জোনাথন সুইফট কি ডিমোস আর ফোবস এর মূল আবিষ্কারক?

টিউন বিভাগ খবর
প্রকাশিত

অ্যামেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আসফ হল ১৮৭৭ সালের ১১ আগষ্ট রাতে  মঙ্গল গ্রহের ছোট চাঁদ ডিমোস আবিষ্কার করেন। তার ছয় রাত পর ১৭ আগষ্ট আবিষ্কার করেন বড় চাঁদ ফোবস। কিন্তু ১৭২৬ সালে প্রকাশিত গালিভার্স ট্রাভেলস এর ৩য় খণ্ডের ভয়েজ টু লাপুটায় মঙ্গল এবং তার উপগ্রহ দুইটির বর্ণনা আছে। তা হলে জোনাথন সুইফট কি ডিমোস আর ফোবস এর মূল আবিষ্কারক ?

Travels into Several Remote Nations of the World. In Four Parts. By Lemuel Gulliver, First a Surgeon, and then a Captain of Several Ships বইটির ৩য় খণ্ড A Voyage to Laputa, Balnibarbi, Luggnagg, Glubbdubdrib, and Japan এর ৩য় পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে- লাপুটার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দুটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছেন যারা মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে।মঙ্গল গ্রহের যে ব্যাস তার থেকে ৩ গুণ দূরত্বে থেকে বড়টি এবং বাইরের উপগ্রহটি ৫গুণ দূরত্বে থেকে মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করছে।প্রথমটি মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ১০ ঘন্টা আর দ্বিতীয়টি অর্থাৎ বাইরেরটি সময় নেয় সাড়ে একুশ ঘন্টা। এই সময়ের বর্গমূল হিসাব করলে মহাকর্ষ শক্তি যে সর্বত্র নির্দিষ্ট তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

[ স্যার আইজাক নিউটন ১৬৮৭ সালে ফিলোসোফিয়া নেচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকায় মহাকর্ষ সূত্র ব্যাখ্যা করেন।এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক, এদের মধ্যবর্তী দুরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।]

জোনাথন সুইফট ছিলেন প্রাবন্ধিক,ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা লেখক, ধর্মযাজক এবং রাজনীতিক। তিনি গণিতবিদ কিংবা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন না। তা হলে অত আগে তিনি জানলেন কিভাবে মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ আছে ? সম্ভবত তিনি ইয়োহানেস কেপলার এর গ্রহীয় গতিতত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানে কেপলারের গ্রহীয় গতিসূত্র (ইংরেজি ভাষায়: Kepler’s laws of planetary motion) সূর্যের চারদিকে গ্রহগুলোর গতি ব্যাখ্যা করে। অবশ্য যেকোন তারার চারপাশে গ্রহের আবর্তন বা আরও সাধারণভাবে যেকোন বস্তুর চারপাশে আরেকটি বস্তুর ঘূর্ণন ব্যাখ্যার কাজে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিখ্যাত জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইয়োহানেস কেপলার- গ্রহের গতির তিনটি সূত্র দিয়েছিলেন-

১. প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথ একটি উপবৃত্ত সূর্য যার একটি ফোকাসে অবস্থিত।

২. সূর্য এবং একটি গ্রহকে সংযোগকারী রেখা গ্রহের আবর্তনের সাথে সাথে সমান সময়ে সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।

৩. একটি গ্রহের কক্ষীয় পর্যায়কালের বর্গ তার কক্ষপথের পরাক্ষের ঘনফলের সমানুপাতিক।

[ আইজাক নিউটনের অভিকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কারে কেপলারের সূত্র প্রভাবকের কাজ করেছিল ]

মঙ্গল হতে ফোবস এবং ডিমোস এর দূরত্ব মঙ্গলের ব্যাসের ১.৪ গুণ (লাপুটিয়ানদের মতে ৩ গুণ) এবং ৩.৫ গুণ(লাপুটিয়ানদের মতে ৫ গুণ) এবং তাদের মঙ্গলকে আবর্তনের সময় যথাক্রমে ৭.৬ ঘন্টা (লাপুটিয়ানদের মতে দশ ঘন্টা) এবং ৩০.৩ ঘন্টা(লাপুটিয়ানদের মতে সাড়ে একুশ ঘন্টা)।

সোভিয়েত নভোযান প্রকৌশলী ভি জি পারমিনভ এর ধারণা জোনাথন সুইফট হয়তো মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের ফেলে যাওয়া কোন নথিপত্র পাঠোদ্ধার করেছিলেন। এ কথা তিনি ১৯৯৯ সালে নাসা কর্তৃক প্রকাশিত The Difficult Road to Mars (http://history.nasa.gov/monograph15.pdf) গ্রন্থে বলেছেন। যাই হোক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা তিনি সাধারণ যুক্তিবুদ্ধি প্রয়োগ করেছিলেন। বুধ এবং শুক্রের কোন উপগ্রহ নাই।পৃথিবীর একটি আর বৃহস্পতির চারটি উপ গ্রহ (সুইফটের সময় ৪টিই আবিষ্কৃত হয়েছিল)। সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে (analogy) তো মঙ্গলের উপগ্রহ দুইটাই হবে। যে হেতু আবিষ্কার হয়নি সেহেতু তারা আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং মঙ্গলের খুব নিকটে। এ থেকেই দূরত্ব এবং আবর্তনের সময় অনুমান যা মোটামুটি ঠিক। গাণিতিক হিসাব নিকাশ করতে সুইফট সম্ভবত তাঁর বন্ধু গণিতবিদ জন আরবাথনট (স্কটিশ ডাক্তার, স্যাটায়ারিস্ট এবং রাজনিতীক) এর সহায়তা নিয়েছেন।

১৭৫০ সালে ভলটেয়ার মাইক্রোমেগাস নামে একটি গল্প লেখেন যাতে মঙ্গল হতে পৃথিবীতে এলিয়েনরা আসে।গল্পটিতে মঙ্গলের দুইটি উপগ্রহের উল্লেখ রয়েছে।ভলটেয়ার সম্ভবত সুইফটের লেখায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। জোনাথন সুইফট এবং ভলটেয়ারের অনুমানকে সম্মান জানিয়ে ডিমোস এর দুটি ক্র্যাটারের নামকরণ করা হয়েছে সুইফট এবং ভলটেয়ার।

ডিমোস এবং ফোবস সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

আসফ হল ১৮৭৭ সালের আগষ্টের এক রাতে মঙ্গল গ্রহের চাঁদ আবিষ্কার করতে গিয়ে হতাশায় হাল ছেড়ে দিচ্ছিলেন কিন্তু তাঁর স্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনা উৎসাহ দিতে থাকেন।পরের রাতে আবিষ্কার হল ডিমোস, ছয়রাত পরে ফোবস।

মেরিনার ৯ অভিযানে ফোবস-এ একটি ক্রেটার আবিষ্কৃত হয়।যা ১০ কিমি চওড়া। অ্যাঞ্জেলিনার কুমারি নাম অনুসারে এর নাম করণ করা হয়ঃ স্টিকনি

হল গ্রীক যুদ্ধের দেবতা অরেস এর দুই পুত্র ফোবস (fear or panic) আর ডিমোস অর্থাৎ flight (as in running away after an overwhelming defeat. প্রসঙ্গত উল্লেখ্য- রক্তের মত লাল রঙের কারণে রোমান যুদ্ধ দেবতার নাম অনুসারে গ্রহটির নাম Mars বা মার্স।

প্রতি ১০০ বছরে ফোবস ১.৮ মিটার করে মঙ্গলের নিকটবর্তী হচ্ছে।৫০ মিলিয়ন বছর পরে এটি মঙ্গলের উপর আছড়ে পড়বে অথবা ভেঙ্গে এর চারপাশে একটি বলয় তৈরী করবে।

ফোবস এর মাধ্যাকর্ষন পৃথিবীর একহাজারভাগের এক ভাগ।৬৮ কিলোগ্রাম ওজনের মানুষ ফোবসে গেলে তার ওজন হবে ৬৮ গ্রাম।

উপগ্রহ দুইটি সম্ভবত পাকড়াও করা গ্রহানু। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে মঙ্গলের নিকটবর্তী হয়ে তার আকর্ষনে আটকা পড়ে গেছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপসংহারঃ মঙ্গল গ্রহের দুই উপগ্রহ সম্পর্কে সুইফটের অনুমান অনন্য। কিন্তু যে পরিমাণ তথ্য প্রমাণ থাকলে আবিষ্কারকের মর্যাদা পেতে পারতেন তা তিনি দেননি বা দিতে পারেন নি। তাকে প্রভাবিত করেছিলেন জন আরবাথনট। কিন্তু আরবাথনট ছিলেন আত্মপ্রচারবিমুখ।যাই হোক, সুইফট কিন্তু তার অনুমানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Level 0

আমি মোস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 11 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ইন্টারেস্টিং! চালিয়ে যান!

    ধন্যবাদ ইশতিয়াক আহমেদ। গালিভার্স ট্রাভেলস নিয়ে টেকটিউনস এ আর একটি টিউন করা সম্ভব।

বিষয়টা সত্যিই দারুন । গালিভার ট্র্যাভেল এর গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে গেল । আপনি কিন্তু উপসংহার লেখেননি ।
তবে আমার মতে জোনাথন সুইফট কে আবিষ্কারকের আসনে বসানো ঠিক হবেনা ।
ভি জি পারমিনভ যে কিভাবে অমন হাস্যকর কথা বললেন জানি না !!!!!!!!!

    আপনি ঠিকই বলেছেন। সুইফট আবিষ্কারক নন। শুধু অনুমান করলেই তো হবে না। যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে হবে। জন আরবাথনট কিছুটা স্বীকৃতি পেতে পারতেন। তিনি সেটির জন্য আকুল ছিলেন না কখনও।
    আপনি যখন বলছেন একটা উপসংহার জুড়ে দেই।

    পারমিনভ যে স্তরের মানুষ তাতে ঐ ধরণের অনুমান ভয়ানক হাস্যকর।

এমন আর্টিকেল ভাল না লেগে পারে !