বেশি দিন আগের কথা নয়, একটি নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনা ছিলো খুবই সহজ একটি ব্যাপার। নতুন যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আসত বাজারে: তা আাগের থেকে অনেকটা ইম্প্রোভমেন্ট নিয়ে আসত, তাই যখনই আপনি নতুন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কিনতেন, তা হত আপনার আগের মডেলের আপগ্রেড।
তবে এখন হয়ত তা আর খাটবে না, প্রতিটি দিন কোন না কোন স্মার্টফোন বিশ্বব্যাপী নতুন লঞ্চ হচ্ছেই। স্মার্টফোন এর প্রযুক্তিও আগের তুলনায় মারাত্বক হারে পরিবর্তিত এবং উন্নত হয়েছে। পারফর্মেন্স, ইম্প্রোভমেন্ট ইত্যাদি এর দিক দিয়ে যেমন দ্রুততর হচ্ছে, তেমনিভাবে আকারে হয়ে যাচ্ছে আরও ছোট! তাই আমাদের নিজের প্রাইজ পয়েন্টে একটি সঠিক অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কেনা তুলনামূলক ভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে।
তো আপনি কি ভাবছেন আপনার পরবর্তী স্মার্টফোন কবে কিনবেন? আপনার কী রকম স্পেসিফিকেশন দরকার আর কিরকম স্পেসিফিকেশন আপনি এড়িয়ে চলবেন? তো চলুন জেনে নেই আপনার পরবর্তী অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে কী কী থাকতে হবে।
প্রোসেসর হল এই কনসেপ্ট নিয়ে কথা বলার শুরুর একটি জিনিস। মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ভালো এবং দ্রুততর প্রোসেসর বাছাই করতে হবে। প্রোসেসর মানে কিন্তু কেবল কোর এর সংখ্যা বা ক্লক স্পীড নয়। ধরুন খুবই চালু একজন কসাই যেকিনা মুহূর্তেই সব কেটে ফেলতে পারে, ধরুন সে গরু-ছাগল না কেটে আপনাকে, আপনার আসে পাশের জিনিশকে কোপাতে শুরু করল, তাহলে ভালো কসাই এর লাভ কি হল।
প্রোসেসর এখানে আপনার সম্পূর্ন ডিভাইসকে পরিচালনা করবে, আপনার ফোনে ধরেন ৬ জিবি র্যাম আছে সেখানে A, B, C, D ব্র্যান্ডের উল্টাপাল্টা প্রোসেসর লাগালে তো ৬ জিবি র্যামের পারফর্মেন্স পাবেন না, দেখা যাচ্ছে পাচ্ছেন ৩-৪ জিবি এর পারর্ফমেন্স।
তারপর আপনাকে দেখতে হবে কোন প্রোসেসর ব্যাটারি ভালো ভাবে অপটিমাইজ করতে পারে! কেনোনা প্রোসেসর এর কোপা সামশু এর মত কার্যকলাপ ফোনের ব্যাটারি শেষ করার জন্য অনেকটা দায়ী। স্মার্টফোনের প্রোসেসরকে লজিক্যালি চিপ বা চিপসেট বলা হয়। তাই আপনাকে দেখতে হবে আপনার প্রোসেসর র্যাম এর সাথে, ক্যামেরার মেগা পিক্সেল এর সাথে, LTE স্পীড এর সাথে, ব্যাটারির সাথে সামঞ্জস্য কিনা।
কুয়ালকমকে ধন্যবাদ, কেনোনা আপনারা আসলে কি দিচ্ছেন তা ভালোভাবে বুঝানোর জন্য। এখানে স্ন্যাপ ড্রাগন এর প্রতিটি প্রোসেসর এর নাম হল আলাদা আলাদা তিনটি সংখ্যার ডিজিট। এখানে প্রথম সংখ্যাটি হল সিরিজ, দ্বিতীয় সংখ্যাটি হল জেনারেশন, আর তৃতীয়টি হল সে জেনারেশন এর সংস্করন। স্ন্যাপ ড্রাগন এর প্রোসেসর সিরিজ ৪ টি। এগুলো হলঃ
এখন এই প্রোসেসর সিরিজ চারটির ভেতর পার্থক্যের জন্য আপনাদের প্রতিটি প্রোসেসর সিরিজের দামের একটা উদাহরন দেই। ৮০০ সিরিজের স্মার্টফোনের দাম শুরু ৪৮০০০ থেকে। ৬০০ সিরিজের দাম ১৫০০০ থেকে। ৪০০ সিরিজের দাম ১০০০০ থেকে। ২০০ সিরিজের দাম ৬০০০ থেকে। আশা করি বুঝতে পারলেন। এটা আনুমানিক, উদাহরন হিসেবে দিলাম। তবে আমার একান্ত পরামর্শ হবে কুয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনই পছন্দে রাখবেন আর স্যামসাং এর ইউজার হলে এক্সিনস ব্যবহার করতে পারেন।
রেম নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার। যখন আপনার ফোনের রেম ১ জিবি তখন এটি হল একটি এন্ট্রি লেভেলের ডিভাইস, যেখানে ওয়ানপ্লাস ৫ এর র্যাম ৮ জিবি! তো বর্তমান সময়ে আপনার কত জিবি রেম দরকার? কত জিবি র্যাম বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আপনাকে ভালো ব্যাক আপ দেবে?
