ছোট বেলায় কেমন ছিলেন বাংলাদেশের দুনিয়া কাঁপানো ক্রিকেটাররা।তারকারদের ছোট বেলা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই।ভাবতেই ভালো লাগে তারকাদের ছোট বেলা নিয়ে।তারও কি মাঝরাতে খাটের নিচে উঁকি দিতে ভয় পেতেন?কিংবা স্কুলে পড়া না পারলে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়াতেন!বড় ক্রিকেটারদের ছোটবেলা নিয়ে পাঠকদের জন্য এই আয়োজন।
01. মাশরাফি বিন মুর্তজা
নড়াইলের ছেলে মাশরাফি। বেড়ে উঠেছেন নানির কাছে। দুরন্ত শৈশব কেটেছে তার চিত্রাপাড়ে।ডাক নাম ‘কৌশিক’ নানিই রেখেছিলেন এই নাম।ছোটবেলা থেকেই খুটি নাটি ‘ইনজুরি’ তাঁর পিছু নিয়েছে।ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটেছিল ১০ বছর বয়সে।
খ্যাপাটে, দুরন্তপনার পাশাপাশি মনটাও তাঁর ভীষণ উদার।ছোট বেলা থেকেই চ্যালেন্জ নিতে পছন্দ করতেন। কারও বিপদ দেখলে সবার আগে হাজির হতেন।
02. সাকিব আল হাসান
ছোটবেলায় ছিলেন খুব শান্ত। চাপা স্বভাবের সাকিব করতেন না দুষ্টুমি, থাকতেন না কোনো দস্যিপনায়। বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া-মারামারিতেও তিনি নেই। যে সাকিব ২২ গজে একের পর এক কীর্তি গড়ে যাচ্ছেন, তাঁর বাবা কিন্তু চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে বিখ্যাত ফুটবলার হোক। কারণ, বাবা মাশরুর রেজা নিজেও একসময় ফুটবল খেলতেন। কিন্তু ছেলের মন যে ক্রিকেটে! একদিন তো খেপে গিয়ে বাবা দা-বঁটি দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলেছিলেন ছেলের ব্যাট-বল!
শান্ত স্বভাবের আরাফাত সানির বেড়ে ওঠা ঢাকার আমিন বাজারে। ছোটবেলায় ছোট ও মেজ কাকার সঙ্গে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যেতেন। ক্রিকেটের প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়েছে সে সময় থেকেই। স্কুলে খুব একটা যাওয়া হতো না। অবশ্য খেলার জন্য তাঁকে যথেষ্ট ছাড় দিতেন শিক্ষকেরা। একবার বাড়ির বারান্দায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে জানালা ভেঙে মায়ের ভীষণ বকুনি খেয়েছিলেন। তবে ক্রিকেটার হওয়ার পেছনেও মায়ের ভূমিকাই ছিল বেশি।
মারকুটে ওপেনার তামিম ইকবাল ছেলেবেলায় ছিলেন খুব চঞ্চল। তবে মনটা ভীষণ উদার। পকেটে ১০ টাকা থাকলে নয় টাকায়ই বন্ধুবান্ধবকে খাইয়ে দিতেন! খেলার প্রতি টানটা শুরু পারিবারিকভাবেই। যেকোনো উৎসব, যেমন: ঈদ বা কারও বিয়ে উপলক্ষে বাবা-চাচা, ভাই-বন্ধুরা দুই ভাগ হয়ে ক্রিকেট খেলতেন। সেই ম্যাচও হতো অনেক আয়োজন করে। তামিম ও তাঁর ভাই নাফিস ইকবালের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে নাকি এই ম্যাচেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
05. এনামুল হক
কী লাজুক হাসি! জন্ম ১৬ ডিসেম্বর, সে কারণেই বোধ হয় তাঁর ডাক নাম-বিজয়! ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন কুষ্টিয়ার জিলা স্কুলে। পড়াশোনায় ছিলেন বেশ ভালো, স্কুলপালানোর রেকর্ড তাঁর নেই। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের পর বিকেএসপি-জীবন। সেখানে ভর্তি হওয়ার গল্পটাও বেশ মজার। বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে টেকার পর ভর্তি ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখেন, ছবি লাগবে। ছবি আনতে তখনই ছুটতে হলো বাড়িতে! সেদিন বিকেএসপির বাস ছাড়তে দেরি না হলে হয়তো বিজয়কে আজ বাংলাদেশের জার্সিতে আর দেখা হতো না!
06. মুমিনুল হক
মা-অন্তঃপ্রাণ মুমিনুল ছোটবেলা থেকেই আশ্চর্য রকমের শান্ত। মনের ভেতর ছটফটানি নেই একদমই। কক্সবাজারের বৈদ্যেরঘোনার ছেলে মুমিনুলের ক্রিকেটের শুরু পাশের বৈল্যরপাড়া সিঅ্যান্ডবি কলোনি মাঠে। প্রথমবার বিকেএসপিতে সুযোগ পাননি। পরীক্ষার আগেই বাদ পড়েছিলেন কেবল উচ্চতার কারণে। উচ্চতা বাড়ানোর জন্য পরে বাবা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন।
07. মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
মায়ের কোলে ছোট্ট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দেখ! পড়া ফাঁকি দিয়ে কিংবা স্কুল পালিয়ে নয়, বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়েই তিনি মাঠে যেতেন। ক্রিকেটে হাতেখড়ি ময়মনসিংহ শহরের সেহড়া এলাকার হিন্দুপল্লি রোডে। এখন মাহমুদউল্লাহ জাতীয় দলে খেলেন অফ স্পিন-অলরাউন্ডার হিসেবে। কিন্তু ছোটবেলায় করতেন লেগ স্পিন। বেশ নাদুসনুদুস এবং উচ্চতা একটু কম ছিল বলে লেগ স্পিন করতে সুবিধে হতো। তবে কেন লেগ স্পিন বাদ দিয়ে রিয়াদ অফ স্পিনে এলেন? তখন রিয়াদ সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে সেবার গুলকিবাড়ি ক্রীড়াচক্রের হয়ে প্রথম ডিভিশনের খেলায় ভালো করতে পারলেন না। এ ব্যর্থতার পর রিয়াদ ভাবলেন, লেগ স্পিন তাঁকে দিয়ে হবে না! ব্যস, সেই থেকে শুরু অফ স্পিন বোলিং।
08. মুশফিকুর রহিম
মুশফিক নিশ্চয়ই মিকি মাউস ভালবাসতেন। টি–শার্টটা দেখ! তিনি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একদম ‘গুডবয়’। খুব লাজুক, কিন্তু ভীষণ জেদি! কতটা জেদি—এ গল্প শুনলে বুঝবে। একবার নানার বাড়িতে গিয়েছেন ছোট্ট মুশফিক। রাত দুইটার সময় ঘুম থেকে উঠে বায়না ধরলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলব।’ কালও না, পরশুও না, আজই এবং এক্ষুনি! উপায় না দেখে ওই রাতেই খেলার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। ক্রিকেটে হাতেখড়ি মূলত বগুড়ার মাটিডালি ক্রীড়াচক্রে। তবে সেখানে তেমন কোচ বা ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। এরপর পরীক্ষা দিয়ে টিকে গেলেন বিকেএসপিতে। পড়াশোনায় সব সময়ই ভালো মুশফিক।
09. তাইজুল ইসলাম
ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করা এই বোলারের জন্মস্থান নাটোর সদর উপজেলার পিপরুল গ্রামে। হালতি বিলের পাড়ের ওই গ্রামের ছেলেরা লেখাপড়ার বাইরে সময় কাটায় বিলের জলে মাছ ধরে। কিন্তু তাইজুলের সময় কেটেছে খেজুরগাছের ডাগি ও বাতাবিলেবু নিয়ে। বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় পাটশোলা পুঁতে স্টাম্প বানাতেন। আর খেজুরগাছের ডাগি দিয়ে ব্যাট ও ছোট বাতাবিলেবু দিয়ে তৈরি হতো বল। কয়েকবার মারতেই বাতাবিলেবু ফেটে যেত! তবু খেলা ছাড়তেন না তাইজুল। পাশের বাড়ির গাছ থেকে আবারও লেবু সংগ্রহ করতেন। এ নিয়ে গাছের মালিকের সঙ্গে কত্ত ঝামেলা!
10. রুবেল হোসেন
বাগেরহাটের নাগেরবাজারের ছেলে রুবেল। মাঝেমধ্যেই স্কুলের কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে ছুট লাগাতেন খেলার মাঠে। কখনো কখনো টিফিন পিরিয়ডের পরের ক্লাসগুলোতে রুবেলের খোঁজ মিলত না। কোথায় তিনি? স্কুল পালিয়ে রুবেল তখন ক্রিকেট খেলায় মগ্ন!
