আসুন শিখি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং [পর্ব-০১] :: সূচনা

আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আচ্ছা আমরা যে প্রতিনিয়ত আমাদের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, এতটা মূল্যবান সময় ইন্টারনেটের পেছনে ব্যয় করছি, ব্রাউজ করছি, ইউটিউব দেখছি, সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগ করছি, কখনো কি ভেবে দেখেছি এই ইন্টারনেট আসলে কিভাবে কাজ করে? ইন্টারনেটের গঠন আসলে কিরকম, এটা কিভাবে গঠিত হয়েছে? কিভাবে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আমি আমার ক্রোম ব্রাউজারে কোনো URL লিখে সার্চ করলে বিশ্বের আরেক প্রান্ত থেকে সেই URL এর ডাটা আমার কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে? এই ইন্টারনেটের মূলে রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। অনেকগুলো নেটওয়ার্কের সমষ্টিতে গড়ে উঠেছে আজকের এই সুব্রবৃহৎ ইন্টারনেট। এই সিরিজে আমরা ধারাবাহিকভাবে এই নেটওয়ার্কিং সম্বন্ধেই জানতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আশা করছি আমার সাথেই থাকবেন।

প্রথমে আমরা জানবো ডাটা কমিউনিকেশন সম্পর্কে।

ধরুন, আপনি আপনার একজন বন্ধুর সাথে আপনার পিসিতে ফেসবুক মেসেঞ্জার ওয়েব অ্যাপে চ্যাট করছেন। এখানে আপনি আসলে কি করছেন? ডাটা কমিউনিকেশন। এই ডাটা কমিউনিকেশন আসলে কি? আপনি যখন আপনার বন্ধুকে কোনো ম্যাসেজ লিখে পাঠাচ্ছেন তখন সেটা একটা ট্রান্সমিশন মিডিয়ার (যেমন তার) মধ্যে দিয়ে যায়। দুটো মেশিনের মধ্যে ট্রান্সমিশন মিডিয়ার ভেতর দিয়ে তথ্যের এই আদান-প্রদানকেই বলা হয় ডাটা কমিউনিকেশন।

একটা ডাটা কমিউনিকেশন সিসটেমে পাঁচটি কম্পোনেন্ট থাকে।

  • ১. ম্যাসেজ: আপনি আর আপনার বন্ধু যে কথাবার্তার আদান-প্রদান করছেন সেটা। এটা লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও যে কোনো আকারে হতে পারে।
  • ২. সেন্ডার: এটা হচ্ছে সেই মেশিন যেটা ডাটা পাঠাচ্ছে/পাঠায়।
  • ৩. রিসিভার: এটা হচ্ছে সেই মেশিন যেটা ডাটা গ্রহণ করছে/করে।
  • ৪. ট্রান্সমিশন মিডিয়াম: যে পথ দিয়ে তথ্য যাওয়া-আসা করে। এটা টুইসটেড পেয়ার কেবল, অপটিক্যাল ফাইবার, রেডিও ওয়েভ ইত্যাদি হতে পারে।
  • ৫. প্রটোকল: প্রটোকল হলো কতগুলো নিয়ম-কানুনের সমষ্টি। এটা সম্বন্ধে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।
ডাটা কমিউনিকেশন সিসটেমের পাঁচটা কম্পোনেন্ট
ডাটা কমিউনিকেশন সিসটেমের পাঁচটা কম্পোনেন্ট

নেটওয়ার্ক টপোলজি

একটা নেটওয়ার্ক হচ্ছে তার দিয়ে বা তার ছাড়াই কানেক্ট করা দুই বা ততোধিক ডিভাইসের সমষ্টি। এই কানেকশন দুইভাবে হতে পারে। সরাসরি এক ডিভাইসের সাথে আরেক ডিভাইসের (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) বা কতগুলো ডিভাইস একই সাথে কমন একটি লিঙ্ক শেয়ার করে (মালটিপয়েন্ট)। নিচের ছবিটা দেখলে জিনিসটা সহজেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। বাই দ্যা ওয়ে, ছবিতে স্টেশন লিখা আছে; স্টেশন, ডিভাইস, মেশিন, কম্পিউটার, নোড সবগুলোই কিন্তু আসলে একই জিনিসকেই বোঝায়।

পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আর মালটিপয়েন্ট কানেকশন
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আর মালটিপয়েন্ট কানেকশন

এবার আসা যাক নেটওয়ার্কিং এর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে, সেটা হলো নেটওয়ার্ক টপোলজি। একটা নেটওয়ার্ক ফিজিক্যালি কিভাবে গঠিত হয়েছে সেটাকেই বলে টপোলজি। আমরা জানি, দুই বা ততোধিক ডিভাইস একটা লিঙ্কে কানেক্টেড থাকে; আর এরকম দুই বা ততোধিক লিঙ্ক নিয়ে গঠিত হয় একটি টপোলজি। এই টপোলজি সাধারণত চার প্রকারের হয়। নিচে এগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

১. Mesh Topology

মেশ টপোলজিতে নেটওয়ার্কের প্রতিটি ডিভাইসের সাথে প্রতিটি ডিভাইসের আলাদা পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট কানেকশন থাকে। ধরুন একটি নেটওয়ার্কে যদি n সংখ্যক নোড বা ডিভাইস থাকে তাহলে এই টপোলজিতে মোট কতগুলো Cable বা তার লাগবে? যেহেতু প্রত্যেকটি নোডকে বাকি n-1 সংখ্যক নোডের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে, সেহেতু n সংখ্যক নোডের জন্য n(n-1) সংখ্যক Cable বা তার লাগবে। কিন্তু একটি তার যেহেতু দুইটা নোড শেয়ার করে তাই আমরা শেষ পর্যন্ত বলতে পারি মেশ টপোলজিতে আমাদের মোট n(n-1)/2 সংখ্যক তার লাগবে। আর প্রত্যেক নোডের n-1 সংখ্যক I/O port লাগবে বাকিদের সাথে কানেকশনের জন্য।

মেশ টপোলজি
মেশ টপোলজি

সুবিধা

  • ১. যেহেতু দুইটা নোডের মধ্যে নিজস্ব আলাদা লিঙ্ক আছে, অন্য কেউ সেটা শেয়ার করে না; তাই ওই লিঙ্কটাতে ট্রাফিক খুব কম থাকে। এ কারণে পরস্পর দুইটা নোডের যোগাযোগ খুব তাড়াতাড়ি হয়।
  • ২. একটা তার কেটে গেলেও বাকিগুলোর যোগাযোগে কোনো সমস্যা হয় না।
  • ৩. একটা লিঙ্ক যেহেতু শুধুমাত্র দুইটি নোডই ব্যবহার করছে, অন্য কোনো থার্ড পার্টি থাকছে না; তাই ম্যাসেজের গোপনীয়তা রক্ষিত হয়।
  • ৪. আলাদা আলাদা তার থাকার কারণে কোনো একটা তারে সমস্যা হলে সেটা ধরাও সহজ হয় আর সেটা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করাও সহজ হয়। বাকিগুলোর উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

অসুবিধা

  • ১. অনেক বেশি Cable আর I/O port লাগে।
  • ২. যেহেতু প্রত্যেকটা নোডের বাকি প্রত্যেকটা নোডের সাথে কানেক্টেড থাকতে হয় তাই Initial setup আর Reconnection করাটা কঠিন।
  • ৩. রুমের দেয়াল, সিলিং বা মেঝের মধ্যে দিয়ে এত Cable নিয়ে যাওয়াও কঠিন।
  • ৪. খরচ খুব বেশি।

