এপল আইফোন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মার্টফোন হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত. ২০০৭ সাল আইফোন বাজারে এসে "ফোন" এর ধারনাই পাল্টে দেয়. ২০০৮ সালে থ্রী-জি সাপোর্ট সহ আইফোন, ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইনসফটওয়্যার+গেম মার্কেট App Store আসে যাতে এখন পর্যন্ত এতে ২ লাখের উপর এপ্প্লিকেশন ও গেম নামানোর জন্য জমা আছে. ২০০৯ এ আসে দ্বিগুন প্রসেসিং পাওয়ার সম্পন্ন আইফোন থ্রী-জি-এস বাজারে আসে . আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মানুষের প্রথম পছন্দ হয়ে দাড়ায় আইফোন.
এই মাসের প্রথম দিকে Apple World wide developer conference (WWDC) অনুস্ঠিত হয় ৫৭ টি দেশের ৫২০০ আইফোন এপ্প্লিকেশন ডেভেলপার এর উপস্হিতিতে, যেখানে এপল এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ষ্টিভ জবস ঘোষণা দেন আইফোনের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী ভার্সন- আইফোন ৪ এর. এপল মনে করে এই ফোন আবার বদলে দেবে স্মার্টফোন এর ধারণা, হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ স্মার্টফোন. এটি বাজার এ আসে গত ২৪ জুনে, এবং এই কয়েকদিনেই রেকর্ড করেছে বিক্রিতে. মানুষ সারারাত লাইনে দাড়িয়ে সকালে কিনে নিয়ে গেছে এই রেভলুশনারি ডিভাইসটি. চলুন দেখি এমন কি আছে এই ফোনে যা একে করেছে অনন্য...
গেম খেলছেন, ফাকে ফাকে চেট করছেন বন্ধুর সাথে, এর মাঝে আবার স্কাইপে তে কল আসলো, কথা বললেন, আবার খেলায় ফিরে এলেন, চেটও চলছে, মাঝে আবার ই-মেল চেক করে নিলেন একবার,...এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা. মাল্টিটাস্কিং এর বদৌলতে আপনি সব করতে পারবেন একসাথে, যেকোনো এপ্প্লিকেশন মিনিমাইজ করে আরেকটাতে যেতে পারবেন, সবসময় ভিওআইপি এপ্প্লিকেশন চালু রাখতে পারবেন, অত্যন্ত দ্রুততার সাথে.
সম্পূর্ণ নতুন Design যা আগের আইফোনের চেয়ে ২৪% পাতলা, মাত্র ৯.৩৩ মিমি, এবং বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা স্মার্টফোন. যোগ হয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল কামেরা, লেড ফ্লাশ ও ফ্রন্ট কামেরা, উপরে-নিচে দুটি মাইক্রোফোন. এছাড়া আছে হেডফোন জেক, কেবল কানেকটর, স্পিকার, হোম, ভলুম আপ-ডাউন, স্লীপ-ওয়েক. সাইলেন্ট-জেনারেল বাটন ও মাইক্রো সিম ট্রে.
এর আছে স্টেনলেস স্টিল এর তৈরী বডি যা ব্যবহৃত হয় Bluetooth, WiFi, GPS, UMTS, এবং GSM এর এন্টেনা হিসাবে. ফলে এটি কাজ করবে অনেক দ্রুত এবং হবে অনেক শক্তপোক্ত. আছে হেলিকপ্টার-গ্লাস এর উপাদানে প্রস্তুত কাচ দিয়ে তৈরী সামনের ও পিছনের কাভার যা আঘাতে ফেটে যাওয়া থেকে বাচাবে ফোনকে.
আগের আইফোনের রেসোলিউশন ছিলো ৩২০-৪৮০, যা এখন করা হয়েছে ৯৬০-৬৪০ এবং এটি কাজ করবে ৩.৫ ইঞ্চি স্ক্রীন এ. অর্থাৎ আগের চেয়ে চার গুন বেশি সুন্দর দেখা যাবে নতুন আইফোন এর ডিসপ্লে. যেখানে মানুষ এর রেটিনার দেখার ক্ষমতা প্রতি ইঞ্চিতে সাধারণত ৩০০ পিক্সেল, সেখানে আইফোনে দেখা যাবে ৩২৬ পিক্সেল প্রতি ইঞ্চিতে.
শুধু আইফোনের ও আইপেডের জন্য এপল তৈরিকৃত এই "Customized for phone platform" চিপ আগের চেয়ে অনেক ছোট্ট ও অনেক দ্রুত. এতে আইফোনের বাটারী আরো বড় করা গেছে এবং প্রসেসর আগের চেয়েও কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে. তাই আইফোন ৪ এ ৬ ঘন্টার 3G browsing, ১০ ঘন্টার Wi-Fi browsing .১০ ঘন্টার video. ৪০ ঘন্টার music. ৩০০ ঘন্টার standby পাওয়া যাবে একবার চার্জ দিয়ে. এছারাও ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত জায়গা, Quad band HSPDA/HSUPA, ও 802.11n Wi-Fi আছে এতে.