11. সৌম্য সরকার
মজার ছবিটা স্টুডিওতে তোলা। আরো মজার ব্যাপার কী জানো? সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য সরকারে ডাকনাম ‘ছোট বাবু’। খুব লাজুক স্বভাবের সৌম্যের বয়স তখন বছর তিনেক হবে। অফিস থেকে ফেরার পথে ছোট্ট একটা ব্যাট আর একটা সাদা টেনিস বল এনে দিয়েছিলেন বাবা। সঙ্গে সঙ্গে সেটা লুফে নিলেন সৌম্য। এরপর ব্যাট ধরলেন বাঁ হাতে। বাবা বল ছুড়ে দিতেই শট খেলতে শুরু করেছিল ছোট্ট ছেলেটা। বাবা তো অবাক! এইটুকুন ছেলের টাইমিং আর ফুটওয়ার্ক কী নিখুঁত! এরপর বিকেএসপিতে সুযোগ পেতে তাঁর আর বেগ পোহাতে হয়নি।
12. নাসির হোসেন
ছবিটা কিশোর বয়সী নাসির হোসেনের। হাসিটা একই রকম আছে, তাই না? রংপুরের ছেলে তিনি। বাড়ির পেছনে বড় পুকুর ছিল। সেখানে মাছ ধরার ভীষণ নেশা ছিল তাঁর। একদিন পুকুরের মালিকের হাতে ধরা পড়ে শাস্তি পেতে হয়েছিল। শৃঙ্খলা ভালো লাগত না নাসিরের। মাথার ভেতর কাজ করত নানা দস্যিপনা।
বোলিং নয়। ছোটবেলায় ব্যাটিংই ছিলতাঁর প্রিয়। ছোট্ট তাসকিন একই সঙ্গে ছিলেন চঞ্চল আর লাজুক। বেড়ে ওঠা ঢাকার মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে। আর ক্রিকেটের শুরু নানুর বাসার সামনের গলিতে। পাড়ার ক্রিকেটে সবাই তাঁকে নিতেন ‘দুধভাত’ হিসেবে! ফিল্ডিং আর সবার শেষে ‘সুযোগ পেলে’ ব্যাটিং। কখনো তাও দিতেন না বড় ভাইয়েরা! একদিন তাসকিন বললেন, ‘আমি নাহয় শুধু বোলিংটাই করি?’ সেই থেকে বোলার হয়ে গেলেন তাসকিন!
আল আমিন হোসেন
ঝিনাইদহের ছেলে আল আমিন ছিলেন ভীষণ চঞ্চল। পড়াশোনায় ভালো। তবু অনেক সময়ই মা-বাবার কাছে বকা খেতে হয়েছে খেলার জন্য। সবাই ব্যাটিং করতে মজা পেলেও আল আমিন ছোটবেলা থেকেই বোলার হতে চেয়েছিলেন। কেন? উইকেট নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা নাকি ভীষণ উপভোগ করতেন! প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে জোরে বল বা বাউন্স দিয়ে বেকায়দায় ফেলতে নাকি ভীষণ মজা লাগত। তবে কোনো ব্যাটসম্যানকে ব্যথা দেওয়ার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।
14. সাব্বির রহমান
বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। তাঁর ছোটবেলার ছবিটা দেখ! বাবা–মায়ের মাঝে একদম লক্ষি হয়ে বসে থাকলেও, তিনি ছিলেন চঞ্চল আর ডানপিটে। রাজশাহীর ঘোড়ামারাতে সাব্বিরদের বাসায় দুটো দরজা ছিল। প্রথম দরজাটা ছিল মা-বাবার ঘরের সঙ্গে। দ্বিতীয়টি সাব্বিরের ঘরের সঙ্গে। প্রতিদিন সকালে ওই দরজা দিয়ে পালাতেন, ফিরতেন দুপুরে! মাঠে-ঘাটে খেলাধুলা করেই দিন কাটত। মা-বাবা গিয়ে মাঠ থেকে ধরে আনতেন। আবার কখনোবা তাকে খুঁজেই পাওয়া যেত না!
আমি অন্তহিন মরুপথ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
tnx ভাল লাগল