যখন ২০০৭ এ আইফোন এর প্রথম ফোন অ্যাপেল বাজারে নিয়ে আসলো তখন পর্যন্ত যেকোনো ধরনের স্মার্টফোনের ডিসপ্লে ছিল পুরো চতুর্ভুজ বা বক্স আকৃতির। কিন্তু এখন আমরা বাজারে এরকম অনেকগুলো ফোন দেখতে পেয়েছি যাদের ডিসপ্লে এর সাইজ পুরো বক্স নয়। বরং কিছু অন্য আকৃতির। অন্য আকৃতি বলতে ডিসপ্লে এর ভিতরে ক্যামেরা বা অন্য হার্ডওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ঐসব ফোন এর ডিসপ্লে এর উপরের অংশ এর নোটিফিকেশন বার দুই ভাগ হয়ে গেছে। প্রথম দিকে এরকম ফোনগুলো দেখতে ততোটা ভাল না হলে এখন অনেকেই এরকম ফোন সাধারণ ইউজারদের কিনতে বলছেন।
এমনকি অ্যাপেল এর নতুন ফ্লাগশিপ আইফোন এক্স যেটি এই মসের শেষে বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেটিরও ডিসপ্লে এর উপরের অংশে ফ্রন্ট ক্যামেরা সেট করার জন্য একটি চারকোণা বক্স এর মত আছে। যদিও অ্যাপেল তাদের নতুন এই ফোন এক্স এর সামের অংশে পুরোটাই ডিসপ্লে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ক্যামেরা আর সেন্সর দেয়ার জন্য এই ফোনের উপরের নোটিফিকেশন বার দুই ভাগ হয়ে গেছে। তাই প্রথম প্রথম আইফোন এক্স চালানোর সময় সাধারণ ইউজার দের একটু সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু অ্যাপেলই প্রথম নয়। আসলে এরকম একটি ফোন আগেও তৈরি করা হয়েছে। যেটি এখনো বাজারে আসে নি। তবে কিছুদিন এর মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে। এই ফোনটির নাম দেয়া হয়েছে “এসেনশিয়াল ফোন”, এটি তৈরি করেছে এন্ডি রুবিন যিনি ছিলেন আন্ড্রয়েড এর নির্মাতা। এই ফোনটি বাজারে পাওয়া না গেলেও ইতি মধ্যে টপ টেক রিভিউয়ারদের কাছে পাঠানো হয়েছে তাই আমরা এই ফোনের অনেকগুলো রিভিউ দেখতে পাই। এবং এসব রিভিউ থেকে দেখা যায় যে ফোনের উপরে যে গোল খাজটি আছে সেটি আসলে খুব বেশি সমস্যা করে না। ত চলুন এবার দেখে নেয়া যাক এন্ডি রুবিন এর এই নতুন ফোনটি সম্পর্কে কে কি বলেছে।
নতুন এই ফোনটির একবারে উপরে সেলফি ক্যামেরা এবং কিছু সেন্সর দেয়ার কারণে ফোনের উপরে মাঝে একটু “U” শেপ এর কাটআউট আছে। যেটি নোটিফিকেশন বার এবং রেডিও স্ট্যাটাস আইকন কে আলাদা করে ফেলে। ফোনটি প্রথমে হাতে নেয়ার পর একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই এই কাল অংশটি আপনার চোখে পরবে না। কারণ বেশিরভাগ সময় আন্ড্রয়েড উপরের ঐ অংশে কোন কিছু দেখায় না। ফলে সেখানে চোখও যায় না। এছাড়াও ভিডিও ওপেন করলে ফোনটির উপরের ঐ অংশটুকু কাল বার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ফলে আসলে তেমন কোন সমস্যা হয় না।
এসেনশিয়াল ফোনটির উপরের কাটআউটটি কিছুটা আলাদা। কারণ আমরা এরকম কিছু এখন পর্যন্ত দেখিনি। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই কাট কখনই আপনার চোখে পরবে না। এবং যেহেতু আন্ড্রয়েড ভালভাবে অপ্টিমাইজড করা তাই নোটিফিকেশন বার খুব ভালভাবে কাজ করে। তবে খুব কম অ্যাপ এই ডিসপ্লে এর পুরো সুবিধা নিতে পারে।
এই ফোনটির একটি আজব ব্যাপার হল এটির স্ক্রিন এর উপরের নোচ। এসেনশিয়াল ফোনটি ডিজাইন করা হয়েছে যেন যত বেশি পারা যায় ডিসপ্লে এর এরিয়া তত ব্যবহার করা যায়। তবে এই কাল অংশটি এমন জায়গায় আছে যেখানে অ্যাপ এর বেশিরভাগ নোটিফিকেশন দেখা যায়। তাই ফোনটির সফটওয়্যার টিম প্লে স্টোর এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০০ অ্যাপের ডেভেলপার এর সাথে কাজ করছে যেন তাদের অ্যাপ এই ফোনে ঠিকভাবে সেট হয়। তবে চিন্তার কোণ কারণ নেই, যেকোনো অ্যাপই এই ফোনে অটোমেটিকভাবে সেট হয়ে যাবে।
এসেনশিয়াল ফোনের ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার জন্য একটু ফোনের একবারে উপরে একটু কাটআউট আছে। এটিকে একটি সমস্যা মনে হলেই আসলে এটিই এই ফোনকে অন্য ফোন থেকে আলাদা করে।
এই ফোনটির ফ্রন্ট ক্যামেরা ডিসপ্লে এর ভিতরে দেয়া হয়েছে। তাই এই ক্যামেরাকে বাকি ডিসপ্লে থেকে আলাদা করার জন্য কাল একটি অংশ আলাদা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অ্যাপই এই বাড়তি ডিসপ্লেকে ব্যবহার করতে পারে না। তবে আপনি যদি ভিডিও দেখেন তাহলে ভিডিওটি ডিসপ্লে এর দুই পাশে কিছু অংশ বাদ দিয়ে চালু হবে।
ক্যামেরা কাটআউট এর পাশে চারপাশে কাজ করার সময় সব অ্যাপ ভালভাবে কাজ করতে পারে না। কিন্তু আমাদের টেস্টএ অ্যাপ পুরোপুরি কাট-অফ মনে হয়নি।
বেশিরভাগ সময় ডিসপ্লে এর উপরের অংশ শুধু আইকনই দেখায়। এবং বেশিরভাগ ফোনটির বাড়তি ডিসপ্লে এর সুবিধা নিতে পারে না। যেহেতু ফোনের উপরের মাঝামাঝি ক্যামেরাটি তাই যেকোনো অ্যাপেল নোটিফিকেশন দেখানোর জন্য বিশেষ পদ্ধতি নেয়। এতে মনেই হয় না যে স্ক্রিন এর মাঝে একটু কাল অংশ আছে। খুব কম অ্যাপ এই বাড়তি ডিসপ্লেতে কাজ করতে পারে। আর বাকি অ্যাপগুলো ঐ অংশে কাল বার যোগ করে দেয়। এছাড়াও ইউটিউব এর ভিডিও নরমাল ফোনের মতই দেখা যায়। এতে কোন সমস্যা হয় না।
যেহেতু আইফোন তাদের ফোনেও এরকম একটি কাট-আউট দিয়েছে তাই আমি নিজে খুব আগ্রহে আছি যে আইফোন এর বিপরিতে এই এসেনশিয়াল ফোনটি কেমন পারফর্ম করবে। যেহেতু আন্ড্রয়েড তাদের নোটিফিকেশন এবং আইকনগুলোকে দুইটি অংশে ভাগ করে রাখে। তাই স্ক্রিন দুই ভাগে থাকলে আসলে কোন সমস্যা হয় না। আর কাল বার এর কারণে স্ক্রিন এই বাড়তি অংশ অ্যাপের সাথে মিলে যায়। তাই এটি আর চোখে পরে না।
আসলে ফোনটি বানানোর সময় মেকারদের হাতে আর কোন রাস্তা ছিল না। কারণ ক্যামেরা যদি নিচে দেয়া হত তবে সেটি আরো বিরক্তির কারণ হত। তবে আমার কাছে এই নোচটি একটু বিরক্তির ব্যাপার। তবে বেশিরভাগ অ্যাপ ডিসপ্লে এর উপরে-নিচে দুই পাশে কাল বার দিয়ে দেয়। তাই দেখতে সাধারণ ফোন এর মতই লাগে। কিন্তু গুগল এর অ্যাপ বিশেষ করে প্লে-স্টোর স্ক্রিন এর বাড়তি জায়গা ব্যবহার করতে পারে।
এই ফোনটি আমার পছন্দ হবার প্রধান কারণ উপরের এই কাল অংশটি। এর কারণে আমার এই ফোনটিকে আইফোন এর থেকেও বেশি পছন্দ হয়েছে। তবে দেখে ভাল লাগছে যে এই ফোনটি শাউমি মি মিক্স এর মত ক্যামেরাকে নিচে দেয় নি। তবে যতক্ষণ না ক্যামেরার প্রব্লেম ঠিক করা যায় তখন পর্যন্ত এই ডিজাইনটি আসলেই সুন্দর।
আশা করি আপনি এসেনশিয়াল ফোন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত বুঝতে পেরেছেন। আর টিউনটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশ্যই টিউমেন্ট করে জানান টিউনটি আপনার কেমন লাগলো।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।