২. Star Topology

এই টপোলজিতে প্রত্যেকটি ডিভাইস একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোলার (হাব) এর সাথে যুক্ত থাকে। নিজেরা নিজেরা যুক্ত থাকে না। এক্ষেত্রে একটা নোড যখন ডাটা পাঠাতে চায় তখন সে সেটা হাবকে পাঠায়। হাব তখন সেটা বাকি ডিভাইসগুলিতে ফরোয়ার্ড করে; সেগুলোর মধ্যে তখন আসল যে রিসিভার সে ছাড়া বাকিরা ওই ডাটা রিজেক্ট করে।

স্টার টপোলজি
স্টার টপোলজি

সুবিধা

  • ১. মেশের থেকে খরচ কম।
  • ২. প্রত্যেকটা ডিভাইসের শুধুমাত্র একটা লিঙ্ক আর I/O port লাগে হাবের সাথে। তাই Initial setup আর Reconfiguration অনেক সহজ।
  • ৩. অনেক কম Cable লাগে। তাছাড়া নতুন ডিভাইস যোগ করা, বিয়োগ করা শুধুমাত্র ওই ডিভাইস আর হাবকেই কেবল involve করে। তাই অনেক সোজা।
  • ৪. এখানেও মেশের মতো যেকোনো একটা নোড বা একটা তারে সমস্যা হলে বাকিগুলোর কোনো সমস্যা হয় না। কোন নোডে বা তারে সমস্যা তা বের করা আর সমাধান করা সহজ। খালি হাব ঠিক থাকলেই হলো।

অসুবিধা

  • ১. যেহেতু পুরা সিস্টেমটা হাবের উপর নির্ভরশীল কাজেই হাবে সমস্যা হলে পুরো নেটওয়ার্কটাই অচল হয়ে পড়ে।
  • ২. কোনো নোড যখন অন্য আরেকটা নোডকে গোপন কোনো ম্যাসেজ পাঠাতে চায় তখন সে সেটা সরাসরি তাকে না দিয়ে হাবকে দেয়। হাব তখন বাকি সবার কাছে ম্যাসেজটা ফরোয়ার্ড করে দেয়; তাই প্রাইভেসি বলে কিছু থাকে না।
  • ৩. মেশের থেকে তুলনামূলক কম হলেও অন্য ধরনের টপোলজি থেকে তার বেশি লাগে।
  • ৪. যেহেতু প্রত্যেকটা নোডকে হাবের সাথে কানেক্টেড থাকতে হয়, কাজেই নোডের সাথে হাবের দূরত্ব যত বেশি হবে তারের দৈর্ঘ্যও তত বেশি হবে।

Local Area Network (LAN) এ স্টার টপোলজি ব্যবহৃত হয়।

আজকের এই পার্ট থেকে আমরা জানলাম ডাটা কমিউনিকেশনের পাঁচটা কম্পোনেন্ট, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আর মালটিপয়েন্ট কানেকশন সম্পর্কে। আর তার মধ্যে দুই ধরনের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট টাইপের টপোলজি সম্পর্কে। আগামী পার্টে ইনশাআল্লাহ আমরা জানবো মালটিপয়েন্ট টাইপের টপোলজি, LAN, MAN, WAN ইত্যাদি সম্পর্কে।

কিন্তু আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন এই দুনিয়াবী জ্ঞানের মেয়াদ খুব বেশি নয়। আমাদের উচিত নিজেদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমাদের মনে রাখা উচিত আখিরাতের জগত দুনিয়ার চাইতে অনেক অনেক বিশাল, যার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। আমাদের এমন অনেক ছোট ছোট আমল বা কথা আছে যেগুলোকে আমরা তেমন কিছু মনেই করি না, কিন্তু দেখা যায় সেগুলোই মহান আল্লাহর কাছে এত বড় যার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তাই আল্লাহকে ভয় করুন, যিনি আপনাকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয়ই তাঁর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। আসসালামু 'আলাইকুম।

Level 1

আমি ফারহান কনক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস