আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন।
দেরী না করে শুরু করছি আমার ২য় টিউন।
আজকের এই দিনে এসে যেসব পণ্য ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না, তার মধ্যে শুরুতেই আসবে কম্পিউটারের কথা। গোটাবিশ্বের ডিজিটাইজেশন অধুনা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসি অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও কম্পিউটার এখনও পর্যন্ত অনিবার্য হিসেবেই বিশ্বব্যাপী স্থান করে নিয়েছে। অথচ কম্পিউটার নামের এই যন্ত্রটির বয়স চার দশকও পেরোয়নি। এই অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি। আর কম্পিউটারের এই অগ্রযাত্রায় এককভাবে যে মডেলের কম্পিউটারটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, তার নাম ম্যাকিন্টোশ। এখনও পর্যন্ত নানা মডেলের কম্পিউটারের মধ্যে গুণে ও মানে অনন্য অবস্থানেই রয়েছে ম্যাকিন্টোশ। অ্যাপল'র এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি পণ্যটি যাত্রা শুরু করে ৩০ বছর আগে। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা হয় প্রথম ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটার; আজকে যা সকলের নিকট 'ম্যাক' নামেই অনেক বেশি পরিচিতি।
ম্যাকিন্টোশ যুগের সূচনা
১৯৮ সালে ম্যাকিন্টোশ যাত্রা শুরু করলেও এটি বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার নয়। একটা সময় পর্যন্ত কম্পিউটার মানেই মানুষ বুঝত বিশাল আকারের এক যন্ত্রকে। কেননা শুরুর দিককার একেকটি কম্পিউটারের জন্য একেকটি মাঝারি আকৃতির পুরো ঘরকে বরাদ্দ করতে হত। সে সময় স্টোরেজ ডিভাইসগুলোর আকৃতিই হত বড়সর আলমারির সমান। আর কম্পিউটারের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল গবেষকদের জন্যই। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ছোট হতে থাকে কম্পিউটারের আকার। ম্যাকিন্টোশ নির্মাতা অ্যাপলই ১৯৭৬ সালে প্রথম ব্যক্তিব্যবহারের উপযোগী অ্যাপল-১ কম্পিউটার নিয়ে আসে বাজারে। এর মধ্যে আইবিএম-ও পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে এনে সাড়া ফেলতে সমর্থ হয়। তবে ১৯৮৪ সালের আগ পর্যন্ত বাজারে আসা প্রতিটি কম্পিউটারই চলত কমান্ড প্রম্পটে। কোনো ধরনের গ্র্যাফিক্যাল ইন্টারফেস তখনও ছিল না কম্পিউটার পর্দায়। এই জায়গাতে এসেই বাজিমাত করে ম্যাক। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম যে ম্যাকটি প্রদর্শিত হয় সকলের সামনে, তার মাধ্যমেই কম্পিউটারের গ্র্যাফিক্যাল ইন্টারফেসের সাথে পরিচিত হয় বিশ্ব। আজকে যে আধুনিক কম্পিউটার আমরা ব্যবহার করে থাকি তার সূচনাটি ঘটে ওই ম্যাকের মাধ্যমেই। ডেস্কটপে বিভিন্ন ধরনের ফোল্ডারের আইকন, মাউসের ব্যবহার, ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ—সবকিছু মিলিয়ে ম্যাকিন্টোশ যেন এক নতুন যুগের শুরু।
ম্যাকের পেছনের কথা
