বর্তমানে আমাদের সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন। অতীতে মোবাইল ফোনের মত এত কোনো ইলেকট্রনিক পণ্যেই বিস্তার ঘটেনি। একটা সময় ছিল, যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ছিল বিলাসিতার মত। কেননা সেসময় কেবলমাত্র বড়লোক মানুয়েরাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার আর কোনো বিলাসিতা নয় এবং এটি তেমন কোন দামি পণ্যের মতো ও মনে হয়না। বরং, বর্তমানে মোবাইল ফোন দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় এক ব্যবহার্য অনুষঙ্গের মতো হয়ে গিয়েছে।
আমরা সকলেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকলেও, মোবাইল ফোন তৈরি করার বা আবিষ্কার করার সেই প্রথম দিকের কথা আমরা এখনও অনেকেই জানিনা। তাই আজকের এই টিউন টিতে আমি মোবাইল ফোন আবিষ্কার এর প্রথম পর্যায় নিয়ে আলোচনা করব। তবে এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন।
প্রায় পাঁচ দশক আগের সেই মোবাইলের তুলনায় আজকের এক একটি স্মার্টফোন যেন একটা সুপার কম্পিউটার। আধুনিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আমাদের এই মোবাইল ফোন। বলা চলে যে, বর্তমানে আমাদের এক মুহূর্ত চলে না মোবাইল ফোন ছাড়া। মোবাইল ফোন আবিষ্কার এর গল্প বলা হবে আজকের এই টিউনটি তে।
১৯৭৩ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করেন। তাই মার্টিন কুপার কে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। তিনি তখনকার এক ছোট্ট টেলিকম কোম্পানি মটোরোলায় (Motorola) কাজ করতেন। ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপারের স্বপ্ন ছিল যে, এমন একদিন আসবে, যখন নিজস্ব ফোন থাকবে সবার কাছেই। আর যেকোনো সময় তার সাথে সেই ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে।
তবে সে সময় মানুষ তারবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহার না করলেও তারযুক্ত টেলিফোন ব্যবহার করত। সে সময় টেলিফোন মানে ছিল, এমন একটা জিনিস যা মানুষের কাজের টেবিল বাড়িতে তারের সাথে যুক্ত থাকে। আর সে কারণেই সাধারণ মানুষের কাছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতোই ছিল, মোবাইল ফোনের ধারণার কথাটি।
আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্কের হিলটন হোটেলে প্রথম মোবাইল ফোনের মডেল উপস্থাপন করা হয়। প্রথম মোবাইল ফোনটি ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা, ২ ইঞ্চি চওড়া এবং প্রায় ৪ ইঞ্চি মোটা। সেই মোবাইল ফোনের ওজন ছিল এক কেজির ও বেশি। আর বর্তমানে আমাদের মোবাইল ফোন দিয়ে যেখানে ঘণ্টার পর ঘন্টা কথা বললেও সামান্য কয় পার্সেন্ট চার্জ শেষ হয়, সেখানে সেই ফোনটি দিয়ে মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যেত। তবে সত্যিকার অর্থে, ওই সময়ে এরকম একটি ফোন তৈরি করাও ছিল একপ্রকার অসম্ভব চ্যালেঞ্জ।
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মোবাইল কলটি ও করেছিলেন মার্টিন কুপার। AT&T তখন শুধু আমেরিকা নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি ছিল। AT&T আবিষ্কৃত সেলুলার টেকনোলজি নামের এক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করেই মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়েছিল। সেসময় হাতে করে ফোন নিয়ে ঘোরার কথা AT&T মোটেও ভাবেনি। তারা এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল মূলত গাড়িতে টেলিফোন সংযুক্ত করার জন্য। কিন্তু ছোট্ট কোম্পানি মটোরোলা তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম AT&T এর কল্পনার সীমানাকেও ছাড়িয়ে যায়।
তবে প্রথম মোবাইল ফোনটি বাজারে আসতে আরো দশ বছরের মতো সময় লাগে। ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে আসে মটোরোলার DynaTAC 8000X মডেলের ফোনটি। প্রথম বাজারে আসা সেই মোবাইলের দাম ছিল ৩৯৯৫ ডলার। যা বর্তমান সময়ের বাজারমূল্য হতো প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। এছাড়া তখন এই মোবাইলটির কল রেট ও ছিল অনেক বেশি।
সেই যুগে মোবাইল অনেকটা বড়লোকদের খেলনা হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। কেননা সেসময়ের মোবাইলের দাম আকাশচুম্বী। প্রথম তৈরি হওয়া DynaTAC 8000X মডেলের ফোনটি অনেকের কাছে ইটের মতো, আবার অনেকের কাছে জুতার মতো দেখতে মনে হয়েছে। তাই অনেক একে বলতো The Brick, আবার অন্যরা বলতো Shoe Phone। তবে মার্টিন কুপার এর নাম দিয়েছিলেন ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল এরিয়া কভারেজ (Dynamic Adaptive Total Area Coverage)।
সেই মোবাইল ফোন যে মানুষের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা হয়তো কেউ উপলব্ধি ও করেনি। আজকাল মোবাইল ফোনে রেডিও, টিভি, মিউজিক প্লেয়ার, ক্যামেরা, ইন্টারনেটসহ কি নেই? হাতের কাছে একটি স্মার্টফোন প্রায় সকল ডিজিটাল সমস্যার সমাধান। মন চাইলেই ইন্টারনেট থেকে যেকোন ভিডিও দেখা, বর্তমান অবস্থানের আবহাওয়ার তথ্য জানা, ভিডিও গেম খেলা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কাজ করা যায়।
বর্তমান পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি লোক মোবাইল ফোন যোগাযোগ আওতায় এসেছে এবং ৫১১ কোটির বেশি মানুষ নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোনের সৃষ্টি জন্ম সেই মটোরোলা দিয়ে শুরু হলেও, বর্তমান বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারে ৭৬% দখল করে রেখেছে মাত্র ১০টি কোম্পানি। মটোরোলা প্রথম মোবাইল ফোন উৎপাদন শুরু করলেও বর্তমান বিশ্বে কিন্তু মটোরোলা মোবাইল উৎপাদনের দিক থেকে বা জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে নেই। যেখানে প্রথমদিকের অবস্থানে রয়েছে, স্যামসাং, অ্যাপল এবং শাওমি এর মতো প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার উদ্ভাবিত ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে সৌরজগতের বাইরে পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব। যার একটি উদাহরণ ভয়েজার ১ মিশন পরিচালনা। ১৯৭৭ সালে নাসা ভয়েজার মিশন পরিচালনা করেছিল। ভয়েজার ১ এখনও পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে যাওয়া মানুষের তৈরি বস্তু বা মহাকাশ যান।
মোবাইল ফোন সত্যিই আমাদের জীবনকে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কে করেছে আরো বেশি সহজ এবং গতিশীল। তবে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনকে অনেক বেশি সহজ করে তুললেও, এটি কারো কারো জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তবে অপকারের চাইতে উপকার হয়তোবা অনেক বেশি। তবে সেটি যাইহোক, মোবাইল আপনার কিংবা আমার জন্য উপকারের যন্ত্রই বটে।
তো বন্ধুরা, নিত্যনতুন এরকম সব টিউন পাওয়ার জন্য আমাকে অবশ্যই ফলো করে রাখবেন। আমাকে ফলো করে রাখার অনুরোধ জানিয়ে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)
সুন্দর পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