আগামীকাল সোমবার (১-০৯-২০১৪) থেকে 'উন্নয়ন সারচার্জ' নামে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আয়ের ওপর নতুন করে কর বসানো হচ্ছে। নির্ধারিত করের পাশাপাশি সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত মূল্যের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে অপারেটরদের। কাগজে-কলমে সারচার্জ অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহের কথা বলা হলেও বাস্তবে অতিরিক্ত এ করের বোঝা বহন করতে হবে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদেরই। ফলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কলরেট না বাড়লেও কথোপকথনের ব্যয় বাড়বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের। এই সারচার্জ বাবদ বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আদায়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিমকার্ড বা রিমকার্ড বা অন্য কোনো মাইক্রো চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় মূল্যের ওপর ১ শতাংশ হারে উন্নয়ন সারচার্জ আরোপিত হবে। মূল্য সংযোজন কর যে সময় বা যে পদ্ধতিতে আদায় করা হয় একই সময়ে এবং একই পদ্ধতিতে সারচার্জ আদায় করা হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, এ খাতে এমনিতেই বিপুল করের বোঝা বিদ্যমান। নতুন কর সেই বোঝা আরও বাড়াবে। সরকারের কোষাগারে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে এ খাত। অথচ নতুন করারোপের কারণে খাতটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সারচার্জের নাম প্রথমে ‘শিক্ষা উন্নয়ন সারচার্জ’ রাখা হলেও পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রীর আপত্তির কারণে তা ‘উন্নয়ন সারচার্জ’ করা হয়। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করে আদায়পদ্ধতি দ্রুত ঠিক করে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
১ শতাংশ হারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ওপর উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা হলে এ খাত থেকে বছরে ২৫০ কোটি টাকার বেশি আদায় হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনসেট আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে মূল্যভিত্তির ওপর ১ শতাংশ হারে যে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে, তা থেকে ৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর।
বাজেটে সিমকার্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা করারোপ করা হয়েছে। এ থেকে ৮০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল সেট আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন পর্যায়ে মূল্যভিত্তির ওপর ১ শতাংশ হারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। এখান থেকে ৩৮ কোটি টাকা আদায় করা হবে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে মোবাইল ফোনসেবা গ্রহণের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাজেট পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মোবাইল সিমকার্ডে প্রতিদিন এক টাকা হারে মাসে ৩০ টাকা সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেন। এ সারচার্জের মাধ্যমে আদায় করা চার হাজার কোটি টাকা শিক্ষা উন্নয়নে ব্যয় করা হবে বলে জানান তিনি।
কিন্তু এভাবে সারচার্জ আদায় দুরূহ ও এর প্রভাব প্রান্তিক, হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা সৃষ্টি করবে, এমন ভাবনা থেকে তা করা হয়নি। এর পরিবর্তে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিম ও রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের ওপর সারচার্জ আরোপ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি।
মোবাইল খাত রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। এনবিআর সূত্র জানায়, গত দুই অর্থবছরে এ খাত থেকে গড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ খাতেও আরোপ করা হয়েছে একাধিক সারচার্জ। আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। এর সঙ্গে বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে মোবাইল ফোন বিলের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে এনবিআর। এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী সংসদ অধিবেশনে এনবিআরের এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হতে পারে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বনিম্ন পরিমাণে সারচার্জ আরোপে সরকারের আয় বাড়লেও করদাতাদের কোনো ভোগান্তি হবে না। এ খাতে আদায়কৃত অর্থ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সারচার্জ কি?
Please don’t mind.