HTC এর নতুন ফোন HTC U11 রিভিউ

এন্ড্রয়েড ফোনের এই যুগে বর্তমানে স্যামসং গ্যালাক্সি এস৮ ডিভাইসটি বাজার মাতাচ্ছে। স্যামসং কোম্পানি তাদের ব্যবসায় ইতিহাসে সব থেকে বেশি মুনাফা অর্জন করছে এখন এই গ্যালাক্সি এস৮ বিক্রি করে। আর সাধারণত এটা আর বলার অবকাশ থাকে না যে মোবাইল ডিভাইসের হাই এন্ড মার্কেটগুলোকে গ্যালাক্সি সিরিজ এবং আইফোন সিরিজগুলো দখল করে রেখেছে অনেক দিন ধরেই, আর অন্যান্য কোম্পানি ফোনগুলো সাধারণত কাস্টমারের মন জয় করতে পারছে না, আজকে আমি HTC কোম্পানি ২০১৭ সালে নতুন ফ্ল্যাগশীপ HTC U11 নিয়ে রিভিউ দিতে এসেছি। আর মোবাইল ডিভাইস হিসেবে HTC কে আমরা বাজারে তেমন নজর কাড়তে দেখি নি।

কারণ বিগত ৫ বছর ধরে HTC কোম্পানির ফ্ল্যাগশীপগুলো তেমন বাজার মাতাতে পারেনি তবে ২০১৬ সালে HTC 10 ডিভাইসের মাধ্যমে কোম্পানিতে আবারো বাজারে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলার চেষ্টা শুরু করে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের কোম্পানির ফ্ল্যাগশীপ HTC U11 দিয়ে বাজারে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। গ্যালাক্সি এস৮ এর পর ফ্রন্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে U11 টি বেশ ভালো ফিচার দিয়েছে। আর HTC U11 ফোনটি সম্পূর্ণ মেটাল ডিভাইস হবার পরেও হাত থেকে পিছলে পড়ে যাবার মতো অবস্থা তৈরি হয় না, যেটি ফোনটির খুবই ভালো একটি দিক।

আর ডিভাইসটি ক্যামেরা কোয়ালিটি দেখার মতো। দিন কিংবা রাত, আলো কম কিংবা বেশি প্রায় সকল প্রকার অবস্থাতেই HTC U11 খুব ভালো ফটো ক্যাপচার করতে পারে। আর তাই HTC এই ক্যামেরাকে UltraPixel নাম দিয়েছে। HTC কোম্পানির শেষ দুটি ফ্ল্যাগশিপ U Ultra ছিলো সাইজে খুব বড় এবং মূল্য ছিলো অনেক বেশি এবং U play ডিভাইসকে ক্ষমতা এবং দামের দিক থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার HTC U11 এর মাধ্যমে কোম্পানিটি অতীতের ভূলগুলো সুধরে নিতে চাচ্ছে।

স্পেসিফিকেশনঃ

  • মুক্তি পেয়েছে : জুন, ২০১৭ সালে
  • ১৬৯ গ্রাম ওজন এবং 7.9mm থিকনেস,
  • এন্ড্রয়েড ৭.১ (এন্ড্রয়েড ৮.০ তে আপগ্রেড করা যাবে)
  • ৫.৫ ইঞ্চির 1440x2560 পিক্সেলের ডিসপ্লে,
  • ১২ মেগাপিক্সেলের ২১৬০পি প্রাইমারি ক্যামেরা,
  • ১৬ মেগাপিক্সেলের সেকন্ডারি ক্যামেরা,
  • ৬ গিগাবাইট র‌্যাম,
  • অক্টাকোর স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসর,
  • Adreno 540 জিপিইউ,
  • ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ,
  • লিলন ৩০০০ mAh নন রিমুভেবল ব্যাটারি।

হার্ডওয়্যারঃ

হার্ডওয়্যার ডিজাইনের ক্ষেত্রে HTC বরাবরেই বেশ নিট এন্ড ক্লিন থেকেছে। এবারের ডিভাইসেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। HTC U11 এর পেছনে লিকুইয় সারফেস গ্লাস লাগনো হয়েছে এবং গ্লাসে রংকে ইউনিক ভাবে চকচক করে বসানো হয়েছে। আপনি যে রংয়ের ডিভাইস পছন্দ করেন না কেন, ডিভাইসটি নড়াচড়া করলে কালার শিফট এবং পরিবর্তন হবে! যা খুবই চমৎকার একটি ফিচার।

তবে কোনো মোবাইলের পিছনের দিকটাকে এত চমৎকার করলে সামনের দিকের ডিজাইন অনেকেরই পছন্দ হবে না। কারন মোবাইল ব্যবহারের সময় পেছনের দিকের চাইতে সামনের দিকটা বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। HTC U11 এর সামনের দিকটার ডিজাইন করা হয়েছে অনান্য স্মার্টফোনের মতোই। ডিভাইসটিতে রয়েছে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির সুপার এলসিডি ডিসপ্লে।

তবে বর্তমানে স্যামসং ডিভাইসের AMOLED প্যানেল এর থেকে এগিয়ে রয়েছে। যেটা ডিভাইসটির জন্য একটি নেগেটিভ পয়েন্ট। তবে LCD ডিসপ্লে হবার পরেও সরাসরি সূর্যের আলোতে ডিভাইসটির ডিসপ্লেটি দারুণ উজ্জল্য বজায় রাখে!

ডিভাইসে ৩.৫মিমি এর হেডফোন জ্যাক ব্যবহার না করে USB-C টাইপের হেডফোন দেওয়া হয়েছে। যা একটু ইউনিক, তবে ফোন বক্সে হেডফোন কর্নভার্টারও দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও HTC কোম্পানির নতুন BoomSound স্পিকার সেটআপ রয়েছে এই ডিভাইসটিতে, যেটার মাধ্যমে একই সাথে ফ্রন্ট ফায়ারিং ইয়ারপিস এবং ডাউন ফায়ারিং লাউডস্পিকারের কোয়ালিটির মাধ্যমে ইউজারদেরকে একটি বেটার সাউন্ড কোয়ালিটি উপহার দিবে।

সফটওয়্যারঃ

ডিভাইসটিতে এন্ড্রয়েড ৭.১.১ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যার থেকে সামনে আগত এন্ড্রয়েড ৮.০ তে আপগ্রেড করা যাবে বলে শোনা যাচ্ছে। HTC তাদের ডিভাইসকে সফটওয়্যারের দিক থেকেও নিট এন্ড ক্লিন রাখার বিভিন্ন ডুপ্লিকেইট এপপস, ব্লোটওয়ার এবং বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় এপপসগুলোকে মুছে দিয়ে সিস্টেম কে সিম্পল রাখার চেষ্টা করেছে।

তবে এগুলোর ঘাঁটতি কে পূরণ করার জন্য HTC U11 ডিভাইসে দেওয়া হয়েছে Edge Sense টেকনোলজি। আর ডিভাইসটির ইউনিক ফিচারটিও হচ্ছে এই Edge Sense! HTC U11 ডিভাইসকে আপনি Squeeze করলে বিভিন্ন জিনিস ঘটবে! আর এই ফিচারটির ব্যবহার খুব সহজ এবং মজার!

ডিভাইসটিতে লেটেস্ট স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ অক্টকোর প্রসেসর এবং সাথে ৪ বা ৬ জিবির র‌্যাম থাকায় এর পারফরমেন্স বেশ চমৎকার এবং ফাস্ট! এপপ চালূ করার সময় কেনো ডিলেই হয় না, টাচ রেসপন্ড খুবই পারফেক্ট এবং স্ক্রোলিং খুব স্মুথ! এই পারফরমেন্স দিয়ে আপনি আরামসে ২ বছর সেটটি চালাতে পারবেন।

ব্যাটারি লাইফঃ

৩০০০ mAH ক্যাপাসিটির ব্যাটারি রয়েছে ডিভাইসটিতে। যেটি সিরিজের আগের ফ্ল্যাগশিপ U Ultra থেকে বেশ ছোট। তবে সাড়ে পাচঁ ইঞ্চি ডিসপ্লের জন্য এই সাইজ পারফেক্ট। স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসরে পাওয়ার সেভিং ফিচারের সাথে এই ব্যাটারি লাইফটি তেমন অসুবিধা হবার কথা না।

ইন্টারনেট চালানো, ৩ ঘন্টার ভিডিও গেম খেলা এবং ১ ঘন্টার মতো অডিও গান শোনার পরেও ডিভাইসটিতে ২০% চার্জ থেকে যাবে। তবে স্যামসংয়ের মতো এই ডিভাইসটিতে ওয়ারলেস চাজিং ফিচার টি নেই, কিন্তু রয়েছে HTC এর নিজস্ব Quick Charge ৩.০ ফিচার যার মাধ্যমে USB-C চার্জার পোর্টে ডিভাইসটি দ্রুতই চার্জ নিয়ে নিবে।

ক্যামেরাঃ

HTC U11 ডিভাইসটিতে রয়েছে UltraPixel 3 প্রযুক্তির ক্যামেরা সিস্টেম।  যেখানে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের রেজুলেশন, ১.৪ মিক্রন পিক্সেল, f/1.7 লেন্স এবং UltraSpeed অটোফোকাস। U11 ডিভাইসে রিয়েল লাইফ কোয়ালিটি ছবি তুলা যায়। দিনের বেলার ছবিতে ডিভাইসটি গ্যালাক্সি এস৮, পিক্সেল এক্সএল এবং এলজি জি৬ ডিভাইসগুলোর ক্যামেরার সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম। আর অন্যদিনে রাতের বেলার ছবিগুলোতে HTC ক্যামেরার ব্যাপারে কিছু সঠিক সিদ্ধান্তের U11 ডিভাইসটির ক্যামেরায় রাতের বেলার ছবিগুলো বেশ চমৎকার ভাবে ফুটে উঠে।

আজকের টিউনের শেষের দিকে চলে এসেছি। HTC U Ultra মুক্তির মাত্র কয়েক মাস পর কোম্পানি তাদের লেটেস্ট ফ্ল্যাগশীপ HTC U11 মুক্তি দিয়েছে। U ultra ডিভাইসটির সাইজ, কিছু ইর্ন্টারনাল সমস্যা, ক্যামেরার সমস্যা এবং উচ্চমূল্য ইত্যাদির সমাধান করে HTC U11 বাজারে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এইচটিসি ইউ১১ ডিভাইসটির ৪ গিগাবাইট র‌্যাম, ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ মডেলের মূল্য রাখা হয়েছৈ ৬৪৯ ডলার এবং ৬ গিগাবাইট র‌্যাম, ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজের মূল্য রাখা হয়েছে ৭৫০ ডলার।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

স্টিরিও সাউন্ড নাই আর ডিজাইন আই ফোন এর মত করতে গেছে । htc স্টিরিও সাউন্ড এর জন্যই অনেকে চয়েজ করে থাকে ।