ধরুন আপনি দাড়িয়ে বা ঘুরানো-চেয়ার এ বসে গেম খেলছেন নিড ফর স্পীড, ফোনটিকে ডানে বয়ে কাত করে ডানে বায়ে মোড় নিচ্ছেন, আপনার লেজের সাথে লেগে আছে পুলিশের গাড়ি আর উপরে হেলিকপ্টার. এখন আপনার মনে হতে পারে পিছনে চেয়ে দেখা দরকার কয়টা টিকটিকির (পুলিশের) গাড়ি আপনার পিছু লেগেছে, আপনি সাথে সাথে ঘুরে যান উল্টো দিকে, (ঠিক যেমন আমরা পিছন থেকে কেউ ডাকলে পিছনে ঘুরে দেখি কে ডাকলো) দেখে নিন কতটি পুলিশের গাড়ি আছে. আবার সোজা হয়ে এগিয়ে যান সামনে, আবার ফোনটিকে উপরের দিকে উঠিয়ে দেখে নিন হেলিকপ্টার এর কি অবস্থা. এই অবিশ্বাস্য বেপারটি সম্ভব হয়েছে মহাকর্ষ-বোধক(গ্রাভিটি সেন্সিং) 6-axis Gyroscope সংযোজনের ফলে. এতে বর্তমান ৩ এক্সিস Accelerometer এর চেয়ে অনেক ভালো কন্ট্রোল পাওয়া যাবে গেমগুলুতে.
এছাড়া আরো আছে বিল্ট ইন কম্পাস,স্ক্রীন অটো লক করার জন্য proximity sensor, এবং brightness control এর জন্য ambient light sensor.
নতুন ৫ মেগাপিক্সেল কামেরা এবং LED ফ্লাশ আপনাকে দিবে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা. এতে আছে ৫x ডিজিটাল জুম, টাচ টু ফোকাস,
হাইডেফিনেশন ভিডিও রেকর্ডিং 720 pixels at 30 frame, যা ৩৫ মিলিমিটার ভিডিও কামেরার মতো কাজ করবে. আছে ফ্রন্ট কামেরা ভিডিও কলিং এর জন্য. এছারাও আছে ফোনেই ভিডিও ও ছবি এডিটিং করার ব্যবস্থা, ছবি facebook, twitter এ শেয়ার, ভিডিও youtube ও vimeo তে শেয়ার করার সুবিধা.
আমাদের দেশে হয়তো জনপ্রিয় নয়, কিন্তু অন্যান্য দেশে ই-বুক পড়ার ক্ষেত্রে ই-বুক-রিডার অনেক ব্যবহৃত, সেক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত আইবুকস. আপনি ই-বুক বা পিডিএফ ফাইল আপনার বুক সেলফ এ সাজিয়ে রাখতে পারবেন, পড়তে পারবে, বুকমার্ক করতে পারবেন, নোট লিখে রাখতে পারবেন,যেকোনো শব্দের অর্থ জানা যাবে একটি টাচেই.
নতুন এই ওএস এ আপনি আগের চেয়ে আরো বেশি গতিতে সফটওয়্যার বা গেম খুলতে ও ব্যবহার করতে পারবেন. সেই সাথে আছে ফোল্ডার ব্যবস্থা, ৬ টি পর্যন্ত টাচ সেন্স, যতখুশি ইমেইল একাউন্ট এড করার সুবিধা,গুগল, ইয়াহু, বিং এ সার্চ করার সুবিধাসহ আরও অনেক কিছু.
কল্পনা করুন আপনি কোনো ধরনের খরচ ছাড়া, কোনো সফটওয়্যার সেটাপ ছাড়া, কোনো ফ্রেন্ড-লিস্ট ছাড়া শুধু ওয়াই-ফাই দিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে, যত সময় খুশি, ফ্রন্ট বা বেক-কামেরা দিয়ে কল করতে পারছেন, একজন আরেকজনকে দেখছেন, শুনছেন কথা, অলৌকিক মনে হচ্ছে? সেটাই হবে আইফোন ৪ এ. আপনার ও বন্ধুর আইফোন ৪ আছে, ওয়াই -ফাই আছে, বাস শুরু করে দিন দেখা-শোনা, তাকে দেখান আপনার নতুন কেনা সানগ্লাস ফ্রন্ট কামেরা ব্যবহার করে, আবার একটি আঙ্গুলের ছোয়ায় বদলে দিন কামেরা, বেক-কামেরা দিয়ে তাকে ঘুরিয়ে দেখান আপনার একুরিয়ামের নতুন মাছগুলু. এর নামই এপল দিয়েছে FaceTime. International open standard অনুযায়ী এটি প্রস্তাব ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে . এটি অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ড যেমন H.264, AAC, SIP, STUN, RTP, SRTP, TURN, এবং ICE সাপোর্ট করে.
অনেকেই ভাবছেন(যারা আমাকে বাক্তিগত ভাবে চিনেন!) আইফোনের ডেভেলপার বলে গুনগান গাইলাম এতক্ষণ ! আশা করি সামনের দিনগুলুতেই আপনারা এর জনপ্রিয়তার প্রমান পাবেন. আমাদের দেশে অনেকেই বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আইফোন এনে জেলব্রেক করে ব্যবহার করে থাকেন. কিন্তু দুঃখ লিগালি আমরা আইফোন ব্যবহার এর সুযোগ পাইনা, কোনো ফোন কোম্পানি এপল এর সাথে চুক্তি করেনা(নাকি এপল করেনা?), যেখানে আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এ আইফোন আছে. যাই হোক, কোন কোম্পানি কখন কি সেট বানায় সেটা আমাদের বোঝার সুযোগ নেই, তবে এই মুহুর্তে আমার মতে সেরা স্মার্টফোন আইফোন ৪, সেটটি হাতে পেলেই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো. কাজ এর চাপে টিউন করা হয়না, কেমন লাগলো জানাবেন. ধন্যবাদ সবাইকে.
ছবি নেওয়া হয়েছে: http://www.engadget.com.
আমি শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 12 টি টিউন ও 153 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Working on iPhone development...and i just wanna be myself....
লোভ আরও বাড়ায়ে দিলেন তো মিয়া। ঝক্কাস টিউন। 🙂