আসলে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি সাম্প্রতিক সময়ে বানানো সবচাইতে কার্যকর একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, এটি ডিভাইস এর মেমোরীকে খুবই দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে। এটাই সবচেয়ে বড় কারন আপনি আপনার ফোনে টাস্ক বা অ্যাপ কিলার তথা রেম ক্লিনার ব্যবহার করবেন না।
এমনকি দক্ষতার সাথে মেমোরী ম্যানেজ করার কারনে অনেক অ্যাপ খুবই দক্ষতার সাথে কাজ করে যখন আপনার র্যাম খুবই কম মাত্রা উপলব্ধ। তবে আপনি তো নিশ্চয়ই কম রেম তথা ১ জিবি বা ২ জিবিতে মাল্টিটাস্কিং অথবা ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক অ্যাপলিকেশন চালানোর আশা রাখেন না! তাই কমপক্ষে রেম ৩ জিবি রাখার চেস্টা করবেন, ৪ জিবি হলে পারফেক্ট হয়। তবে আপনি আগামী ২০ বছরে যদি কোনো ফোন কিনতে না চান তাহলে ওয়ানপ্লাস ৫ কিনতে পারেন, ৮ জিবি রেম এতগুলো বছর নিঃসন্দেহে চলে যাবে!
এক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে আপনার ফোনে মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট আছে কিনা। অনেক সময় ১৬ জিবি এর পার্থক্যের কারনে ফোনের দাম ২০০০ টাকা বেশি হয়, যেখানে আপনি ২০০০ টাকা দিয়ে ৬৪ জিবি কিনে ফোনে লাগাতে পারতেন। তবে যদি মাইক্রো এসডি কার্ড এর অপশন না থাকে তবে কমপক্ষে যে ফোনে ৩২ জিবি স্টোরেজ আছে, সেটি বাছাই করুন!
ডিসপ্লে স্মার্টফোনকে আরও জীবন্ত করে তোলে। চ্যানেল যতই ধরুক সাদা-কালো টেলিভিশন তো কখনই কাম্য নয়, তাই নয় কি। আপনার ফোনে যতই কিছু থাকুক ডিসপ্লে যদি ভালো না হয়, তাহলে কিন্তু যতই যা বলুন এক্সপেরিয়েন্সে মজা নেই। তাই এখন ডিসপ্লে অমোলেড হোক না এলসিডি গুনগত মান ভালো হতে হবে।
মূলত এলসিডি ডিসপ্লে এর ভেতর সবচাইতে ভালো হল আইপিএস(IPS) প্রযুক্তি। তাই দেখে নেবেন আইপিএস কিনা, আর মূল যে বিষয়টি ত। হল পিপিআই বা পিক্সেল পার ইঞ্চি। পিপিআই যত ভালো ডিসপ্লে এর ক্লিয়ারিটি, সার্পনেস, ব্রাইটনেস, কালার রিকারেকশন তত ভালো হবে। তাই পিপিআই দেখবেন ৪০০ এর ওপর যেনো হয়। ২০০ এর নিচে তো কিনবেনই না।
স্মার্টফোনে কি কি থাকবে সেগুলো নিয়ে কথা হবে, আর ক্যামেরা নিয়ে কথা হবে না, এমনকি হতে পারে? ছবির একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের জন্য প্রথমত ১৩ মেগা পিক্সেল হলে ভালো হয়। তবে আমি আগের একটি টিউনে বলেছি মেগাপিক্সেলই সব নয়! আপনাকে আরও বিষয় গুলো দেখতে হবে; এপার্চার, সেন্সর সাইজ। এখানে সহজ কথায় বলতে সেন্সর সাইজের জন্য ছবির কালার, ব্রাইটনেস ইত্যাদি নির্ভর করে আর এপার্চারই ডিএসএলআর ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলাতথা ব্লুর ইনেস এর জন্য দ্বায়ী।
উপরে অনেককিছু নিয়ে বললাম, এগুলোকে শক্তি দিবে কে?ভালো ব্যাটারি। ব্যাটারি নিয়ে বলতে গেলে আপনাকে অবশ্যই এসব ভারী ভারী স্পেসিফিকেশনে অন্তত একদিন ব্যাপ আপ পেতে হলে ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ব্যাকআপ লাগবেই। এর চাইতে কম হলে ব্যাটারি ব্যাক আপ আপনার খারাপ লাগতে পারে। তাই ব্যাটারি নিয়ে বেশি কথা বললাম না।
আজ এ পযন্তই! তো কেমন লাগলো আমার টিউনটি? টিউমেন্টে আপনাদের মতামত জানান। আশা করি সবাই ভালো থাকবেন। আর টেকটিউনসের সাথেই থাকবেন। মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে।
আল্লাহ হাফেজ।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।