তার নির্ধারিত কাঠামো অর্থাৎ সেই অ্যাপ্লিকেশনটি চালানোমাত্র যে উইন্ডোটি আসে তা দিয়ে। সহজ কথায় এটাকেই বলে ইউজার ইন্টারফেস। দেখা গেছে যে প্রোগ্রামের ইউজার ইন্টারফেস যতো সহজ তা ততো কাজের হয়, মানে ব্যবহার করা ততো সুবিধের হয়।

সাধারণত ফ্রি এন্টিভাইরাসগুলোর ইউজার ইন্টারফেস কিছুটা জটিল হয়, কিন্তু, পেইড ভার্সনেরটা (যার ছবি আপনাকে রোজ অ্যাপ্লিকেশন চালু করামাত্র বিজ্ঞাপণে দেখানো হয়) সহজ-সরল। আর, এটাই আপনাকে উৎসাহিত করে (কিংবা নিয়মিত প্যারা দেয়) পেইড ভার্সনটি নিতে। এখানেই আমাদের আপত্তি - ভালো জিনিস দিলে পয়সা নিয়ে প্রথমেই দাও, কেন ফ্রি’র নামে হেনস্থা করা!

protection-from-computer-virus

 

কার্যক্ষমতা

আমাদের আজকের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। ফ্রি হোক আর পেইড হোক- আগে তো জানতে হবে কোনটা কতোটুকু কাজের আর কোনটা কেবল শো-অফ! চলুন, দেখি পিসি ওয়ার্ল্ডের একটি সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফলাফল।

(উল্লেখ্য, বিভিন্ন এন্টিভাইরাসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য একই ম্যালওয়্যারে একই কোম্পানির একই ভার্সনের ফ্রি এবং পেইড ভার্সন একই সময় ব্যবহার করা হয়েছে। )

সিগনেচার-ভিত্তিক ভাইরাস অনুসন্ধানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পেইড ভার্সনের তুলনায় ফ্রি ভার্সনের পার্ফরম্যান্স অনেক কম। এছাড়া, বিভিন্ন এন্টিভাইরাসের ফ্রি ভার্সনের তুলনায় সবচে পিছিয়ে আছে পান্ডা। হালের ক্রেজ নায়লা নাইম যতোই ‘ছোট ভল্লুক’ নিয়ে নর্তন-কুঁদন করুক না কেন - পান্ডা ক্লাউড এন্টিভাইরাসের প্রো ভার্সনের তুলনায় ফ্রি ভার্সনের ফলাফল ছিল অতিশয় জঘন্য।

আসলে, টাকা সত্যিই কথা বলে. দেখুন না- মোটামুটি সব এন্টিভাইরাসেরই পেইড ভার্সন শতকরা ৯৬.২ ভাগ ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে পারে অনায়াসে, অথচ সেসবের ফ্রি ভার্সনের ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় তার হার! এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে ফ্রি এন্টিভাইরাসসমূহের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থতার গড় হার ১৫.২ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, শনাক্তকৃত ভাইরাস মুছে ফেলার ক্ষেত্রে এ ব্যবধান আরও ভয়াবহ।

যে কোনো পেইড এন্টিভাইরাসে ম্যালওয়্যার অপসারণের হার যেখানে গড়ে ৭৪ শতাংশ, ফ্রি এন্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩৪ শতাংশ!

তাই, ইতি’র আগেই ইতি টানা হলে এখানেই বলছি- আজই আনইনস্টল করুন আপনার তথাকথিত ফ্রি এন্টিভাইরাস।

computer-virus

গতি

দেখা গেছে যেসব এন্টিভাইরাসের পেইড আর ফ্রি – দু’টি ভার্সন আছে, রহস্যজনকভাবে তাদের ফ্রি ভার্সন কেন যেন খুব স্লো! স্ক্যানিং থেকে শুরু করে কপি-পেস্ট পর্যন্ত সব কাজই এতে কেমন যেন থমকে যায়।

বোধহয় এ থেকেই এসেছে সেই চিরায়ত ডায়লগ ‘এন্টিভাইরাস লাগালে পিসি স্লো হয়ে যায়’। তাই, আমরা বলি কি, ফ্রি এন্টিভাইরাস মুছে ফেলে দেখেশুনে একটি পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন - দেখবেন পিসি দৌড়াবে!