অ্যাপল-১ এবং অ্যাপল-২ কম্পিউটার দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে পার্সোনাল কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কাজে অনেকটাই সফল ছিল অ্যাপল। তবে অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তার চিন্তায় ছিল এমন একটি কম্পিউটার তৈরি করা যার মূল্য হবে কম, যা খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে এবং নানা ধরনের মানুষের নানা ধরনের কাজের জন্য উপযোগী হবে। এই লক্ষ্য নিয়েই ১৯৭৯ সালে অ্যাপল'র প্রকৌশলী জেফ রাসকিনের নেতৃত্বে 'ম্যাকিন্টোশ' প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। ম্যাকিন্টোশের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা জেফ রাসকিনের অত্যন্ত পছন্দ ছিল 'McIntosh' জাতের আপেল। তাই এর নাম অনুযায়ীই তিনি এই প্রকল্পের নাম রাখেন 'McIntosh'। তবে ওই সময়ে এই নামেই এই অডিও যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছিল। তাদের অনুমতি নিয়ে 'McIntosh' নামটি স্টিভ জবস ব্যবহার করতে চাইলেও সেই অনুমতি মেলেনি। তাই পরে তারা এই নামটিকেই ভিন্ন বানানে 'Macintosh' হিসেবে কাজ শুরু করে অ্যাপল।
ম্যাকিন্টোশ প্রকল্পে জেফ রাসকিনের সাথে যুক্ত হন স্বশিক্ষিত প্রকৌশলী বারেল স্মিথ, যাকে পরিচয় করিয়ে দেন আরেক অ্যাপল প্রকৌশলী বিল অ্যাটকিনসন। ধীরে ধীরে তার সাথে যুক্ত হন আরও এক ঝাঁক প্রকৌশলী। এদের মধ্যে ছিলেন জর্জ ক্রো, ক্রিস এসপিওনা, জোয়ান্না হফম্যান, ব্রুস হর্ন, সুমান কেয়ার, অ্যান্ডি হার্টজফেন্ড, গাই কোয়াসাকি, ড্যানিয়েল কটকে, জেরি ম্যানক প্রমুখ। এদের হাত ধরেই তৈরি হয় প্রথম ম্যাকিন্টোশের হার্ডওয়্যার এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের আদি সংস্করণ। গবেষক দলের তৈরি প্রথম ম্যাকে ছিল ৬৪ কিলোবাইট র্যাম, মটোরোলা ৬৮০৯-ই মাইক্রো প্রসেসর। এটি ২৫৬ বাই ২৫৬ পিক্সেল সাদা-কালো ডিসপ্লে আউটপুট প্রদানে সক্ষম ছিল। ধাপে ধাপে একে আরও উন্নত করার গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন ম্যাকিন্টোশের দলটি। আর এরই ফসল হিসেবে ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে এই গবেষক দল জানান, ১৯৮৪ সালের শুরুতেই তারা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়ার উপযোগী 'ম্যাকিন্টোশ ১২৮' তৈরিতে সক্ষম।
ম্যাকের আগমনধ্বনি!
১৯৮৩ সালের অক্টোবরে অ্যাপল প্রথম ঘোষণা করে ম্যাকিন্টোশের। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই তারা বিভিন্ন ম্যাগাজিনের সাথে ১৮ পৃষ্ঠার একটি ব্রোশিয়ার বাজারে ছাড়ে। ১৯৮৪-এর জানুয়ারিতেই ম্যাকিন্টোশের টেলিভিশন বিজ্ঞাপন অন-এয়ার শুরু হয়। এই বিজ্ঞাপনকে অনেকেই 'মাস্টারপিস' হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। '১৯৮৪' শিরোনামের এই বিজ্ঞাপনে নিজেদের ম্যাককে তুলে ধরার পাশাপাশি আইবিএম-এর আগ্রাসনেরও সমালোচনা করা হয়। বিখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েলের 'নাইন্টিন এইটি ফোর' উপন্যাসের খানিকটা ছায়া নিয়ে তৈরি হয় এই বিজ্ঞাপনটি।
প্রথম ম্যাকিন্টোশ
