বাংলাদেশে বিটকয়েন লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক

টিউন বিভাগ খবর
প্রকাশিত

এশিয়ার প্রথম কোন দেশ হিসেবে বিটকয়েন ফাউন্ডেশনে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় দেশে বিটকয়েনে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিটকয়েন মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান ও প্রচার হতে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিটকয়েন বা বিটকয়েনের ন্যায় বা অন্য কোনো কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সরকারের কোন সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন বহির্ভূত এসব লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এমতাবস্থায়, সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিটকয়েনের ন্যায় কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান ও প্রচার হতে বিরত থাকতে হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিটকয়েন মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে-মর্মে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সতর্কবার্তা জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অনলাইনে বিটকয়েন বিবিধ বিনিময় প্লাটফর্মে কেনা বেচা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। অথচ বিটকয়েন কোনো দেশের ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয়।

গত মাসের ১৫ তারিখে এশিয়ার প্রথম কোন দেশ হিসেবে বিটকয়েন ফাউন্ডেশনে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। বিটকয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সজীব। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক উন্নতির জন্য বিষয়টি জরুরি ছিল। বাংলাদেশ ছাড়া সম্প্রতি এ ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়া দেশগুলো হলো-কানাডা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও ডেনমার্ক। বিটকয়েন হলো ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা বা ডিজিটাল কারেন্সি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বিটকয়েন লেনদেন চালু হয়েছে। এটি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। তবে অনলাইনে এ মুদ্রা লেনদেনে অনলাইন জালিয়াতির পর তা ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

বিটকয়েন কি?

বিটকয়েন হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি এই মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অবিহিত করেন। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়। ২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়েনগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে না। যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই অনুসরণ করা যায় না তাই বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যাবহার আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটি বিটকয়েনকে আরও আগিয়ে নিয়ে যাবে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি ব্যাবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়েনের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে।

বিটকয়েনে যেভাবে লেনদেন

বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোন কেন্দ্রীয় নিকাশঘরের মধ্য দিয়ে যায় না কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়েন মাইনারের মাধ্যমে যেকেউ বিটকয়েন উৎপন্ন করতে পারে। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটা সবসময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কতৃক অন্য কারও একাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরী হয়ে যায় যা অন্যান্য মাইনার কতৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে হালনাগাদ হয়। বিটকয়েন দিয়ে কোন পন্য কেনা হলে তা বিক্রেতার একাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পন্য কিনতে পারে, অপরদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারন করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়।

নিউজটি প্রকাশ হয়েছে এখানে । ঘুরে আসবেন আমার ব্লগ থেকে।

Level 2

আমি ব্লগার মারুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 196 টি টিউন ও 1301 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি মারুফ। প্রযুক্তিকে ভালোবাসি। তাই গড়তে চাই প্রযুক্তির বাংলাদেশ। পড়াশুনা করছি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে। আমার ওয়েবসাইটঃ https://virtualvubon.com এবং https://www.rupayon.com


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাল হইছে জানলাম

    @blacker.palash: ধন্যবাদ। আমি জাস্ট জানানোর জন্য নিউজটা কপি করে শেয়ার করলাম।

বীট কয়েন এ ধান্ধা আছে।

Level 0

যার কোনো অস্ত্বিত্ত নাই, এবং যেকেউ এটি উতপাদন করতে পারে, সেটা এখনো বিশ্বে এখনো চলছে কিভাবে? কেনো এটি আন্তর্যাতিক ভাবে ব্যান করা হয়না?

Level 0

অসাধারন লিখছেন ভাই