সুবিধার স্বল্পতা

ফ্রি এন্টিভাইরাসে আপনি নামকাওয়াস্থে শুধু ভাইরাস আছে কি না স্রেফ এটা চেক করতে পারলেও বাদবাকি সব বিষয়েই লবডংকা। উদাহরণস্বরূপ পেইড এন্টিভাইরাসে আপনি ভাইরাস চেক-মুছে দেয়া ছাড়াও আপনি আরও অনেক সুবিধা পাবেন, যেমন নিয়মিত ও সম্পূর্ণ আপডেট সুবিধা, সফটওয়্যার মেইন্টেইনেন্স সুবিধা, যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যায় সাপোর্ট, কোনো কারণে ডিভাইস হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে ট্র্যাকিং করার সুযোগ ইত্যাদি – যা ফ্রি এন্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে কখনোই পাবেন না।

এছাড়াও, কিছু ফ্রি এন্টিভাইরাসে তার পেইড ভার্সন কেনার জন্য বারবার বিজ্ঞাপণ দেয়া এবং না কেনা হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেবা বন্ধ করে দেয়া’র কথাও পাওয়া গেছে ইউজারদের রিভিউতে – এটা গাছে তুলে মই সরিয়ে দেয়ার মতোই। কারণ- কিছু শনাক্তকৃত ভাইরাসকে আবদ্ধ রেখে হুট করে যদি আবার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেক্ষেত্রে ফলাফল আরও বেশি বিপদজনক হতে পারে।

grandma-finds-the-internet-meme-generator-antivirus-i-ve-already-had-the-polio-vaccine-4ec1ba

আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নিরাপদ রাখতে এন্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই। তাই বলে আবার ফ্রি’তে আবর্জনা দিয়ে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ভরানোও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নগদ টাকায় এন্টিভাইরাস কিনুন, দেখবেন টাকাই কথা বলবে!

এন্টিভাইরাস কী? ইহা ভাইরাস ‘খায়’ না ‘মারে’? ছাড়াও আগের অন্যান্য টিউনে চোখ বুলিয়ে নিতে ও প্রকশিত হওয়ামাত্র নতুন টেক সমাধান পেতে টিউনে ‘জোসস’ দিয়ে ও টেকটিউনসে ফলো করে সংযুক্ত থাকুন আমাদের টেকটিউনস পেইজে।

Level 0

আমি টেক সমাধান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 36 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Give way e madhome je gula pai Se gula kamon.

ami jodi paid antivirus free te pai, mane hocche free antivirus download kore free te download kora serial key diye activate kori taholeo to prob nai?

    Regular system-a apni jokhon kono software-er serial key deben, apnake bolbe na ‘antivirus bondho koren, net disconnect koren…’ kintu fake seriaal key input deyar agey apnake sheshob korte bole – tar mane ektai eshobeo vejal ache!

দারুন লিখেছেন, সিরিয়াস্লি

    অনেক ধন্যবাদ বস, আপনাদের মতো সিরিয়াস রিডারদের পাশে পাচ্ছি – অনেক ভাল্লাগছে

100# tik

Eset chalaitachi 3bochor dhoira. pc te virus aj porjonto dhukte dei nai. Mbam, eset smart. zemena antilogger ar usb guard pro use kori. ay virus ay. dekhi kivabe amare jalas.

    Vai, kichu kichu khetre free antivirus apnar pc’r virus information lukiye rakhe apnar kach thekei – ek shomoy na ekshomoy sheta prokash pabei, tokhon thik-e tader paid version apnake nite hobe. Majher shomoytay bonus hishebe apnar usage information plus habijabi gain hoy.

Level New

ভাই আমি Avast internet security ব্যবহার করি Tech tunes থেকে পাওয়া লাইসেন্স দিয়ে, নিয়মিত update হয়। আমার পিসি কি সুরক্ষিত?

    উপরে আশিকুর রহমান ভাইও প্রায় একই প্রশ্ন করেছিলেন যদিও… কিছু কিছু এন্টিভাইরাস আসলে আপনার কাছ থেকে আপনার পিসি’র ভাইরাস ইনফর্মেশন লুকিয়ে রাখে যেন আপনি ‘হতাশ’ না হন – তবে, এতে তাদের লসের কিছুই নেই… একসময় না একসময় তো আপনাকে তাদের সফটওয়্যারের পেইড ভার্সন নিতেই হবে! আর, মাঝের সময়টায় আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিটসহ বিভিন্ন তথ্যাদি তারা বিনামূল্যে পাচ্ছে, এটাই বা কম কি!

    তাই, শুরু থেকেই পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত।

ভাই Surya আপনার কমেন্ট টা দেখেই লিখছি- আমিও বছর তিনেক আগে এটা ব্যবহার করতাম, কিন্তু সেই সময় আমার হার্ড ডিস্ক টা crash করে গেল , পরে বুঝলাম virus ছিল, এখন quick heal internet security ব্যবহার করি। আমরা ১০ জন বন্ধুরা মিলে 10 user pack কিনি , অনেক কম খরচ হয়। সবসময় পেড ভার্সন ব্যবহার করুন, আপনি ও আপনার pc বা laptop ভাল থাকবে, ধন্যবাদ।

    আমরাও সেটাই বলি দাদা… জল যেহেতু খেতেই হবে – ঘোলা হতে দেবার কোনো মানে নেই!

দারুন লিখেছেন ভাই……………………।

    আপনি যে সময় নিয়ে পড়লেন – এটা আরও বেশি দারুণ ভাই!

Bitdefender Total Security 2016 / Kaspersky Total Security 2016 কোনটা ভালো হবে ভাইয়া 😀