অবশেষে ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারির বাজারে আসে প্রথম ম্যাকিন্টোশ। স্টিভ জবস নিজেই একে পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্ববাসীর সামনে। শুরুতে অবশ্য অনেকেই একে একটি দামি খেলনা বলে প্রচার চালিয়েছিলেন। এর গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস, ম্যাকপেইন্টের মাধ্যমে আঁকাআঁকির সুবিধা, কিছু গেমের অন্তর্ভুক্তিই ছিল তার পেছনে মূল কারণ। তবে নানা ধরনের কাজের সুবিধার কারণে একে স্বাগতই জানিয়েছে বিশ্ববাসী। এতে ছিল মটোরোলার এমসি৬৮০০০ প্রসেসর, যার গতি ছিল ৮ মেগাহার্জ। এর র্যাম ছিল ১২৮ কিলোবাইট ডির্যাম। এই র্যামের কারণেই প্রথম ম্যাকটি ম্যাকিন্টোশ ১২৮ নামে পরিচিতি লাভ করে। র্যামের সাথে সাথে রম ছিল ৬৪ কিলোবাইট। এতে আরও ছিল ২টি সিরিয়াল পোর্ট এবং ১টি ৩.৫ ইঞ্চি ৪০০ কিলোবাইট ফ্লপি সমর্থিত ফ্লপি ডিস্কড্রাইভ। ডিসপ্লে ইউনিট হিসেবে ছিল ৯ ইঞ্চি আকৃতির একটি মনিটর যা সর্বোচ্চ ৫১২ বাই ৩৮৪ পিক্সেল রেজ্যুলেশনে সাদা-কালো ডিসপ্লে সমর্থন করত। পুরো ম্যাকিন্টোশের সিস্টেমের আকার ছিল ১৩.৬ ইঞ্চি বাই ৯.৬ ইঞ্চি বাই ১০.৯ ইঞ্চি। ৬০ ওয়াট শক্তি ব্যবহারের উপযোগী ম্যাকের ওজন ছিল ১৬.৫ পাউন্ড। এতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ছিল ম্যাক ওএস ১.০। প্রথম ম্যাকটির দাম রাখা হয় ২,৪৯৫ ডলার।
এখনও অব্যাহত ম্যাকের যাত্রা
প্রথম ম্যাকের মাধ্যমে সাড়া ফেলার পর থেকেই নতুন নতুন মডেলের ম্যাক দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে অ্যাপল। ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরেই বাজারে আসে দ্বিতীয় ম্যাক, ম্যাকিন্টোশ ৫১২কে। পরের বছর তারা বাজারে আনে ম্যাকিন্টোশ প্লাস, যা প্রায় ৪ বছর বাজারে ছিল। এর মধ্যেই ১৯৮৭ সালে বাজারে আসা ম্যাকিন্টোশ এসই/৩০তে ছিল এথম ৩২ বিট প্রসেসর। আজকের দিনে যে টাওয়ার সিপিইউ ডিজাইন দেখা যায়, ম্যাকে তার সূচনা ম্যাকে হয় ম্যাক কোয়াড্রার মাধ্যমে, যাতে সিপিইউ ইউনিট এবং ডিসপ্লে ইউনিট ছিল আলাদা। নব্বইয়ের দশকে এসে ম্যাক পারফর্মা ৫২০০'র মাধ্যমে অল-ইন-ওয়ানের যুগে প্রবেশ করে ম্যাক। আর ১৯৯২ সালে বাজারে আসা পাওয়ার বুক ছিল এখনকার ল্যাপটপের এক আদিরূপ, যাতে এক্সটার্নাল মনিটরের সাথে ছিল আলাদা ডক। ১৯৯৮ সালে আবারও একটি বড় চমক নিয়ে হাজির হয় অ্যাsপল। এ সময় তাদের সঙ্গী হয় বন্ডি ব্লু আইম্যাক জি৩। জনি আইভের ডিজাইন একে বলা যায় প্রথম আধুনিক ডিজাইন কম্পিউটার। পরে আইবুক, পাওযার ম্যাক জি৪, ইম্যাক ঘুরে শেষ পর্যন্ত ম্যাকবুক প্রো, ম্যাকবুক এয়ার এবং আইম্যাক বাজারে আনে অ্যাপল। অ্যাপল'র নতুন মডেলের এসব কম্পিউটারই রাজত্ব করছে বিশ্বজুড়ে। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। ভাল লাগলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
আমি মুহাম্মাদ মুনিরুজ জামান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 85 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
NICE